শবে কদরের ফজিলত ও আমল। শবে কদরের নামাজের নিয়ম। শবে কদরের দোয়া
শবে কদরের ফজিলত
ও আমল
শবে কদরের ফজিলতসমুহ
১) লায়লাতুল ক্বদর একটি বরকত ময় রাত
২) এ রাতে সারা বছরের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয় (তফসিরে সাভি ৬ষ্ঠ খন্ড
(ফিহা ইউফরাকু কুল্লু আমরিন
হাকিম)
এ রাতে আল্লাহ তায়ালা ফয়সালা করেন কাকে কি দিবেন,
সে জন্য ভালো
ফয়সালা করানোর জন্য চেষ্টা প্রচেষ্টা করা দোয়া এবাদত করা দরকার।
৫) ক্বদরের রাতে দৃনিয়াতে এত অধিক সংখ্যক ফেরেশতা নাযিল হয় যে
পৃথিবীতে জায়গা সংকুলনা হয় না।
৬) এ রাতের এবাদতের দ্বারা সারা জীবনের গুনাহ মাফ হয়ে যায় (
বুখারী হাদীস
২০১৪)
৭) এ এক রাতের এবাদতের ফলে ১ হাজার মাস এবাদতের চেয়ে বেশী
সাওয়াব পাওয়া যায় কিংবা ৮৩ বছর ৪ মাস অপেক্ষাও
বেশী এবাদতের সাওয়াব হাসিল করা যায়।
৮) এ রাতে এবাদত কারীদের সাথে ফেরেশতাদের সরদার হযরত জিবরাইল (আঃ) মোসাফাহা করেন।
৯) এ মোবারক রাতে প্রতিটি মুহুত শান্তি আর শান্তি যা একমাত্র
উম্মতে মুহাম্মদীকে আল্লাহ রব্বুল আলামিন প্রিয় নবীর উসিলায় দান করেছেন।
১০) শবে ক্বদর এমন এক রাত যে রাতের বননা দিতে গিয়ে আল্লাহ
তায়ালা গোটা ১টি সুরা নাযিল করেছেন সুরা ক্বদর।
১১) প্রিয় নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন যে ব্যক্তি এ রাত থেকে বঞ্চিত
রইল সে যেন সব কল্যান থেকে বঞ্চিত( ইবনে মাজাহ ১৬৪৪)
১২) তফসিরে কুরতুবিতে বনিত রয়েছে এ রাতে এবাদত হাজার মাস রাত
জাগা, দিনে রোযা রাখা, জান মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা
এবং নিজের ১ হাজার সন্তান শহীদ হওয়ার পর নিজে শহীদ হওয়া থেকেও উত্তম।
১৩) তফসিরে কুরতুবিতে আরো উল্লেখ রয়েছে,
হযরত সুলায়মান (আঃ) ও যুলকারনাইন এর ১ হাজার রাজ্য ছিল,
আর শবে কদরে এবাদত
এ ১ হাজার রাজ্য অপেক্ষাও উত্তম।
১৪) সম্মানিত মুফাসিরগন বলেন এ রাতে এত রহমত আর রহমত যে সাপ
বিচ্ছু ও বিপদাপদ থেকে বান্দা নিরাপত্তা লাভ করে।
১৫) এ রাতে সিদরাতুল মুনতাহার ফেরেশতারা জিবরাইল ফেরেশতার
নেতৃত্বে ৪টি পতাকা নিয়ে অবতিন হয় আর ১টি পতাকা মদীনা শরীফ নবীর রওজার উপর,
১টি পতাকা
বায়তুল্লাহর উপর, ১টি পতাকা বায়তুল মুকাদ্দাস এর উপর ১টি পতাকা তুরে সিনার
উপর উড়িয়ে দেয়া হয়।
১৬) এ রাতে ফেরেশতারা প্রত্যেক মুমিনদের ঘরে গিয়ে তাদেরকে সালাম
পেশ করে।
