কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ সুরা ও আয়াতের ফজিলত ও আমল – এবং আমাদের আমল কেন কবুল হয়না?
বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
জুমার বয়ান জিলহজ-৩, ১৪৪৪ হিজরী ৭/৭/২০২৩ ইং
কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ সুরা ও আয়াতের ফজিলত ও আমল – এবং আমাদের আমল কেন কবুল
হয়না?
لَوْ
أَنزَلْنَا هَذَا الْقُرْآنَ عَلَى جَبَلٍ لَّرَأَيْتَهُ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا
مِّنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ
يَتَفَكَّرُونَ
যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ
তা'আলার ভয়ে চুর্নবিচুর্ণ হয়ে গেছে। আমি
এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্যে বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা—ভাবনা করে। [সুরা হাশর — ৫৯:২১]
ভুমিকা: পবিত্র কুরআনের প্রতিটি আয়াত প্রতিটি সুরাই অত্যন্ত মূল্যবান, তবে তার মধ্যে বেশী বেশী গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুরা ও আয়াত আছে যে সব সুরা ও আয়াতের অনন্য কিছু বৈশিষ্ট ও গুরুত্ব রয়েছে, যা স্বয়ং হুজুর পাক (দ) আমল করেছেন এবং আমাদেরকেও নানান ভাবে আমল করার তাকিদ দিয়েছেন, আজকে আমি সে ধরনের কিছু কোরআনী সুরা ও আয়াতের গুরুত্ব ও আমল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার চেষ্টা করব।
তখনকার আমল বনাম এখনকার আমল: এক সময় কোরআনী আমলের তাছির ছিল, সাহাবায়ে কেরাম ও বুযুর্গানে দ্বীনের ফুঁকের মধ্যে তাছির ছিল এমন অনেক বুযুর্গ ছিল ১ বার ফুকঁ দিয়েছেন ২য় বার যদি ফুকঁ দিতে অনুরোধ করত ২য় ফুঁক দেয়ার সাথে সাথে গ্লাস ফেটে যেত।
সাহাবীদের সুরা ফাতেহার ফুক: সাহাবীগণ শুধু সুরা ফাতেহা পাঠ করে সাপে কামড় দেয়া লোককে ফুক দিয়েছেন সাপে কাটা লোক সুস্থ হয়ে গেছে। যে সাহাবী সুরা ফাতেহা পড়ে ফুক দিয়েছে তাকে অন্য সাহাবীরা প্রশ্ন করল
أَكُنْتَ تُحْسِنُ رُقْيَةً فَقَالَ مَا
رَقَيْتُهُ إِلاَّ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ
আমরা বললাম, তুমি কি
ভাল ঝাড়ফুঁক করতে জানতে? সে বলল, আমি তো সূরা আল-ফাতিহাহ
ব্যতীত আর কিছু দিয়ে তাকে ঝাড়ফুঁক করিনি। সে কবিলার সরদার সুস্থ হয়ে তাদেরকে
৩০টি ছাগল হাদিয়া দিল। (বুখারী ৫০০৭)
এখন কোরান খতম করে ফুকঁ দিলে সর্দিও ভালো হয়না কেন?
এখন সম্পূর্ণ কোরআন পড়ে ফুঁক দিলে সাধারণ সর্দি জ্বরও ভালো হয়না, এর কারন হল আমাদের গুনাহ, কোরআন আগে যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে, সুরা ফাতেহা আগে যেমন ছিল এখন তেমনই আছে, কিন্তু এখন কোরআন পড়ে ফুঁক দিলে কাজ করেনা তার
# প্রথম কারন হল আমাদের কোরআনের উপর আস্থা নাই,
# দ্বিতীয় কারন হল গুনাহের কারনে আমাদের পড়ার মধ্যে তাছির কমে গেছে
# আমাদের
আকিদা বিশ্বাস দূর্বল- আমরা কোরআন হাদিসের কোন আমল বললে তা বিশ্বাস করিনা কিন্তু
অনেক মহিলা মুফতি আছেন যাদের সাথে কোরআন হাদিসের কোন সম্পক নাই এমন মহিলা যেটা বলে
সেটাকে বিশ্বাস করি নাউজুবিল্লাহ
হযরত ইউনুস মাছের পেটে দোয়া ইউনুস কতবার পড়েছেন?
আমরা ১লক্ষ
২৫ হাজার বার দোয়া ইউনুসের খতম পড়ি বিপদ দুর হওয়ার জন্য বিপদ দুর হয়না, অথচ হযরত ইউনুস (আ) মাত্র ১ বার
দোয়া ইউনুস (লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ
জোয়ালিমি) পড়েছেন সাথে সাথে মাছ তাকে পেট থেকে বের করে দিয়েছেন।
ওমরের টুপি দিলে রোম সম্রাটের মাথা ব্যথা দুর হয়ে যেত কেন?
রোম সম্রাট একবার খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহুর দরবারে তার মাথা ব্যথার কথা জানিয়ে প্রতিকারের জন্য আবেদন করেছিল। হজরত ওমর
রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে একটি টুপি প্রেরণ করেছিলেন। যতক্ষণ এ টুপি মাথায় থাকতো
ততক্ষণ মাথা ব্যথা হতো না। কিন্তু যখনই মাথা থেকে টুপি সরানো হতো,
সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা শুরু
হতো। এ ঘটনায় সবাই বিস্মিত হয়। অবশেষে টুপি খুলে এর কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেল
যে তাতে শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ লিপিবদ্ধ রয়েছে।
এখন আমরা পুরা কোরআন শরীফ লিখে মাথায় রাখলেও মাথা ব্যথা দুর
হয়না কারন আমাদের গুনাহের কারনে আমলে তাছির নাই।
কুতুব উদ্দিন বকতিয়ার কাকি কি পড়ে ডিমকে স্বণ বানালেন?
