Header Ads

Header ADS

ঈদুল আযহা ২০২৩ ইং খুতবা কুরবানির ঘটনা ও কুরবানি তথা এবাদত কবুল হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন

 

বিসিমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

ঈদুল আযহা ২০২৩ ইং খুতবা

খতিব- হাজি অলি মিয়া সওদাগর জামে মসজদি, চট্টগ্রাম

প্রথম খোতবার শুরুতে ৯ বার আল্লাহু আকবার বলে, ২য় খুতবার শুরুতে ৭ বার বলে আর ২য় খুতবার শেষে মিম্বর থেকে নামার আগে ১৪ বার আল্লাহু আকবর বলে,



ভূমিকা: আজকে পবিত্র ঈদুল আযহা বা কুরবানির দিন, এই কুরবানি মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন, খুশির দিন এই কুরবানি শুধুমাত্র গোস্ত খাওয়া বা পশু হত্যা উদ্দেশ্য নয়, বরং এই কুরবানির মধ্যে আছে ত্যাগের শিক্ষা আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের উপায় আল্লাহর জন্য খরচ করার শিক্ষা আত্মিয় স্বজনের মাঝে বিলি করার শিক্ষা গরীবদের মাঝে বিলি করার শিক্ষাপিতা মাতার আনুগত্যের শিক্ষা।



কুরবানি প্রথম কখন থেকে চালু হয়?

হযরত আদম () এর দুই সন্তান হাবিল কাবিল দুজনে একটি মেয়েকে বিয়ে করতে চায়, তখন হযরত আদম () তাদেরকে বলেন কুরবানি করার জন্য তারা দুজন কুরবানি করেন হাবিলের কুরবানি ছিল একটি দুম্বা সেটি কবুল হয় কাবিলের কুরবানি কবুল হয়নি,

 

তখন কুরবানি কবুল হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝা যেত?

তখন কুরবানি করে ফেলে রাখা হত, আর আসমান থেকে অগ্নি শিখা এসে তা ভস্মিভুত করে দিত সে হিসেবে হাবিলের দুম্বা পশুটি কবুল করে আল্লাহ তায়ালা ভস্মিভুত করে নিয়ে গেলেন

 

বর্তমানেও যদি ভস্মিভুত হত তাহলে কেমন হত?

যদি হাবিলের কুরবানির মত আমাদের কুরবানিও জ্বালিয়ে নিয়ে যেত তাহলে মানুষ আর এত পশু মোটা তাজাও করত না, কোনমতে একটা জবেহ করে তা ফেলে রাখত 

হাবিল কাবিলের কুরবানি সম্পর্কে সুরা মায়েদার ২৭ নং আয়াত

وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِن أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الآخَرِ

আপনি তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শুনান। যখন তারা ভয়েই কিছু উৎসর্গ নিবেদন করেছিল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনের গৃহীত হয়নি। [সুরা মায়েদা - ৫:২৭]

হাবিলকে কাবিল কিভাবে হত্যা করে? কিয়ামত পর্যন্ত সব খুনের গুনাহ কাবিলের

পৃথিবীর বুকে সর্বপ্রথম কাবিল তার ভাই হাবিলকে হত্যা করে, একজন নারীর কারনে, সেই দুনিয়ার জমিনে প্রথম খুন করেছে, আর সে জন্য কিয়ামত পযন্ত দুনিয়াতে যত খুন হবে প্রত্যেক খুনের গুনাহের এক অংশ কাবিলের আমলনামায় যোগ হবে, আমরাও যদি সমাজে কোন গুনাহের প্রচলন করি, পরিবারে কোন গুনাহের প্রচলন করি তাহলে সে গুনাহ যতদিন চলবে যতজন পরবর্তীতে পালন করবে তত গুনাহের একটি ভাগ সবপ্রথম প্রচলনকারীর আমলনামায় যোগ হবে তাই প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে গুনাহ প্রচলন করা থেকে বিরত থাকবেন ধরুন আপনি সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তি এখন আপনি আপনার সমাজে কখনো কোন পালাগানের আসর বসেনি, আপনি সমাজের নেতা হয়ে আপনি প্রথম পালাগানের আসর বসালেন, এখন আপনার পরে যতবার যত বছর এই পালাগানের আসর হবে তার গুনাহের একটি অংশ আপনার আমলনামায় যোগ হবে

যদি নেকি প্রচলন করেন

তেমনি যদি কোন নেকির প্রচলন করতে পারেন সে নেকি যতদিন চালু থাকবে তার একটি অংশ আপনার আমলনামায় যোগ হবে ধরুন আপনার পরিবারে আপনারা ১০ ভাই আপনি হলেন ৩য় আপনার আগের দুই ভাই শশুড় বাড়ী থেকে যৌতুক নিয়েছে, কোরবানিতে শশুড় বাড়ী থেকে কলা কৌশলে গরু ছাগল নিয়েছে, এখন আপনি বিয়ের পর এই প্রথার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে এই প্রথা বন্ধ করলেন তাহলে আপনার পরিবারে আপনাকে অনুসরন করে পরবর্তীতে যারাই এই গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকবে তারা যেমন নেকি পাবেন আপনিও এক অংশ নেকি পাবেন

