Header Ads

Header ADS

মিলাদুন্নবী (দঃ) পালনের বিষ্ময়কর ফজিলত ও বরকত

 সফর- নং খুতবা

মিলাদুন্নবী (দঃ) পালনের বিষ্ময়কর ফজিলত বরকত



قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ

হে হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি বলুন! আল্লাহরই অনুগ্রহ তাঁর দয়া প্রাপ্তিতে তারা যেন আনন্দ প্রকাশ করে এটা তাদের সমস্ত ধন দৌলত সঞ্চয় করা অপেক্ষা শ্রেয় [সুরা ইউনুস ১০:৫৮]

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (রহঃ) তাঁর তাফসীর গ্রন্থ আদ দুররুল মুনছুর উল্লেখ করেন-
অর্থাৎ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) আয়াতের তাফসীরে বলেন এখানে আল্লাহর অনুগ্রহ (ফাদ্বলুল্লাহ) দ্বারা ইলমে দ্বীন বুঝানো হয়েছে আর (রহমত) দ্বারা সরকারে দুআলম নূরে মোজাচ্ছম আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে যেমন- আল্লাহ তায়ালা বলেন, (ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতালি্লল আলামীন) অর্থাৎ হে হাবীব আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত করেই প্রেরণ করেছি

সে আনন্দ প্রকাশের জন্য প্রতিবছর সারা বিশ্বের আনাচে কানাচে মাহফিলে মিলাদ সাজানো হয়, আয়োজন করা হয়, সেলিব্রেশন করা হয় এটা করলে আমাদের ফায়দা কি? আসুন প্রথমে ১টি হাদিস শুনি

মাহফিলের ফজিলত বরকত

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَوْ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالاَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ لِلَّهِ مَلاَئِكَةً سَيَّاحِينَ فِي الأَرْضِ فَضْلاً عَنْ كُتَّابِ النَّاسِ فَإِذَا وَجَدُوا أَقْوَامًا يَذْكُرُونَ اللَّهَ تَنَادَوْا هَلُمُّوا إِلَى بُغْيَتِكُمْ فَيَجِيئُونَ فَيَحُفُّونَ بِهِمْ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ اللَّهُ عَلَى أَىِّ شَيْءٍ تَرَكْتُمْ عِبَادِي يَصْنَعُونَ فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ يَحْمَدُونَكَ وَيُمَجِّدُونَكَ وَيَذْكُرُونَكَ . قَالَ فَيَقُولُ فَهَلْ رَأَوْنِي فَيَقُولُونَ لاَ . قَالَ فَيَقُولُ فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْنِي قَالَ فَيَقُولُونَ لَوْ رَأَوْكَ لَكَانُوا أَشَدَّ تَحْمِيدًا وَأَشَدَّ تَمْجِيدًا وَأَشَدَّ لَكَ ذِكْرًا . قَالَ فَيَقُولُ وَأَىُّ شَيْءٍ يَطْلُبُونَ قَالَ فَيَقُولُونَ يَطْلُبُونَ الْجَنَّةَ . قَالَ فَيَقُولُ وَهَلْ رَأَوْهَا قَالَ فَيَقُولُونَ لاَ . قَالَ فَيَقُولُ فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْهَا قَالَ فَيَقُولُونَ لَوْ رَأَوْهَا كَانُوا لَهَا أَشَدَّ طَلَبًا وَأَشَدَّ عَلَيْهَا حِرْصًا . قَالَ فَيَقُولُ مِنْ أَىِّ شَيْءٍ يَتَعَوَّذُونَ قَالُوا يَتَعَوَّذُونَ مِنَ النَّارِ . قَالَ فَيَقُولُ وَهَلْ رَأَوْهَا فَيَقُولُونَ لاَ . فَيَقُولُ فَكَيْفَ لَوَ رَأَوْهَا فَيَقُولُونَ لَوْ رَأَوْهَا كَانُوا مِنْهَا أَشَدَّ هَرَبًا وَأَشَدَّ مِنْهَا خَوْفًا وَأَشَدَّ مِنْهَا تَعَوُّذًا . قَالَ فَيَقُولُ فَإِنِّي أُشْهِدُكُمْ أَنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ . فَيَقُولُونَ إِنَّ فِيهِمْ فُلاَنًا الْخَطَّاءَ لَمْ يُرِدْهُمْ إِنَّمَا جَاءَهُمْ لِحَاجَةٍ . فَيَقُولُ هُمُ الْقَوْمُ لاَ يَشْقَى لَهُمْ جَلِيسٌ "

