Header Ads

Header ADS

কাবা ঘরের ইতিহাস, হাজরে আসওয়াদ মকামে ইবরাহিমের ফজিলত জমজম পানির ফজিলত

  জিলক্বদ ৩য় জুমা

কাবা ঘরের ইতিহাস, হাজরে আসওয়াদ মকামে ইবরাহিমের ফজিলত এবং 

শশুড় বাড়ীর গরু ছাগল দিয়ে কুরবানির ভয়াবহ কুফল





وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

স্মরণ করযখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা'বাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিলঃ পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারীসর্বজ্ঞ। [সুরা বাকারা - ২:১২৭]

কাবা শব্দের অথ কি?

কাবা বলা হয় সমতল স্থানে যে অংশ ফুলে উঠে সে ফুলে উঠা অংশকে কাবা বলা হয় যেমন

অজু করার বয়ান দিতে গিয়ে আল্লাহ কোরআনে বলেন (ওয়া আরজুলাকুম ইলাল কাবাইন) অর্থ্যাৎ তোমরা পা ধৌত করা কাবাইন পর্যন্ত আর এর অর্থ হল পায়ের মধ্যে যে ফুলে উঠা জায়গাটা  সুতরাং কাবা অথ হল ফুলে উঠা যায়গা

আরশুহু আলাল মা- আরশ পানির উপর ছিল আর সে পানিতে ঢেউ থেকে ফেনার তৈরী হল আর সে ফেনা থেকে মাটির সৃষ্টি আর সে মাটির উপর আল্লাহ প্রথম ঘর নির্মান করলেন যার নাম কাবা যেটা পানিতে চরের মত ফুলে উঠা জায়গায় প্রতিষ্ঠিত বলে তাকে কাবা বলা হয়

সেজন্য মেয়েদেরকেও কোরআনে বলা হয়েছে (কাওয়ায়েবা ওয়া আতরাবা)

কাবা ঘরের জন্য আদম (এর আবেদন

আদম (কে যখন পৃথিবীতে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিলতখন হযরত আদম (আল্লাহর কাছে  আকাশে ফেরেশতাদের যে কাবা ঘর বায়তুল মামুর যাতে ফেরেশতারা তাওয়াফ করেসে ঘরের মত একটি ঘর পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আবেদন করেন আর আদম (এর সে আবেদনের প্রেক্ষিত সে বায়তুল মামুরের সোজা নিচে দুনিয়াতে ফেরেশতাদের মাধ্যমে কাবা ঘর নির্মাণ করে দিলেন

এই কাবা ঘরে আদম (কতবার হজ্ব করেছেন?

কাবা ঘরে হযরত আদম (কোন কোন বননায় ৫৫ বার হজ্ব পালন করেছেন তাওয়োফ করেছেন

কোন নবীর যুগে এই কাবা ঘর ধ্বংস হয়ে যায়?

হযরত নুহ (এর যুগে যখন মহা প্লাবন হয় তখন এই কাবা ঘর ভেঙ্গে যায় ১৫০ দিনের বন্যায় কাবা ঘর পলিমাটিতে ঢাকা পরে যায়আমাদের দেশে মাত্র সপ্তাহ ১০ দিন বন্যা হলে পুরা এলাকা অচল হয়ে যায়আর নুহ নবীর যুগে  মাস যাবৎ বন্যা ছিল সুবহানাল্লাহ পৃথিবীর সব কিছুই তছনছ হয়ে গিয়েছিল

কোন কোন নবী এই কাবা ঘরের তাওয়াফ করেছেন

 লক্ষ ২৪ হাজার অথবা  লক্ষ ২৪ হাজার নবীর সকলেই এই কাবা ঘরে এসেছেনতবে  জন নবী কাবা ঘরে আসতে পারেন নি তার কওমের অত্যাচারের কারনে

কোন কোন নবী কাবা ঘরে আসতে পারেন নি?

যে  জন নবী কাবা ঘরে আসতে পারেন নি তারা হলেন-

(হযরত হুদ (আদ জাতির অত্যাচার এত বেশী ছিল যে তিনি কাবা ঘরে আসতে পারেন নি

(হযরত সালেহ (সামুদ জাতির অত্যাচারে কাবা ঘরে আসতে পারেন নাই মাত্র ৪৫০ মাইল দুর থেকেও হযরত সালেহ (মাদায়েনে সালেহ থেকে মক্কায় আসতে পারেন নি

কতদিন কাবা অদৃশ্য ছিল?

নুহ নবী থেকে নিয়ে প্রায় ২৬০০ বছর পযন্ত এই কাবা ঘর অদৃশ্য ছিল২৬০০ বছর পর হযরত ইবরাহিম (পুনরায় এই কাবা ঘর একই জায়গায় নির্মান করার জন্য নির্দেশ পেয়ে ইবরাহিম নবী সিরিয়া থেকে মক্কায় গেলেন সে মক্কা নগরীতে ৬৫০০ পাহাড়ের ভিতর কাবা ঘর কোন পাহাড়ের চিপায় আছে তিনি বের করতে পারছিলেন না তখন আল্লাহ তায়ালা এক খন্ড মেঘ পাঠালেন আর ইবরাহিমকে বললেন এই মেঘ যেখানে গিয়ে দাঁড়াবে সেস্থানেই কাবা ঘরের পুরাতন চিহ্ন খুঁজে পাবেসে মোতাবেক হযরত ইবরাহিম (মেঘের ছায়ার দ্বারা কাবা ঘর এর সিমানা খুঁজে পেলেন সুবহানাল্লাহ

কাবা ঘরে কতটি পাহাড়ের পাথর?

নবী ইবরাহিম সীমানা খুজে পেয়ে এবার প্রশ্ন করলে ওহে প্রভু এই কাবা ঘর আমি কোন ধরনের পাথর দিয়ে বানাবআপনার পছন্দ কিতখন আল্লাহ তায়ালা ইবরাহিম (কে কাবা ঘরের পাহাড়ের পাথর সংগ্রহের জন্য ৫টি পাহাড়ের নাম বললেন (মিশরের তুর পাহাড় (তুরস্ক থেকে ৮০০ মাইল উত্তরে জুদি পাহাড় যেখানে নুহ নবীর নৌকা ১৫০ দিন প্লাবনের পর থেমেছিল (জর্ডানের যিতা পাহাড়  (তুরে হিরা এটি মক্কার একটি পাহাড় (সিরিয়ার লুবনান পাহাড় (সুত্র তফসিরে ইবনে আব্বাস)

পাথর নিয়ে ইবরাহিমের আরজি:

নবী ইবরাহিম (বলেন হে মাবুদ আমার সাথে কোন লেবার নাই ছোট ১১ বছরের একজন পুত্র ইসমাইল ছাড়াএখন আমি যদি মিশর থেকে সিরিয়া থেকে জডান থেকে পাথর আনতে যাই তাহলে পাথর আনতে আনতেই সময় শেষ হয়ে যাবে তোমার ঘর তৈরী করা আর হবেনা

তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন হে ইবরাহিম আমি তোমাকে পাথর সংগ্রহ করার জন্য বলিনি আমি আমার পছন্দের কথা বলেছিএবার তুমি শুধু মুখে বল এই পাহাড়ের পাথর গুলি এই ঘরের আশে পাশে তুলার মত এসে এসে পড়বে সুবহানাল্লাহ

পাথরের কি জীবন আছে?

 প্রশ্ন করতে পারেন পাথরের কি জীবন আছেহ্যাঁ পাথরেরও জীবন আছে যেমন আমার নবী উহুদ পাহাড়ের ব্যপারে বলেন আমি উহুদ পাহাড়কে ভালবাসিউহুদ পাহাড়ও আমাকে ভালবাসে (muslim 1365)

তাছাড়া সুরা বাকারার ৭৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন

 ثُمَّ قَسَتۡ قُلُوۡبُکُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِکَ فَهِیَ کَالۡحِجَارَۃِ اَوۡ اَشَدُّ قَسۡوَۃً ؕ وَ اِنَّ مِنَ الۡحِجَارَۃِ لَمَا یَتَفَجَّرُ مِنۡهُ الۡاَنۡهٰرُ ؕ وَ اِنَّ مِنۡهَا لَمَا یَشَّقَّقُ فَیَخۡرُجُ مِنۡهُ الۡمَآءُ ؕ وَ اِنَّ مِنۡهَا لَمَا یَهۡبِطُ مِنۡ خَشۡیَۃِ اللّٰهِ ؕوَ مَا اللّٰهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۷۴

অতঃপর তোমাদের অন্তরসমূহ এর পরে কঠিন হয়ে গেল যেন তা পাথরের মত কিংবা তার চেয়েও শক্ত। আর নিশ্চয় পাথরের মধ্যে কিছু আছেযা থেকে নহর উৎসারিত হয়। আর নিশ্চয় তার মধ্যে কিছু আছে যা চূর্ণ হয়। ফলে তা থেকে পানি বের হয়। আর নিশ্চয় তার মধ্যে কিছু আছে যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে। আর আল্লাহ তোমরা যা করসে সম্পর্কে গাফেল নন। 

 

 আয়াতে আল্লাহ ইহুদীদের মনকে পাথরের চেয়ে কঠিন তা বুঝিয়েছেন কারন ইহুদীরা নবীদের মুজেজা সমুহ দেখার পরও তারা সত্যকে গ্রহণ করেনা,

অথচ পাথরের মধ্যে এমন পাথরও আছে যা থেকে পানি বের হয়কিন্তু ইহুদীদের চোখ দিয়ে পানি বের হয়নামন ঘামেনাঅনেক পাথর আল্লাহর ভয়ে পাহাড় থেকে খসে পড়ে কিন্তু ইহুদীরা তার চেয়েও কঠিন হৃদয়ের তারা সত্যকে সহজে গ্রহণ করতে চায়না

এখন আমাদের মুসলমানদের মধ্যে  ধরনের কঠিন পাথরের মত হৃদয়ের অনেক মানুষ আছে যারা সত্যকে সহজে গ্রহণ করতে চায়নাঅতএব আল্লাহর হকুমে হযরত ইবরাহিম নবীর ডাকে ৫টি পাহাড়ের পাথর সমুহ উড়ে উড়ে কাবার আশে পাশে জমা হতে লাগল কারন তারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একটি ঘরের অংশ হবে সেই সৌভাগ্য লাভের আশায় তারা উড়ে উড়ে চলে আসতে লাগল সুবহানাল্লাহ

সৌভাগ্যবানদের টাকাই মসজিদে উড়ে উড়ে আসে

দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জায়গা হল মসজিদে আর সর্বনিকৃষ্ট জায়গা হল বাজার,

আর এই শ্রেষ্ঠ ঘর মসজিদের মধ্যে যারা সৌভাগ্যবান তারাই রড দিতে পারেসিমেন্ট দিতে পারেটাকা খরচ করতে পারেমেধা খরচ করতে পারেআপনি মনে করছেন আপনি মসজিদে খরচ করছেন নয় নয় আপনার টাকা আল্লাহ তার ঘরের জন্য কবুল করেছেন বলেই আপনি সেটাকে মসজিদে দিতে পেরেছেন তাই সম্পদ থাকতে কিছু অংশ মসজিদে দিয়ে যান আপনি মরার পর কবরে কেয়ামত পযন্ত সদকায়ে জারিয়া হিসেবে যোগ হতে থাকবে ইনশা আল্লাহ

নবী ইবরাহিমের ডাকে যেমন ৫টি পাহাড়ের পাথর উড়ে উড়ে মসজিদে কাবার সাথে লাগার জন্য চলে এসেছেতেমনি আপনার টাকাও মসজিদে লাগার জন্য যদি আসে সেটাকে সৌভাগ্য মনে করুন

ইবরাহিম কিভাবে ঘরে বুঝিয়ে দিলেন?

ইবরাহিম নবী কাবা ঘর নির্মান করে সে ঘর আল্লাহকে বুঝিয়ে দিলেন দোয়া করে করে আর বললেন সুরা বাকারার ১২৭ নং আয়াতে

وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

স্মরণ করযখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা'বাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিলঃ পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারীসর্বজ্ঞ। [সুরা বাকারা - ২:১২৭]

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও সে সম্মানিত ঘরে হাজিরা দেওয়ার তৌফিক দান করুন মসজিদ নির্মানের কাজে মুক্ত হস্তে দান করার তৌফিক দান করুন আমিন

হাজরে আসওয়াদের ফজিলত

সাদা পাথর কিভাবে কালো হয়ে গেল?

 হাজরে আসওয়াদ মানে কালো পাথর এটি দুধের চেয়ে সাদা ছিল যেমন তিরমিজি শরীফের  পরে মানুষের গুনাহ এটি কালো করে দিয়েছে যেমন তিরমিজির ৮৭৭ নং হাদিস

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ نَزَلَ الْحَجَرُ الأَسْوَدُ مِنَ الْجَنَّةِ وَهُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ فَسَوَّدَتْهُ خَطَايَا بَنِي آدَمَ ‏"‏ 

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছেতিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত হতে হাজরে আসওয়াদ অবতীর্ণ হয়েছিল দুধ হতেও বেশি সাদা অবস্থায়। কিন্তু এটিকে আদম সন্তানের গুনাহ এমন কালো করে দিয়েছে।

কি গুনাহ?

আপনারা জানেন এই কাবা ঘরের মধ্যেই ৩৬০টি মুর্তি ছিল এই যে মহা জুলুম কাবা ঘরের মধ্যেই চলত সে গুনাহই হাজরে আসওয়াদকে কালো করে দিয়েছে, আল্লাহ তায়াল বলেন

(ইন্নাশ শিরকা লা জুলমুন আজিম) শিরিক হল অনেক বড় জুলুম)

এই শিরিক যদিও মুসলমানরা করেনা কিন্তু তারা জুলুম করে নানা পন্থায় আমরা জুলুম করে থাকি যার কারনে আমরা ফকির হয়ে যাব নিঃস্ব হয়ে যাব

কুরবানী উপলক্ষে বরপক্ষের জুলুম

সামনে কুরবানি আসছে, এই কুরবানি নিয়ে চট্টগ্রামে রমরমা জুলুম শুরু হবে, বর পক্ষ কনে পক্ষকে নানান ভাবে চাপ সৃষ্টি করবে কুরবানিতে গরু ছাগল দেয়ার জন্য, অনেক বাবা মেয়ের শান্তির জন্য জায়গা জমি বন্ধক রেখে গহনা বন্ধক রেখে, ঋণ করে হলেও গরু দেয়, এর চেয়ে বড় জুলুম আর কি হতে পারে?

আর যারা বর পক্ষ হয়ে কনে পক্ষকে যৌতুকের জন্য জুলুম করেন, তাদের জন্য সুখবর

অভাব লোক নিঃস্ব লোক কারা?

মুসলিম শরীফের ৬৪৭৩ নং হাদিস

একদিন নবীজি প্রশ্ন করলেন তোমরা কি জান নিঃস্ব অভাব লোক কারা? সাহাবীরা উত্তর দিলেন যার টাকা পয়সা নাই ধন সম্পদ নাই সেই নিঃস্ব সেই অভাবি। তখন নবী করিম (দ) বললেন আমার উম্মতের মধ্যে সেই প্রকৃত অভাবী যে কিয়ামতের ময়দানে নামাজ রোজা, যাকাত এর নেকি নিয়ে আসবে, অথচ সে দুনিয়ার মধ্যে গালি দিয়েছে, কাউকে মারধর করেছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ অন্যায় ভাবে ভোগ করেছে,

(এখন যারা কনের বাবার কাছ থেকে নানা ধরনের কুট কৌশলে গরু ছাগল টাকা পয়সা নিয়ে ভোগ করেন তারাও এর অন্তভূক্ত)

কিয়ামতের দিন সে অন্যায়কারী জুলুমকারীর যত নেকি থাকবে সবগুলি মজলুমেরা নিয়ে নিবে, অবশেষে মজলুমদের সকল গুনাহ জালেমকে দেয়া হবে এবং অবশেষে সে জালেমকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

মজলুমের দোয়া মারাত্মক

মুসলিম এর ৩৯৮৮ নং হাদিস

সাঈদ ইবনু যায়িদ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আরওয়া (নামক এক মহিলা) বাড়ীর কিছু অংশ নিয়ে তার সহিত বিবাদ করে। তিনি বললেনতোমরা ওকে ছেড়ে দাও এবং জমির দাবীও ত্যাগ কর। কারণআমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে কেউ বিনা অধিকারে এক বিঘত জমি জবর দখল করবে কিয়ামতের দিন তাকে ঐ পরিমানে সাত স্তর যমীনের বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হবে। হে আল্লাহ! যে (আরওয়া) যদি মিথ্যাবাদী হয় তবে তার চোখ অন্ধ করে দিন এবং তার ঘরেই তার কবর দাফন করুন।

রাবী বলেনপরবর্তীকালে আমি আরওয়াকে অন্ধ অবস্থায় দেখেছিপ্রাচীর খুজে খুজে চলত। সে বলতসাঈদ ইবনু যায়িদের বদ দুআ আমায় লেগেছে। একদিন সে বাড়ীর মধ্যে চলাচল করছিল। বাড়ীর মধ্যে এক কুয়ার কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় সে তাতে পড়ে যায় কুয়াই তার কবর হয়।

কনের বাবার কাছ থেকে কুট কৌশলে কিছু নেয়া এটা জুলুমও আবার লোভও

মুসলিম শরীফের ৬৩৪০ নং হাদিস

‏ اتَّقُوا الظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَاتَّقُوا الشُّحَّ فَإِنَّ الشُّحَّ أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ‏.‏

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যুলুমকে ভয় কর। কেননা কিয়ামত দিবসে যুলুম অন্ধকারে পরিণত হবে। তোমরা লোভ- লালসা থেকে সাবধান থেকো।। কেননা এই লোভ- লালসাই তোমাদের পুর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে।

মুসলিম শরীফের ৬৩৪৪ নং হাদিস

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

"‏ لَتُؤَدُّنَّ الْحُقُوقَ إِلَى أَهْلِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক পাওনাদারকে তার পাওনা চুকিয়ে দিতে হবে।

** আমরা যে জোর জবরদস্তি করে, কুটকৌশল করে কনের বাবা থেকে যৌতুক নিই, গরু ছাগল নিই, আমরা কি এটার হকদার? যদি হকদার না হই তাহলে আমরা যা যা নিয়েছি তা তা কনের বাবাকে ফেরত দিতে হবে, দুনিয়াতে না দিলে কিয়ামতের মাঠে দিতে হবে। যদি ফেরত দিতে না পারি এখন থেকে শপথ করে নিব কনের বাবা থেকে আর কিছু নিব না, যা নিয়েছি তা ফেরত দিব, যদি ফেরত দিতে না পারি বেয়াইর হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নিব। তাহলেই নিস্তার পাব, না হয় কিয়ামতের মাঠে আমার পাওনাদার, মজলুম আমল না করেও আমার সমস্ত আমল নিয়ে জান্নাতে চলে যাবে আর আমি আমলকারী হয়েও জাহান্নামের হকদার হয়ে যাব।

এভাবে যত পাওনাদার আছেন প্রত্যেক পাওনাদারের পাওনা মৃত্যুর আগে আগে বুঝিয়ে দেয়ার তৌফিক দান করুন, ফেরত দিতে না পারলে অন্তত মাফ চেয়ে হলেও কিয়ামতের দিন নিঃস্ব হওয়া থেকে রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। না হয় মুক্তি নাই।।  

 

হাজরে আসওয়া ও রুকনে ইয়েমেনি গুনাহের কাফফারা

কেহ যদি হাজরে আসওয়াদ  রুকনে ইয়েমেনি স্পর্শ করতে পারে তাহলে তার গুনাহ সমুহ মাফ হয়ে যায়

যেমন তিরমিজির ৯৫৯ নং হাদিস

হযরত ইবনে উমর ভির ঠেলে হাজরে আসওয়াদ  রুকনে ইয়েমেনির নিকট যেতেন এর কারন হিসেবে তিনি বলেন-

فَقَالَ إِنْ أَفْعَلْ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏"‏ إِنَّ مَسْحَهُمَا كَفَّارَةٌ لِلْخَطَايَا ‏"‏ ‏.‏

এবং তিনি বলতেন আমি এরুপ করি কারন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছিঃ এই দুইটি রুকন স্পর্শ করলে গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যায়।

নবী ২টি রুকন স্পশ করতেন শামি ও ইরাকি রুকন স্পশ করতেন না কেন?

কাবা ঘর হযরত ইবরাহিম (আ) এর সীমার উপর প্রতিষ্টিত হয়নি, রুকনে শামি ও রুকনে ইরাকির সেদিনে কিছু অংশ বাদ দিয়ে কাবা ঘর প্রতিষ্ঠিত, সে জন্য সে স্থানটিকে আলাদা করে দেওয়াল দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে, যাকে হাতিমে কাবা বলা হয়। যেহেতু সে পাশের রুকনে শামি ও রুকনে িইরাকি হযরত ইবরাহিম (আ) এর ভিত্তির উপর পতিষ্ঠিত হয়নি তাই নবী করিম (দ) সে দুটি রুকন স্পর্শ করেননি। আমাদেরও সে দুটি রুকন স্পশ করা সুন্নত নয় বরং রুকনে ইয়েমেনি ও হাজরে আসওয়াদ স্পশ করা সুন্নত।

হাজরে আসওয়াদকে চুমু দেয়ার ফজিলত

হাজরে আসওয়াদকে যদি চুমু দিতে পারেন তাহলে কিয়ামতের দিন তা আপনার পক্ষে সাক্ষি দিবে

যেমন ইবনে মাজা শরীফের ২৯৪৪ নং হাদিস

সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনআমি ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছিরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন এই পাথরকে উপস্থিত করা হবে। তার দুটি চোখ থাকবেতা দিয়ে সে দেখবেযবান থাকবে তা দিয়ে সে কথা বলবে 

يَشْهَدُ عَلَى مَنْ يَسْتَلِمُهُ بِحَقٍّ ‏

এবং সে এমন লোকের অনুকূলে সাক্ষ্য দিবে যে তাকে সত্যতার সাথে চুমা দিয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হাজরে আসওয়াদকে স্পশ করার চুম্বন করা র তৌফিক দান করুন

মকামে ইবরাহি এর ফজিলত

কাবা চত্বরে আরো ১টি পাথর আছে যে পাথরকে নামাজের স্থান হিসেবে গ্রহণ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন সুরা বাকারার ১২৫ নং আয়াতে

وَاتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى

আর তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাযের জায়গা বানাও  [সুরা বাকারা - ২:১২৫]

মকামে ইবরাহিমে তাওয়াফের পর ২ রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব যদি মকরুহ ওয়াক্ত না হয় সাথে সাথে এর আশে পাশে ২ রাকাত নামাজ পড়া প্রত্যেক হজ্ব ও ওমরাকারীর জন্য তাওয়াফের পর ওয়াজি

মকামে ইবরাহিম লিফট

এই পাথরে দাড়িয়ে ইবরাহিম (কাবা ঘর তৈরী করেছেন এই পাথরটি জিবরাইল (জান্নাত থেকে নিয়ে আসেন এটি হযরত ইবরাহিম (কে লিফট এর কাজ দিয়েছে

প্রয়োজনে উপরে উঠতো আবার নিচে নেমে যেত

মকামে ইবরাহিম এর আলো

এ পাথরটি খুবই উজ্জল আলোকিত ছিল এ পাথর যদি আল্লাহ আলোহীন না করতেন তাহলে পুরা দুনিয়াতে আর লাইট লাগতনা

তিরমিজির ৮৭৮ নং হাদিস

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছিঃ হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীম জান্নাতের ইয়াকুত (দীপ্তিশীল মূল্যবান মণি) হতে দুটো ইয়াকুত। আল্লাহ্ তাআলা এই দুটির আলোকপ্রভা নিম্প্রভ করে দিয়েছেন। এ দুটির প্রভা যদি তিনি নিস্তেজ করে না দিতেন

 نُورَهُمَا لأَضَاءَتَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ ‏"

তাহলে তা পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে যা কিছু আছে সব আলোকিত করে দিত।

জমজম এর পানি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পানি

জমজম এর পানি দ্বারা হুজুর (দ) এর হৃদপিন্ড ধৌত করা হয়েছে, এর দ্বারা বুঝা যায় এটাই বিশ্বের বুকে সবচেয়ে সেরা পানি, যদি এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন পানি থাকত তাহলে তা দিয়ে নবী করিম (দ) এর শককে সদর করা হত।

এ পানি দাঁড়িয়ে পান করতে হয় কেন?

আমাদের প্রিয় নবী দাঁড়িয়ে পান করেছেন তাই আমাদের জন্যও সুন্নত হল জমজম দাড়িয়ে পান করা

বুখারী ১৬৩৭ নং হাদিস

 سَقَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مِنْ زَمْزَمَ، فَشَرِبَ وَهُوَ قَائِمٌ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনআমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যমযমের পানি পেশ করলাম। তিনি তা দাঁড়িয়ে পান করলেন।

অন্য সব পানি দাঁড়িয়ে পান করা কি হারাম?

যারা শুধু হাদীস পড়েন তারা যদি ব্যাখ্যা না জানেন তারা মনে করবেন দাঁড়িয়ে পানি পান করা হারাম

যেমন মুসলিম শরীফের ২০২৬ নং হাদিসে দেখা যায় নবী করিম (ভুলে দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা বমি করার জন্য বলেছেন,

এখন কেহ যদি শুধু এই হাদিস পড়ে সে বলে দিবে দাঁড়িয়ে পানি পান করা হারাম,

সে জন্য নিজে নিজে হাদিস পড়ে ফতোয়া দেয়া বিপজ্জনকযেমন ফোকাহয়ে কেরাম ফতোয়া দিয়েছেন অনেক গুলি হাদিসকে সমন্বয় করে বলেন দাঁড়িয়ে পানি পান করা মাকরুহে তানজিহি হালকা মকরুহ বিশেষ প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে পানি পান করা যায় যেমন এক হাদিসে যদিও কঠোর নিষেধ আছে অপর হাদিসে তিরমিজ ১৮৮৩ইবনে মাজার ৩৪২৩তিরমিজি ১৮৮০ নং হাদিসে দাঁড়িয়ে পান করার বৈধতা পাওয়া যায়

অজুর পানি দাঁড়িয়ে পান করা সুন্নত

সুনানে নাসাঈর ৯৫ নং হাদিস দ্বারা বুঝা যায় অজু করে পাত্রের মধ্যে যে অবশিষ্ট পানি বাকী থাকে তা দাঁড়িয়ে পান করা নবীজির তরিকা

হুসায়ন ইবনু আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার পিতা আলী (রাঃ) আমাকে উযূর পানি আনতে বলেন। আমি তাঁর নিকট পানি এনে দিলাম। তিনি উযূ  করতে আরম্ভ করলেন। (প্রথমে) উযূর পানিতে হাত ঢুকাবার পূর্বে হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করলেন। এরপর তিন বার কুলি করেন ও তিন বার নাক ঝাড়েন। তারপর তিন বার মুখমণ্ডল ধৌত করেন এবং ডান হাত তিনবার কনুই পর্যন্ত ধৌত করলেন। অনুরূপভাবে বাম হাতে ধৌত করলেন এবং একবার মাথা মাসাহ করেন। তারপর টাখনু পর্যন্ত ডান পা তিনবার এবং অনুরূপভাবে বাম পা ধৌত করেন।

পরে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন এবং বললেনপানির পাত্রটা (আমার হাতে) দাও। আমি (তাঁর উযূর পর যে পানিটুকু পাত্রে ছিল তা সহ) পাত্রটি তাঁকে দিলাম। তিনি উযূর অবশিষ্ট পানিটুকু দাঁড়িয়ে পানি পান করলেন। আমি তাঁকে দাঁড়িয়ে পান করতে দেখে অবাক হলাম। তিনি আমার অবস্থা দেখে বললেনঃ অবাক হয়ো না। তুমি আমাকে যেমন করতে দেখলেআমিও তোমার নানা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরূপ করতে দেখেছি। আলী (রাঃ) তাঁর এ উযূ  এবং অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করা সম্পর্কে বলছিলেন।

 

জমজমের পানিতে শেফা ও বরকত আছে?

জমজমের পানিতে শেফাও আছে বরকত ও আছে এবং এই পানি যে নিয়তে পান করা হয় সে নিয়ত পুরন হয় যেমন সুনানে ইবনে মাজার ৩০৬২ নং হাদিস

‏ "‏ مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ ‏"‏ ‏.‏

জমজমের পানি যে উদ্দেশ্য নিয়ে পান করবে তা পূরণ হবে।

জমজমের পানি পানের দোয়া:

اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْئَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَّرِزْقًا وَّاسِعًا وَّشِفَاءً مِّنْ كُلِّ دَاءٍ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআওয়া রিজকান ওয়াসিয়াওয়া শিফাআন মিন কুল্লি দা-ইন।’ অর্থ: হে আল্লাহআমি আপনার কাছে কল্যাণকর জ্ঞানপ্রশস্ত রিজিক এবং যাবতীয় রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করছি।’ (দারা কুতনি: ৪৬৬)

জমজমের আরো তথ্য

প্রতিদিন ৬৯০ মিলিয়ন লিটার পানি জমজম কুপ থেকে উত্তোলন করা হয়

এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পানির কুয়া,

জমজম কুপ আবদুল মুত্তালিবের স্বপ্ন ও খনন

 এক সময় এই কুপ শুকিয়ে যায়নবীজির দাদা আবদুল মুত্তালিব এই কুপ এক রাতে স্বপ্ন দেখেন স্বপ্ন মোতাবেক তিনি এই কুপ খনন করে তা পুনরায় উদ্ধার করেন

জাপানি বিজ্ঞানী মাসারুর  গবেষণার  ফলাফল

 সাধারণ পানির ১০০০ ফোঁটার সঙ্গে যদি জমজমের পানির এক ফোঁটা মেশানো হয়তাহলে সেই মিশ্রণও জমজমের পানির মতো বিশুদ্ধ হয়ে যায়।

# জমজম কেহ ক্ষুধা নিবারনের জন্য পান করলে ক্ষুধা নিবরান হবে

# জমজমের পানি বছরের পর বছর ঘরে রেখে দিলেও তাতে ছত্রাক জন্মায়না, এর স্বাদ রং পরিবতন হয়না সুবহানাল্লাহ

# জমজমের পানি অন্যান্য পানির চেয়ে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বেশী

# এ পানিতে কোন ধরনের জীবনু জন্ম নিতে পারেনা

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হজ্বে বায়তুল্লাহ নসিব করুন, মকামে ইবরাহিমে নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুন, হাজরে আসওয়াদ রুকনে ইয়েমেনি চুমু দেয়ার তৌফিক দান করুন জমজমের পানি পান করার তৌফিক দান করুন আমিন।

কোন মন্তব্য নেই

ULTRA_GENERIC থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.