সেভাবে যে কোন সুন্নত প্রতিষ্ঠা করলে তা চাই সমাজে হউক, চাই এলাকায় হউক, চাই ঘরে হউক সে সুন্নতের উপর পরবর্তীতে যারাই আমল করবে সে আমলের এক অংশ যে প্রথম সুন্নতটিকে জীবিত করল সেও পাবে

নবীর সদকায় আমরা কোরবানির গোস্ত খাচ্ছি

আমাদের নবীর সদকায় আমরা কোরবানি করছি আল্লাহর জন্য, আবার আমরা নিজেরাই তা খাচ্ছি, আমাদের কোরবানির পশু আল্লাহ তুলে নিয়ে যাচ্ছেনা, আবার এর প্রতিদান আমরা আখেরাতেও পাব

 

কোরবানীর পশুতে হারামও খাচ্ছি?

আমরা প্রিয় নবীর সদকায় পশুর গোস্ত খেতে পারছি সে জন্য আমাদের শোকর আদায় করা দরকার কিন্তু পশু খেতে কেন বলেছেন তাই আমরা হালাল পশুতে যে সব জিনিষ হারাম তাও খেয়ে ফেলি যেমন হালাল পশুতে ৭টি জিনিষ হারাম যেমন (রক্ত, পু লিঙ্গ, অন্ডকোষ, স্ত্রী লিঙ্গ, মাংসগ্রন্থি, মুত্রথলি, পিত্ত) হাদীসে এসব হারাম হওয়ার বয়ান আছে, এসবকিছু হারাম হওয়ার কারন হল এসবের মধ্যে নাপাকি আছে, এখানে কিন্তু ভুরির কথা উল্লেখ নাই, তবে যেহেতু ভুরিও নাপাকি দ্বারা ভর্তি থাকে তাই একদল ফকিহ ভুরি খাওয়াকেও মকরুহে তাহরিমি বলেছেন,

 

আপনার কোরবানি কিভাবে কবুল করাবেন?

যদি ২টি শত অনুসরণ করে কোরবানি করেন তাহলে আপনার কোরবানি অবশ্যই কবুল হবে

() প্রথম শর্ত হল নিয়ত হতে হবে খাটিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন কারো মনোরঞ্জন বা প্রেস্টিজ রক্ষার জন্য নয়

. لَنۡ یَّنَالَ اللّٰهَ لُحُوۡمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰکِنۡ یَّنَالُهُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ ؕ

কিন্তু মনে রেখো! কোরবানির গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, আল্লাহর কাছে পৌঁছায় শুধু তোমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ আল্লাহ সচেতনতা।  (সুরা হজ : আয়াত ৩৭-৩৮)

শানে নুযুল: এ আয়াত নাজিল হওয়ার কারন হল কাফেরেরা পশু বলি দিয়ে তার রক্ত কাবা ঘরের দেওয়ালে লাগাত, তা দেখে মুসলমানরাও কুরবানির পশু রক্ত কাবার দেওয়ালে লাগাতে আরম্ভ করল তখন এই আয়াত নাজিল হয়,

 

() কোরবানি হতে হবে প্রিয় নবীর অনুসরনে যেমন

# শরিকে কোরবানি করার পর গোস্ত অনুমানে ওজন করবেননা

# যার উপর কোরবানি ওয়াজিব তার পক্ষ থেকে আগে কোরবানি দিতে হবে এরপর অতিরিক্ত অংশ থাকলে তা অন্যের পক্ষ থেকে করবেন

# গরীব মিসকিন ও আত্মিয় স্বজনকেও কুরবানির গোস্ত বিলি করা।

ধরনের যে সব কোরবানির নিয়ম কানুন আছে সে সব বিষয়ে জেনে তারপর কোরবানি করলে তা অবশ্যই কবুল হবে

 

এবাদত কবুল হয়েছে কিনা বুঝার উপায়

যে কোন নেক আমল কবুল হচ্ছে কিনা তা বুঝার কয়েকটি উপায় ওলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন যেমন

) যদি আপনার এবাদত করার পর আরো এবাদত করতে মন চায় তাহলে বুঝে নিন আপনার এবাদত কবুল হচ্ছে

) যদি আপনার নেক আমল করার পর আরো নেক আমলের সুযোগ আসে তাহলে বুঝে নিন আপনার সে নেক আমল কবুল হচ্ছে

মসনবির ঘটনা: মাওলানা রুম তার মসনবি শরীফে এক বুযুর্গের ঘটনা লিখেন, তিনি আজীবন এবাদত করেছেন আল্লারহ জিকির করেছেন, কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে এবাদতের কোন জবাব আসেনি, এমন প্রশ্ন যেদিন তার মনে জাগ্রত হল সে রাতে তিনি স্বপ্নে দেখেন তাকে বলা হচ্ছে হে আমার বান্দা তুমি একবার আমাকে আল্লাহ ডাকার পর যখন ২য় বার ডাকতে পারছ মনে কর তোমার প্রথম আল্লাহ ডাক আমি কবুল করেছি তাই ২য় বার ডাকার তৌফিক দিয়েছি

