মহানবীর শান- পবিত্র কোরআনের হাজারো স্থানে প্রিয় নবীর শান ও মান
কুরআনে হাজার স্থানে
মহানবীর (দঃ) এর শানের বয়ান
আমাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ, আর এই সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে আমরা ততটুকু নবীর শান ও মান বয়ান করতে পারব যতটুকু আমাদের সীমিত জ্ঞান আছে। মানুষ যেহেতু ক্ষুদ্র জ্ঞানের অধিকারী সেহেতু সারা দুনিয়ার মানুষ কেয়ামত পর্যন্ত বয়ান করে কেয়ামত পযন্ত লিখে ওয়াজ করে মহানবীর শান ও মান শেষ করতে পারবেনা।
কেননা যার ব্যপারে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ঘোষনা দিয়েছেন (ইন্নাকা লায়ালা খুলুকিন আজিম)
নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী, (সূরা কলম, আয়াত-৪) যে মহান রব নবীর চরিত্র সম্পর্কে সার্টিফিকেট দিলেন নবী হলেন মহান চরিত্রের অধিকারী তাই দুনিয়ার যেই নবীর শান বয়ান করেছেন সে পূর্ণাঙ্গ বয়ান করতে পারেনি। যেই নবীর শান লিখেছে সে অসম্পূর্ণই লিখেছে। কেননা দুনিয়ার কোন মানুষই পূর্ণাঙ্গভাবে নবীর শান ও মান নবীর চরিত্র সম্পর্কে পরিপূর্ণ বয়ান করার ক্ষমতা রাখে না। আমি বা আমরা যে বয়ান করছি, লিখছি পড়ছি এসবই শুধু মাত্র বরকত হাসিলের জন্য। কারন আমাদের এলম হল নাকেস আর নাকেস জ্ঞান দ্বারা কখনো কামেল হাস্তির চরিত্র বয়ান করা সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ ছাড়া কোন বান্দার পক্ষেই সে নবীর শান সম্পর্কে জানাও সমব্ভন নয় বলাও সম্ভব নয়।
আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন (ওয়ারাফানা লাকা জিকরাক) অর্থ্যাৎ আমি আপনার শানের বয়ান আপনার আজমতের বয়ান, আপনার সিরাতের ব’য়ান, আপনার রহমতের বয়ান, কুল কায়েনাতের সবকিছু থেকে আপনার খাতিরে উঁচু করে দিয়েছি।
নবীর উপযুক্ত শান ও মান একমাত্র বয়ান করতে পারবেন রাব্বুল ইজ্জত। কারন স্বয়ং আল্লাহই নবীর শানকে উঁচু করেছেন। (ওয়ারাফানা লাকা জিকরাক) তাই নবীর উচ্চতা নবীর শান বুঝতে হলে আগে আল্লাহর শান জানতে হবে। আল্লাহর কুদরত জানতে হবে। আল্লাহর ক্ষমতা জানতে হবে। আল্লাহ তায়ালা তার কুদরত ও ক্ষমতা মোতাবেক নবীর শানকে উচ্চ করেছেন। তাই যার শানকে স্বয়ং আল্লাহ উচ্চ করেছেন তার শানকে দুনিয়ার কারো সাথে তুলনা করা, ক্ষুদ্র জ্ঞানে ধরনা করা, মনুষ্য জ্ঞানে সে শানকে বুঝার চেষ্টা করা সম্ভব নয়।
তাই দুনিয়ার সকল জীবনী গ্রন্থ পরে দেখবেন, আগে কুরআন দেখতে হবে যে কিভাবে আল্লাহ নবীর জিকিরকে বুলন্দ করেছেন। শান ও মানকে উচ্চ করেছেন।
হযরত আয়শা (রা) নবীর শান বয়ান করতে গিয়ে বলেন (কানা খুলুকুহুল কুরআন)
সুতরাং আসুন আল্লাহ তায়ালা নবীর শানকে কুরআনে কিভাবে বয়ান করেছেন তার একটি নমুনা দেখি
কুরআনের নবীর শান-১
আল্লাহ কুরআনে কোন কোন জায়গায় নবীকে নিজের নামের পোষাক পরিধান করিয়ছেন?