হযরত কুতুব
উদ্দিন বকতেয়ার কাকি (রহ) এর কাছে
উনার এক সাগরেদ অভাবের অভিযোগ করল, তিনি সাগরেদকে বললেন ১টি ডিম
নিয়ে আস, সে ডিম নিয়ে আসল, কুতুব উদ্দীন
বকতেয়ার কাকি (রহ) শুধু বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম বলে ডিমের মধ্যে ফুক দিলেন আর সাথে সাথে ডিমটি স্বণে পরিণত হয়ে গেল। স্বর্ণের
ডিমটি সে অভাবিকে দিলেন । সেতো
মহাখুশি সে স্বর্নের ডিম বিক্রী করে সে বেশ খোশ হাল ভাবে চলতে লাগল, ডান হাতে বাম হাতে খরচ করতে লাগল। তার
স্ত্রী বলল আপনি যেভাবে খরচ করছেন এতে করে আপনি অল্প সময়ে আবার অভাবে পরবেন। সে
স্ত্রীকে বলল আরে চিন্তা করিওনা আমি কুতুব সাহেব থেকে স্বর্ণের ডিম বানানোর ফর্মুলা
শিখে ফেলেছি, কিছুদিন পর যখন তার সব টাকা পয়সা শেষ হয়ে গেল
সে বাজার থেকে বেশী করে ডিম নিয়ে আসল, আর অজু করে সুন্দর করে
কিবলার দিকে ফিরে বসে ডিম হাতে নিয়ে তাকে বিসমিল্লাহ বলে বলে ফুক দিতে লাগল কিন্তু
ডিম ডিমই রয়ে গেল। সারা
রাত সে বিসমিল্লাহ পড়ে পড়ে ফুক দিল কোন কাজ হলনা, তখন সকালে সে হুজুরের কাছে গিয়ে বলল হুজুর আপনি সেদিন বিসমিল্লাহ পড়ে ডিমে
ফুক দিলেন তাতে ডিম স্বর্ণ হয়ে গেল আমার সে ডিম বিক্রী করা টাকা ফুরিয়ে গেলে আমি গতরাতে
সারারাত বিসমিল্লাহ পড়ে পড়ে ডিমে ফুক মেরেছি কিন্তু আমার একটা ডিমও স্বর্ণ হলনা,
তখন কুতুব উদ্দীন বকতেয়ার কাকি (রহ) বলেন এরে বেকুব তোমার মুখ আর আমার মুখ কি এক?
কোরআন যদি পাহাড়ে নাজিল হত?আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি (রহ) কোন আয়াত পড়লে দিল্লির মন্দিরে ভুমিকম্প শুরু হয়?
এই কোরআন এমন
শক্তিশালি যদি একে পাহাড়ের উপর অবতির্ণ করা হত পাহাড় চুর্নবিচুর্ন হয়ে যেত। যেমন
হযরত আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভি (রহ) এর যুগে হিন্দুস্থানে একটি ফিতনা শুরু হয়, তখন একদল ফিতনাবাজ
আওয়াজ তুলল যে মুসলমান তোমাদের ধর্মও মিথ্যা এবং মসজিদও মিথ্যা (নাউজুবিল্লাহ) তাদের
যুক্তি হল, যদি
ইসলাম ধর্ম সত্য হত তাহলে তোমাদের মসজিদ কেন সংরক্ষণ হয়না, বছর বছর এই
মসজিদকে কেন সংস্কার করতে হয়? পক্ষান্তরে আমাদের হিন্দুদের মন্দির
হাজার হাজার বছর পুরানা কখনো এর সংস্কার এর প্রয়োজন হয়না। যদি তোমাদের ধর্ম সত্য হত তোমাদের মসজিদ সত্য হত
যে মসজিদকে তোমরা আল্লাহর ঘর বল সে ঘরকে তোমাদের আল্লাহ কেন হেফাজত করেন না? এটাই ছিল হিন্দুদের
দলিল আর তাদের সে দলিলও সঠিক। এখনো আপনি বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তানে হাজার বছর পুরানো
মন্দির এর খোঁজ পাবেন। কিন্তু এত পুরাতন মসজিদ পাওয়া খুবই দুস্কর। যদিও অনেক পুরাতন
মসজিদ থাকেও তা বারবার সংস্কার করা হয়েছে। অথবা পুরাতন নকশার উপর নাই বরং নতুন করে
পুনরায় তৈরী করতে হয়েছে। আর প্রতি বছরই ছোটখাট কাজ করাতে হয়। হিন্দুদের এই সব কথাবার্তার
ফিতনা যখন শুরু হল তখন মুসলমানদের কাছে এর কোন জবাব ছিলনা। এখন যারা দুর্বল ঈমানদার
তারা হিন্দুদের এই ফিতনার মধ্যে ধোকা খেয়ে যাচ্ছিল, গোমরাহ হয়ে
যাচ্ছিল। সে সময় একদিন শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি (রহ) জুমার নামাজ পড়ানোর
পর মসজিদ থেকে বাহিরে বের হচ্ছিল, তখণ একজন মুসলমান শায়খ এর কাছে এই ফিতনার
ব্যপারে খরব দিলেন,