সুতরাং আমরা যদি ফজর পড়ার পর যোহর পড়ার তৌফিক লাভ করি বুঝতে হবে আমাদের ফজর আল্লাহ কবুল করেছেন

আমরা ১ম বছর কুরবানি করার পর ২য় বছর যদি আল্লাহ আবার কুরবানি করার তৌফিক দেন তাহলে বুঝতে হবে আল্লাহ আমাদের ১ম বছরের কুরবানি কবুল করেছেন

 

এবাদতের তৌফিক ছিনিয়ে নেয়া, ঈমান ছিনিয়ে নেয়া আল্লাহর অনেক বড় আযাব

এক ইমাম সাহেব অজু ছাড়া শীত কালে নামাজ পড়াত, একদিন তার মনে প্রশ্ন জাগ্রত হল আমি প্রায় সময় অজু ছাড়া নামাজ পড়াই এতে আমার কোন ক্ষতি হচ্ছেনা, তার মনে ইসলাম ধর্মের ব্যপারে সন্দেহ পয়দা হল, একটি খ্রিষ্টান মিশনারী সে ইমামকে ভালো বেতনে চাকরি দিল, সে একসময় ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করল, সে ইমাম সাহেব এর সাথে এলাকার কিছু আলেম ওলামা দেখা করল আর তাকে ধম ত্যাগ করার কারন জিজ্ঞাসা করল, সে তার সব ঘটনা খুলে বলল সে বলল যদি েইসলাম সত্য ধম হত তাহলে আমার উপর আযাব কেন আসেনি, তাছাড়া এখন আমি আরো ভালো বেতন পাচ্ছি, আরো ভালো আছি, তখন একজন বিজ্ঞ আলেম বলেলেন- আরে ভাই তুমি নামাজে অবহেলা করা অজু ছাড়া নামাজ পড়ার কারনে আল্লাহ তায়ালা সত্যি সত্যি তোমার উপর নারাজ হয়েছেন এবং তোমার উপর এমন আযাব নাজিল করেছেন যা তুমি বুঝতে পারছনা, এই যে তোমার ঈমানের দৌলত আল্লাহ ছিনিয়ে নিয়েছেন এটার চেয়ে বড় আযাব আর কি হতে পারে?

সুতরাং ইবাদত না করা সামথ থাকা সত্বেও কুরবানি না করা এর দ্বারা বুঝতে হবে আল্লাহ আমার উপর নারাজ তাই আমার কাছ থেকে নামাজের তৌফিক, ইবাদতের তৌফিক, কুরবানির তৌফিক ছিনিয়ে নিয়েছেন

) যদি এবাদত বা নেক আমল করার পর সে নেক আমল কবুল হচ্ছে কিনা তার চিন্তায় মনে ভয় জাগ্রত হয় তাহলে বুঝে নিন আপনার এবাদত কবুল হচ্ছে

يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ

তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তারা আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত। [সুরা আম্বিয়া - ২১:৯০]

) নেক আমল কবুল হওয়ার আরো ১টি চিহ্ন হল গুনাহের কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হওয়া

 

সুতরাং যে নামাজ রোজা হজ যাকাত কুরবানি খুব বেশী করে পাশা পাশি গুনাহের কাজও বেশী করে তাহলে বুঝতে হবে তার সে এবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হচ্ছেনা

আল্লাহ বলেন (ইন্নাস সালাতা তানহা আনিল ফাহশাঈ ওয়াল মুনকার) নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লিল মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, এখন আমরা নামাজ পড়ি পাশাপাশি যদি অশ্লিল কাজও করি বুঝতে হবে আমাদের নামাজ কবুল হচ্ছেনা

হযরত ইবরাহিম (আঃ) এর জানের কুরবানি

আল্লাহর নবি হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহর দ্বিনের দাওয়াত দিতে লাগলেন। এতে নমরূদ ক্ষিপ্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিল যে, তাঁকে সম্পূর্ণ বিলীন করে দিতে হবে। সে অনুযায়ী নমরূদের প্রজ্জ্বলিত আকাশচুম্বী আগুনের লেলিহান শিখায় ফেলার জন্য খলিলুল্লাহকে চাক্কিতে ঘুরানো হচ্ছিল অথবা মিনজানিক দ্বারা নিক্ষেপ করার আয়োজন করছিল। কাফেররা উল্লাসে মেতে উঠল যে, আজ থেকে তাদের কথিত মাবুদদেরকে গালী দেয়ার আর কেউ থাকবে না, চিরদিনের জন্য তাঁকে ধ্বংশ করে দেয়া হবে। এদিকে জিব্রাইল আলাইহিস সালাম উপস্থিত হয়ে গেলেন। বললেন, হে আল্লাহর খলিল! কোন নির্দেশ কি আছে? কিংবা কোন প্রয়োজন? আল্লাহর নবি খলিল বললেন, তোমার কাছে আমার কোন প্রয়োজন নেই। জিব্রাইল বললেন, তবে রবের নিকটই আবেদন করুন। তিনি বললেন সুরা ইমরানের ১৭৩ নং আয়াত (হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল)