তিরমিযি শরীফের ৩৬০০ নং হাদীস

আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের আমলনামা যারা লেখেন সেই সব ফিরিশতা ছাড়াও আল্লাহ তাআলার একদল বিচরণকারী ফিরিশতা রয়েছে। তাঁরা যখন এমন সম্প্রদায় পান যারা আল্লাহর যিকর করছে তখন একজন আরেকজনকে ডাকেনঃ তোমাদের অভীষ্ট লক্ষের পানে দৌড়ে আস। তখন তাঁরা চলে আসেন এবং দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত এদেরকে বেষ্টন করে রাখেন। এরপর যখন তারা আল্লাহর দরবারে ফিরে যান তখন, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমার বান্দাকে কি কি কর্মরত অবস্থায় ছেড়ে এসেছ?

তারা বলেনঃ

فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ يَحْمَدُونَكَ وَيُمَجِّدُونَكَ وَيَذْكُرُونَكَ

 আমরা তাদের আপনার হামদ করতে, মহত্ব বর্ণনা করতে এবং যিকর করার অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

. قَالَ فَيَقُولُ فَهَلْ رَأَوْنِي فَيَقُولُونَ لاَ

তারা আমাকে দেখেছে কি? তারা বলেনঃ না।

আল্লাহ বলেনঃ যদি আমাকে তারা দেখত তবে কেমন করত? তারা বলেনঃ

فَيَقُولُونَ لَوْ رَأَوْكَ لَكَانُوا أَشَدَّ تَحْمِيدًا وَأَشَدَّ تَمْجِيدًا وَأَشَدَّ لَكَ ذِكْرًا

তারা যদি আপনাকে দেখত তবে আরো বেশী হামদ, আরো বাশী মহত্ব, আরো বেশী যিকর করত।

আল্লাহ বলেনঃ তারা কি চায়? তারা বলেনঃ এরা জান্নাত চায়।

قَالَ فَيَقُولُ وَهَلْ رَأَوْهَا قَالَ فَيَقُولُونَ لاَ

আল্লাহ বলেনঃ তারা কি জান্নাত দেখেছে? তারা বলেনঃ না।

আল্লাহ বলেনঃ তা যদি দেখত তবে তারা কি করত?

ফেরেশতারা বলেনঃ

فَيَقُولُونَ لَوْ رَأَوْهَا كَانُوا لَهَا أَشَدَّ طَلَبًا وَأَشَدَّ عَلَيْهَا حِرْصًا

যদি তারা তা দেখত তবে অবশ্যই তারা এর জন্য আরো বেশী আগ্রহী হয়ে উঠত, আরো বেশী তা তালাশ করত।

আল্লাহ বলেনঃ তারা কি জিনিস থেকে পানাহ চায়? তারা বলেনঃ তারা জাহান্নাম থেকে পানাহ চায়। আল্লাহ বলেনঃ তারা কি তা দেখেছে? তারা বলেনঃ না। আল্লাহ বলেনঃ তা যদি দেখত তবে তারা কেমন করত?