আপনি এর একটি যথাযথ জবাব দিন, তখন তিনি বললেন
শুধু মুখে জবাব দিলে এই ফিতনা খতম হবেনা বরং এ ফিতনা খতম করার জন্য কোরআন ও ইসলামের
সত্যতার প্রমাণ মানুষকে দেখাতে হবে। আর আমাদের মসজিদ সমুহ ৩০/৪০ বছরের বেশী টিকে না, আমাদের মসজিদ
বেশী দিন না টিকার কারন হল আমাদের মসজিদে দিন দিন মুসল্লি বাড়তে থাকে যখন মুসল্লি
বৃদ্ধি পায় তখনই আমরা সেটাকে শহিদ করে বড় করি। তাই আমরা তাদেরকে এত পুরাতন মসজিদ
দেখাতে পারবনা। তাই শুধু মুখে জবাব দিলে হবেনা বরং তাদেরকে কিছু দেখাতে হবে। তাদের
এই যুক্তির বিরুদ্ধে কিছু এমন করে দেখাতে হবে যাতে তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব হয় এবং এই
ফিতনা সমুলে ধ্বংস হয়। তাই যারা এই সব কথা এই সব ফিতনা ছড়াচ্ছে তাদেরকে আমার কাছে
নিয়ে আস, আমি
তাদেরকে এমন কিছু দেখাব যাতে তারা আর সে কথা সে ফিতনা ছড়াতে সাহস পাবেনা। কথামত একদিনক্ষণ
ঠিক করে যারা এই ফিতনা ছড়াচ্ছিল তারা এক জায়গায় জমা হল এবং শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস
দেহলভি (রহ) ও সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি ফিতনাবাজদের সব কথা শুনলেন তারা তাদের হাজার
বছর পুরাতন মন্দির সমুহের কথা বলতে লাগল, এটা ৩ হাজার বছর পুরাতন মন্দির
ওটা ৫ হাজার বছরের পুরাতন মন্দির, আর আপনারা যে মসজিদ তৈরী করেন তা কিছুদিন
পর আর টিকে না,
আপনাদের মসজিদ প্রতি বছর বছর মেরামত করতে হয়, পক্ষান্তরে
আমরা একবার মন্দির তৈরী করে দিই সেটা আর মেরামতের প্রয়োজনও হয়না। তখন শায়খ আবদুল
হক মুহাদ্দিস দেহলভি বললেন তোমাদের কোন মন্দিরটি সবচেয়ে বেশী পুরাতন? তারা দিল্লির
একটি মন্দিরের কথা বলল তখন আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি সে ফেতনাবাজদেরকে সাথে নিয়ে
সে মন্দিরে প্রবেশ করলেন, আর তিনি মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করে উচ্চ আওয়াজে কোরআনের
১টি আয়াত পড়তে লাগলেন।
لَوْ
أَنزَلْنَا هَذَا الْقُرْآنَ عَلَى جَبَلٍ لَّرَأَيْتَهُ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا
مِّنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ
يَتَفَكَّرُونَ
যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ
তা'আলার ভয়ে চুর্নবিচুর্ণ হয়ে গেছে। আমি
এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্যে বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা—ভাবনা করে। [সুরা হাশর — ৫৯:২১] তিনি যখন এই আয়াতটি উচ্চা আওয়াজে পড়তে লাগলেন দেখা গেল মন্দিরের
ইট পাথরগুলি থরথর করে কাঁপতে লাগল। এই অবস্থা দেখে সে হিন্দু ফিতনাবাজরা শায়খের পায়ে
ধরে বলতে লাগলেন হযরত আমাদের ভুল হয়েছে, আপনি দয়া করে আপনার তেলাওয়াত
বন্ধ করুন না হয় আমাদের অনেক পুরানো মন্দির ভেঙ্গে খানখান হয়ে যাবে। তখণ শায়খ বললেন
আমিতো হাতুড়ি দিয়ে খুন্তি দিয়ে তোমাদের মন্দির ভাঙ্গছিনা, আমিতো শুধুমাত্র
আমার রবের কালাম তেলাওয়াত করছি, এখন তোমরা দাবী করছ তোমাদের ধর্ম সত্য
আমাদের ধর্ম মিথ্যা আমি এখন আমার রবের কালাম পাঠ করছি তাতে যে তোমাদের মন্দির ভেঙ্গে
যাচ্ছে এবার তোমরা যদি হকপন্থি হও তাহলে তোমরাও তোমাদের মাবুদের সাহায্য নিয়ে এই পুরানা