যেমন-
১। রাউফুর রাহিম- আল্লাহ নিজের ব্যপারে এরশাদ করেন
إِنَّ اللّهَ بِالنَّاسِ لَرَؤُوفٌ
رَّحِيمٌ
নিশ্চয়ই আল্লাহ, মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, করুনাময়। [ সুরা বাকারা ২:১৪৩ ]
নিজের হাবিবের ব্যপারে এরশাদ করেন
لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ
أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ
رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়। [ সুরা তাওবা ৯:১২৮ ]
২। হাক্কুল মুবিন- সুরা নুরে এরশাদ করেছেন
يَوْمَئِذٍ يُوَفِّيهِمُ اللَّهُ
دِينَهُمُ الْحَقَّ وَيَعْلَمُونَ أَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ الْمُبِينُ
সেদিন আল্লাহ তাদের সমুচিত শাস্তি পুরোপুরি দেবেন এবং তারা জানতে পারবে যে, অল্লাহই সত্য, স্পষ্ট ব্যক্তকারী। [ সুরা নুর ২৪:২৫ ]
নিজের মাহবুবের শানে এরশাদ করেছেন
فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّكَ
عَلَى الْحَقِّ الْمُبِينِ
অতএব, আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করুন। নিশ্চয় আপনি সত্য ও স্পষ্ট পথে আছেন। [ সুরা নাম’ল ২৭:৭৯ ]
৩। নুর- আল্লাহ নিজেকে নুর ৩৫ নং আয়াতে বলেন
اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ
وَالْأَرْضِ
আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের জ্যোতি, [ সুরা নুর ২৪:৩৫ ]
নবীর শানে বলেন সুরা মায়েদার ১৫ নং আয়াতে বলেন
قَدْ جَاءكُم مِّنَ اللّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ
مُّبِينٌ
তোমাদের কাছে একটি উজ্জল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ। [ সুরা মায়েদা ৫:১৫ ]
৪। শাহিদ- সুরা নিসার ৭৯ নং আয়াতে আল্লাহ নিজের নাম বলেছেন
وَكَفَى بِاللّهِ شَهِيدًا
আর আল্লাহ সব বিষয়েই যথেষ্ট-সব বিষয়ই তাঁর সম্মুখে উপস্থিত। [ সুরা নিসা ৪:৭৯ ]
এদিকে সুরা বাকারার ১৪৩ নং আয়াতে নবীর শানে বলেন
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً
وَسَطًا لِّتَكُونُواْ شُهَدَاء عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ
شَهِيدًا
এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে এবং যাতে রসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য।
৫। কারিম- সুরা ইনফিতারে আল্লাহ নিজের ব্যপারে বলেন ৬ নং আয়াতে বলেন
يَا أَيُّهَا الْإِنسَانُ مَا
غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ
হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার রব্বে কারিম সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল? [ সুরা ইনফিতার ৮২:৬ ]
অপরদিকে সুরা তাকভিরের ১৯ নং আয়াতে হুজুরের ব্যপারে ফরমালেন
إِنَّهُ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ
নিশ্চয় কোরআন রাসুলে কারিমের আনীত বাণী, [ সুরা তাকভীর ৮১:১৯ ]
৬। আজিম- সুরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াতে নিজের ব্যপারে এরশাদ করেন
وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। [ সুরা বাকারা ২:২৫৫ ]
আবার সুরা ক্বলমে নবীর শানে বলেন
وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ
আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। [ সুরা কালাম ৬৮:৪ ]
৭। আল খাবির- সুরা আনয়াম ১৮ নং আয়াতে এরশাদ করেন
وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ
وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ
তিনিই পরাক্রান্ত স্বীয় বান্দাদের উপর। তিনিই জ্ঞানময়, সর্বজ্ঞ। [ সুরা আন’য়াম ৬:১৮ ]
সুরা ফুরকানের ৫৯ নং আয়াতে নিজের মাহবুবের ব্যপারে এরশাদ করেন
الرَّحْمَنُ فَاسْأَلْ بِهِ
خَبِيرًا
তাঁর সম্পর্কে যিনি অবগত, তাকে জিজ্ঞেস কর। [ সুরা ফুরকান ২৫:৫৯ ]
৮। শাকুর- সুরা তাগাবুনের ১৭ নং আয়াতে আল্লাহ নিজের ব্যপারে বলেন-
إِن تُقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا
حَسَنًا يُضَاعِفْهُ لَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ شَكُورٌ حَلِيمٌ
যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তিনি তোমাদের জন্যে তা দ্বিগুণ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, সহনশীল। [ সুরা তাগাবুন ৬৪:১৭ ]
আবার সুরা বনি ইসরাইলের ৩ নং আয়াতে এরশাদকরেন-
ذُرِّيَّةَ مَنْ حَمَلْنَا مَعَ
نُوحٍ إِنَّهُ كَانَ عَبْدًا شَكُورًا
তোমরা তাদের সন্তান, যাদেরকে আমি নূহের সাথে সওয়ার করিয়েছিলাম। নিশ্চয় সে ছিল কৃতজ্ঞ বান্দা। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৩ ]
৯। আলিম- সুরা আনফালের ৭৫ নং আয়াতে এরশাদ করেন
إِنَّ اللّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ
عَلِيمٌ
নিশ্চয়ই আল্লাহ যাবতীয় বিষয়ে সক্ষম ও অবগত। [ সুরা আনফাল ৮:৭৫ ]
নবীর শানে সুরা ইউসুফের ৭৬ নং আয়াতে বলেন
وَفَوْقَ كُلِّ ذِي عِلْمٍ عَلِيمٌ
মর্যাদায় উন্নীত করি এবং প্রত্যেক জ্ঞানীর উপরে আছে অধিকতর এক জ্ঞানীজন। [ সুরা ইউসুফ ১২:৭৬ ]
১০। হামিদ-
لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا
فِي الْأَرْضِ وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ
নভোমন্ডল ও ভুপৃষ্ঠে যা কিছু আছে, সব তাঁরই এবং আল্লাহই অভাবমুক্ত প্রশংসার অধিকারী। [ সুরা হাজ্জ্ব ২২:৬৪ ]
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ
نَافِلَةً لَّكَ عَسَى أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا
রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৭৯ ]
এবার আসুন আল্লাহ তায়ালা তার মাহবুবকে কি কি সিফতের ব্যপারে কামালিয়ত দান করেছেন?
১। আল্লামাকা
- আল্লাহ তালিম দিয়েছেন-
وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللّهِ عَلَيْكَ
عَظِيمًا
আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না। আপনার প্রতি আল্লাহর করুণা অসীম। [ সুরা নিসা ৪:১১৩ ]
অর্থ্যাৎ আল্লাহ নবীকে এমন সব কিছুর এলম শিখিয়ে দিয়েছেন যার এলম নবীর কাছে ছিলনা,
পক্ষান্তরে নবীর ব্যপারে আল্লাহ সুরা বাকারার ১৫১ নং আয়াতে বলেন
كَمَا أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولاً
مِّنكُمْ يَتْلُو عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ
وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم
مَّا لَمْ تَكُونُواْ تَعْلَمُونَ
যেমন, আমি পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রসূল, যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না। [ সুরা বাকারা ২:১৫১ ]
২। হেদায়েত-
وَلَـكِنَّ اللّهَ يَهْدِي مَن
يَشَاء
বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। [ সুরা বাকারা ২:২৭২ ]
সুরা শুরায় নিজের মাহবুবের বেলা বলেছেন
وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَى صِرَاطٍ
مُّسْتَقِيمٍ
নিশ্চয় আপনি সরল পথ প্রদর্শন করেন- [ সুরা শূরা ৪২:৫২ ]
৩। তাজকিয়া কারী
بَلِ اللّهُ يُزَكِّي مَن يَشَاء
পবিত্র করেন আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকেই? [ সুরা নিসা ৪:৪৯ ]
যখন মাহবুবের বেলা আসল তখন বলল
يَتْلُو عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا
وَيُزَكِّيكُمْ
যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন; [ সুরা বাকারা ২:১৫১
নবীর কংকর মারাকে আল্লাহ নিজে কংকর মারা বলেছেন
وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ
وَلَـكِنَّ اللّهَ رَمَى
আর তুমি মাটির মুষ্ঠি নিক্ষেপ করনি, যখন তা নিক্ষেপ করেছিলে, বরং তা নিক্ষেপ করেছিলেন আল্লাহ [ সুরা আনফাল ৮:১৭ ]
নবীর হাতে বায়াতকে আল্লাহর হাতে বায়াত বলেছেন
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ
إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ
যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। [ সুরা ফাতাহ ৪৮:১০ ]
আল্লাহর দান ও মোস্তাফার দান
وَلَوْ أَنَّهُمْ رَضُوْاْ مَا
آتَاهُمُ اللّهُ وَرَسُولُهُ وَقَالُواْ حَسْبُنَا اللّهُ سَيُؤْتِينَا اللّهُ مِن
فَضْلِهِ وَرَسُولُهُ إِنَّا إِلَى اللّهِ رَاغِبُونَ
কতই না ভাল হত, যদি তারা সন্তুষ্ট হত আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতে ও তার রসূল যা দিয়েছেন তার উপর এবং বলত, আল্লাহই আমাদের জন্যে যথেষ্ট, আল্লাহ আমাদের দেবেন নিজ করুণায় এবং তাঁর রসূলও, আমরা শুধু আল্লাহকেই কামনা করি। [ সুরা তাওবা ৯:৫৯ ]
আল্লাহ ধনী করেন রাসুল ধনীকরেন
وَمَا نَقَمُواْ إِلاَّ أَنْ
أَغْنَاهُمُ اللّهُ وَرَسُولُهُ مِن فَضْلِهِ
আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদেরকে সম্পদশালী করে দিয়েছিলেন নিজের অনুগ্রহের মাধ্যমে। [ সুরা তাওবা ৯:৭৪ ]
সম্মানের বিষয় যখন আসল
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا
تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ
سَمِيعٌ عَلِيمٌ
মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন। [ সুরা হুজুরাত ৪৯:১ ]
যখন এতায়াতের বিষয় আসল
مَّنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ
أَطَاعَ اللّهَ
যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। [ সুরা নিসা ৪:৮০ ]
সম্পূর্ণ
কুরআনে ২০ জায়গায় আল্লাহ ও রাসুলের এতায়াতের কথা একসাথে এসেছে, ১৮ জায়গায় শুধু
রাসুলের এতায়াতের কথা এসেছে, কিন্তু
কোথাও একা আল্লাহর এতায়াতের কথা কুরআনে আসেনি।
এর কারন হিসেবে ওলামায়ে কেরাম জবাব
