Header Ads

Header ADS

ফরয নামাজের পর দোয়ার ফজিলত ও সঠিক নিয়ম

 জুমার খুতবা (জিলক্বদ-২) ২/৬/২০২৩ (২য় পর্ব)

ফরয নামাজের পর দোয়ার ফজিলত ও সঠিক নিয়ম


আল্লাহ তায়ালা বলেন সুরা আলাম নাশরাহ এর মধ্যে (ফাইজা ফারাগতা ফানচাব) এই আয়াতের তফসিরে অসংখ্য মুফাসসির বলেন যখন ফরয নামাজ থেকে বিরত হবেন তখন ফানচাব অর্থ্যাৎ দোয়া করবেন,
১) আবদুল্লাহ বিন আব্বাস
২) ইমাম সুদ্দি
৩) হযরত কাতাদা
৪) ইবনে জারির আত তাবারি
৫) ইমাম কুরতুবি
৬) জালাল উদ্দীন সুয়ুতি
৭) ইমাম আলুসি
৮) ইমাম ইসমাইল হাক্কি
৯) ইমাম ইবনু কাসির
এরকম অসংখ্য মুফাসসির একমত আল্লাহ তার রাসুল (দ) কে নির্দেশ করছেন ফাইজা ফারাগতা ফানচাব (আপনি যখন ফরয নামাজ থেকে ফারেগ হবেন তারপর আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন)
মুসলিম শরীফের হাদিস ১২২১
عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا انْصَرَفَ مِنْ صَلاَتِهِ اسْتَغْفَرَ ثَلاَثًا وَقَالَ ‏ "‏ اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ ‏"
সাওবান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করে তিনবার ইসতিগফার করতেন এবং বলতেন- "আল্ল-হুম্মা আনতাস্ সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু তাবা-রকতা যাল জালা-লি ওয়াল ইকর-ম” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিময় এবং তোমার থেকে শান্তি আসে। তুমি কল্যাণময় এবং সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী।)।
#এমনকি নবীজি এত জোড়ে দোয়া পড়তেন আয়শা (রা) হুজরা মোবারক থেকে শুনতে পেতেন।
তিরমিজির ৩৪৯৯ নং হাদিস
وَعَنْ أَبي أُمَامَة رضي الله عنه قَالَ: قِيلَ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَيُّ الدُّعاءِ أَسْمَعُ ؟ قَالَ: «جَوْفَ اللَّيْلِ الآخِرِ، وَدُبُرَ الصَّلَواتِ المَكْتُوباتِ»
আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল, ’কোন দো’আ সর্বাধিক শোনা (কবূল করা) হয়?’ তিনি বললেন, “রাত্রির শেষভাগে এবং ফরয নামাযসমূহের শেষাংশে।”
হাত তুলে দোয়া করা
# আর দোয়ার আদবই হল হাত তোলা (হেদায়ার মধ্যে এসেছে) (আর রাফউ সুন্নাতু দোয়া।
#ইমাম নববী (রহ) তার কিতাব শরহিল মুহাজ্জাব নামক কিতাবে দোয়াতে হাত তোলার ব্যপারে ২০টি হাদিস নকল করেছেন যেমন
১) হযরত মালেক বিন এয়াসার (রা) বয়ান করেন রাসুল (দ) বলেন- যখন তোমরা দোয়া কর তখন হাতের তালু দিয়ে চাও হাতের পিট দিয়ে চেও না। (আবু দাউদ ১ম খন্ড) (তফসিরে তিবয়ানুল কুরআন বাকারা ১৮৬)
২) হযরত সালমান ফারসি হতে বর্ণিত নবী করিম (দ) এরশাদ করেন তোমাদের রব বড়ই হায়াদার, দয়ালু, যখন তার দিকে কোন বান্দা দুই হাত উঠায় তখন তিনি তা খালি ফেরত দিতে তিনি লজ্জা পান (আবু দাউদ ১ম খন্ড ২০৯)
৩) হযরত ইবনে আব্বাস বলেন দোয়ার নিয়ম হল দুই হাত কাধ পযন্ত উত্তোলন করা, আর গুনাহ মাফ চাওয়ার সময় ১ আঙ্গুল দিয়ে ইশারা কর আর কাকুতি মিনতি করে কিছু চাইলে তখন দুই হাতকে প্রসারিত কর (আবু দাউদ ১ম খন্ড ২০৯পৃ)
৪) হেযরত ওমর বিন খাত্তাব বলেন নবী করিম (দ) দোয়ার সময় দুই হাত তুলতেন এবং হাত ততক্ষণ নিচে নামাতেন না যতক্ষণ দুই হাত চেহরার মধ্যে না মিলাতেন (তিরমীজি ৪৮৮ পৃ )
সুতরাং দোয়া করার সময় দুই হাত কাধ পর্যন্ত উত্তোলন করে দোয়া করবেন এবং দোয়া শেষে দুেই হাত চেহেরার মধ্যে মাসেহ করা সুন্নত।
তিরমিজির ৩৫৭ নং হাদিস
عَنْ ثَوْبَانَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ وَلاَ يَؤُمَّ قَوْمًا فَيَخُصَّ نَفْسَهُ بِدَعْوَةٍ دُونَهُمْ فَإِنْ فَعَلَ فَقَدْ خَانَهُمْ ‏"‏ ‏
সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন ব্যক্তির পক্ষেই এটা শোভনীয় নয় যে, সে লোকদের ইমামতি করে এবং তাদেরকে বাদ দিয়ে শুধু নিজের জন্য দু’আ করে। যদি সে এমনটি করে তবে সে যেন শঠতা (বিশ্বাসভঙ্গ) করল।
সে জন্য ফরয নামাজের সালাম ফিরিয়ে ইমাম মুক্তাদিদেরকে নিয়ে সম্মিলিত ভাবে দোয়া করবেন কারন এ সময় দোয়া কবুল হয় আর যদি ইমাম মুক্তাদিদেরকে বাদ দিয়ে নিজে নিজে দোয়া করে তাহলে সে বিশ্বাসভঙ্গ করল।
তাছাড়া সম্মিলিত দোয়া করলে তা অবশ্যই কবুল হবে যেমন
হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন “যদি কিছু সংখ্যক লোক একত্রিত হয়ে এভাবে দু’আ করে যে, তাদের একজন দু’আ করতে থাকে, আর অপররা ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলতে থাকে, তবে আল্লাহ তা’আলা তাদের দু’আ অবশ্যই কবুল করে থাকেন।’
— তালখীসুয যাহাবী, ৩ঃ৩৪৭ পৃঃ, মুস্তাদ্‌রাকে হাকেমঃ হাঃ নং ৫৪৭৮
আর দোয়াতে হাত না তুলে হাত গুটিয়ে রাখা মুনাফিকের আলামত যেমন
সুরা তাওবার ৬৭ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুনাফিকের বৈশিস্ট বয়ান করতে গিয়ে বলেন
الْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُم مِّن بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمُنكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوفِ وَيَقْبِضُونَ أَيْدِيَهُمْ نَسُواْ اللّهَ فَنَسِيَهُمْ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
মুনাফেক নর-নারী সবারই গতিবিধি একরকম; শিখায় মন্দ কথা, ভাল কথা থেকে বারণ করে এবং তারা নিজ হাত গুটিয়ে রাখে। আল্লাহকে ভুলে গেছে তারা, কাজেই তিনিও তাদের ভূলে গেছেন নিঃসন্দেহে মুনাফেকরাই নাফরমান। [সুরা তাওবা - ৯:৬৭]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আলী (রা) হতে বর্ণিত ইমাম হাকেম মুসতাদরাকে রেওয়ায়েত করেছেন – মদীনার যে সব মুনাফিক ছিল(ওয়াকানু লা এয়ারফাউনা আইদিয়াহুম ফিদ দুয়া)
আল্লাহর রাসুল (দ) যখন দোয়াতে হাত তুলতেন পিছনে মুনাফেক যারা ছিল তারা দোয়াতে হাত তুলত না হাতকে গুটিয়ে রাখত।
তাছাড়া দোয়া না করলে আল্লাহ তায়ালা রাগ করেন যেমন
তিরমিজি ৩৩৭৩, ইবনে মাজার ৩৮৭২ নং হাদিস
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ لَمْ يَدْعُ اللهَ غَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে আল্লাহর কাছে দু’আ বা প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার উপর ক্রোধান্বিত হন।
আল্লাহ কাছে দোয়া হল সবচেয়ে প্রিয়
ইবনে মাজার ৩৮২৯, তিরমিজির ৩৩৭০ নং হাদিস
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ "‏ لَيْسَ شَىْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللَّهِ سُبْحَانَهُ مِنَ الدُّعَاءِ ‏"‏ ‏.‏
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মহান আল্লাহর নিকট দোয়ার চেয়ে অধিক প্রিয় কোন জিনিস নাই।
অতএব প্রত্যেক মসজিদের ইমামগন যখন দোয়া করেন তখন মুক্তাদিদেরকে সে দোয়াতে শামিল করে সম্মিলিত দোয়া করা দোয়াতে দুই হাত উত্তোলন করা এবং ইমামের দোয়ার মধ্যে মুক্তাদিদের আমিন আমিন বলা দোয়া কবুল হতে সাহায্য করে।
আর ফরয নামাজের পরের দোয়া কবুল হওয়ার ব্যপারে হুজুর (দ) পক্ষ থেকে ঘোষনা রয়েছে। তাই দোয়া কবুল হওয়ার এমন মোক্ষম সময়টাতে দোয়া থেকে বিরত থাকাটা দুভ্যার্গের বিষয়। ইমামের সাথে হাত না তুলে হাত গুটিয়ে রাখাটা মুনাফিকের আলামত।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে প্রত্যেক নামাজের পর দোয়া করার তৌফিক দান করুন। আমিন

কোন মন্তব্য নেই

ULTRA_GENERIC থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.