মন্দিরকে রক্ষা করে দেখাও! এই ঘটনার পর সে সব ফিতনাবাজরা সম্পূর্ণভাবে পরাস্থ হয়ে
গেল এবং এই ঘটনা দেখে অনেক হিন্দু তখন ইসলাম কবুল করল। দেখুন এই কোরআন প্রতিদিন সকাল
সন্ধ্যায় মসজিদ সমুহে তেলাওয়াত হয় তবুও আল্লাহ তায়ালা এই ঘরসমুহকে আবাদ রেখেছেন, এসব ঘর থর থর
করে কেঁপে কেঁপে ধ্বংস হয়না, এর দ্বারা বুঝা যায় এটা আল্লাহর অনেক
বড় রহমত। ইসলামের অনেক বড় নিদর্শন এর মধ্যে আছে। কোরআন এর যে পাওয়ার তার হাজারো উদাহারণ এই যুগেও
অহরহ পাওয়া যায়,
যেমন যদি কোন লোককে জিনে ধরে তার সামনে কোরআন তেলাওয়াত করলে
সে জিন কাকুতি মিনতি করে বলবে কুরআন পড়া বন্ধ করুন না হয় আমি জ্বলে পুরে ছাই হয়ে
যাব, এমন
শক্তিশালি ফয়ুজ ও বরকত ওয়ালা কোরআন থাকা সত্বেও আমরা সে কোরআন থেকে অনেক দুরে সে
কোরআন থেকে বরকত গ্রহণ করতে আমরা ব্যথ।
তাছির কম এখন করনীয় কি? জরওয়ালি স্বপ্ন ও জিন আয়াতুল কুরসি
কোরআন পাঠকারীর তাছির কমে গেছে এখন আমরা কি কোরআন থেকে ফায়দা গ্রহণ করা ছেড়ে দিব? কোরআনের আমল ছেড়ে দিব? না আমরা বরং আমল বাড়িয়ে দিব। যেমন মাওলানা মুফতি জরওয়ালি (রহ) তিনি তার এক বয়ানে বলেন আমি এক সময় বেশী বেশী জিন শয়তানের বিরুদ্ধে বয়ান করছিলাম তখন একদিন আমি স্বপ্ন দেখতে লাগলাম ২ জন জ্বিন আমাকে বলছে তুমি আমাদের ক্ষতি করছ, আজ আমরা তোমার ক্ষতি করব, মুফতি সাহেব বলেন তখন আমি উচ্চস্বরে আয়াতুল কুরসি পড়তে লাগলাম, তারা হাসতে হাসতে বলল তোমার আয়াতুল কুরসি দিয়ে আমাদের কোন ক্ষতি হবেনা, তখন আমি পর পর আরো ২বার পড়ে ফেললাম, আমি যখন আয়াতুল কুরসি ৩ বার পড়া শেষ করলাম তখন সে জ্বিন ২টি গায়েব হয়ে গেল। এতে আমি বুঝলাম এখন গুনাহের কারনে আমাদের জবানের তাছির কমে গেছে, তাই ১ বার পড়ে কাজ না হলে বার বার পড়তে হবে তখন কাজ হবে।
আবু হুরায়রাকে শয়তান কোন আমলটি শিখিয়েছে?
বুখারি শরীফের ২৩১১ নং হাদিস এর সার সংক্ষেপ হল হযরত আবু হুরায়রা একবার সদকার মাল পাহাড় দিচ্ছিলেন শয়তান মানুষের সুরতে চুরি করতে আসলে তাকে আবু হুরায়রা ধরে ফেলেন, সে কাকুতি মিনতি করলে আবু হুরায়রা তাকে ছেড়ে দেন, ৩য় বার যখন আর ছাড়ছিলনা তখন সে আবু হুরায়রা যেহেতু জ্ঞানের পাগল, তাকে বলল আমি তোমাকে এমন কিছু শিখাব যা তুমি রাতে ঘুমানোর আগে পড়লে
لاَ يَزَالُ عَلَيْكَ مِنَ اللهِ حَافِظٌ، وَلَنْ يَقْرَبَكَ
شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ
তাহলে
তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে। আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে
শয়তান আসতে পারবে না।’ আর তা হল আয়াতুল কুরসি।শয়তানের এই আমলটির ব্যপারে হুজুর (দ) আবু হুরায়রাকে বলেন «أمَا إنَّهُ قَدْ صَدَقَكَ وَهُوَ
كَذُوْبٌ
অর্থ্যাৎ হে আবু হুরায়রা তোমাকে যে এই আমল দিয়েছে সেটা সত্য তবে সে একজন চরম মিথ্যাবাদী।
তাহলে আমরা যদি রাতে ১ বার আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাই শয়তান আমাদের কাছেও আসতে পারবে না, এবং আমাদের জন্য একজন হেফাজতকারী রক্ষক আল্লাহ তায়ালা নিযুক্ত করেন, এরপরও আমাদের অনেক ভাই বোন রাতে ঘুমালে তাদেরকে শয়তান ডিস্টাব করে, এর কারন হল গুনাহের কারনে জবানে তাসির না থাকার কারনে,
২৪ ঘন্টা কোন ধরনের অপছন্দনীয় কিছু না দেখার জন্য কোন সুরা ও আয়াত পড়তে হবে?