দিয়েছেন- যদি আল্লাহ শুধু একটি আয়াতে নিজের এতায়াতের
একক জিকির করতেন তাহলে অনেকে এই ১টি আয়াতকে কেন্দ্র করেই শুধু আল্লাহর এতায়াত করত
রাসুলের এতায়াত ছেড়ে দিত, কেননা আল্লাহর শান ও মান সর্বোদ্ধে ও উঁচু, আল্লাহ খালেক রাসুল মাখলুক, এখন অনেকে সুযোগ
পেত যেহেতু ১টি আয়াতে শুধু আল্লাহর এতায়াতের কতা এসেছে সেহেতু আল্লাহর এতায়াত
করলেই হবে রাসুল এর এতায়াতের প্রয়োজন নাই, সে সুযোগ সন্ধ্যানিদের পথ বন্ধ করে দেয়ার জন্যই আল্লাহ একক ভাবে আল্লাহর
এতায়াতের কথা কুরআনে কোথাও উল্লেখ করেননি।
এবং এটাও বড় ম্যাসেজ যে শুধু আল্লাহকে
মানার দ্বারা মুসলমান হওয়া যায়না, এখনও
খ্রিষ্টানদের এক দল এবং ইহুদীরা আল্লাহকে এক মানে কিন্তু তারা মুসলমান নয় কারন
তারা মোস্তফাকে মানে না, আল্লাহকে মানতে হলে মোস্তফার মাধ্যমে মানতে
হবে।
যখন নবীর কথাবার্তার বিষয় আসল
নবী নিজের মনগড়া কোন কথাই বলে না যাই বলেন তা আল্লাহর অহি, নবীর কথা মুলত অহি-
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَى
এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। [ সুরা নাজম ৫৩:৩ ]
إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى
কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়। [ সুরা নাজম ৫৩:৪ ]
সম্পূণ কোরআনে ১০০টি জায়গায় আল্লাহ তায়ালা
নিজের এবং নিজের হাবিবের জিকির একসাথে করেছেন।
কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই তৌহিদ বেশী বুঝতে গিয়ে ভুল করে ফেলেন, তারা মনে করেন যদি রাসুলের নাম আল্লাহর সাথে জোড়া লাগানো হয় তাহলে শিরিক হয়ে যাবে। নাউজুবিল্লাহ। যদি রাসুলের নাম আল্লাহ নামের পাশে লেখাতে শিরিক হয় তাহলে সারা কুরআন শিরিকে ভরে আছে, মায়াজাল্লাহ আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম।
কিছুদিন আগে আপনারা হয়ত জেনেছেন উত্তর বঙ্গের একটি মসজিদের মেহরাবে কলমা লিখা হয়েছে (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ) সেখানে একটি গ্রুপ সে কলমাকে ভেঙ্গে ফেলেছে।
অনেকে বলে আমরা আল্লাহর সাথে নবীকে মিলিয়ে ফেলি, যারা একথা বলেন তারা ভুল বলেন কারন মিলানো হয় তাকে যে পৃথক ছিল, আল্লাহতো তার হাবিবকে পৃথকই করেননি নিজ থেকে জুদাই করেননি সেখানে মিলানোর প্রশ্ন কিভাবে আসবে?
এখন যারা আমাদেরকে অপবাদ দেয় যে নবীকে আমরা আল্লাহর সাথে মিলিয়ে ফেলি তাদের জ্ঞাতাথে কুরআনের কিছু আয়াত তেলাওয়াত করছি তারপর আপনারাই চিন্তা করে দেখুন আমরা মিলিয়েছি নাকি স্বয়ং আল্লাহ মিলিয়েছেন।
১। মাই ইউতিয়িল্লাহা ওয়া রাসুলুহু
এতায়াতের ব্যপারে আল্লাহ রাসুলকে জোড়া লাগিয়ে দিয়েছেন।
২। অবাধ্যতার ব্যপারে আল্লাহ রাসুলকে নিজের সাথে জুড়ে দিয়েছেন।
সুরা নিসার ১৪ নং আয়াত
وَمَن يَعْصِ اللّهَ وَرَسُولَهُ
وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا
যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। [ সুরা নিসা ৪:১৪ ]
৩। ফয়সালার বিষয়ে আল্লাহ নিজের সাথে রাসুলের নাম জুড়ে দিয়েছেন।
فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ
فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ وَالرَّسُولِ
তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর- [ সুরা নিসা ৪:৫৯ ]
৪। জিহাদের ব্যপারেও আল্লাহ আপন হাবিবকে জুড়ে দিয়েছেন
إِنَّمَا جَزَاء الَّذِينَ يُحَارِبُونَ
اللّهَ وَرَسُولَهُ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে [ সুরা মায়েদা ৫:৩৩ ]
৫। গনিমতের মালের মালিকানার ব্যপারে আল্লাহ তার হাবিবকে নিজের সাথে জুড়ে দিয়েছেন
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الأَنفَالِ قُلِ
الأَنفَالُ لِلّهِ وَالرَّسُولِ
আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, গনীমতের হুকুম। বলে দিন, গণীমতের মাল হল আল্লাহর এবং রসূলের। [ সুরা আনফাল ৮:১ ]
৬। ডাকে সাড়া দেয়ার ব্যপারেও আল্লাহ তার হাবিবকে নিজের নামের সাথে জুড়ে দিলেন
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ
اسْتَجِيبُواْ لِلّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُم لِمَا يُحْيِيكُمْ
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য কর, যখন তোমাদের সে কাজের প্রতি আহবান করা হয়, যাতে রয়েছে তোমাদের জীবন। [ সুরা আনফাল ৮:২৪ ]
৭। চুক্তিভঙ্গের কারনে সম্পকচ্ছেদ করার ঘোষনার ব্যপারেও আল্লাহ তার হাবিবকে নিজের নামের সাথে জুড়ে দিলেন- যেমন
يرَاءةٌ مِّنَ اللّهِ وَرَسُولِهِ
إِلَى الَّذِينَ عَاهَدتُّم مِّنَ الْمُشْرِكِينَ
সম্পর্কচ্ছেদ করা হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে। [ সুরা তাওবা ৯:১ ]
৮। আজান বা ঘোষনা দেয়ার ব্যপারে আল্লাহ তার হাবিবকে নিজের নামের সাথে জুড়ে দিলেন
যেমন এরশাদ হল
وَأَذَانٌ مِّنَ اللّهِ وَرَسُولِهِ
إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الْحَجِّ الأَكْبَرِ أَنَّ اللّهَ بَرِيءٌ مِّنَ
الْمُشْرِكِينَ وَرَسُولُهُ
আর মহান হজ্বের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে লোকদের প্রতি ঘোষণা করে দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ মুশরেকদের থেকে দায়িত্ব মুক্ত এবং তাঁর রসূলও।
৯। কোন কিছু হারাম ঘোষনা করার ব্যপারেও আল্লাহ তার রাসুলের নামকে নিজের সাথে জুড়ে দিয়েছেন
وَلاَ يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ
اللّهُ وَرَسُولُهُ
আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না [ সুরা তাওবা ৯:২৯ ]
১০। কিছু দান করার ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা আপন হাবিবের নামকে নিজের নামের সাথে জুড়ে দিয়েছেন।
وَلَوْ أَنَّهُمْ رَضُوْاْ مَا
آتَاهُمُ اللّهُ وَرَسُولُهُ وَقَالُواْ حَسْبُنَا اللّهُ سَيُؤْتِينَا اللّهُ مِن
فَضْلِهِ وَرَسُولُهُ إِنَّا إِلَى اللّهِ رَاغِبُونَ
কতই না ভাল হত, যদি তারা সন্তুষ্ট হত আল্লাহ ও তার রসূলের উপর এবং বলত, আল্লাহই আমাদের জন্যে যথেষ্ট, আল্লাহ আমাদের দেবেন নিজ করুণায় এবং তাঁর রসূলও, আমরা শুধু আল্লাহকেই কামনা করি। [ সুরা তাওবা ৯:৫৯ ]
দেখুন এই আয়াতে আল্লাহই শিখাচ্ছেন-
مِن فَضْلِهِ
وَرَسُولُهُ
আল্লাহ ও তার রাসুলের ফজলে-করুনায়,
আর আমরা বলি আল্লাহর ফজলে।