অথ্যাৎ আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্টকতই না চমৎকার কামিয়াবীদানকারী। এদিকে আল্লাহর নবি ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হল, ঐদিকে আল্লাহ তা'য়ালা আগুনকে আদেশ করলেন-

-یانارکوني بردا وسلاما علي ابراهيم

অর্থাৎ, হে অগ্নি! তুমি ইব্রাহিমের উপর আরামদায়ক শীতল হয়ে যাও।

(সূরা আল-আম্বিয়া : ৬৯)

সেজন্য যে কোন বিপদে পড়লে ২ রাকাত হাজত এর নামাজ পড়বেন তারপর কয়েকবার দরুদ পড়ে বেশী বেশী পড়বেন (হাসবুনাল্লাহু ওয়ানেমাল ওয়াকিল) আমার জন্য আমার আল্লাহই যথেস্ট তিনি উত্তম কমবিধায়ক

আর কঠিন বিপদে হযরত ইউনুস () এর একটি দোয়া যা তিনি মাছের পেটে পড়েছিলেন (লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন) পড়বেন

যে কোন কঠিন কাজ সহজ করার জন্য নবী করিম (দ) এর আরো ১টি নববী দোয়া রয়েছে যেটি সহি ইবনে হিব্বানের ২৪২৭ নং হাদিসে আছে, দোয়াটি হল

«اللَّهُمَّ لاَ سَهْلَ إِلاَّ مَا جَعَلْتَهُ سَهْلاً، وَأَنْتَ  تَجْعَلُ الْحَزْنَ إِذَا شِئْتَ سَهْلاً».

(আল্লা-হুম্মা লা সাহ্‌লা ইল্লা মা জাআলতাহু সাহ্‌লান, ওয়া আনতা তাজ্আলুল হাযনা ইযা শিতা সাহ্‌লান)।

 হে আল্লাহ! আপনি যা সহজ করেছেন তা ছাড়া কোনো কিছুই সহজ নয়। আর যখন আপনি ইচ্ছা করেন তখন কঠিনকেও সহজ করে দেন।

 

আল্লাহর নবি খলিল আলাইহিস সালাম প্রথম এবং সবচেয়ে প্রিয় জানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন।

সে অগ্নিকুন্ডে টিকটিকি/গিরগিট ফুক দিয়েছিল

টিকটিকি মারা সাওয়াব কেন?

আর টিকটিকির ব্যপারে বা গিরগিটের ব্যপারে সহিহ মুসলিমের হাদীস যখন হযরত ইবরাহিম (আঃ) এর জন্য আগুন জ্বালানো হচ্ছিল তখন সে তাকে প্রজ্জলিত করার জন্য ফুক মারছিল, বুখারী শরীফের ৩০৭৪ নং হাদীসে (লি ওয়াজাগিল ফুয়াইছিক) নিকৃষ্টতম ফাসিক বলে অভিহিত করেছেন।
বুখারী শরীফের ৩০৭৫ নং হাদীস (আমারাহা বিকাতলিল আওজাগ) মহানবী (দঃ) টিকটিকি হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।১ বাড়িতে মারলে ১০০ নেকি, যারা আল্লাহর প্রিয়জনদের সাথে দুষমনী করে আল্লাহ দুনিয়ার সকল সৃস্টিকে তার দুষমন বানিয়ে দেন। সুবহানাল্লাহ! তাই আমাদের উচিত আল্লাহ প্রিয়জনদের সাথে মহব্বত রাখা।

হযরত ইবরাহিম শুধু নিজের জানের কুরবানিই দেননি বরং জানের চেয়ে প্রিয় সন্তানকেও কুরবানি দিতে দিধা বোধ করেননি-

পৃথিবীর ইতিহাসের ২য় কোরবানি কখন হয়?

পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম কোরবানি হয় হাবিল কাবিলের কোরবানি, আর ২য় কোরবানির ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা সুরা সাফফাতে বিস্তারিত বয়ান করেন যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন

رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ

হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর। [সুরা সাফফাত - ৩৭:১০০]

فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ

সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম। [সুরা সাফফাত - ৩৭:১০১]

সহনশীলতা ও ধৈর্য্যের উপকারিতা

ইসমাইল () এমন সহনশীল ও ধৈয়্যশিল ছিলেন তার সহনশীলতায় তিনি উত্তিণ হয়েছেন আর কিয়ামত পর্যন্ত তা উদাহারণ হয়ে থাকবে,