সারা দিন ২৪ ঘন্টা সব ধরনের অনাকাংখিত, অপছন্দনীয় কিছু দেখা থেকে বাঁচার জন্য সুনানে দারেমির ৩৪২৫ নং হাদিস আবূ
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসী, সুরাহ ফাতিহা এবং সূরা মু’মিনের “হা-মীম” থেকে “ইলাইহিল
মাসীর” পর্যন্ত
(১.২.৩ নং আয়াত) তিলাওয়াত করবে তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত সে তার অপছন্দনীয় কোন কিছু
দেখবে না। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তা পাঠ করবে সকাল পর্যন্ত সে তার অপছন্দনীয় কোন
কিছু দেখবে না।
حم
হা-মীম।
[সুরা মু’মিন - ৪০:১]
تَنزِيلُ الْكِتَابِ مِنَ اللَّهِ الْعَزِيزِ
الْعَلِيمِ
কিতাব
অবতীর্ণ হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে, যিনি পরাক্রমশালী,
সর্বজ্ঞ। [সুরা মু’মিন - ৪০:২]
غَافِرِ الذَّنبِ وَقَابِلِ التَّوْبِ شَدِيدِ
الْعِقَابِ ذِي الطَّوْلِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ إِلَيْهِ الْمَصِيرُ
পাপ
ক্ষমাকারী, তওবা কবুলকারী, কঠোর
শাস্তিদাতা ও সামর্থ?বান। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তাঁরই
দিকে হবে প্রত্যাবর্তন। [সুরা মু’মিন - ৪০:৩]
মেরাজের রাতে নবীজিকে কোন ২টি আয়াত আল্লাহ তায়ালা উপহার দিয়েছেন?
নবী করিম (দ) যখন মেরাজ গিয়েছিলেন তখন আল্লাহর নবীকে কোরআনের ২ টি আয়াত উপহার হিসেবে দিয়েছেন, এ থেকে আন্দাজ করা যায় এই ২টি আয়াতের মর্যাদা কতটুকু। আর সে ২টি আয়াত হল সুরা বাকারার শেষ দুইটি আয়াত
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن
رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللّهِ وَمَلآئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ
وَرُسُلِهِ لاَ نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ وَقَالُواْ سَمِعْنَا
وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
রসূল
বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে
অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর
ফেরেশতাদের প্রতি,
তাঁর গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা
বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। তারা বলে, আমরা
শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের
পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। [সুরা বাকারা - ২:২৮৫]
لاَ يُكَلِّفُ اللّهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا
لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا إِن
نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلاَ تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا
حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ
طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا
فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
আল্লাহ
কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায়
যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের পালনকর্তা,
যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে
আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ
করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং
আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে
আমাদের কে সাহায্যে কর। [সুরা বাকারা - ২:২৮৬]
রাতে কোন ২টি আয়াত পড়লে যথেষ্ট হবে?
সুনানে তিরমিজির হাদিস ২৮৮১ নং হাদিস, রাসুলুল্লাহ (দ) এরশাদ করেন
" مَنْ قَرَأَ الآيَتَيْنِ مِنْ آخِرِ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فِي
لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ "
যে ব্যক্তি রাত্রে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ
করবে তা সে ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে
সুতরাং আপনি যদি রাতের বেলা সুরা বাকারা শেষ ২ আয়াত পড়ে নেন পুরা রাত আর আপনার
কোন টেনশন নাই, সাপ বিচ্চু, জিন, শত্রু, শয়তান ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা, পানি, রোগ,
বিপদ, সব কিছু থেকে ইনশা আল্লাহ আপনি মাহফুজ হয়ে যাবেন।
মসলিশে কোন ৩ আয়াত পড়লে কিয়ামত পযন্ত কেহ আপনার সম্মানে কেহ আঘাত হানতে পারবেনা?
হযরত আলী (রা) বলেন পবিত্র কোরআনে এমন ৩টি আয়াত আছে যে ৩টি আয়াত
যদি আপনি যে কোন বৈঠকে, চাই তা মসজিদে হউক, চাই চায়ের দোকানে হউক, চাই বাজারে হউক, চাই আত্মিয়ের বাড়িতে হউক, চাই বিয়ে অনুষ্ঠানে চাই কোন
সামাজিক অনুষ্টানে হউক বৈঠক শেষ করে যখন উঠে যাবেন তার আগে সুরা সাফফাতের শেষ ৩টি আয়াত
তেলাওযাত করলে কিয়ামত পর্যন্ত কেহ আপনার সম্মানের প্রতি আঙ্গুল তুলতে পারবেনা। কারন
আপনি এই আয়াতের মাধ্যমে মুলত আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইজ্জতদার হওয়ার সাক্ষি দিয়েছেন, সেহেতু আল্লাহ তায়ালাও আপনার ইজ্জতের উপর কাউকে হামলা করার সুযোগ দান করবেন
না। অতএব প্রতি ফরয নামাজের পর এই ৩টি আয়াত একবার পড়লে এবং যে কোন মজলিশের শেষে ১
বার পাঠ করলে আপনি যেখানেই যান ইজ্জত সম্মানের সাথে থাকবেন, আপনাকে
কেহ অপমান অপদস্থ করতে পারবেনা, আপনার উপর কেহ কোন ধরনের অন্যায়
খবরদারি করতে পারবেনা। ইনশা আল্লাহ
সুরা সাফফাতের আখেরী ৩ আয়াত যেমন
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ
عَمَّا يَصِفُونَ
পবিত্র আপনার
পরওয়ারদেগারের সত্তা, তিনি সম্মানিত ও পবিত্র যা তারা বর্ণনা করে তা থেকে।
[সুরা সাফফাত — ৩৭:১৮০]
وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ
পয়গম্বরগণের
প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। [সুরা সাফফাত — ৩৭:১৮১]
وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ
الْعَالَمِينَ
সমস্ত প্রশংসা
বিশ্বপালক আল্লাহর নিমিত্ত। [সুরা সাফফাত — ৩৭:১৮২]
তিরমিজির ২৯৯ নং হাদিস- আয়শা (রা) বলেন নবী করিম (দ) নামাজের সালাম ফিরিয়ে এই ৩টি আয়াত পাঠ করতেন।
" لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ
لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ
يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ "
" سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ وَسَلاَمٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
"
কোন আয়াতের সাথে প্রিয় নবীজির দিদার ও কপালে চুমু লাভের সম্পর্ক?