১১। সন্তুষ্টি বা খুশি করার বিষয়েও আল্লাহ তার হাবিবের নাম নিজের সাথে বয়ান করেছেন
يَحْلِفُونَ بِاللّهِ لَكُمْ
لِيُرْضُوكُمْ وَاللّهُ وَرَسُولُهُ أَحَقُّ أَن يُرْضُوهُ إِن كَانُواْ
مُؤْمِنِينَ
তোমাদের সামনে আল্লাহর কসম খায় যাতে তোমাদের রাযী করতে পারে। অবশ্য তারা যদি ঈমানদার হয়ে থাকে, তবে আল্লাহকে এবং তাঁর রসূলকে রাযী করা অত্যন্ত জরুরী। [ সুরা তাওবা ৯:৬২ ]
১২। ধনী করে দেয়ার বয়ান করতে গিয়েও আল্লাহ তার হাবিবের নামকে সাতে জুড়ে দিয়েছেন
أَنْ أَغْنَاهُمُ اللّهُ
وَرَسُولُهُ مِن فَضْلِهِ
আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদেরকে সম্পদশালী করে দিয়েছিলেন নিজের অনুগ্রহের মাধ্যমে। (সুরা তওবা ৭৪)
আজ যদি কেহ বলে রাসুল এর অনুগ্রহ রাসুলের অছিলায় তাহলে তার উপর শিরিকের ফতোয়া চলে আসবে, অথচ দেখুন আল্লাহেই আমাদেরকে কুরআনে বয়ান করছেন আল্লাহ ও তার রসুল সম্পদ শালী করে দিয়েছেন।
১৩। (ইজা দুউ ইলাল্লাহি ওয়া রাসুলিহ) যখন আল্লাহ তার রাসুলের দিকে ডাকা হয়।
১৪। (ইজা কাদাল্লাহু ওয়া রাসুলুহু আমরান) যখন আল্লাহ ও তার রাসুল ফয়সালা করে দেয়।
১৫। (ইন্নাল্লাজিনা ইউজুনাল্লাহা ওয়া রাসুলাহ) যে আল্লাহ ও রাসুলকে কষ্ট দেয়।
১৬। (লিতুমিনু বিল্লাহি ওয়ারাসুলিহি ওয়া তুয়াজ্জিরুহু ওয়াতুয়াক্কিরুহু
ওয়াতুসাব্বিহুহু বুকরাতাও ওয়া আছিলা) আল্লাহ নিজের তাজিম ও সম্মানের সাথে আপন হাবিবের তাজিম ও সম্মানকে জুড়ে দিয়েছেন।
এভাবে শত শত স্থানে আল্লাহ তায়ালা নিজের সাথে তার মাহবুবের জিকির করেছেন, শুধু এবাদত ছাড়া বাকী সবকিছুতেই মুলত আল্লাহ তায়ালা তার হাবিবের বয়ান নিজের বয়ানের সাথে জুড়ে দিয়েছেন।
অনুসরন, ফয়সালা, জিহাদ, গনিমতের মালের মালিকানা, ডাকে সাড়া দেয়া, সম্পকচ্ছেদ, হারাম ঘোষনা, দান করা, সন্তুষ্টি বা খুশি, ধনী করা, সম্মান দেয়া সব ক্ষেত্রেই আল্লাহ তায়ালা তার
রাসুলের জিকির একসাথে করেছেন।
এখন যারা কথায় কথায় শিরিক শিরিক বলে তাদের মুলত কুরআনের জ্ঞান নাই, নবীর শান বয়ান করলেই যারা বলে নবীর শান বয়ান করতে করতে আল্লাহর উপর তুলে ফেলছে তাদের ধারনাই নাই নবীর শান আল্লাহ এত উঁচু করেছেন যে উচ্চতা সম্পর্কে দুনিয়ার কোন মাখলুকের কোন ধারনাই নাই।
ইবনে
তাইমিয়ার বাণী
যারা নবীর শান শুনলেই শিরিক শিরিকের
জিকির করে তারা আল্লামা ইবনে তাইমিয়াকে বেশী মানেন- উনি বলেন আস সারিমুল মাসলুল কিতাবে ৪১ নং পৃষ্ঠায় লিখেন- (ফাকাদ
আকামাহুল্লাহু মাকামা নাফসিহি ) অর্থ্যাৎ আল্লাহ তায়ালা রাসুলককে আপন কায়েম মকাম বানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ
রাসুলে পাককে নিজের জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।
নির্দেশ দেয়ার ব্যপারে, নিষেধ করার ব্যপারে, খবর দেয়ার ব্যপারে, বয়ান করার ব্যপারে, আল্লাহ তার রাসুলকে নিজের কায়েম মকাম বানিয়ে
দিয়েছেন।
তাই শেখ সাদী (রহ) নবীর শান বয়ান করতে গিয়ে বলেন
‘বাদ আজ খোদা বুজুর্গ, তুই কিসসা মুখতাসার’। অর্থাৎ ‘হে সরকারে কায়েনাত! আপনার মর্যাদা আর কতটুকুই বলতে পারব, সংক্ষেপে এতটুকুই বললাম, আল্লাহর পরেই আপনার স্থান।’
কোন মন্তব্য নেই