বিপদে সহনশীলতা ধৈর্য্যর গুরুত্ব বুঝিয়েছেন লোকমান হাকিম তার পুত্রকে

হযরত সাঈদ বিন মুসায়্যিব (রহ) এরশাদ করেন হাকিম লোকমান (রহ) তার ছেলেকে নসিহত করেন, যখনই কোন মসিবত আসে তা তোমার জন্য কল্যাণ মনে করবে। এই মসিবতে তোমার জন্য কোন না কোন কল্যাণ নিহিত আছে বলে মনে করবে।
ছেলে বাবাকে বললেন- পিতাজি আমি আপনার কথাটি শুনলাম এবং বুঝলাম কিন্তু এর উপর আমার বিশ্বাস এখনো পরিপূণ হয়নি। অর্থ্যাৎ মসিবতে কল্যাণ কিভাবে থাকে? এই কথার উপর তাহকিক করার জন্য এবং এই কথার উপর পূর্ণ একিন অর্জনের জন্য দুই বাপ বেটা এক লম্বা সফরে রওয়ানা হয়ে যায়।

দিন রাত সফর করতে করতে পথে এক জঙ্গলে প্রবেশ করে। খুব গরম ছিল, সব খাবার দাবার রাস্তায় শেষ হয়ে যায়, পানির তৃষ্ণায় খচ্চরও ক্লান্ত হয়ে গেল। খচ্চর যখন পিপাসায় হাফাতে লাগল। বাপ বেটা খচ্চর থেকে নেমে পায়ে হেটে চলা আরম্ভ করল।

হঠাৎনেক দুরে ধোয়া ও ছায়া দৃষ্টিগোছর হচ্ছিল। হযরত হাকিম লোকমান ধারনা করল হয়ত সেখানে কোন আবাদি বা লোকজন আছে। তাই তারা সেদিকে রওয়ানা দিল, কিন্তু কিছুদুর যাওয়ার পর ছেলেটির পায়ে ১টি হাড্ডি ঢুকে গেল ফলে ব্যথায় সে জমিনে বেহুশ হয়ে পড়ে গেল। হাকিম লোকমান কবিরাজি পদ্ধতিতে তার পায়ের চিকিৎসা করলেন, হাড্ডি বের করে নিলেন এবং সে কিছুটা আরাম অনুভব করল। আর পিতাকে প্রশ্ন করল আব্বাজান আপনিতো বলেছেন সকল মসিবতে কোন না কোন কল্যান আছে, এখন আমরা এমন এক বিরান জঙ্গলে এসে পৌঁছেছি যেখানে আমাদের খাবার পানিও খতম হয়ে গেছে, আমার পাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে গেছেযে হাটতে পারছিনা, এ অবস্থায় এখাবে ক্ষুধায় আমাদের হয়ত মৃত্যু হয়ে যাবে, এখন বলুন এই মসিবতে আমাদের জন্য কি কল্যাণ লুকায়িত আছে?

তখন হাকিম লোকমান বললেন বেটা এই মসিবতে অবশ্যই কোন না কোন কল্যাণ আছে, হতে পারে এই ছোট মসিবতে গ্রেফতার করে আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালা কোন বড় মসিবত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।

প্রিয় দর্শক শ্রোতা- হযরত লোকমান হাকিম যখন এই কথা বলছিল তখন দুরে যে ধোয়া দেখা যাচ্ছিল তা হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল। এবং সেদিক থেকে সাদা রং এর কাপড় পরিধান করে ঘোড়ায় চড়ে এক লোককে আসতে দেখা গেল। যিনি খুব দ্রুত এদের দিকে আসছিল। যখন সে একদম নিকটে আসল হঠাৎ দৃষ্টি থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল।

এরপর এক গায়েবী আওয়াজ আসল- আমি জিবরাইল আমাকে কেবল আম্বিয়াগন এবং ফেরেশতারা দেখতে পারেন, আমাকে হকুম দেয়া হয়েছে যে আমি অমুক শহরকে জমিনে ধসিয়ে দিই। এবং আমি দেখলাম আপনারা বাপ বেটা ঐ শহরের দিকে যাচ্ছেন তাই আমি আল্লাহর হকুমে আপনার ছেলেকে আহত করে দিয়েছি, যাতে আপনারা সে শহরে প্রবেশ করতে না পারেন। আর এই ছোট মসিবত দিয়ে আল্লাহ তায়ালা আপনাদেরকে বড় মসিবত থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছেন।

মুহতারাম- অতঃপর হযরত জিবরােইল (আ) তাঁর নুরানি হাত দ্বারা সে ছেলের ভাঙ্গা পায়ে মাসেহ করে দিলেন ফলে তার পা বিলকুল ঠিক হয়ে গেল। এবং তাদের খাবার ও পানির বরতনে মাসেহ করার ফলে তা খাবার ও পানিতে ভরে গেল, দুই বাপবেটাকে সাওয়ারী সহ জিবরাইল ফেরেশতা মুহুর্তের মধ্যে তাঁদের ঘরে পৌঁছিয়ে দিলেন।

হে আমার ভাই ও বোনেরা মনে রাখবেন যখনই কোন মসিবতে আমরা পতিত হই এই মসিবত নিশ্চয়ই কোন বড় মসিবত থেকে আমাদেরকে বাঁচানোর জন্য আসেআর এই মসিবতে আমাদের জন্য কোন না কোন কল্যাণ লুকায়িত থাকে। কেননা কিছু মসিবত আসেই এই জন্য যে আমাদেরকে কোন বড় মসিবত থেকে রক্ষা করে। যেহেতু যে বড় মসিবত আমাদের থেকে দুর হয়ে গেছে তা আমরা দেখিনা তাই যে ছোট মসিবত আমরা দেখি সেটিকে আমরা অনেক বড় মনে করি।

ফলে আমরা সাথে সাথে শেকায়েত করা আরম্ভ করি আমি কোন পাপ করেছি যে আমার উপর এত বড় মসিবত আপতিত হল? মনে রাখবেন যদি আমরা সবর করি তাহলে তার ফলে আমরা ২টি উপকারিতা লাভ করতে পারি।

(১) আল্লাহ জাল্লা শানুহু আমাদেরকে ঐ বড় মসিবত থেকে বাঁচিয়ে ফেলে। আর সবরের বরকতে ছোট মসিবতটিও দুর হয়ে যায়। যেমন হযরত জিবরাইল হাত মাসেহ করলেন আর সাথে সাথে ছেলেটির পাও ঠিক হয়ে গেল, বরতনও খাবারে ভরে গেল, সাওয়ারী সহ বাপবেটা সহি সালামত ঘরে পৌঁছে গেল। আর সে শহরের বড় আযাবের হাত থেকেও আল্লাহ তাদের বাঁচালেন।

কারন হযরত লোকমান সন্তানকে সবরের তলকিন দিচ্ছিলেন যে বেটা এই মসিবতের মধ্যেও তোমার জন্য কোন কল্যান আছে। কোন উপকারিতা নিশ্চয়ই আছে।

হুজুর (দ) এরশাদ করেন- তোমরা অসুস্থতায় অভিযোগ করিওনা এবং মসিবতগ্রস্থ হলে তা গোপন রাখ, যদি মসিবতে ধৈর্য্য ধারন কর তাহলে সে মসিবত দুর হয়ে যাবে।আর যে বড় মসিবতকে দুর করার জন্য ছোট মসিবতটি এসেছে তাও দুর হয়ে যাবে।

অপর এক রেওয়ায়েতে আছে বান্দার প্রতি যখন আল্লাহ কোন ছোট মসিবত দেন আর সে ছোট মসিবতে যখন বান্দা ধৈর্য্য ধারন না করে শেকওয়া শেকায়েত করতে থাকেন তখন তাকে আল্লাহ বড় মসিবতে গ্রেফতার করে নেন।


আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যে কোন মসিবতে ধৈর্য্য ধারন করা এবং মসিবতে পড়লেই তা জনে জনে প্রচার করা, শেকায়েত করা থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। ছোট বড় সব মসিবত থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।

এরপর আল্লাহ সুরা সাফফাতে আরো বলেন

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِن شَاء اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ

অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। [সুরা সাফফাত - ৩৭:১০২]

فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ

যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল। [সুরা সাফফাত - ৩৭:১০৩]

وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ

তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম, [সুরা সাফফাত - ৩৭:১০৪]

قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ

তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। [সুরা সাফফাত - ৩৭:১০৫]

إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلَاء الْمُبِينُ

নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। [সুরা সাফফাত - ৩৭:১০৬]

وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ

আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। [সুরা সাফফাত - ৩৭:১০৭]

 

ইসমাইলের পরিবতে যে জন্ত জবেহ হয়েছিল সেটি কোথা থেকে আসল?

হযরত ইসমাইলের পরিবর্তে জান্নাত থেকে একটি দুম্বা হযরত জিবরাইল নিয়ে আসলেন আর  হযরত ইবরাহিম () এর ছুরির নিচ থেকে ইসমাইল কে সরিয়ে সেখানে সে দুম্বাটিকে শুইয়ে দেন ফলে সে দুম্বাটি জবেহ হয়ে যায়। আর জান্নাতের সে দুম্বাটি হল সেটি যেটি হযরত হাবিল জবেহ করেছিলেন যে হাবিলের কোরবানি আল্লাহ কবুল করেছিলেন। সেটি আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে লালন পালন করেছিলেন আর হযরত ইসমাইল এর স্থানে পুনরায় সেটি জবেহ হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ।

 

পুত্র ইসমাইল থেকে আমাদের পুত্রদের শিক্ষা কি?