১৭) এ রাতে যে সব বান্দা দোয়া করে তাদের দোয়ার সাথে ফেরেশতারা
আমিন বলে।
১৮) এ রাতে প্রত্যেকটা সাধারন লোককে ক্ষমা করে দেয়া হয়। তবে
মদপানকারী, মাতাপিতার অবাদ্য, আত্মীয়তার সম্পকছিন্নকারী,
হিংসা পোষনকারীকে ক্ষমা করা হয় না।
১৯) তফসিরে রুহুল বয়ানে উল্লেখ রয়েছে এ রাত হল নিরাপত্তাময়ী রাত,
এ রাতে রোগ শোক,
অনিষ্ট বিপদাপদ
থেকে নিরাপত্তা রয়েছে।
২০) এ রাতে শয়তানের অনিষ্ট করারও ক্ষমতা থাকে না এবং এ রাতে
যাদুটোনা কারীদের যাদু টোনাও কাজ করে না। এ রাত শান্তি আর শান্তি (তফসিরে রুহুল বয়ান ১০ খন্ড)
#৭ রাত বা ৭ তারিখ
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) এক মজলিশে বসা ছিলেন সেখানে হযরত ওমর (রা) প্রশ্ন করলেন কে আছ যে বলবে লাইলাতুল কদর
কি? প্রত্যেকে নিজ নিজ মতামত পেশ করলেন
আবদুল্লাহ বিন আব্বাসকে প্রশ্ন করলেন হে আবদুল্লাহ বিন আব্বাস আপনি কেন বলছেন
না? তখন আবদুল্লাহ বিন আব্বাস জবাব দিলেন হে আমিরুল মুমিনিন আমি
বয়সে ছোট তাই বলাটা পছন্দ করছিনা, তবে যদি আপনি অনুমতি দেন আমি শবে কদরের
ব্যপারে কিছু বলতে পারি।
তাঁকে অনুমতি দিলে তিনি বলেন-
# (ইন্নাল্লাহা বিতরুন ইউহিব্বুল বিতরা)
আল্লাহ বেজোড়
তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন,
# আল্লাহ দুনিয়া বানিয়ছেন ৭ দিনে
# সৃষ্টির সেরা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ৭ম দিনে
# আল্লাহ যত রিজিক সৃষ্টি করেছেন ৭ম দিন
# আল্লাহ আসমানও বানিয়েছেন ৭টি
# আল্লাহ জমিনও বানিয়েছেন ৭টি
# আল্লাহ কুরআনে যে সাবউল মাসানি সবচেয়ে স্পেশাল সুরা নাজিল
করেছেন তাতেও ৭টি আয়াত (সুরা ফাতেহা)
# কুরআন ৭ প্রকার সম্পর্কের জিকির করেছেন যাদের সাথে বিয়ে করা
যায়েজ নাই
# কুরআনে ৭ প্রকার লোকের উত্তরাধিকারের কথা বয়ান করেছেন
# মানুষ আল্লাহকে যখন সিজদা করে ৭টি অংগের মাধ্যমে সিজদা করে
# মানুষ হজ্ব ও ওমরাতে বায়তুল্লাহর চক্কর দেয় ৭ বার
# সাফা মারওয়ায় সাঈ করে ৭ বার
# শয়তানকে পাথর মারে ৭টি করে
# আল্লাহ তায়ালা শবে কদরও রেখেছেন আখেরী ১০ রাত থেকে ৭ রাতে।
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) এর এই কথা শুনে হযরত ওমর (রা) আশ্চর্য্য হয়ে গেলেন,
বললেন হে বাচ্চা
এটা সে কথা যা তুমি ছাড়া আর কেহ বয়ান করেনি।
কদরের প্রস্তুতি:
রাসুলুল্লাহ (দ) এর সাহাবী তাবেয়ী ও সালফে সালেহিন কদরের
জন্য প্রস্তুতি কিভাবে নিতেন?
১)গোসল করা:
তারা এবাদতে
একাগ্রতার জন্য রাতের শুরুতে গোসল করতেন।
যেমন ইবনে জরির বয়ান করেন-
সলফে সালিহিন প্রতি রাতে গোসল করা পছন্দ করতেন।
২) খুশবু লাগানো:
এরপর খুশবু
লাগাতেন, কারন এ রাতে আল্লাহর নুরানি ও মুকাদ্দাস ফেরেশতারা মোসাফাহা
করবেন, সে জন্য এমন অবস্থায় হওয়া উচিত যাতে ফেরেশতাদের কোন কষ্ট না
হয়।
৩) উত্তম পোষাক পরিধানঃ হাম্মাদ ইবনে সালমা বয়ান করেন - ছাবেতুল বনানি যিনি হযরত আনাস (রা) এর সাগরেদ, তিনি সবচেয়ে উত্তম পোষাক এই কদরের উদ্দেশ্যে পরিধান করতেন আর মসজিদে খুশবুদার করতেন, আর এই আশায় আল্লাহর সামনে দোয়াতে লিপ্ত হয়ে যেতেন, কখনো নফল নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন, কখনো জিকির আযকারে লিপ্ত হয়ে যেতেন,
৪) বেশী বেশী দোয়া করাঃ এই রাতে বেশী বেশী দোয়া করা উচিত সে
জন্য সুফিয়ান সওরী (রহ) বলতেন (আদ্দোয়াউ ফি তিলকাল ল্লায়লা আহাব্বু ইলায়্যা মিনাস সালাহ) এ
রাতে বেশী বেশী দোয়া করা বেশী বেশী নফল নামাজ থেকে বেশী ভালো লাগে,
৫)ধীর স্থিরভাবে নামাজ পড়া: শুধু দ্রুত রাকাত বৃদ্ধি করার চাইতে নামাজ লম্বা লম্বা কেরাত, লম্বা লম্বা রুকু সিজদার মাধ্যমে করাই আফযল,
অর্থাৎ সহনশীল ও দয়ালা আল্লাহ ব্যতিত এবাদতের উপযোগী আর কেউ নাই,
আল্লাহ তায়ালা
পবিত্র যিনি সপ্ত আসমান ও আরশে আযিমের মালিক ও প্রতিপালক।
হযুর (দঃ) রমজানের শেষ ১০ দিন যখন আসত তখন তিনি
এবাদতের জন্য পুন প্রস্তুতি নিয়ে নিতেন। তিনি সেগুলোতে নিজে জাগ্রত থাকতেন আর
পরিবারের সদস্যদেরও জাগাতেন।(ইবনে মাজাহ ১৭৬৮)
যদি কেহ বিসমিল্লাহ সহ ১১ বার সুরা এখলাস পাঠ করে তাহলে সেদিন সে কোন ধরনের
গুনাহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবেনা। (ওয়ালাও জাহাদা শয়তান)
শয়তান যতই জোর
লাগাকনা কেন ঐ দিন তাকে গুনাহে লিপ্ত করতে পারবেনা।
তাছাড়া ১০ পার হয়েই ১১তে যেতে হয় আর ১০ বার পড়া যখন পড়া শেষ হবে সাথে সাথে
আপনার জন্য জান্নাতে ১টা মহল তৈরী হয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমদ: ১৫৬১০)
১২) অথবা নফল নামাজের মাঝে মাঝে বসে দরুদ শরীফ পাঠ করবেন আর
নিজের জন্য পরিবার পরিজন এর জন্য ও মুসলিম জাতির জন্য দোয়া করবেন।
নবী (দ) বলেন স্বপ্নে জিবরাইল ও মিকাইল ফেরেশতা
একটি স্থানে নিয়ে গেলেন,তাতে দেখতে পেলাম ১ ব্যক্তি শুয়ে আছে
আরেক ব্যক্তি ১টি পাথর দিয়ে একের পর এক তার মাথাকে দ্বিখন্ডিত করছে। সে সাজা
প্রাপ্ত ব্যক্তির ব্যপারে প্রশ্ন করলে ফেরেশতারা বলল যে কুরআন হিফজ করে ভুলে গেছে
এবং ফরয নামাজের সময় ঘুমিয়ে পড়তো তার এই শাস্তি কিয়ামত পযন্ত চলবে। (বুখারী ১৩৮৬,৭০৪৭)
এমন আযাব থেকে বাঁচতে হলে জীবনে সব কাজা নামাজ সমুহ শুধু ফরয ও বিতির সমুহ পড়ে
ফেলবেন।
সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম!!!
সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়মঃ সালাতুত তাসবিহ হাদীস শরীফে ‘সালাতুত তাসবীহ’ নামাযের অনেক ফযীলত বর্ণিত আছে। এই
নামায পড়লে পূর্বের গুনাহ বা পাপ মোচন হয় এবং অসীম সওয়ার পাওয়া যাবে। রাসূলুল্লাহ
সালল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় চাচা হযরত
আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুকে এই নামায শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে,
এই নামায পড়লে
আল্লাহ আয-যাওযাল আপনার সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন।
তিনি বলেন, চাচা জান ! আপনি যদি পারেন,
তবে দৈনিক একবার
করে এই নামায পড়বেন। যদি দৈনিক না পারেন, তবে সপ্তাহে একবার পড়বেন। যদি সপ্তাহে না
পারেন, তবে মাসে একবার পড়বেন। যদি মাসে না পারেন,
তবে বছরে একবার
পড়বেন। যদি এটাও না পারেন, তবে সারা জীবনে একবার হলেও এই নামায
পড়বেন ।
সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়মঃ চার রকাত । প্রতি রকাতে সূরা ফাতিহার পর,
যে কোন সূরা
পড়তে পারেন। তবে এই নামাযে বিশেষত্ব এই যে, প্রতি রকাতে ৭৫ বার করে,
চার রকাতে মোট
৩০০ বার তাসবীহ পড়তে হবে।
তাসবীহঃ উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি
ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু
আকবার।
@ ১ম রাকাত এ সানা পড়ার পরে তাসবীহ টি ১৫ বার পড়তে হবে
@ তারপর স্বাভাবিক নিয়মে সুরা ফাতিহা ও অন্য আরেকটি সুরা অথবা
অন্তত তিন আয়াত পড়ার পরে তাসবীহ টি ১০ বার পড়তে হবে ।
@ এরপর রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবীহ পরার পরে তাসবীহ টি ১০ বার
পড়তে হবে
@ এরপর রুকু হতে দাড়িয়ে গিয়ে “রাব্বানা
লাকাল হামদ” পড়ার পরে তাসবীহ টি ১০ বার পড়তে হবে ।
@ এরপর সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পরে তাসবীহ টি ১০ বার পড়তে
হবে ।
@ প্রথম সিজদা থেকে বসে তাসবীহ টি ১০ বার পড়তে হবে ।
@ এরপর আবার সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পরে তাসবীহ টি ১০ বার
পড়তে হবে ।
@ তারপর একই ভাবে ২য় রাকাত পড়তে হবে,
( সুরা ফাতিহা
পড়ার আগে তাসবীহ টি ১৫ বার পড়তে হবে ।)
@ অতপর ২য়রাকাত এর ২য় সিজদার পর “আত্তহিয়্যাতু…”, দরুদ আর দোয়া পড়ার পরে সালাম না ফিরিয়ে ,
২য় রাকাত এর মতো
৩য় এবং ৪থ রাকাত একই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে (তাসবীহ টি ১৫ বার পড়ে স্বাভাবিক নিয়মে
সুরা ফাতিহা ও অন্য আরেকটি সুরা পড়তে হবে) ।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন,
‘আল্লাহ ওই
ব্যক্তির ওপর রহমত নাজিল করেন, যিনি রাতে নিদ্রা থেকে জেগে তাহাজ্জুদ
নামাজ আদায় করেন এবং তার স্ত্রীকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে দেন। অতঃপর তিনি (তার স্ত্রী)
তাহাজ্জুদ নামাজ
আদায় করেন। এমনকি যদি (স্ত্রী)
ঘুম থেকে জাগ্রত
হতে না চান, তাহলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেন।’
-আবু দাউদ ও
নাসাঈ
তাহাজ্জুদ নামাজ রাত দ্বিপ্রহরের পরে পড়তে হয়। মধ্যরাতে যখন লোকেরা গভীর
নিদ্রায় আচ্ছন্ন। সুবহে সাদিক হয়ে গেলে এ নামাজ আর পড়া যায় না। অবশ্য
তাহাজ্জুদ নামাজ রাত দ্বিপ্রহরের আগে পড়লে সওয়াব কম পাওয়া যায়। রাতের শেষাংশে
পড়লে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়।
তাহাজ্জুদ নামাজ চার রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজ কখনো ৪ রাকাত,
কখনো ৮ রাকাত
এবং কখনো ১২ রাকাত পড়েছিলেন। তবে দুই রাকাত-দুই রাকাত করে তাহাজ্জুদ নামাজ কমপক্ষে ৪
রাকাত আদায় করা উচিত।
আমাদের নবী (সা.) অধিক পরিমাণে এস্তেগফার করতেন,
যদিও আল্লাহ
তাঁর পূর্বাপর সবকিছু ক্ষমা করে দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃত্যুর আগে বেশি বেশি বলতেন,
‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।’ (বোখারি ও মুসলিম)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
রাসুলের চেয়ে
বেশি আর কাউকে আমি ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি’
বলতে দেখিনি। (নাসাঈ)।
