Header Ads

Header ADS

চুড়ান্ত সফলতা লাভে ২৭টি কোরআনী আমল। ৭টি নববী দোয়া ও ওজিফা।


রবিউস সানি-, ১৪৪৬ হিজরী

মুমিনের দুনিয়া আখেরাতে মহা সাফল্যের ৩৪টি 

কোরান হাদীসের আমল



وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

সুরা আল ইমরানের ১৩০ নং আয়াতের অংশ বিশেষ

আল্লাহকে ভয় কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার

 ভুমিকা: দুনিয়া আখেরাতে সফলতার উপায় কি তা আজ আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব ঈমানদার হিসেবে প্রত্যেক মুমিনের সফলতা হবে যদি তার ঈমান সালামত থাকে এখন আমাদের জানতে হবে কি কি কারনে ঈমান সালামত থাকেনা

নবী আকরাম () একদিন বার কসম খেয়েছেন

সহিহুল বুখারীর ৬০১৬ নং হাদিসের বণনা নবী আকরাম () একদিন বার কসম খেয়ে বলেন (ওয়াল্লাহে লা ইউমিনু ওয়াল্লাহে লা ইউমিনু, ওয়াল্লাহে লা ইউমিনু) খোদার কসম সে মুমিন নয়, খোদার কসম সে মুমিন নয়, খোদার কসম সে মুমিন নয় (চিন্তা করুন সাহাবায়ে কেরাম তখন কেমন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল- কারন নবী করিম () যার ব্যপারে বার কসম করে বলছিলেন যে সে মুমিন হতে পারেনা- সে কত বড় দুর্ভাগা) সাহাবীদের মধ্যে একজন অনেক ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলেন এয়া রাসুলাল্লাহ আপনি কার ব্যপারে এমন কথা বলছেন?

আল্লাহর রাসুল () জবাব দিলেন

الَّذِي لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ

যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে না।  বুখারী ৬০১৬ (মুত্তাফাক আলাই)

নিজের ভায়ের জন্য একই রকম পছন্দ করা

মুসলিম এর ৪৫ নং হাদিসের বণনা আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ 

" لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ ‏"‏

 তোমাদের কেউ মুমিন হবে না যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে তার ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করে।

নবীজিকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসা

বুখারী শরীফের ১৪ নং হাদিসের বণনা আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ

"‏فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ  لاَ يُؤْمِنُ  أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ ‏"‏‏.‏

 সেই পবিত্র সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তানের চেয়ে বেশি প্রিয় হই।

চোর, ব্যভীচারী, মদপানকারীর ঈমান থাকেনা

বুখারীর ৫৫৭৮ নং হাদিসের বণনা: আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

لاَ يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلاَ يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلاَ يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ

 ব্যভিচারী ব্যভিচার করার সময়ে মুমিন থাকে না, মদ পানকারী মদ পান করার সময়ে মুমিন থাকে না। চোর চুরি করার সময়ে মুমিন থাকে না।

ওয়াদাভঙ্গকারী ও আমানতের খেয়ানতকারী

সহিহুল জামের ৭১৭৯ নং হাদিসের বণনা আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় খুতবাতে বলতেন

لَا إِيْمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ وَلَا دِينَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهُ

যার আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই। আর যে অঙ্গীকার পালন করে না, তার দ্বীন নেই।

হাদিস সমূহের মুল কথা:

মুমিনের সফলতার মূলমন্ত্র হল ঈমান, আর হাদীস শরীফ থেকে জানতে পারলাম ৬টি কারনে ঈমান ভঙ্গ হয় যেমন

) প্রতিবেশীকে কষ্ট দিলে

) নিজের জন্য যা পছন্দ তা ভায়ের জন্য পছন্দ না করলে

) নবীজিকে সকলের চেয়ে বেশী ভালোনাবাসলে

) ওয়াদাভঙ্গ করলে

) আমানতের খেয়ানত করলে

) চুরি, ব্যভিচার মদপানকরলে

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল ঈমানভঙ্গকারী এসব কাজ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিকদান করুন আমিন।

(৭-১০) আল্লাহ বলেন ৪ প্রকার লোক সফল

আল্লাহ তায়ালা সুরা আসরে কসম করে বলেন সব মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ তবে প্রকার লোক ক্ষতিগ্রস্থ নয় তারা হল () যারা ঈমান আনে () যারা সৎ কাজ করে () যারা একে অপরকে সত্যের পথে আহ্বান করে () যারা একে অপরকে ধৈর্য্যের কথা বলে

وَالْعَصْرِ

কসম যুগের (সময়ের),

إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ

নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত;

إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ

কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকীদ করে সত্যের এবং তাকীদ করে সবরের।

(১১-১৭) সুরা মুমিনুনে ৭টি আমল

আল্লাহ সুরা মুমিনুনের মধ্যে মুমিনের সফলতার ৭টি আমল বলেছেন যে ৭টি আমল করলে মুমিনগন সফলকাম যেমন

قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ

মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, ()

الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ

যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র; ()

وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ

যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত, ()

وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ

যারা যাকাত দান করে থাকে (৪)

وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ

এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। (৫)

وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ

এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে। [৮]

وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ

এবং যারা তাদের নামাযসমূহের হেফাজত কারী[]

সুতরাং এক কথায় মুমিনদের সফলতার ৭টি আমল

() খুশু খুজুর সাথে বিনয় নম্রতার সাথে নামাজ পড়া

() বেহুদা কথাবার্তা না বলা যেমন মিথ্যা বলা, গিবত করা, গুজব রটানো, গালাগালি করা, অভিশাপ দেয়া, দ্বিমুখি কথা বলা এসবই হল অনথক কথা

() পাই পাই হিসাব করে প্রতি বছর যাকাত দান করা

() যৌনাঙ্গকে হেফাজত করা, এটা বিবাহের মাধ্যমে হিফাজত করা যায়, আর যদি বিবাহের সামর্থ্য না থাকে তাহলে রোজা রাখার মাধ্যমেও যোনাঙ্গের হেফাজত করা যায়

() আমানত রক্ষা করা

() ওয়াদা রক্ষা করা : ওয়াদা বা চুক্তি কিছু লিখিত হয় কিছু অলিখিত হয়, যেমন পিতা মাতা সারাজীবন সন্তানের জন্য পরিশ্রম করে করে তাদের যৌবন শেষ করে দেয়, এক সময় মা বাবা বৃদ্ধ হয়ে যায় সন্তান যুবক হয়ে যায়, তখন সন্তানের দায়িত্ব হল সে বৃদ্ধ পিতা মাতার খেদমত করা, এটা একটা অলিখিত ওয়াদা বা চুক্তি

তেমনি স্বামী স্ত্রীর মধ্যেও চুক্তি হয়, স্বামী তার স্ত্রীর ভরন পোষন দিবে, আর স্ত্রী স্বামীর আদেশ পালন করবে, সন্মান করা

তেমনি আপনি চাকরি করেন আর চাকরির চুক্তি মোতাবেক আপনাকে পুরা সময় দিতে হবে, আপনি কারো সাথে পুরা দিনে ঘন্টা কাজ করার ওয়াদা করেছেন আপনি যদি মালিক আসলে কাজ করেন না আসলে বসে বসে মোবাইলে ভিডিও দেখেন তাহলে আপনি ওয়াদা ভঙ্গ করলেন এভাবে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি আমরা নিজ নিজ জায়গায় ওয়াদা রক্ষা করি চুক্তি মোতাবেক যথাযথ কাজ করি তাহলে আমাদের দুনিয়াও সুন্দর হয়ে যাবে, আখেরাতও সুন্দর হয়ে যাবে

নবীর নবুয়তের আগের ওয়াদা দিন এক জায়গায় অপেক্ষাকরা

আমার নবীর এত সফলতার পিছনে সবচেয়ে বড় কারন হল ওয়াদা আমানত রক্ষা করার কারনে, সে জন্য তাকে বলা হয় আস সাদেকুল আমিন নবুয়তের আগের একটি ঘটনা নবী করিম () এক লোকের সাথে কোন একটি বিষয়ে কথা হয়, সে লোক বলেন আপনি এখানে একটু অপেক্ষা করুন আমি এখনই আসছি, এই বলে লোকটি বাড়ী চলে গেলো, সে নবীজিকে যে দাঁড় করিয়ে এসেছে ভুলে গেছে, হাদিসের মধ্যে শব্দ আছে, আর বিশারদগন লিখেন তা হবে দিন, নবীজি সে লোকের জন্য সেখানে দিন অপেক্ষা করেছেন, দিন পর সে নবীজিকে সেখানেই অপেক্ষা রত দেখতে পেল সুবহানাল্লাহ

() নামাজের হেফাজত করা

নামাজের হেফাজতের ৯টি উপকারিতা

হজরত ওসমান গনি (রা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি সময়ের প্রতি লক্ষ রেখে গুরুত্বসহকারে নামাজের ব্যাপারে যত্নবান থাকে, ৯টি জিনিস দিয়ে আল্লাহপাক তাকে সম্মানিত করেন- ১. আল্লাহ তায়ালা তাকে ভালোবাসেন।

২. তাকে সুন্দর স্বাস্থ্য দান করেন। ৩. ফেরেশতারা তার হেফাজত করেন। ৪. তার ঘরে বরকত দান করেন। ৫. তার মুখমণ্ডলে বুজুর্গদের চেহারার নূর ফুটে ওঠে। ৬. তার অন্তর কোমল হয়ে যায়, ৭. সে পুলসিরাতের ওপর দিয়ে বিজলির মতো পার হয়ে যাবে। ৮. আল্লাহপাক তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন। ৯. বেহেশতে ওইসব লোকের প্রতিবেশী হওয়ার সৌভাগ্য হবে, যাদের কিয়ামতের দিন কোনো ভয়ভীতি থাকবে না এবং কোনো প্রকার চিন্তাও হবে না।'

(১৮-২২) সুরা বাকারার শুরুতে ৫টি সফলতার আমলের বননা

الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ

যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে [সুরা বাকারা - ২:৩]

والَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ

এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। [সুরা বাকারা - ২:৪]

أُوْلَـئِكَ عَلَى هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম। [সুরা বাকারা - ২:৫]

(২৩-৩০) (লাআল্লাকুম তুফলিহুন) বলে আরো ৮টি আয়াত আছে যেমন

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পারো। [সুরা ইমরান - ৩:১৩০]

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اصْبِرُواْ وَصَابِرُواْ وَرَابِطُواْ وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পারো। [সুরা ইমরান - ৩:২০০]

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَابْتَغُواْ إِلَيهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُواْ فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য লাভে অছিলা তালাশ কর এবং তাঁর পথে জেহাদ কর যাতে তোমরা সফলকাম হও। [সুরা মায়েদা - ৫:৩৫]

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنصَابُ وَالأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা সফলকাম হও। [সুরা মায়েদা - ৫:৯০]

قُل لاَّ يَسْتَوِي الْخَبِيثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ أَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيثِ فَاتَّقُواْ اللّهَ يَا أُوْلِي الأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

বলে দিনঃ অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের প্রাচুর্য তোমাকে বিস্মিত করে। অতএব, হে বুদ্ধিমানগণ, আল্লাহকে ভয় কর-যাতে তোমরা সফলতা পাও। [সুরা মায়েদা - ৫:১০০]

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُواْ وَاذْكُرُواْ اللّهَ كَثِيراً لَّعَلَّكُمْ تُفْلَحُونَ

হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কোন বাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত হও, তখন সুদৃঢ় থাক এবং  অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির  কর যাতে তোমরা সফল হতে পার। [সুরা আনফাল - ৮:৪৫]

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاء وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। [সুরা নুর - ২৪:৩১]

فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيراً لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। [সুরা জুময়া - ৬২:১০]

৮টি আয়াতের সারাংশ হল

) সফলতার জন্য সুদী কারবার ছাড়তে হবে

) ধৈর্য্য দৃঢ়তা অবলম্বান করতে হবে

) আল্লাহর নৈকট্য অজনের জন্য অসিলা তালাশ করতে হবে জিহাদ করতে হবে

) মদ, জুয়া, প্রতিমা, ভাগ্য গননা, থেকে বেঁচে থাকতে হবে

) পবিত্র হালাল উপাজন করতে হবে হারামে প্রাচুয থাকলেও বরকত নাই

) যুদ্ধের ময়দানে ছাবেত কদম থাকতে হবে, আর আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে

) ঈমানদার নারীরা যেন দৃষ্টিকে নত রাখা, যৌন অঙ্গর হেফাজত করা নিজেদের সাজ সজ্জা পর পুরুষকে প্রদশন করা থেকে বিরত থাকতে হবে

) নামাজ শেষে হালাল রুজি রোজগারে বের হয়ে যেতে হবে

সফলতার ৩১ম আমল হল আল্লাহর উপর ভরসা করা

সফলতা লাভের জন্য ৩১ নং আমল হল আল্লাহর উপর ভরসা করা যেমন আল্লাহ সুরা আল ইমরানের ১৬০ নং আয়াতে বলেন

إِن يَنصُرْكُمُ اللّهُ فَلاَ غَالِبَ لَكُمْ وَإِن يَخْذُلْكُمْ فَمَن ذَا الَّذِي يَنصُرُكُم مِّن بَعْدِهِ وَعَلَى اللّهِ فَلْيَتَوَكِّلِ الْمُؤْمِنُونَ

যদি আল্লাহ তোমাদের সহায়তা করেন, তাহলে কেউ তোমাদের উপর পরাক্রান্ত হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে এমন কে আছে, যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে? আর আল্লাহর ওপরই মুসলমানগনের ভরসা করা উচিত। [সুরা ইমরান - ৩:১৬০]

 

সফলতার ৩২তম আমল হল সাধনা করা

আল্লাহ সুরা আনকাবুতের ৬৯ নং আয়াতে বলেন

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ

যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন। [সুরা আনকাবুত - ২৯:৬৯]

সাধনা করলে অমুসলমানরাও দুনিয়াতে সফল হয় যেমন উইলমা রুডলফ

আমেরিকার দরিদ্র পরিবারের মেয়ে যার পা ছোট বেলায় পলিওর কারনে অকেজো হয়ে যায়, ডাক্তার বলে দিয়েছে সে কোনদিন নিজ পায়ে দাড়াতে পারবেনা, কিন্তু সে ছোট্ট মেয়েটির অদম্য সাধনা মনোবল ইচ্ছার কারনে সে বছর থেকে পায়ের উপর দাঁড়াতে সক্ষম হল এবং ১৩ বছর বয়সে ১৯৬০ সালের অলম্পিকে সে ১০০/২০০/৪০০ মিটার দৌড়ে স্বর্ণের পদন জিতে নেয়

ইমাম বুখারীর সাধনা

ইমাম বুখারী (রহ) ছোট বেলায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু উনার মায়ের দোয়ায় তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান, তিনি রাত দিন মুজাহাদা করে চেষ্টা প্রচেষ্টা করে কোরআনের হাফেজ হন, অত্যন্ত পরিশ্রম করে তিনি লক্ষ হাদিস হিফজ করেন যার মত পৃথিবীর বুকে এমন সাধনাকারী ২য় আরেকজন নাই, ফলে তিনি যে কিতাব রচনা করেছেন তা সারা বিশ্বে পবিত্র কুরআনের পর ২য় স্থান লাভ করেছে

ব্যবসায়ীদের জন্য সফল হওয়ার ৪ উসুল:

হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ (রা) উনার জন্য নবী করিম () দোয়া করেছেন আল্লাহর নবী বলেন আবদুর রহমান হল রহমানের তাজের। তিনি এত বড় ব্যবসায়ী ও ধনী ছিলেন ভারত উপমহাদেশকে কিনেতে পারবেন। তিনি বলেন আমার ব্যবসার ৪টি উসুল যা তিনি নবীজির কাছ থেকে শিখেছেন

) কোনদিন বাকীতে মাল ক্রয় করি নাই

) কোনদিন বাকী বিক্রী করি নাই, বাকী দেওয়া না জায়েজ নয় জায়েজ, তবে আমার নবী ঋণগ্রস্থের জানাযা পড়াতেন না, তাই তিনি কাউকে বাকী দিয়ে ঋণগ্রস্থ করে রাখা পছন্দ করতেন না।

) কোনদিন মাল মওজুদ করি নাই, দাম বাড়ার আকাংখায় বা বাড়ানোর আকাংখায় আমি মাল মওজুদ করে রাখি নাই

) কোনদিন আমি আমার মালের ত্রুটি গোপন করি নাই

সফলতার পথে বাঁধা হল অলসতা- ঘাড়ে শয়তানের আলস্যের গিড়া

যারা অলস তারা সফল হতে পারেনা, আমাদের সফলতাকে শয়তান অলসতার রশি দিয়ে বেঁধে দেয় শয়তান প্রতি রাতে আমাদের ঘাড়ে অলসতার রশি বেঁধে দেয় যেমন বুখারীর শরীফের ১১৪২ নং হাদিসের বণনা

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ 

"‏ يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِيَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلاَثَ عُقَدٍ

তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদংশে তিনটি গিঠ দেয়।

প্রতি গিঠে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাক। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে একটি গিঠ খুলে যায়, পরে উযূ করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়, অতঃপর সালাত আদায় করলে আর একটি গিঠ খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয়, উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে

وَإِلاَّ أَصْبَحَ خَبِيثَ النَّفْسِ كَسْلاَنَ ‏"‏‏.‏

অন্যথায় সে সকালে উঠে কলূষ কালিমা ও আলস্য সহকারে। 

 

#অতএব সকালে দেরী করে ঘুম থেকে উঠা আমাদের সফলতার পথে শয়তানের অনেক বড় বাঁধা, আমাদেরকে শয়তানের সে বাঁধাকে অতিক্রম করার চেষ্টা করতে হবে এবং অলসতা থেকে বাঁচার দোয়াও করতে হবে

অলসতার বিরুদ্ধে নবীজির দোয়া

বুখারীর ২৮৯৩ নং হাদিসের বাণনা হযরত আবু ত্বলহা (রা) বলেন আমি নবীজিকে প্রায় সময় এই দোয়া পড়তে শুনতাম

اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ 

হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি।

ইমাম রাগেব এর মূল্যবাণ বাণী অলসদের ব্যপারে

# ইমাম রাগেব (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি অলসতা করেছে সে ধ্বংস হয়েছে। অলস ব্যক্তি মানুষ তো নয়; বরং জীবজন্তুর কাতারেও পড়ে না। সে হলো মৃতদের মতো। যে ব্যক্তি অলসতাকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করে এবং অত্যধিক  আরাম-আয়েশের দিকে ঝুঁকে পড়ে, সে নিজের শান্তি হারিয়ে ফেলে। বলা হয়ে থাকে, যদি তুমি চাও কখনো ক্লান্ত হবে না, তাহলে (পরিশ্রম করে) ক্লান্ত হও। যাতে সামনে তোমাকে ক্লান্তি ছুঁতে না পারে।

অর্থ্যাৎ এখন পরিশ্রম করলে যখন পরিশ্রম করার শক্তি থাকবেনা তখন শান্তি পাবে, আর এখন অলসতা করলে যখন শক্তি থাকবেনা তখনও পরিশ্রম করতে হবে।

মহাসাফল্য অজনের আমল (ফাকাদ ফাজা ফাউজান আজিমা)

পবিত্র কুরআনের আরো কিছু আমলের কথা আছে যা করলে আল্লাহ মহা সাফল্য অর্জনের ঘোষনা দিয়েছেন যেমন

৩৩ নং আমল: সুরা আহযাবের ৭১নং আয়াতে বলা হয়েছে

وَمَن يُطِعْ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا

যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। [সুরা আহযাব - ৩৩:৭১]

৩৪ নং আমল: সুরা আল ইমরানের ১৮৫ নং আয়াতে এরশাদ করেন

كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ

প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই সফলকামআর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়। [সুরা ইমরান - ৩:১৮৫]

সুতরাং কিয়ামতের দিন যদি জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারি, জান্নাত লাভ করতে পারি সেটাই একজন মুমিনের জন্য চুড়ান্ত সফলতা দুনিয়া হল শুধু ধোকা

আল্লাহ আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন, অলসতা থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন,  দুনিয়া আখেরাতের মহা সাফল্য দান করুন আমিন

 


কোন মন্তব্য নেই

ULTRA_GENERIC থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.