পুত্র ইসমাইল এর বয়স মাত্র ১৩ বছর সে পুত্রকে যখন ইবরাহিম বলল আমি স্বপ্নে দেখেছি তোমাকে জবেহ করিতেছি, তখন সন্তান পিতাকে যে জবাব দিয়েছে তা কিঃয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক সন্তানদের জন্য অনেক বড় শিক্ষা আর তা হল

يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِن شَاء اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ

সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। [সুরা সাফফাত - ৩৭:১০২]

সন্তান পিতার কথার উপর কোন এতেরাজ করেনি, পিতাকে বলেনি আপনি স্বপ্ন দেখেছেন তাতে কি? বরং সন্তান জানেন নবীগনের স্বপ্নও নবুয়তের ৪৬ ভাগের এক ভাগ তাই তিনি পিতাকে বলে দিলেন আপনি যাই আদিস্ট হয়েছেন তা কার্যকর করুন, আমাকে আল্লাহর রহমতে সবরকারী পাবেন।

পিতার সন্তুস্টির হাদিস (তিরমিজির ১৮৯৯ নং হাদিস)

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

  «رَضِيَ الربِّ فِي رضى الْوَالِدِ وَسُخْطُ الرَّبِّ فِي سُخْطِ الْوَالِدِ»

পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট।

পিতা মাতার সাথে সদাচরণের ফলাফল দুনিয়াতেও পাওয়া যায়

দুনিয়াতে কিছু আমলের রেজাল্ট সরাসরি পাওয়া যায় তার মধ্যে একটি হল মা বাবার সাথে সদাচরণ করা, যে সব সন্তান পিতা মাতার খেদমত করবে নবী করিম () এরশাদ করেন সে দীর্ঘ হায়াত পাবে এবং তার রিজিকেও অফুরন্ত বরকত হবে ( বাইহাকি ৭৮৫৫)

 

২টি অপরাধের শাস্তিও দুনিয়াতে হবে

) জুলুমের শাস্তি আখেরাতেও আছে আবার দুনিয়াতেও আছেবুখারীর হাদিস নবী করিম () হযরত মুয়াজ বিন জবলকে বলেন মজলুমের ও আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকেনা, তাই মজলুমের ফরিয়াদকে ভয় কর

) যারা বাবা মায়ের খেদমত করেনা, মা বাবার নাফরমানি করে তারা দুনিয়াতে ধ্বংস হবে কারন জিবরাইল () তাদের ধ্বংসের জন্য দোয়া করেছেন আর নবী করিম () সে দোয়াতে আমিন বলেছেন

ইদানিং যুবক মরে কেন?

এখন মানুষ বিশেষ করে জোয়ান জোয়ান ছেলে মেয়ে মারা যায়, এর কারন কি? এর একটি কারন হল মা বাবার নাফরমানি আর অন্য একটি কারন হল বৃদ্ধদেরকে মুরুব্বীদেরকে সম্মান না করা

যেমন এক হাদিসে আছে, যে লোক মুরুব্বীদেরকে বৃদ্ধদেরকে সম্মান করবে আল্লাহ তায়ালা সে বান্দার জন্য এমন কিছু যুবককে তৈরী করবেন যারা তাকে বৃদ্ধাবস্থায় সম্মান করবেন অর্থ্যাৎ আপনি যুবক এখন আপনি যদি বৃদ্ধদেরকে সম্মান করেন তাহলে আপনার জন্য আল্লাহ তায়ালা এমন কিছু যুবক তৈরী করবেন যারা আপনার বৃদ্ধাবস্থায় আপনাকে সম্মান করবেন, এতে বুঝায় যায় আপনি বৃদ্ধকাল পযন্ত বাঁচবেন, যতদিন বৃদ্ধ হয়ে যুবকদের পক্ষ থেকে সম্মান পাবেন না ততদিন আপনি মৃত্যু বরণ করবেন না অর্থ্যাৎ যে সব যুবক বৃদ্ধদেরকে সম্মান করবেন সে সব যুবক অবশ্যই দীর্ঘ হায়াত পাবনে

 

মৃত মা বাবার জন্য কোরবানি নাকি সদকা করলে ভালো হবে?

যারা মৃত মা বাবার পক্ষ থেকে কোরবানি করেন তারা উত্তম কাজ করেন, বিশেষ করে কুরবানির দিন সদকা না করে মৃত মা বাবার পক্ষ থেকে কোরবানি করাই শ্রেয়। আর যারা সামর্থ্য না থাকার কারনে মৃত মা বাবার পক্ষ থেকে কুরবানি করতে পারেন না তারা

এক অংশ কোরবানি করে একাধিক ব্যক্তির জন্য সেটার সাওয়াব রেসানি করতে পারবে (মাসায়েলে ঈদ, কুরবানি, আকিকা ১১৩ পৃ)

যদি মৃত বাবা মা অসিয়ত করে না যায় তাহলে তাদের পক্ষ থেকে যে কোরবানি করা হবে তা নফল আর যে কোন একজনের পক্ষ থেকে অংশ নফল কোরবানি করে সেটা কয়েকজনের রুহে সাওয়াব রেসানি করতে পারবেন

 

কোরবানির ফজিলত

প্রত্যেক পশমের পরিবর্তে একটি নেক:

সাহাবায়ে কেরাম হুজুর (সঃ) এর কাছে আরজ করলেন। কোরবানীর বিনিময়ে আমরা কী পাবো? হুজুর (সঃ) ইরশাদ করলেন, প্রত্যেক পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী পাবে। পূনরায় সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন। হে আল্লাহর রাসূল ভেড়ার পশমের বিনিময়ও কি একটি করে নেক পাবে? হুজুর (সঃ) উত্তরে বললেন হ্যাঁ তার পশমের বিনিময়ে ও এক একটি করে নেক পাবে। (মিশকাত)

পুলসিরাত অতিক্রম:

রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেন কোরবানীর পশু তোমাদেরকে বহন করে পুলসিরাত পার করবে সতুরাং তোমরা মোটা তাজা পশু কোরবানী কর।

কোরবানীর দ্বারা গুনাহ মাফ করা হয়:

হযরত আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন হুজুর (সঃ) ইরশাদ করেন, হে ফাতেমা যাও তোমার কোরবানীতে হাজিরা দাও। কেননা কোরবানীর পশুর রক্ত যমীনে পড়ার সাথে সাথে তোমার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তাছাড়া ঐ পশু রক্ত মাংসসহ কিয়ামতের দিন উপস্থিত করা হবে এবং তার সাওয়াব সত্তর গুন বৃদ্ধি করা হবে।

 

যারা কুরবানি করতে পারবেনা তারা কি করবেন? কোন তসবিহ পড়লে ৭টি উট কুরবানির সাওয়াব পাবে?

যারা কুরবানি করার সামর্থ্য রাখেনা তারা কুরবানির দিন নখ, চুল, অবাঞ্চিত পশম পরিস্কার করবেন তাহলে ১টি কুরবানির সাওয়াব পাবে আদাবুল মুফরাদের ৬৪০ নং হাদিস

وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَنْ هَلَّلَ مِائَةً ، وَسَبَّحَ مِائَةً ، وَكَبَّرَ مِائَةً ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ عَشْرِ رِقَابٍ يُعْتِقُهَا ، وَسَبْعِ بَدَنَاتٍ يَنْحَرُهَا

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেনঃ যে ব্যক্তি এক শতবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, এক শতবার সুবহানাল্লাহ এবং এক শতবার আল্লাহু আকবার বলবে তার জন্য তা দশটি গোলাম আযাদ করা এবং সাতটি উট কোরবানী করার চেয়ে উত্তম।

 

খোতবার সময় করনীয় শ্রোতারা মনে মনে তকবীর পড়বেন

দু ঈদের খোতবা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আর খোতবা চলাকালিন শ্রোতাদের শ্রবণ করা ও চুপ থাকা ওয়াজিব।  ঈমাম সাহেব প্রথম খোতবার শুরুতে ৯ বার আল্লাহু আকবার বলে, ২য় খুতবার শুরুতে ৭ বার বলে আর ২য় খুতবার শেষে মিম্বর থেকে নামার আগে ১৪ বার আল্লাহু আকবর বলে, তখন শ্রোতারা মনে মনে পড়বেন। আওয়াজ করবেন না।

ঈদের নামাজের নিয়ম

১।  প্রথমত, স্বাভাবিক নামাজের মতোই তাকবিরে তাহরিমা বলে হাত বাঁধবেন। তারপর ছানা পাঠ করবেন।

২। তারপর অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলবেন। প্রথম দুই তাকবিরে হাত তুলে ছেড়ে দেবেন এবং তৃতীয় তাকবিরে হাত বেঁধে ফেলবেন।

৩। তারপর আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ার পর ইমাম সুরা ফাতিহা পড়ে এর সঙ্গে অন্য একটি সুরা মেলাবেন।

৪। তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই রুকু-সিজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করবেন।

৫। দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম কিরাত পড়া শেষে রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত তিন তাকবির দেবেন। প্রতি তাকবিরের সঙ্গে হাত উঠাবেন এবং ছেড়ে দেবেন। তারপর চতুর্থ তাকবির বলে রুকুতে চলে যাবেন।

৬।  তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই নামাজ শেষ করবেন।

৭। নামাজ শেষে ইমাম মিম্বারে উঠবেন। দুটি খুতবা দেবেন। এ সময় ইমামের খুতবা মনোযোগসহকারে শুনতে হবে। কোনো ধরনের কথা বলা বা অন্য কাজে ব্যস্ত হওয়া যাবে না।

৮। খুতবা শেষে মিলাদ কিয়াম ও মুনাজাত শেষে সবাই ঈদগাহ ত্যাগ করবেন।

ঈদের নামাজের নিয়ত

(আরবি): নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতা সালাতি ঈদুল আযহা, মায়া ছিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা ইকতাদাইতু বিহাযাল ইমাম, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

 (বাংলা): ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ ছয় তাকবিরের সঙ্গে আদায় করছি।

 

কোন মন্তব্য নেই

ULTRA_GENERIC থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.