Header Ads

Header ADS

আল্লাহর কাছে মানুষের জীবনের মূল্য কত? শাওয়াল মাসের ৪র্থ জুমা। Jummah Khutbah bangla

 


শাওয়াল-, ১৪৪৪ হিজরী ১৯ মে ২০২৩ ইং

আল্লাহর কাছে মানুষের জীবনের মূল্য কত?

আমাদের জীবনের মূল্য কত তা বুঝানোর জন্য আমি ৭টি উদাহারণ দিব

) জীবনের মূল্য বুঝার প্রথম উদাহারণ তিরমিজি শরীফের ২০৩২ নং হাদিস

একদিন আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা) কাবার দিকে তাকিয়ে বললেন

مَا أَعْظَمَكِ وَأَعْظَمَ حُرْمَتَكِ وَالْمُؤْمِنُ أَعْظَمُ حُرْمَةً عِنْدَ اللَّهِ مِنْكِ 

হে কাবা তুমি কতইনা বিশাল মর্যাদাবান, তুমি কতইনা সম্মানিত, কিন্তু তোমার চাইতেও মুমিনের সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক বেশী।

· এ হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল একজন মুমিনের মর্যাদা আল্লাহর কাছে কাবা ঘরের চেয়েও বেশী। সুবহানাল্লাহ সুতরাং যারা মুমিন আছেন তারা একবার চিন্তা করে দেখুন আপনার জীবনের মূল্য কতটুকু?

 

) জীবনের মূল্যে বুঝার ২য় উদাহারণ তিরমিজি শরীফের ২০৩৮ নং হাদিস

উসামা ইবনু শারীক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, মফস্বলের লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আমরা কি (রোগীর) চিকিৎসা করব না? তিনি বললেন,

 ‏"‏ نَعَمْ يَا عِبَادَ اللَّهِ تَدَاوَوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَمْ يَضَعْ دَاءً إِلاَّ وَضَعَ لَهُ شِفَاءً

হ্যাঁ, হে আল্লাহর বান্দাহগণ! তোমরা চিকিৎসা কর। আল্লাহ তাআলা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ বা নিরাময়ের ব্যবস্থা রাখেননি (রোগও দিয়েছেন রোগ সারাবার ব্যবস্থাও করেছেন)।

 إِلاَّ دَاءً وَاحِدًا ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُوَ قَالَ ‏"‏ الْهَرَمُ ‏"

কিন্তু একটি রোগের কোন নিরাময় নেই। সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল সে রোগটি কি? তিনি বললেনঃ বার্ধক্য।

· এ হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যেহেতু জীবনের মূল্য আছে সেহেতু সুস্থ থাকার জন্য জীবন বাঁচানোর জন্য নবীজি চিকিৎসা গ্রহণ করা ঔষধ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিচ্ছেন।

) জীবনের মূল্য বুঝার জন্য ৩য় উদাহারণ হল- জীবন বাঁচানোর জন্য সাময়ীক সময়ের জন্য হারামও হালাল হয়ে যায়।দলিল সুরা বাকারার ১৭৩ নং আয়াত

إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللّهِ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلاَ عَادٍ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ

তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। [সুরা বাকারা - ২:১৭৩]

*এখানেও বুঝা যাচ্ছে জীবনের মূল্য আল্লাহর কাছে আছে তাই জীবন বাঁচাতে হারাম গ্রহণ করতেও আল্লাহ তায়ালা অনুমতি দিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ

) জীবনের মূল্যের ৪ নং ‍উদাহারণ- অতি চমৎকার একটি হাদিস আবু দাউদ শরীফ এর ৩৩৬ নং হাদিসের বর্ণনা

জাবির (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা কোন এক সফরে বের হলে আমাদের মধ্যকার একজনের মাথা পাথরের আঘাতে ফেটে যায়। ঐ অবস্থায় তার স্বপ্নদোষ হলে সে সাথীদের জিজ্ঞেস করল, তোমরা কি আমার জন্য তায়াম্মুমের সুযোগ গ্রহণের অনুমতি পাও? তারা বলল, যেহেতু তুমি পানি ব্যবহার করতে সক্ষম, তাই তোমাকে তায়াম্মুম করার সুযোগ দেয়া যায় না। অতএব সে গোসল করল। ফলে সে মৃত্যুবরণ করল। আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলে তাঁকে বিষয়টি জানানো হলো। নবীজি বললেন

 ‏"‏ قَتَلُوهُ قَتَلَهُمُ اللهُ

এরা অন্যায়ভাবে তাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ এদের ধ্বংস করুন।

তাদের যখন (সমাধান) জানা ছিল না, তারা কেন জিজ্ঞেস করে তা জেনে নিল না

 كَانَ يَكْفِيهِ أَنْ يَتَيَمَّمَ وَيَعْصِرَ

ঐ লোকটির জন্য তায়াম্মুম করাই যথেষ্ট ছিল।

*সুতরাং এখানেও দেখা যায় জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনে গোসল ফরয হলেও গোসল না করে তায়াম্মুম করা যায়। এতেও বুঝা যায় জীবনের মূল্য বেশী।

*অজু ও গোসলের জন্য তায়াম্মুমের নিয়ম একই, গোসলের জন্য সারা শরীরে মাটি ঢালার প্রয়োজন নাই,

তায়াম্মুমের নিয়ম: প্রথমে নিয়ত করবেন তারপর বিসমিল্লাহ বলবেন তারপর মাটি ও মাটি জাতিয়া পবিত্র জিনিষের উপর দুই হাত মারতে হবে তারপর মুখমন্ডল মাসেহ করতে হবে, ২য় বার হাত মেরে প্রথমে বাম হাতের ৪ আঙ্গুল দিয়ে ডান হাতের পিট, বাম হাতের পেট দিয়ে ডান হাতের পেট ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল মাসেহ করবে, তেমনি ভাবে বাম হাত মাসে করবে আঙ্গুল খিলাল করবে।

) জীবনের মূল্যের ৫ নং ‍উদাহারণ-

যদি কেহ আপনাকে কপালে পিস্তল ধরে আর বলে কুফুরি বাক্য বলার জন্য তখন জীবন বাঁচানোর জন্য মুখে সাময়িক কুফুরি বাক্য বললেও আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে গুনাহ দিবেন না,  যেমন

আল্লাহ তায়ালা সুরা নাহল এর ১০৬ নং আয়াতে এরশাদ করেন

إِلاَّ مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالإِيمَانِ

যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে (তার জন্য আল্লাহ পক্ষ থেকে কোন আযাব ও শাস্তি নাই।  [সুরা নাহল - ১৬:১০৬]

*দেখুন আল্লাহ তায়ালা জীবন বাঁচানোর জন্য এখানেও ছাড় দিয়েছেন।

) জীবনের মূল্যের ৬ নং উদাহারণ

তিরমিজি শরীফের ১৩৯৫ নং হাদিস

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

‏ "‏ لَزَوَالُ الدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللَّهِ مِنْ قَتْلِ رَجُلٍ مُسْلِمٍ ‏"‏ ‏.‏

আল্লাহর নিকট পৃথিবী ধ্বংস হওয়াটা অধিকতর সহজ ব্যাপার, একজন মুসলিম খুন হওয়ার পরিবর্তে।

*একজন মুমিনকে হত্যা করে দেয়ার চেয়ে গোটা দুনিয়া ধ্বংস হওয়াটা সহজ, তথা একজন মুমিনের জীবনের মূল্য আল্লাহর কাছে গোটা পৃথিবীর চেয়েও বেশী দামী।

৭) জীবনের মূল্যের ৭ নং উদাহারণ

তিরমিজি শরীফের ১৩৯৮ নং হাদিস

আবূল হাকাম আল-বাজালী (রহঃ) বলেন, আমি আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরাইরা (রাঃ)-কে বর্ণনা করতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

"‏ لَوْ أَنَّ أَهْلَ السَّمَاءِ وَأَهْلَ الأَرْضِ اشْتَرَكُوا فِي دَمِ مُؤْمِنٍ لأَكَبَّهُمُ اللَّهُ فِي النَّارِ ‏"‏ ‏.‏

আসমান-জমিনের মধ্যে বসবাসকারী সকলে একত্রে মিলিত হয়েও যদি একজন মুমিনকে মেরে ফেলার কাজে শরীক থাকে তাহলে আল্লাহ তাআলা তাদের সকলকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।

**৭টি কুরআন হাদীস দ্বারা বুঝতে পারলাম  একজন ঈমানদারের জীবনের দাম আল্লাহর কাছে এই দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু থেকে অনকে বেশী। আল্লাহ আমাদেরকে এই জীবনকে মূল্যায়ন করার তৌফিক দান করুন ।

হত্যা করার অপরাধ

সুরা নিসার ৯৩ নং আয়াত

وَمَن يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا  (1)فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ  (2)خَالِدًا فِيهَا(3) وَغَضِبَ اللّهُ عَلَيْهِ  (4)وَلَعَنَهُ (5)وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا

যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি (1) জাহান্নাম, (2)তাতেই সে চিরকাল থাকবে। (3)আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, (4)তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং (5)তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। [সুরা নিসা - ৪:৯৩]

এটা হল মুমিনের জীবনের দাম

আরেক আয়াতে আছে যে কোন মানুষকে হত্যা করলে চাই সে অমুসলমান হউক - যেমন

সুরা মাযেদার ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

مَن قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا

যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করেএবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে।

#ইবনে আব্বাস (রা) বলেন যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কাহাকেও হত্যা করিল, সে যেন বিশ্বমানবকে হত্যা করিল।

আর কেহ যদি কোন একজন মানুষের জীবন বাঁচায় সে মুলত সারা বিশ্ব বাসীর জীবন বাঁচাল।

# চিকিৎসা সেবা দিয়ে একজন অসুস্থকে যদি বাঁচাবার পারেন তাহলে আপনি মুলত সারা বিশ্বের মানুষকে বাঁচালেন

# ক্ষুধায় কোন মানুষ মারা যাচ্ছে তাকে খাদ্য  দিয়ে জীবন বাঁচালে মুলত আপনি সারা বিশ্বের সকল মানুষকে বাঁচালেন

# একজন লোক হতাশায় ডুবে তিলে তিলে মারা যাচ্ছে তাকে হতাশা থেকে বের হওয়ার জন্য সাহস দিয়ে যদি বাঁচান তাহলে মুলত আপনি সারা বিশ্বের মানুষকে বাঁচালেন

মানসিক সুখের আমল: মানুষের সেবা করার মধ্যে যে সুখ আছে তা আর কোন কিছুতে নাই যেমন

তফসিরে ইবনে কাসিরের ৩য় খন্ডের ৫১৪ পৃষ্ঠায় একটি হাদিস উল্লেখ আছে

ইমাম আহমদ (রহ) বলেন- আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) হতে বর্ননা করেন- একদিন হযরত হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব নবী করিম () এর কাছে গিয়ে বলেন এয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যাতে আমার জীবন সুখের হয়, তখন নবী করিম () বললেন হে হামযা! আপনি মানুষের জীবন রক্ষা করা পছন্দ করেন নাকি মানুষ হত্যা করা পছন্দ করেন? উত্তরে তিনি বলেন মানুষের জীবন রক্ষা করা আমি পছন্দ করি, তখন রাসুলুল্রাহ () বললেন, তাহলে আপনি এই কাজ করতে থাকুন। তাহলে আপনার জীবন সুখের হবে। সুবহানাল্লাহ।

আমরাও যদি মানুষের জীবন রক্ষার কাজ করি, মানবিক কাজ করি, তার মধ্যেই আমরা জীবনের সুখ খুঁজে পাব। ইনশা আল্লা

টেনশন দুর করতে সিগারেট

অনেকে টেনশন হলে সিগারেট পান করে অথচ সিগারেট পান করাও একরকম নিজেকে নিজে হত্যা করার শামিল

আল্লাহ বলেন- সুরা বাকারার ১৯৫ নং আয়াতে

وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَلاَ تُلْقُواْ بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوَاْ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন। [সুরা বাকারা - :১৯৫]

সিগারেট জাহান্নামের একটি খাদ্যের সাথে মিলে যায়

জাহান্নামের একটি খাদ্য হল দরি যা খেলে ক্ষুধাও নিবারন হয়না    স্বাস্থ্যও ভালো হয়না- তেমনি সিগারেট খেলেও ক্ষধুও নিবারন হয়না স্বাস্ত্যও ভাালো হয়না বরং স্বাস্থ্যের আরো ক্ষতি হয়, তাই আমাদের উচিত এই বদ অভ্যাসটা ত্যাগ করা।

দলিল- সুরা গাশিয়াহ

لَّيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلَّا مِن ضَرِيعٍ

কন্টকপূর্ণ ঝাড় ব্যতীত তাদের জন্যে কোন খাদ্য নেই। [সুরা গাশিয়াহ - ৮৮:৬]

لَا يُسْمِنُ وَلَا يُغْنِي مِن جُوعٍ

এটা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধায়ও উপকার করবে না। [সুরা গাশিয়াহ - ৮৮:৭]

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল https://www.youtube.com/@Allahwalamedia https://www.youtube.com/@Allbangladua https://www.youtube.com/@Jaalhaq আমাদের ফেসবুক পেজ

আমাদের ফেসবুক গ্রুপ

ইনস্টাগ্রাম https://www.instagram.com/jaalhaq.bd/ আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন

কোন মন্তব্য নেই

ULTRA_GENERIC থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.