তারা বলেনঃ

فَيَقُولُونَ لَوْ رَأَوْهَا كَانُوا مِنْهَا أَشَدَّ هَرَبًا وَأَشَدَّ مِنْهَا خَوْفًا وَأَشَدَّ مِنْهَا تَعَوُّذًا

 যদি তারা তা দেখত তবে তা থেকে আরো বেশী দূরে সরে থকত, আরো বেশী ভয় করত এবং আরো বাশী তা থেকে পানাহ চাইত।

আল্লাহ বলেনঃ

قَالَ فَيَقُولُ فَإِنِّي أُشْهِدُكُمْ أَنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ

আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি যে, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম।

 

فَيَقُولُونَ إِنَّ فِيهِمْ فُلاَنًا الْخَطَّاءَ لَمْ يُرِدْهُمْ إِنَّمَا جَاءَهُمْ لِحَاجَةٍ . فَيَقُولُ هُمُ الْقَوْمُ لاَ يَشْقَى لَهُمْ جَلِيسٌ "

ফিরিশতারা বলেনঃ এদের মাঝে অমুক এক গুনাহগার রয়েছে। এরা যে উদ্দেশ্যে মজলিশে এসেছে, সে উদ্দেশ্যে সে সেখানে আসেনি। সেতো অন্য কোন প্রয়োজনে তাদের কাছে এসেছিল। আল্লাহ বলেনঃ এরতা এমন এক সম্প্রদায় যে, তাদের সাথে উপবেশনকারী কেহই বঞ্চিত হয় না।

সুবহানাল্লাহ! বছর ঘুরে আমাদের মাঝে সে রকম ১টি মাহফিল করার সময় এসেছে যে মাহফিলে আল্লাহর জিকির হবে, কুরআন তেলাওয়াত হবে, দরুদ পাঠ করা হবে, হামদে বারী তায়ালা হবে, নাতে মোস্তফা পরিবেশন হবে আর সে মজলিশের নাম মিলাদুন্নবী যা আয়োজন করলে যাতে বসলে বসে দরুদ পাঠ করলে, আল্লাহর প্রসংশা করলে, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ বললে তার উছিলায় আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করে দিবেন

আমের আনসারীর মিলাদের আলোচনায় হুজুর () খুশি হয়েছেন

হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র জন্মের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলেছেন, এই সেই দিবস এই সেই দিবস এমন সময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উপস্থিত হয়ে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে (আমের আনসারীকে) বললেন,

ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون

নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক সমস্ত রহমতের  দরজা আপনাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতারা আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যে কেউ আপনাদের মতো এরূপ কাজ করবে, আপনাদের মতো তারাও নাজাত (ফযীলত) লাভ করবে (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর) (আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতির সাবিলুল হুদা))

মাহফিলে মিলাদ আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত শান্তি লাভের মাধ্যম

প্রতিটি মিলাদ মাহফিলে শুরুতে মাঝে মাঝে এবং শেষে দরুদ শরীফ পড়া হয় আর এই দরুদ একটি মিলাদ মাহফিলে আর কিছু না হলেও এই দরুদ শরীফ এর আধিক্যই বান্দার জন্য রহমত বরকত এবং গুনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট

নাসাই হাদীস নং ১২৮৬:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جَاءَ ذَاتَ يَوْمٍ وَالْبُشْرَى فِي وَجْهِهِ فَقُلْنَا إِنَّا لَنَرَى الْبُشْرَى فِي وَجْهِكَ ‏.‏ فَقَالَ ‏ "‏ إِنَّهُ أَتَانِي الْمَلَكُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّ رَبَّكَ يَقُولُ أَمَا يُرْضِيكَ أَنَّهُ لاَ يُصَلِّي عَلَيْكَ أَحَدٌ إِلاَّ صَلَّيْتُ عَلَيْهِ عَشْرًا وَلاَ يُسَلِّمُ عَلَيْكَ أَحَدٌ إِلاَّ سَلَّمْتُ عَلَيْهِ عَشْرًا ‏"‏ ‏.

আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সানন্দে আমাদের কাছে আসলেন আমরা বললাম, (আজ) আমরা আপনার চেহারায় প্রফুল্লতা দেখছি! তিনি বললেন, আমার কাছে (একজন) ফেরেশতা এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আপনার প্রভু বলছেন যে, আপনাকে কি একথা খুশি করবে না, যে ব্যক্তি আপনার উপর একবার দরুদ পড়বে আমি তাঁর উপর দশটি রহমত নাযিল করব আর যে ব্যক্তি আপনার উপর একবার সালাম পাঠাবে আমি তাঁর উপর দশটি শান্তি বর্ষণ করব (সালাম পাঠাব)

দেখুন শুধু ১বার দরুদ ১বার সালাম পাঠ করার দ্বারা আল্লাহ আমাদের প্রতি ১০ বার ১০ বার দরুদ সালাম পাঠাবেন বলছেন, এর চেয়ে বড় সুসংবাদ আর কি হতে পারে?

মাহফিলে মিলাদ দোয়া কবুল মনের আশা পুরণের মাধ্যম

অনেক মানুষ আছেন যাদের দোয়া কবুল হয়না মনের আশা পুরণ হয়না তারা মিলাদ মাহফিল দরুদ জিকিরে নাতের মাধ্যমে বা তাতে সহযোগীতার মাধ্যমে খুব সহজে হাসিল করতে পারে, আপনি নবীর মিলাদ জিকির দরুদের মাহফিলে সহযোগীতা করলে কিংবা নিজে এই ধরনের মাহফিলে আসলে বসলে অংশ গ্রহণ করলে আল্লাহ আপনার সব দোয়া কবুল করে নিবেন আপনার মনের সব আশা আরজু পুরণ করে দিবেন

যেমন সুনানে নাসাঈর ১২৮৭ নং হাদীস

فَضَالَةَ بْنَ عُبَيْدٍ، يَقُولُ سَمِعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلاً يَدْعُو فِي صَلاَتِهِ لَمْ يُمَجِّدِ اللَّهَ وَلَمْ يُصَلِّ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " عَجِلْتَ أَيُّهَا الْمُصَلِّي " . ثُمَّ عَلَّمَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَسَمِعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلاً يُصَلِّي فَمَجَّدَ اللَّهَ وَحَمِدَهُ وَصَلَّى عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " ادْعُ تُجَبْ وَسَلْ تُعْطَ " .

---

ফাজালা ইবনু উবায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে সালাতে দোয়া করতে শুনলেন সে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসাও করল না এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরুদও পড়ল না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে মুসল্লী! তুমি দোয়া খুব তাড়াতাড়ি করে ফেলেছ।

তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসল্লীদের দোয়া শিক্ষা দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে সালাত আদায় করল এবং আল্লাহ তাআলার মাহাত্ম্য বর্ণনা করল, তার প্রশংসা এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠ করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাকে) বললেন, তুমি দোয়া কর, তা কবুল করা হবে এবং আল্লাহর কাছে চাও, তোমাকে দেওয়া হবে।

এ হাদীসে আমরা দেখতে পাচ্ছি হুজুর () যে ব্যক্তি দরুদ শরীফ পাঠ ছাড়া দোয়া করল তার দোয়া কবুল না হওয়ার ঘোষনা দিলেন আর যে ব্যক্তি দরুদ শরীফ পড়ে দোয়া করেছেন তাকে বলছেন (উদউ তুজাব ওয়াছাল তুওতা) দোয়া কবুল হবে যা চাও তাই দেয়া হবে। এখন আমরা দেখতে পাই মিলাদ মাহফিল সমুহে অসংখ্য দরুদ সালাম এর পর দোয়া করা হয় আর সবশেষে দোয়া করা হয় তাহলে এ হাদীস থেকে নিশ্চিত আপনি যদি সে দোয়াতে উপস্থিত হয়ে নিজের মনের আশা আরজু আল্লাহর কাছে পেশ করতে পারেন তা আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবেন।

মিলাদ মাহফিল দ্বারা গুনাহ মাফ হয়- সুনানে নাসাঈর ১২৯৮ নং হাদিস

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جَاءَ ذَاتَ يَوْمٍ وَالْبِشْرُ يُرَى فِي وَجْهِهِ فَقَالَ ‏ "‏ إِنَّهُ جَاءَنِي جِبْرِيلُ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَمَا يُرْضِيكَ يَا مُحَمَّدُ أَنْ لاَ يُصَلِّيَ عَلَيْكَ أَحَدٌ مِنْ أُمَّتِكَ إِلاَّ صَلَّيْتُ عَلَيْهِ عَشْرًا وَلاَ يُسَلِّمَ عَلَيْكَ أَحَدٌ مِنْ أُمَّتِكَ إِلاَّ سَلَّمْتُ عَلَيْهِ عَشْرًا ‏"‏ ‏.‏

---

আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন (আমাদের কাছে) আগমন করলেন তখন তার চেহারায় প্রফুল্লতা দৃষ্টি গোচর হচ্ছিল তিনি বললেন, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমার কাছে এসে বলল, "ইয়া মুহাম্মাদ! আপনাকে কি এই সংবাদ খুশি করে না যে, আপনার উম্মতের মধ্য থেকে যদি কোন ব্যক্তি আপনার উপর একবার দরুদ পাঠ করে আমি তার দশবার মাগফিরাত চাইব, আর কেউ যদি আপনাকে একবার সালাম পাঠায় আমি তার প্রতি দশবার সালাম পাঠাব"

আশেকদের দরুদ নবীজি নিজ কানে শুনেন

নিশ্চিতভাবে যারা নবীর মিলাদে অংশ গ্রহণ করেন তারা নবীর প্রেম ভালোবাসা এশক মুহাব্বত অন্তরে ধারন করেই মিলাদ মাহফিলে আসেন তাদের ব্যপারে

মরক্কোর ইসলামী পন্ডিত সোলাইমান জাজুলি (রহ) তার প্রসিদ্ধ কিতাব দালায়েলুল খায়রাতে ১টি হাদীস নকল করেন

নবী (সাঃ)কে প্রশ্ন করা হল- হে নবী! যারা অনুপস্থিত এবং যারা আপনার পরে পৃথিবীতে আসবে তাদের পঠিত দুরূদ আপনার কাছে কিভাবে পৌছবে? নবী (সাঃ) জবাবে বললেন- যারা আমার আশিক তাদের দুরূদ আমি নিজ কানে সরাসরি শুনি তাদেরকে চিনি আর অন্যান্যদের দুরূদ আমার নিকট ফেরেস্তাদের মাধ্যমে পেশ করা হয় (দালাইলুল খাইরাত)

মিলাদে দিরহাম খরচ আবু বকরের সাথে জান্নাত ইউসুফের মাজার দেখিয়ে দেয়ার বিনিময় মুসার সাথে জান্নাত

আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী আল হাইছমি (রহ) এর আন নেমাতুল কুবরায় লিখেন (হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) ফরমান যদি কেহ মিলাদুন্নবীতে শুধু দেরহাম খরচ করবে সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে)

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে আবু বকর ইসলামের জন্য নিজের জান মাল কুরবান করে দিয়েছেন সে আবু বকরের সাথে জান্নাত তাও মাত্র দেরহাম খরচের বিনিময়ে?

এটি বুঝার জন্য হযরত ইউসুফের লাশ দেখিয়ে দিয়ে এক বুড়ি যেমন হযরত মুসা () এর সাথে জান্নাতে থাকার আরজু করেছিল সে আরজু আল্লাহ তায়ালা কবুল করেছিলেন সে ঘটনাটিই এর জন্য বড় প্রমান

মিলাদুন্নবীতে খুশি উৎযাপন করলে কবর আযাব থেকে মুক্তি (আবু লাহাব)

প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (দঃ) ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ছুয়াইবা নাম্নী এক দাসী তার মনিব আবু লাহাবকে এই সুসংবাদ জানায়। আবু লাহাব ভাতিজার জন্মসংবাদে খুশী হয়ে আপন দাসী ছুয়াইবাকে আযাদ করে দেয়। ৫৫ বছর পর বদরের যুদ্ধের ৭দিন পর প্লেগ রোগে আবু লাহাবের মৃত্যু হয়। আবু লাহাবের ভাই হযরত আব্বাস (রাঃ) স্বপ্নে আবু লাহাবকে দেখে নবী দুশমনির পরিণতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আবু লাহাব আফসোস করে বললো-

নরকে আমার স্থান হয়েছে। তবে নবী করিম (দঃ)-এর জন্মসংবাদে খুশী হয়ে দাসীকে শাহাদৎ অঙ্গুলীর ইশরায় আযাদ করার কারণে প্রতি সোমবার আমার কবরের আযাব হালকা হয় এবং শাহাদৎ অঙ্গুলী চুষে কিছুটা তৃষ্ণা নিবারণ করি ।

বোখারী ও মাওয়াহেব

ইবনে জজয়ী (রহঃ) এ প্রসঙ্গে বলেন 'আবু লাহাব নবী করিম (দঃ)-এর একজন কট্টর দুশমন-যার বিরুদ্ধে সূরা লাহাব নাযেল হয়েছে। নবীজীর (দঃ) জন্মদিনের খুশীতে যদি তার এই পুরস্কার হয়, তাহলে যে মুসলমান মিলাদুন্নবী উপলক্ষে খুশী উদযাপনব করবে এবং নবীর মহব্বতে সাধ্যমত খরচ করবে, তার পুরস্কার কী হতে পারে? আমার জীবনের শপথ করে বলছি-নিশ্চয়ই আল্লাহ জাল্লা শানুহু আপন অনুগ্রহে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন (আনওয়ারে মোহাম্মদীয়া)'

৩০ হাজার সাহাবীর সামনে নবীর জন্মের আলোচনা

ইমামে তাবরানী মুজামুল কবিরে, ইমামে হাকেম মুসতাদরাকে, ইবনে হাজার মক্কী হাইছামীও এ হাদীস রেওয়ায়েত করেন-

হুজুর () তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর এক সাহাবী আরজ করলেন এয়া রাসুলাল্লাহ () আমি আপনার নাত পড়তে চাই, সে মজলিশে ৩০ হাজার সাহাবা উপস্থিত ছিলেন, হুজুর () সে সাহাবীকে এজাজত দিয়ে দিলেন,এবার সে সাহাবী নাত পড়া আরম্ভ করলেন

(আনতা লাম্মা ওলিদতা আশরাকাতি)

(ওয়া দা আত বিনুরিকাল উফুকু)

হে আল্লাহর রাসুল যখন আপনার মিলাদ হল তখন পুরা জমিন আলোকিত হয়ে গেল

সুবহানাল্লাহ! ৩০ হাজার সাহাবার মজলিশে হুজুরের উপস্থিতিতে সাহাবী নবীর জন্ম গাথা বয়ান করছেন ছন্দে ছন্দে। এর চেয়ে বড় খুশি মুমিনের জন্য আর কি হতে পারে?

 

মুসলমানরা কি কোন দিবস উৎযাপন সেলিব্রেশন করতে পারবেনা?

আমাদের মাঝে কিছু কিছু ভুল কনসেপ্ট আছে যে মুসলমানরা কোন কিছুকে, কোন দিবসকে সেলিব্রেশন করতে পারবেনা। অথচ ইসলামের অধিকাংশ এবাদতেই আছে সেলিব্রেশন

যেমন ৫ ওয়াক্ত নামাজে রয়েছে ৫ জন আম্বিয়ার স্মৃতি

যেমন

)ফজরের ২ রাকাত আদম ()

) যুহরের ৪ রাকাত হযরত ইবরাহিম (আঃ)

) আসরের ৪ রাকাত হযরত দাউদ (আঃ)

) মাগরিবের ৩ রাকাত আইউব (আঃ)

) এশারের ৪ রাকাত আমাদের নবীর স্মৃতি

 

#কুরবানীতে হযরত ইবরাহিম ও ইসমাইলের স্মৃতিই মুখ্য

# হজ্জে এহরাম হযরত ইবরাহিম () এর পোষাকের স্মৃতি

# তলবিয়াতেও ইবরাহিমের স্মৃতি

# তাওয়াফেও ইবরাহিমের স্মৃতি

# ৩ চক্করে রমল করা মুলত সাহাবীদের সুন্নত যা আজো পালন করতে হয়

মুসলমানদের হিজরতের পর মক্কার মুশরিকরা বলাবলি করতে লাগলো যে, ইয়াসরিবে (মদিনা) হিজরতকারী মুসলমানরা আবহাওয়া ও অন্যান্য কারণে দুর্বল ও রুগ্ন হয়ে গেছে। মুশরিকদের এ অহেতুক মিথ্যা অপবাদের প্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদেরকে তাওয়াফের সময় প্রথম ৩ চক্করে রমল তথা বীরদর্পে বাহাদুরি সুলভভাবে চলার নির্দেশ দেন। তারপর থেকে হজ ও ওমরার ফরজ তাওয়াফে আজও সে বিধান অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।

#মকামে ইবরাহিমে হযরত ইবরাহিমের পদচিহ্ন কিন্তু নবীজি মক্কা বিজয়ের দিন সব মুতি ফেলে দেয়ছেন নবী ইবরাহিমের পদচিহ্নিত সে পাথরকে মক্কার সামনে সংরক্ষন করে রাখলেন আর আল্লাহ বলছেন (ওয়াত্তাখাজু মিম মাকামি ইবরাহিমা মুসাল্লা) তাওয়াফের পর এই ইবরাহিম () এর পদ চিহ্ন সম্বলিত পাথরকে সামনে রেখে ২ রাকাত নামাজ না পড়লে আপনার তাওয়াফ কবুল হবেনা।

দেখুন আল্লাহ আমাদেরকে প্রতিটি পদে পদে সেলিব্রেশন শিক্ষা দিচ্ছেন।

# ছাফা মারওয়া হাজেরার দৌড়া দৌড়ির স্মৃতি

# জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করতে হয় তা ইসমাইল () এর পায়ের আঘাতে সৃষ্ট পানি, দুনিয়ার সব পানি বসে পান করতে হয় ২ টি পানি সম্মানাথে দাঁড়িয়ে পান করতে হয় জমজম ও অজুর অবশিষ্ট পানি।

# আরাফাতে অবস্থায় হজ্বের প্রধান ফরয, সেখানে শুধু অবস্থান করতে হবে, সেটা হল আদাম ও হাওয়া () এর একে অপরের সাথে পরিচয়ের স্থান দেখা হওয়ার স্থান

# তারপর ৩ দিন ব্যাপী শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করতে হবে সেখানে অথচ শয়তান নাই তবুও হযরত ইসমাইল () এর স্মৃতিকে তাজা করাই উদ্দেশ্য।

এভাবেই আল্লাহ তায়ালা পুরা হজ্বের সব আমলগুলি মুলত নবীদের স্মরণকে তাজা করেছেন।

 

সবশেষে বলব আমাদের জন্য হাজার মাস থেকে উত্তম হল লাইলাতুল কদর (লাইলাতুল কদরে খাইরুম মিন আলফি শাহার) কেন? (তাহাজ্জালুল মালাইলাতু ওয়া রুহ) সে রাতে জিবরাইল ও ফেরেশতা নাজিল হয় এখন প্রশ্ন হল যে রাত কুরআন নাজিল হল বলে জিবরাইল নাজিল হল বলে এত মর্যাদা যে দিনে নবীর আগমন হল তার কত মর্যদা হতে পারে একবার চিন্তা করা দরকার।

 

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী () যথাযথভাবে শরীয়তের বিধান মোতাবেক, জিকির দরুদ, ওয়াজ নসিহত, হামদ নাত খানির মাধ্যমে ভরপুর ভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন আমিন।

 

কোন মন্তব্য নেই

ULTRA_GENERIC থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.