দান-ছাদকা করলে সম্পদ কমে না:
আবু কাবশা আল
আনমারী (রা:) থেকে বর্ণিত,
তিনি শুনেছেন
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন:
” مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ
“ছাদকা করলে কোন মানুষের সম্পদ কমে না।”
(তিরমিযী,
ইবনে মাজাহ)
(১) মদপানকারী (২) আত্মিয়তার সম্পক ছিন্নকারী (৩) মা বাবার নাফরমান (৪) হিংসুক থাকে তাদেরকে সালাম করেন না।
শবে কদর গোপন হওয়াতে ১টি লাভ
- শবে কদর এর তারিখ যদি নিদৃষ্ট থাকত আর জেনে
শুনে কেহ যদি এর কদর পালন না করত তাহলে তার উপর আল্লাহর গযব নাজিল হত।
১) ২ রাকাত তওবার নামাজ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো বান্দা কোনোরূপ গুনাহ করার পর
উত্তমরূপে অজু করে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ে এবং আল্লাহর কাছে গুনাহের জন্য
ক্ষমা প্রার্থনা
২য় নামাজ হল সালাতুল হাজত
যে কোন বিপদ আপদ, সমস্যা সমাধানে, প্রয়োজন
পুরণে সালাতুল হাজত হল খুবই কার্যকরী নামাজ
সালাতুল হাজতের
ফজিলত
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোনো প্রয়োজন পূরণে নিজেই এ নামাজ পড়তেন এবং
সাহাবায়ে কেরামকে এ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে পাকে এ নামাজ পড়ার গুরুত্ব
ওঠে এসেছে-
হজরত হুজাইফা
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে যখন
গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন বা বিষয় (বিপদ-আপদ) চলে আসতো; তখন
তিনি সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ (আবু দাউদ)
হাজতের ২ রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে প্রথমে আল্লাহর প্রসংশা করবেন,
প্রসংশার নিয়তে
১ বার সুরা ফাতেহাও পড়তে পারেন তারপর কয়েকবার দরুদ শরীফ পড়বেন
(আল্লাহুম্মা ছাল্লে আলা মুহাম্মাদ,
ওয়ালা আলি
সৈয়্যেদিনা মুহাম্মাদ ওয়াবারিক ওয়াছাল্লিম)
তারপর নিজের ভাষায় নিজের সমস্যা সমাধানের জন্য দোয়া করবেন,এরপর এই দোয়াটি পড়বেন
সালাতুল হাজত এর দোয়া:
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম।
সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আসআলুকা
মুঝিবাতি রাহমাতিকা ও আযায়িমা মাগফিরাতিকা ওল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররি
ওয়াস-সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদা’ লি জাম্বান ইল্লা গাফারাতহু ওয়া লা হাম্মান ইল্লা
ফাররাঝতাহু ওয়া লা হাঝাতান হিয়া লাকা রিদান ইল্লা ক্বাদাইতাহা ইয়া আরহামার
রাহিমিন।
৩য় হল সালাতুল শোকর
আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির জন্য বেশুমার নেয়ামত দান করেছেন।
আবার সেই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার প্রতি তাগিদও দিয়েছেন। বান্দা যত বেশি
শুকরিয়া আদায় করবে তত বেশি রিজিক প্রাপ্ত হবে। আর যদি শুকরিয়া আদায় না করে তখন
আল্লাহ তায়ালা বান্দার ওপর কঠিন আজাব নাজিল করেন। তাই আমাদের উচিত রিজিক বৃদ্ধির
জন্য এবং জাহান্নামের ভয়ংকর শাস্তি থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য বেশি পরিমাণে
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে
কঠোর। [সুরা ইবরাহীম - ১৪:৭]
4থ- শবে
কদরের নামাজ
শবে কদরের নামাজের আরবী নিয়ত: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা
রাকাতাই ছালাতিল কদর মতুয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার
বাংলা নিয়ত: মনে মনে নিয়ত করবেন আমি শবে কদরের নামাজ পড়ছি।
কত রাকাত পড়বেন? শবে কদরের নামাজের কোন নিদৃষ্ট সীমা নাই,
তাই আপনি ২
রাকাত করে করে যত রাকাত পড়তে পারেন পড়বেন।
মনে রাখবেন এই নামাজ গুলি অবশ্যই পড়তে হবে ঈমানের
সাথে এবং সাওয়াবের আশায়, বোঝা মনে করে পড়লে হবেনা।
পঞ্চমত সালাতুত তাসবিহ
ষষ্ঠত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বেন।
যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে পারবেন, তাদের মধ্যে একশ্রেণির মানুষ হলেন তারা,
যারা যত্নের সঙ্গে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন।
শবে কদরে
যদি মহিলাদের বিশেষ দিন চলে তখন তারা কি করবেন?
মহিলাদের
বিশেষ দিন হলে তারা যেহেতু নামাজ
কুরান তেলাওয়াত করতে
পারবেন না তবে কিছু
আমল করতে পারবেন যার ফলে মহিলাদের শবে কদর বৃথা যাবেনা
১) বিশেষ
দিনে নারীরা কুরআন কে কোরআন এর নিয়তে পড়তে পারবেনা তবে কোরআনের যে সব আয়াত ও দোয়া
আছে তা পড়তে দোয়া ও আল্লাহর প্রসংশার নিয়তে পড়তে পারবে যেমন রাব্বানা আতিনা
ফিদ্দুনিয়া হাসানাহ--
২)
আল্লাহর প্রসংশার উদ্দেশ্যে আয়াতুল কুরসি পড়তে পারবে
৩) সুরা
এখলাস এর প্রথমে যে কুল শব্দ আছে সে কুল শব্দটি বাদ দিয়ে – হুয়াল্লাহু আহাদ আল্লাহুস সামাদ
লাম এয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ ওয়ালাম এয়াকুল লাহু কুফুয়ান আহাদ। এভাবে আল্লাহর প্রসংশার
নিয়তে পড়তে পারবে।
৪)
পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত শুনতে পারবেন।
৫) যে সব
জিকির আযকার আছে সবগুলি করা যাবে যেমন
তাই অজু করে বসে বসে জিকির করবেন - তিরমিযী শরীফের হাদীস হযরত আবুদ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল (দঃ) এরশাদ করেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন আমল সম্পকে সুসংবাদ দিবনা, যা হতে তোমাদের সর্বোত্তম আমল, তোমাদের মুনিবের নিকটও পছন্দনীয় এবং মর্যাদার নিরীখে যা বুলন্দ, স্বণ ও সম্পদ ব্যয় করার চেয়েও উত্তম, এমনকি শত্রুর সাথে জিহাদ করা অপেক্ষাও উত্তম। সাহাবীগন আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল আপনি আমাদেরকে বলুন, তখন রাসুল (দঃ) এরশাদ করলেন তা হল আল্লাহর জিকির।
তাহলে মহিলারা বিশেষ
দিনে নাপাক হলেও অজু করে বসে বসে এই উত্তম আমলটি করতে পারেন,
জিকিরের মধ্যে আছে
১) লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম
২)সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম
৩) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
৪)সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার
৫) হাসবুনাল্লাহু ওয়ানেমাল ওয়াকিল
৬) আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাই
৭) দরুদ শরীফ
এসব জিকির
আযকার ১০০০ বার করে পড়বেন
তিরমিযি শরীফের হাদীস হযরত আয়শা বলেন আমি হুযুর (দঃ) কে প্রশ্ন করলাম হে আল্লাহর রাসুল যদি আমি শবে কদর সম্পর্কে জানতে পারি তাহলে কি পড়ব, তখন প্রিয় নবী বললেন এভাবে দোয়া কর (আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি) হে আল্লাহ তুমি ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমা পছন্দ করো, সুতরাং আমাকে ক্ষমা কর।
আসুন, এই বরকতময় রজনীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আমরা
আমাদের গোনাহ মাফের সর্বোচ্চ সুযোগ কাজে লাগাই। রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেকে নিয়োজিত করুন। মহান
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সব মানুষের কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করুন। নিজের
জন্য পরিবার পরিজনের জন্য তথাপি বিশ্বের সকল মুসলিমের জন্য দোয়া করুন।
আল্লাহ সকলকে শবে ক্বদর নসিব করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই