Header Ads

Header ADS

জিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের ফজিলত ও আমল, কোরবানির জরুরী মাসায়ালা মাসায়েল

 

জিলক্বদ মাসের শেষ খুতবা

জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকের ফজিলত

কুরবানীর মাসে বা জিলহজ্ব মাসে নখ চুল কাটা

কুরবানি কার ওপর ওয়াজিব, কার উপর ওয়াজিব নয়?

কুরবানীর পশুতে যে ১০টি ত্রুটি থাকলে কুরবানি হবেনা

ঋণ নিয়ে কুরবানীর বিধান


 

আল্লাহ তাআলা দয়ালু। তাই তিনি আপন বান্দাদের তওবার সুযোগ দিতে ভালোবাসেন। তিনি চান বান্দারা ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করুক। এই উদ্দেশ্যে তিনি আমাদের জন্য বছরে কিছু বরকতময়  কল্যাণবাহী দিন রেখেছেন যাতে আমলের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়।  দিনগুলোতে আমল করা তো বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি নেকী  কল্যাণ বয়ে আনে। এমন দিনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যিলহজ মাসের এই প্রথম দশদিন।  দিনগুলো এমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেগুলোকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাতে আমলের প্রতি তিনি  উদ্বুদ্ধ করেছেন।  দিনগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে শুধু এতটুকুই যথেষ্ট যে আল্লাহ তাআলা এর কসম করেছেন

 যে কারণে এই দশ দিন বছরেরশ্রেষ্ঠ দশ দিন

 

. আল্লাহ তা‌‘আলা এর কসম করেছেন : আল্লাহ তা‌‘আলা যখন কোনো কিছুর কসম করেন তা কেবল তার শ্রেষ্ঠত্ব  মর্যাদাই প্রমাণ করে। কারণ,মহান সত্তা শুধু মহা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরই কসম করেন। 

وَالْفَجْرِ

শপথ ফজরের, [ সুরা ফাজর ৮৯: ]

وَلَيَالٍ عَشْرٍ

শপথ দশ রাত্রির, শপথ তার, [ সুরা ফাজর ৮৯: ]

আয়াতে কসম দশ রাতের বলে যিলহজের দশকের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। এটিই সকল মুফাসসিরের মত।

 এসবই সেই দিন আল্লাহ যাতে তাঁর জিকিরের প্রবর্তন করেছেন : 

لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَّعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ

যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাব গ্রস্থকে আহার করাও। [ সুরা হাজ্জ্ব ২২:২৮ ]

জমহূর উলামার মতে, আয়াতে নির্দিষ্ট দিনসমূহ বলে যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনকে বুঝানো হয়েছে। এটিই ইবন উমর  ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমার মত

) এ মাসে দ্বীন পরিপূণতার ঘোষনা সহকারে আয়াত নাযিল হয়,

ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহ পাক কুরআন মাজীদে এরশাদ করেন :

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلامَ دِينًا

আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম। আমার নেয়ামতকে তোমাদের উপর পূর্ণতা দিলাম আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (মায়েদা, : )

4. রাসূলুল্লাহ দিনগুলোকে শ্রেষ্ঠ দিনবলে আখ্যায়িত করেছেন : যিলহজের এই দিনগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন জাবির রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, 

পৃথিবীর দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিনগুলো হলো দশকের দিনসমূহ। অর্থাৎ যিলহজের (প্রথম) দশদিন। জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর পথে জিহাদেও কি এর চেয়ে উত্তম দিন নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদেও এর চেয়ে উত্তম দিন নেই। হ্যা, কেবল সে- যে (জিহাদে) তার চেহারাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।

 [মুসনাদ বাযযার : ১১২৮; মুসনাদ আবী আলা : ২০৯০]

 দিনগুলোতে মৌলিক ইবাদতগুলোর সমাবেশ ঘটে :

হাফেয ইবন হাজর রহিমাহুল্লাহ তদীয় ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন,‘যিলহজের দশকের বৈশিষ্ট্যের কারণ যা প্রতীয়মান হয় তা হলো, এতে সকল মৌলিক ইবাদতের সন্নিবেশ ঘটে। যথা : সালাত, সিয়াম, সাদাকা, হজ ইত্যাদি। অন্যকোনো দিন এতগুলো ইবাদতের সমাবেশ ঘটে না। [ফাতহুল বারী : /৪৬০]

প্রথম দশদিনে নফল রোযা  রাতে ইবাদত করা

জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত যত দিন সম্ভব নফল রোযা রাখা আর রাতের বেলা বেশী বেশী ইবাদত করা যথা নফল নামায,কুরআন তিলাওয়াত,তাসবীহ-তাহলীল,তাওবা-ইস্তিগফার  রোনাজারী ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে রাত কাটানো

ফযীলত

হযরত আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিলহজ্বের দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদত তুলনায় বেশী প্রিয়,

صِيَامُ كُلِّ يَوْمٍ مِنْهَا بِصِيَامِ سَنَةٍ وَقِيَامُ كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْهَا بِقِيَامِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ "

প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার ন্যায় আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায় 

{তিরমিজী শরীফ,হাদীস নং-৭৫৮,সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৩৭৫৭,কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১২০৮৮}

مَا مِنْ أَيَّامِ الدُّنْيَا أَيَّامٌ أَحَبُّ إِلَى اللهِ سُبْحَانَهُ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যুলহিজ্জার) দশ দিনের ইবাদতের চেয়ে দুনিয়ার অন্য কোন দিনের ইবাদত মহান আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় নয়। (ibne maja 1728)

 কুরবানীর মাসে বা জিলহজ্ব মাসে নখ চুল কাটা

বছর আগামী ১৯ জুন থেকে হয়ত জিলহজ্ব মাস শুরু হবে, জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উঠলে যারা কুরবানী করবেন তারা এবং যারা কুরবানী করবেন না তারা নখ চুল, এবং অন্যান্য অবাঞ্চিত পশম কাটবে কি কাটবে না ব্যপারে আজ বিস্তারিত আলোচনা করব

যারা কুরবানী করবেন তাঁদের ব্যপারে ইবনে মাজাহ শরীফের ৩১৪৯ নং হাদীস

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ " إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ فَلاَ يَمَسَّ مِنْ شَعَرِهِ وَلاَ بَشَرِهِ شَيْئًا

উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন (যিলহজ্জ মাসের) প্রথম দশক শুরু হয় এবং তোমাদের কেউ কোরবানী করার ইচ্ছা রাখে, সে যেন তার চুল  শরীরের কোন অংশ স্পর্শ না করে (না কাটে)

মুসলিম ১৯৭৭, তিরমিযী ১৫২৩, নাসায়ী ৪৩৬১, ৪৩৬২, ৪৩৬৪, আবূ দাউদ ২৭৯১, আহমাদ ২৫৯৩৫, দারেমী ১৯৪৭, ১৯৪৮, ইরওয়া ১১৬৩, সহীহ আবু দাউদ ২৪৮৮

আর যারা কুরবানী করবে না তাদের জন্য হাদীস হল

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِرَجُلٍ: أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيدًا جَعَلَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ، فَقَالَ الرَّجُلُ: أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلَّا مَنِيحَةً أُنْثَى أَفَأُضَحِّي بِهَا؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ، وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ، وَتَقُصُّ شَارِبَكَ، وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ، فَذَلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَّتِكَ عِنْدَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ.

অর্থ : আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে কুরবানীর দিবসে ঈদ (পালনের) আদেশ করা হয়েছে। যা আল্লাহ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এক সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা থাকে (অর্থাৎ অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী) আমি কি তা কুরবানী করতে পারি? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, তবে তুমি চুল, নখ মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫]

এই ২টি হাদীস এর ১ম হাদীস দ্বারা জানতে পারলাম যারা কুরবানী করবেন তারাও নখ চুল কাটবে না

আর ২য় হাদীসে জানতে পারলাম যারা কুরবানী করবেন না তারাও জিলহজ্ব মাসের ১০ দিন চুল নখ এসব না কাটলে কুরবানীর দিন কাটলে পূর্ণ কুরবানীর সাওয়াব পাবে

এখন প্রশ্ন হল এটি করা কি ফরয, ওয়াজিব নাকি মুস্তাহাব? এর উত্তর হল মুস্তাহাব ফরযও না ওয়াজিবও না

তবে এখানে একটি মাসায়ালা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, শরীরের লোম নখ এসব সপ্তাহে কাটা  সুন্নত, ১৫ দিন হয়ে গেলে মাকরুহে তানজিহি, ১৫ দিন থেকে বেশী দেরী হতে হতে যদি ৪০ দিন পার হয়ে যায় তাহলে মাকরুহে তাহরীমী অথ্যাৎ হারামের কাছাকাছি কাজ হবে এবং গুনাহগার হবে সুতরাং কোন ব্যক্তি জিলহজ্ব মাস আসার আগে নখ শরীরের লোম কাটেনি ফলে তার ৩৫ দিন হয়ে গেল, এখন জিলহ্জ মাসে আরো ১০ দিন এই মুস্তাহাব আমল করতে গিলে কাটলনা ফলে ৪৫ দিন হয়ে গেল এতে করে তার মুস্তাহাব পালন করতে গিয়ে ৪০ দিন পার হওয়াতে সে মাকরুহে তাহরীমির মত কাজ করে ফেলল তাই সে গুনাহগার হবে

তাই এই মুস্তাহাব আমল তারাই করতে পারবে যারা জিলহজ্ব মাস আসার আগেই নখ এবং অন্যান্য পশন কেটে সাফ সুতরা হয়েছে যাদের টাইম ওভার হয়ে গেছে তারা ৪০ দিন পার হওয়ার আগে আগে কেটে নেয়াই উত্তম যদিও তা জিলহজ্ব মাসেই হউকনা কেন


عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ أَنَسٌ وُقِّتَ لَنَا فِى قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ وَنَتْفِ الإِبْطِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً

হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাদের জন্য মোচ, নখ কর্তন এবং বগলের চুল অবাঞ্ছিত লোম কাটার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সেটি হল, যেন তা চল্লিশ দিনের উর্দ্ধে না যায় [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৫৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৯৫]

গরু ছাগলে ১০টি দোষ থাকলে কুরবানী হবেনা

আসন্ন কুরবানীর ঈদ, বেশীরভাগ মানুষ গরু ছাগল দিয়ে কুরবানী করেন যদি গরু ছাগলে বা কুরবানীর জানোয়ারে এমন কিছু ত্রুটি থাকতে পারে যাতে সে প্রাণী দিয়ে কুরবানী হয়না কুরবানীর প্রাণীতে কোন কোন দোষ ত্রুটি থাকলে তা দিয়ে কুরবানী হবে না আজ আমি সে রকম ১০টি ত্রুটি সম্পর্কে বিস্তারিত বয়ান করব ইনশাল্লাহ

কুরবানীর পশু কিনতে গেলে সামনের দিক থেকে চেক করা স্টার্ট করবেন, প্রথমে নাক চেক করবেন, তারপর মুখ খুলে দাঁত চেক করবেন, যদি সবগুলি দাঁত থাকে তাহলে খুব ভালো অন্যথা কমপক্ষে এতগুলি দাঁত যেন থাকে যাতে সহজে ঘাস চাবিয়ে খেতে পারে

() যদি এত বেশী দাঁত পরে গেছে যে ঘাসও চিবাতে পারেনা, তাহলে সে জানোয়ার দিয়ে কুরবানী হবে না

() তারপর জিহ্বা চেক করবেন কারন যদি জিহ্বা কাটা হয় তা দিয়েও কুরবানী হবেনা

() তারপর ২টি চোখ চেক করবেন, যদি ১টি চোখও অন্ধ খারাপ হয় তাহলে কুরবানী হবে না সে জন্য চোখের কাছে কিছু নিয়ে যাবেন যেমন খড়খুটা, যদি চোখের পলক নড়াচড়া করে তাহলে বুঝবেন চোখ ঠিক আছে

() তারপর ২টি কান চেক করবেন, যদি জন্মগত ভাবে কান না থাকে তাহলে কুরবানী হবে না আবার কানের ভাগের ভাগ বা তার চেয়ে বেশী যদি কাটা থাকে তাহলেও কুরবানী হবে না  তবে কান আছে কিন্তু তা যদি সাইজে ছোট হয়  কুরবানী হয়ে যাবে অথবা কানের ভাগের ভাগ থেকে কম কাটা থাকলেও কুরবানী হবে

() তারপর ২টি শিং চেক করবেন, শিং যদি জন্মগত ভাবে না থাকে তাহলে কুরবানী হবে, তবে যদি শিং আছে কিন্তু তা একদম গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে তাহলে সে পশুর কুরবানী হবে না

() লেজ চেক করবেন যেন কাটা না হয়, অনেক সময় লেজ কেটে গেলে গাম দিয়ে লাগিয়ে রাখে, সেটা খেয়াল করে চেক করবেন

() টি পা চেক করবেন- যদি এমন লেংড়া হয় যে কুরবানীর স্থান পযন্ত হেটে যেতে পারে না তাহলে কুরবানী হবে না, তবে সামান্য খুঁড়াচ্ছে কিন্তু হাটতে পারছে তাহলে কুরবানী হবে

() গাই গরুর ৪টি স্তনও চেক করতে হবে, কমপক্ষে ৩টি যদি ঠিক থাকে তাহলে কুরবানী হবে, যদি ১টির অধিকে কোন ত্রুটি থাকে তাহলে তা দিয়ে কুরবানী হবে না তেমনি ভাবে ছাগীর ২টি থেকে ১টি যদি ভালো থাকে কুরবানী হবে, যদি ২টিই ত্রুটিযুক্ত হয় কুরবানী হবে না

() পশু রুগ্ন কিনা তাও চেক করবেন, এমন রুগ্ন যা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে তাহলে সে প্রাণী দিয়ে কুরবানী হবে না

(১০) পশু এমন দুর্বল হাড্ডিসার যে তার হাড়ে মজ্জা পযন্ত এমন এমন দুর্বল প্রাণী দিয়েও কুরবানী হবেনা

عَنْ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا يُتَّقَى مِنْ الضَّحَايَ ا قَالَ

বারাআ ইবনু আযিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম () কে প্রশ্ন করা হল কোরবানীর জন্য কি ধরনের পশু পরিহার করব? নবীজি বললেব

الْعَوْرَاءُ الْبَيِّنُ عَوَرُهَا

তিনি বললেন,“এক চোখ অন্ধ পশু যার অন্ধত্ব সুস্পষ্ট,

 وَالْعَرْجَاءُ الْبَيِّنُ ظَلْعُهَا

খোঁড়া পশু যার পঙ্গুত্ব সুস্পষ্ট,

 وَالْمَرِيضَةُ الْبَيِّنُ مَرَضُهَا

রুগ্ন পশু যার রোগ সুস্পষ্ট,

وَالْعَجْفَاءُ الَّتِي لَا تُنْقِي

এবং কৃশকায় দুর্বল পশু, যার হাড়ের মজ্জা শুকিয়ে গেছে

(চার প্রকারের পশু কোরবানী করলে তা যথেষ্ট হবে না:) () অন্ধ () খোড়া () রুগ্ন () দুর্বল (সুনানে আদ দারেমি - ১৯৮৭)

মনে রাখতে হবে কুরবানি আল্লাহর জন্য আত্মত্যাগের অনন্য নিদর্শন সুতরাং নিখুঁত দোষবিহীন পশু দ্বারা কুরবানি আদায় করতে হবে

যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে যদি এমন ত্রুটিযুক্ত প্রাণি কিনে নিয়ে আসে তাহলে সে চেস্টা করবে কুরবানীর আগে সে ত্রুটি দুর করতে, নতুবা অন্য একটি ত্রুটিহীন প্রাণী এনে কুরবানী করতে হবে আর যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়,  সে যদি এমন ত্রুটিযুক্ত প্রাণী কিনে আনে তাহলে সে সেটি দিয়ে কুরবানী করবে, অন্য একটি কিনার প্রয়োজন নাই

কোরবানী কার উপর ওয়াজিব কার ওয়াজিব নয়?

কোরবানির দিন সমুহে ঘরের মধ্যে যে () বালেগ হবে, () মুসলমান হবে, () মুকিম হবে, () আকেল হবে পাগলের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়, () নেসাবের মালিক হবে

তার উপর কোরবানি ওয়াজিব

#আর মনে রাখবেন কোরবানির ১০, ১১, ১২ তারিখ যদি কারো কাছে ৫২. তোলা রুপার সমপরিমান সম্পদ থাকে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব বর্তমানে সাড়ে বাহান্ন তোলা রুপার বাজার মূল্য ২২ কেরট হল ৯০ হাজার টাকা

# আপনার কাছে যদি কোরবানির দিন অল্প স্বর্ণ থাকে, অল্প টাকা থাকে এবং আপনার কাছে যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন মাল থাকে সে মালের মূল্যও হিসাব করতে হবে এভাবে সব কিছুর মূল্য যদি সাড়ে বাহান্ন তোলা রুপার সমপরিমান হয় তাহলে আপনার উপর কোরবানি ওয়াজিব

প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাল কি?

যে জিনিষ ছাড়া আপনার দিন গুজাড়া হয়না সেগুলি হল প্রয়োজনিয় মাল যেমন ফ্রিজ আপনার প্রয়োজনীয় মাল, ফ্যান প্রয়োজনিয় মাল, ব্যবহারের আসবাবপত্র, ব্যবহারের কাপড়চোপড়, ব্যবহারের থালা বাসন এসবগুলি হল আপনার প্রয়োজনিয় মাল,

কিন্তু ধরুন আপনার কাছে এমন কিছু মাল আছে যা আপনার কোন কাজে আসেনা ঘরে এমনি পরে রয়েছে যেমন

**আপনার ৫টা দামী স্যূট আছে যা আপনি ব্যবহার করেন না এটাও অতিরিক্ত মাল

** আপনার ১০ জোড়া দামী দামী ক্যাডস স্যু আছে তার মধ্যে আপনি জোড়া ব্যবহার করেন আর বাকী জোড়া ব্যবহার করেন না তাহলে এটাও অতিরিক্ত মাল

**ডেকোরেশন পিস ঘর সাজানোর জন্য দামী দামী ডেকোরেশন পিস কিনে কিনে শো কেইসে সাজিয়ে রেখেছেন এগুলিও অতিরিক্ত মাল সুতরাং এটার মূল্যও আপনাকে হিসাব করতে হবে

এই অতিরিক্ত মালগুলির মূল্য যদি আপনি যোগ করেন তাহলে আপনার কাছে যদি কোরবানীর যে দিন সে দিনে ৯০ হাজার টাকার মত সম্পদ পাওয়া যায় তাহলে আপনার উপর কোরবানি ওয়াজিব হবে

কুরবানির দিন ঘরের সকলে কিভাবে হিসাব করবে?

ঘরের যে সব বালিগ, মুসলমান, মুকিম লোক আছেন ছেলে মেয়ে সকলে নিজ নিজ হিসাব করবেন

আপনার মালিকানায় স্বণ থাকলে তার মূল্য লিখুন, রুপা থাকলে তার মূল্য লিখুন, টাকা পয়সা কত আছে তা লিুখন, প্রাইজবন্ড থাকলে তাও লিখুন, শেয়ার থাকলে তাও লিখুন, আপনি কাউকে ঋণ দিয়েছেন তাও এখানে লিখবেন, এরপর আপনার দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় যে সব মালামাল আছে সে গুলি ছাড়া অতিরিক্ত যে সব মালামাল আপনার মালিকানায় আছে তাও লিখুন, এবার এর মোট এমাউন্ট বের করুন এবার এই মোট এমাউন্ট থেকে আপনি যদি কোন পাওনাদারকে টাকা দিতে হয়, কিংবা কোন ইনস্টলমেন্ট এই মাসে দিতেহয় তা সে এমাউন্ট থেকে বাদ দিবেন এরপরও যদি আপনার কাছে সাড়ে বাহান্ন তোলা রুপার বরাবর মূল্যের মাল বা সম্পদ থাকে তাহলে আপনার উপর কুরবানি ওয়াজিব

ঋণ থাকলে কি কুরবানি দিতে হবে?

ঋণ প্রকার () যা তাড়াতাড়ি পরিশোধ করার চাপ আছে- ধরনের ঋণ থাকলে আগে সে ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যেমন আপনি একজন আত্মিয় থেকে লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছেন, তিনি তা যে কোন মুহুর্তে চাইতে পারেন, কিংবা তিনি তার পাওনা টাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন এখন আপনার উচিত আগে আপনার সে ঋণ পরিশোধ করা

() যা মেয়াদি ঋণ যা পরিশোধ করার তেমন তাগাদা নাই, তা মাস বা মাস পরে দিতে হবে কিংবা বছর পর দিতে হবে এমন ঋণ থাকলে তা কুরবানীর জন্য কোন বাঁধা সৃষ্টি করবেনা যেমন অনেকের মোহরানা বাকি আছে, এখন সে যদি প্রতি বছর বলে আমার বউ এর মোহরানা বাকী আমি ঋণগ্রস্থ তাই আমি কুরবানি করবনা এমন কথা যুক্তিযুক্ত নয়, তেমনি ভাবে কারো ব্যাংক এর ঋণ আছে আর সে ঋণ মাসে দিতে হবেনা বরং কয়েক মাস পরে দিতে হবে কিংবা মাসে সবগুলি দিতে হবেনা বরং ইনস্টলমেন্ট এর সামান্য টাকা দিতে হবে তাহলে তার সে ইনস্টলমেন্ট এর পরিমান ঋণ এর টাকা তার মোট সম্পদ থেকে বাদ দিয়ে হিসাব করতে হবে

কর্জ নিয়ে কি কুরবানী করা যাবে

কজ নিয়ে যিনি কুরবানী করবেন তার কয়েকটি ছুরত আছে যেমন

১)যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় সে কর্জ নিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানী করতে চায়, কিন্তু এখন তার কাছে টাকা নাই, পরে টাকা পয়সা হাতে আসবে, তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তবুও সে কজ নিয়ে আল্লাহকে খুশী করার জন্য কুরবানী করে নিল, যদি তার পূণ বিশ্বাস থাকে যে সে কর্জের টাকা পরিশোধ করতে পারবে এবং সে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করার জন্য কর্জ নিয়ে কুরবানী করছে তাহলে তা খুবই ভালো উদ্যোগ জায়েজ হবে এবং সে সাওয়াবও পাবে

আহলে এলম বলেন (ওয়ালা হারাজা আইয়্যাসতাদিনাল মুসলিমু লি ইউদা্হহি, ইজা কানা ইনদাহু কুদরাতুন আলাল ওয়াফা) অথ্যাৎ কোন মুসলমানের জন্য কজ নেয়া কুরবানীর জন্য যদি তার শক্তি থাকে সে কজ পরিশোদ করার তাহলে তার জন্য কর্জ নিয়ে কুরবানী করা জায়েজ

যার উপর কুরবানী ওয়াজিব কিন্তু এখন হাতে নগদ অর্থ নাই তাহলে সে কারো কাছ থেকে কর্জ নিয়ে কুরবানী করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে

কিন্তু যদি এমন হয় যেমন আমাদের সমাজে যেটা দেখা যায়, একজন লোক প্রতিবছর কুরবানী করে, সকলেই তা জানে, এবছর কুরবানী করার জন্য যদি তার টাকা না থাকে সামর্থ না থাকে এখন সে চিন্তা করে প্রতিবছর কুরবানী করে আসছি যদি বছর কুরবানী না করি তাহলে লোকে কি বলবে? এমন অবস্থায় সে যদি কর্জ নিয়ে কুরবানী করে তাহলে তার নিয়তে একটি অপছন্দনিয় জিনিষ পাওয়া যায় তা হল লোকজনকে দেখানোর নিয়ত,

তেমনি ভাবে একজন লোকের উপর কুরবানী ওয়াজিব এখন সে যদি ১টি ছাগল দিয়ে কুরবানী করে তাহলে তার ওয়াজিব আদায় হবে, তাঁর কাছে ছাগল কিনার পয়সাও আছে, কিন্তু সে প্রতিবছর গরু দিয়ে কুরবানী করে এখন সে যদি চিন্তা করে আমি প্রতিবছর গরু দিয়ে কুরবানী করি বছর ছাগল দিয়ে কুরবানী করলে লোকে কি বলবে, এমন চিন্তা থেকে সে যদি গরু দিয়ে কুরবানীর জন্য কারো কাছ থেকে কজ নেয় তাও গ্রহণযোগ্য নয়

#কোরবানী #জিলহজ্ব

কোন মন্তব্য নেই

ULTRA_GENERIC থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.