আর এই ২টি
আয়াতের সম্পর্ক বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হুজায়মা বিন সাবিত (রা) এর সাথে
প্রথমে জানা দরকার হযরত হুজায়মা (রা) কে?
হযরত
সৈয়্যদিনা হুজায়মা বিন সাবিত আনসারি (রা) সে সৌভাগ্যবান সাহাবী যাকে আল্লাহ
রাব্বুল আলামিন ৩টি স্পেশাল সম্মানে সম্মানিত করেছেন প্রথম সম্মান হল একদিন
হুজায়মা (রা) হুজুর
(দ) এর দরবারে এসে আরজ করল এয়া রাসুলাল্লাহ আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি আমি স্বপ্নে
দেখলাম আমি নামাজ পড়ছি, আর নামাজের সিজদায় যখন যাচ্ছি আমি
আপনার কপাল মোবারকে সিজদা করছি নবী করিম (দ) সাথে সাথে শুয়ে গেলেন আর হুজায়মাকে
বললেন হুজায়মা তুমি যা স্বপ্ন দেখেছ তা বাস্তবায়ন কর। অতঃপর হযরত হুজায়মা (রা)
হুজুর (দ) এর কপালে সিজদা করলেন এবং চুমু খেলেন। সুতরাং হুজায়মা (রা) সে সাহাবী
যিনি হুজুর (দ) এর কপাল মোবারকে সিজদা করার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন
হযরত হুযায়মা (রা) এর ২য় নেয়ামত হল তাঁর একজনের সাক্ষিকে ২ জনের সাক্ষির সমান বলে নবীজি ঘোষনা করেছেন যেখানে ২জন সাক্ষির প্রয়োজন যেমন বিয়েতে ২ জন সাক্ষি লাগে কিন্তু হযরত হুজায়মার এমন বৈশিস্ট ছিল তিনি ১ জন সাক্ষি থাকলেই যথেষ্ট।
হযরত হুজায়মা (রা) এর ৩য় সম্মান হল যখন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) কুরআন সংকলনের সিদ্ধান্ত নিলেন নিয়ম করলেন প্রত্যেক আয়াত বা নুসখার জন্য ২ জন সাহাবীর সাক্ষি লাগবে, এভাবে হযরত অনেক মেহনতের পর পবিত্র কুরআন এর সবগুলি আয়াত সুরা ২জন সাক্ষির সাক্ষ্য সাপেক্ষে একত্রিত করা হল কিন্তু যখন সুরা তাওবার ১২৮ ও ১২৯ নং আয়াত এর কপি হযরত হুযায়মা (রা) নিয়ে আসলেন হযরত হুযায়মার এই আয়াতের পক্ষে ২য় আরেকজন সাক্ষি পাওয়া যাচ্ছিলনা তখন হযরত আবু বকর (রা) প্রিয় নবীর সে বাণী বয়ান করে বলেন আমি আল্লাহর রাসুল (দ) কে বলতে শুনেছি হযরত হুযায়মা (রা) যেখানে একা সাক্ষি দিবে তার সে সাক্ষি দুইজনের সাক্ষির বরাবর হবে। সুবহানাল্লাহ অতএব সুরা তাওবার ১২৮ ও ১২৯ নং আয়াত সে দুটি আয়াত যা একমাত্র হযরত হুজায়মা (রা) এর একক সাক্ষির ভিত্তিতে সুরা তাওবাতে শামিল করা হয়েছে
সুরা তাওবার ১২৮,১২৯ নং আয়াতের আমল (জুনায়েদ বাগদাদির সাগরেদ শিবলির কপালে আলেম আবু বকর মুজাহিদ এর চুমু)
এখন আমি
আপনাদেরকে এই ২টি আয়াতের একটি আমল বলব আপনারা জিন্দেগীতে এই আমল ছাড়বেন না হযরত আবু বকর মুজাহিদ (রহ) অনেক বড় অলি আল্লাহ ছিলেন, তিনি হযরত জুনায়েদ বাগদাদি ও শিবলি (রহ) এর যুগের অলি ছিলেন হযরত শিবলি
(রহ) হলেন হযরত জুনায়েদ বুগদাদির মুরিদ ছিলেন একদিন হযরত শিবলি (রহ) হযরত আবু বকর মুজাহিদ
(রহ) এর মসজিদে গেলেন আবু বকর তখন হাদিসের দরস দিচ্ছিলেন, কিন্তু যখনই তিনি শিবলি (রহ) কে
দেখলেন তিনি পাঠদান বন্ধ করে শিবলি (রহ) এর জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন এবং শিবলিকে জড়িয়ে
ধরলেন এবং তার কপালে চুমু খেলেন এরপর আবু বকর আবার পাঠদান আরম্ভ করলেন, আর শিবলি (রহ) নামাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন এখন ছাত্ররা আবু বকরকে প্রশ্ন
করলেন শায়খ আপনি যখন কুরআন হাদিস পড়ান তখন যত বড় মাপের লোক আসুক না কেন তাকে গুরুত্ব দেন না কিন্তু আজকে
একজন সাধারন দরবেশ এসেছে তার সম্মানার্থে আপনি পাঠদান বন্ধ করে দাঁড়িয়ে গেলেন কারন
কি? তখন আবু বকর মুজাহিদ (রহ) বললেন, আমি
আজ সে কাজটি করেছি যে কাজটি কামলিওয়ালা নবী করেছেন, গত রাতে
আমি স্বপ্ন দেখলাম, কামলিওয়ালা নবীর মাহফিল চলছে, এমন মাহফিলে শিবলি যখন প্রবেশ করল , আল্লাহর রাসুল
(দ) সকলকে ছেড়ে শিবলিকে অভ্যর্থনা জানালেন। তার কপালে চুমু দিলেন, আমি সে নবীর উম্মত হয়ে শিবলিকে অভ্যর্থনা না জানিয়ে কিভাবে বসে থাকব?
আমি আল্লাহর রাসুল (দ) কে সুয়াল করলাম এয়া রাসুলাল্লাহ শিবলির প্রতি
আপনি এত বড় এহসান কেন করলেন? তখন আল্লাহর প্রিয় হাবিব (দ)
জবাব দিলেন শিবলি যখনই নামাজ পড়ে নামাজের পর সে পাঠ করে লাক্বাদ
জা-আকুম রাসুলুম মিন আনফুসিকুম আযীযুন আলাইহি মা-আনিত্তুম হারিসুন আলাইকুম বিল
মুমিনীনা রাউফুর রাহীম । ফা ইং
তাওয়াল্লাও ফাক্বুল হাসবিয়াল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কাল্তু
ওয়া হুয়া রাব্বুল আ’রশিল আজি-মি। এরপর
সে তিন বার পাঠ করে (ছাল্লাল্লাহু আলাইকা এয়া মুহাম্মদ) অতএব আপনিও প্রত্যেক ফরয
নামাজের পর সুরা তওবার ১২৮ ও ১২৯ নং আয়াত পাঠ করবেন এবং ৩ বার দরুদ শরীফ পড়বেন আপনি
যদি এই আমলটি নিয়মিত করেন আর কামলিওয়ালা নবী যদি আপনার উপর রাজি হয়ে যান তাহলে যার
উপর নবী রাজি তার উপর আল্লাহও রাজি, ফলে আপনার আর কোন পেরেশানি,
কোন সমস্যা কোন দুঃখ, কোন অভাব, কোন টেনশন, কোন বিপদ কি আর বাকী থাকবে?
কোন ৩টি আয়াত পড়লে ৭০ হাজার ফেরেশতা সারাদিন দোয়া করে?
তিরমিজির ২৯২২
নং হাদিস মা‘কিল ইবনু ইয়াসির রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা
করেন, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে
তিনবার ‘আঊযুবিল্লা-হিস সামীইল আলীম মিনাশ শায়ত্ব-নির রাজীম’সহ সূরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত পড়বে, আল্লাহ তার
জন্য ৭০ হাযার ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন, যারা সন্ধ্যা পর্যন্ত
তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদি ঐ দিন ঐ ব্যক্তি মারা যায়, তাহলে শহীদ হয়ে মারা যাবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পড়বে, তার জন্যও একই ফযীলত রয়েছে
সুতরাং
আমরাও সকাল সন্ধ্যায় আমলটি করার চেষ্টা করব আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তৌফিক দান
করুন।
কোরআন পোড়ালে তাদের উপর আযাব আসেনা কেন?
বার বার সুইডেনে
কোরআন পোড়ায় কিন্তু কোন
আযাব আসেনা, আসলে আযাব আসে যা আমরা দেখিনা, কারন আমরা কিছুদিন পর তা ভুলে যায়, সুইডেন, ডেনমার্কেও আল্লাহর আযাব আসবে যারা এই নেক্কার জনক কাজ করেছে তারা ধ্বংস হবে
আর যারা এর সমথন দিয়েছে তারাও ধ্বংস হবে তবে তখন আমরা ভুলে যাব তাদের এই জঘন্য কাজকে।
নবীর যুগে কোরআন অবমাননার শাস্তি
বুখারী শরীফের ৩৩৫৯ নং হাদিস আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
এক খৃস্টান ব্যাক্তি মুসলিম হল এবং সুরা বাকারা ও সুরা আলে ইমরান শিখে নিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য সে অহী লিপিবদ্ধ করত। তারপর সে পুনরায় খৃস্টান
হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মদ কে যা লিখে দিতাম তার
চেয়ে অধিক কিছু তিনি জানেন না। (নাউযুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু দিলেন। খৃস্টানরা তাকে যথারীতি দাফন করল। কিন্তু
পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে
দিয়েছে। তা দেখে খৃস্টানরা বলতে লাগল – এটা মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের কাজ।
যেহেতু আমাদের এ সাথী
তাদের থেকে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর থেকে উঠিয়ে বাইরে ফেলে
দিয়েছে। তাই যতদুর সম্ভব গভীর করে কবর খুঁড়ে তাতে তাকে দাফন করা হল। কিন্তু পরদিন
সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাঁকে (গ্রহণ না করে) আবার বাইরে ফেলে দিয়েছে।
এবারও তারা বলল, এটা মুহাম্মদ ও তাঁর সাহাবীদের কাণ্ড। তাদের
নিকট থেকে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর থেকে উঠিয়ে বাইরে ফেলে
দিয়েছে। এবার আরো গভীর করে কবর খনন করে সমাহিত করল। পরদিন ভোরে দেখা গেল কবরের
মাটি এবারও তাঁকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। তখন তারাও বুঝতে পারল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা শবদেহটি বাইরেই ফেলে রাখল।
সুতরাং যারা কোরআনকে অপমান করবে তারা মৃত্যুর আগে দুনিয়াতেই অপমানিত অপদস্ত হবেই
হবে, মৃত্যুর সময়ও হবে মৃত্যুর পরে হবে।
আলোচনার সারসংক্ষেপ
আজকের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম
১) আগের যুগে আমলের জবানের তাছির ছিল এখন আমলে জবানে কেন তাছির করেনা এর প্রতিকার কি
২) সাহাবী শুধু সুরা ফাতেহা পড়ে ফুক দিলে এক সাপে কাটা রোগী সুস্থ হয়ে গেল
৩) হযরত ওমরের পাঠানো টুপি মাথায় দিলে রোম বাদশার মাথা ব্যথা দুর হয়ে যেত কারন টুপির ভিতর ছিল বিসমিল্লাহ
৪) হযরত ইউনুস (আ) কে আল্লাহ মাছের পেট থেকে মুক্তি দিয়েছেন মাত্র ১ বার দোয়া ইউনুস করার ফলে কারন তাদের আকিদা শক্ত ছিল জবানে তাছির ছিল, আর আমরা ১ লক্ষ ২৫ হাজার বার পড়েও বিপদ দুর হয়না
৫) হযরত কুতুব উদ্দীন বকতেয়ার কাকি (রহ) তার সাগরিদের অভাবের অভিযোগে ডিমে বিসমিল্লাহ পড়ে ফুক দিলেন তাতেই ডিম স্বর্ণের ডিম হয়ে গেল কারন তাদের জবানে তাছির ছিল।
৬) হিন্দুদের দাবী যে মুসলমানদের মসজিদ বেশী দিন টিকেনা হিন্দুদের মন্দির হাজার হাজার বছর টিকে সুতরাং হিন্দু ধর্ম হক মুসলমান ধর্ম নাহক তাদের এই ফিতনার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন হযরত আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি সুরা হাশরের ২১ নং আয়াত দিয়ে।
৭) হযরত আবু হুরায়রা (রা) কে শয়তান একটি কোরআনি আমল শিক্ষা দিয়েছেন যা করলে সারা রাত শয়তান মানুষের কাছেও আসতে পারেনা, তা হল আয়াতুল কুরসি
৮) আমরা আরো জানতে পারলাম সকালে কেহ যদি আয়াতুল কুরসি, সুরা ফাতেহা ও সুরা মুমিনের প্রথম ৩ আয়াত পড়ে সে সারা দিন কোন অপছন্দনীয় কিছু দেখবে না অপছন্দনীয় কিছু শুনবেওনা
৯) আমরা আরো জেনেছি সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াতের ফজিলত এই আয়াত মেরাজে আল্লাহ তায়ালা দান করেছেন, এবং কেহ রাতে এই ২ আয়াত পড়লে সারা রাত তার জন্য তা যথেষ্ট হবে।
১০) আমরা জানতে পেরেছি যে কোন বৈঠক শেষে নামাজ শেষে মজলিশ শেষে যদি সুরা সাফফাতের শেষ ৩ আয়াত পড়ে কেহ তার প্রতি কেহ আঙ্গুল তুলতে পারবেনা, সে সম্মানিত হবে।
১১) আমরা জেনেছি সুরা তাওবার শেষ ২ আয়াতের ফজিলত যা প্রতি নামাজের পর ১ বার পড়ে ৩ বার দরুদ পড়লে প্রিয় নবীর দিদার নসিব হয় হযরত শিবলি (রহ) কে স্বপ্নে এসে নবীজি কপালে চুমু দিয়েছেন শুধু এই আমলের কারনে।
১২) েআমরা আরো জেনেছি সকাল সন্ধ্যা সুরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত পাঠ করলে ৭০ হাজার ফেরেশতা মাগফেরাতের দোয়া করে
১৩) সবশেষে আমরা জেনেছি কোরআন অবমাননা করা নবীর শানে বেয়াদবী করা এবং একে সমথন করা জঘন্য অপরাধ, এর সাথে যারাই জড়িত থাকবে আল্লাহ আযাব গযব তাদের উপর নেমে আসবে যেমন নবী যুগে এক মুরতাদের উপর এসেছিল যার লাশ কবর বার বার বের করে দিয়েছে।
** কোরআন এখনো আছে কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে এর ফয়েজ ও বরকত আগেও ছিল কিয়ামত পযন্ত থাকবে, তবে আমল করে অনেক সময় এর রেজাল্ট পেতে দেরী হয় তা আমাদের ত্রুটির কারনে, তাই আমল করতে হবে পূণ একিনের সাথে, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে, আকিদা ঠিক রাখতে হবে। এবং ধৈর্য্য ধারন করতে হবে ইনশা আল্লাহ হাদীস শরীফে যে সব ফায়দা বলা হয়েছে আমল করলে সে সব ফায়দা নিশ্চয়ই পাবেন।
যে সব কোরআনী আয়াতের ফজিলতসমুহ বয়ান করলাম আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সে সব ফজিলতপূণ আয়াতসমুহ আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই