Header Ads

Header ADS

২০টি কারনে মানুষ গরিব হয়ে যায়, ঘর থেকে বরকত চলে যায়

 

জিলহজ ৪, ১৪৪৪ হিজরীর শেষ জুমা

২০টি কারনে মানুষ গরিব হয়ে যায়, ঘর থেকে বরকত চলে যায়



) লোভ করে কোন কিছু উপার্জন করলে তাতে বরকত হয়না:  যেমন বুখারী শরীফের 1472 নং হাদিস হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। তারপর বললেনঃ হে হাকীম, এই সম্পদ শ্যামল সুস্বাদু। যে ব্যাক্তি প্রশস্ত অন্তরে (লোভ ছাড়া) তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় হয়।

وَمَنْ أَخَذَهُ بِإِشْرَافِ نَفْسٍ لَمْ يُبَارَكْ لَهُ فِيهِ

আর যে ব্যাক্তি অন্তরের লোভসহ তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় করা হয়না।

كَالَّذِي يَأْكُلُ وَلاَ يَشْبَعُ،

যেন সে এমন ব্যাক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুদা মেটেনা।

২) পরনির্ভরশিলতা পরিশ্রম হীনাতা বরকত ছিনিয়ে নেয়: যেমন বুখারী শরিফের ১৯২১ নং হাদিস আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) মদিনায় আগমন করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও সাদ ইবনু রাবীআনসারীর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন করে দেন। সাদ (রাঃ) ধনী ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি আবদুর রাহমান (রাঃ)-কে বললেন, আমি তোমার উদ্দেশ্যে আমার সম্পত্তি অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিতে চাই এবং তোমাকে বিবাহ করিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ্ তাআলা তোমার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুন। (অর্থ্যাৎ হযরত আবদুর রহমান হযরত সাদ এর দান গ্রহণ না করে নিজে পরিশ্রম করে উপাজর্নের জন্য আগ্রহি ছিলেন তাই তিনি সাদকে বললেন) আমাকে বাজার দেখিয়ে দাও। তিনি বাজার হতে মুনাফা করে নিয়ে আসলেন পনীর ও ঘি। এভাবে কিছু কাল কাটালেন।

একদিন তিনি এভাবে আসলেন যে, তাঁর গায়ে বিয়ের মেহেদীর রংয়ের চিহ্ন লেগে আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জনৈকা আনসারী মহিলাকে বিবাহ করেছি। তিনি [নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তাকে কি দিয়েছ? তিনি বললেন, খেজুরের আটি পরিমান স্বর্ণ। তিনি [নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা কর।

দেখুন হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ আনসারী সাহাবীর দেয়া সম্পদ গ্রহণ করতে পারতেন কিন্তু তাতে বরকত থাকতনা, কারন মানুষ যখন বিনা কষ্টে কিছু পায় তখন তার কদর থাকেনা কিন্তু পরিশ্রম করে কিছু পেলে তার কদরও থাকে এবং তাতে বরকতও হয়। তার প্রমাণ হল এই সাহাবী হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ এর ঘটনায় যিনি অতি অল্প সময়ে প্রচুর স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে বিয়ে করেছেন।

) মিথ্যা বলার কারনে বরকত চলে যায়: যারা সব সময় মিথ্যা বলে তাদের হায়াতেও বরকত থাকেনা তাদের রিজিকেও বরকত কমে যায়, যেমন বুখারী শরীফের ১৯৪৯ নং হাদিস

হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষন পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষন তাদের ইখতিয়ার থাকবে। যদি তারা সত্য বলে এবং (পন্যের সঠিক) অবস্থা ব্যক্ত করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে আর যদি মিথ্যা বলে এবং পন্যের দোষ গোপন করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত চলে যাবে।

ব্যবসায় যেমন মিথ্যা বললে বরকত চলে যায় সেরুপ যে কোন উপাজন যদি মিথ্যার উপর হয় ধোকার উপর হয় সে উপার্জনেও বরকত থাকেনা।

৪) গোসল খানায় পেশাব করা গোসলের জায়গায় পেশাব করাগোসল খানায় পেশাব করা অর্থ্যাৎ গোসলের স্থানে পেশাব করা শরীয়ত বিরোধী কাজ তবে এর সাথে ঘরের বরকত এর কোন সম্পর্ক নাই।

৫) ঘরে ময়লা আবর্জনা জমা করে রাখা এটা ঠিক আছে তিরমিজি শরীফের হাদীসে আছে নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন।

৬) আত্মিয়স্বজনের সাথে অসদাচরন করাএটা ১০০% ঠিক আছে।  কারন তিরমিজি শরীফের ১৯৭৯ নং হাদিসে আছে নবী করিম (দ) বলেন আত্মিয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে ধন সম্পদ ও হায়াত বৃদ্ধি পায়।

৭) মেহমান আসলে বিরক্ত হওয়াএই কথাটি ১০০% হাদিস সম্মত  বিশ্বনবি বলেছেন, ‘যে মেহমানদারি করে না তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই’ (মুসনাদে আহমাদ)

৮) দাঁত দিয়ে রুটি ছিড়ে ছিড়ে খাওয়াআমিরে আহলে সুন্নত বানিয়ে দাওয়াতে ইসলাম এই বিষয়টি নিষেধ করেছেন। তবে তিনি বলেছেন বিসমিল্লাহ না পড়ে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দাত দিয়ে কেটে খেলে দারিদ্রতা নেমে আসে।

৯) সকালে সুর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত ঘুমানোএটা ১০০% সত্য কারন নবী করিম (দ) উম্মতের সকালের কাজে বরকতের দোয়া করেছেন তাই যারা সকাল বেলা ৮/৯টা পযন্ত ঘুমায় ফজরের ওয়াক্তে নামাজ পড়েনা তাদের ঘর থেকে বরকত হাজার মাইল দুরে চলে যায়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করেছেন-اللَّهُمَّ بَارِكْ لِأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا
হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে সকালবেলা বরকত দান করবেন।

কুকুর বনাম ছাগলের ঘটনা

ইবরাহিম বিন আদহাম (র) এর সাথে এক লোকের মোনাজেরা হল লোকটা বরকত বলতে কিছু আছে তা মানতে নারাজ।ইবরাহিম বিন আদহাম (রহ) তাকে বুঝালেন- তাকে বললেন তুমি কি ছাগল আর কুকুর দেখেছ? সে বলল দেখেছি।ইবরাহিম বললেন এবার বল কুকুর বেশী হয় নাকি ছাগল বেশী হয়? সে বলল ছাগল বেশী হয়।তারপর তাকে বললেন ছাগল বাচ্চা বেশী দেয় নাকি কুকুর বেশী দেয়? সে বলল কুকুর বাচ্চা বেশী দেয়।তারপর বললেন কুকুর বেশী জবেহ হয় নাকি ছাগল বেশী জবেহ হয়? সে বলল ছাগলএবার ইবরাহিম বিন আদহাম বললেন ছাগল বাচ্চাও কম দেয় জবেহও বেশী হয় কিন্তু তবুও ছাগল বেশী দেখা যায় এর কারন হল বরকত।আর ছাগলতে বরকত কেন হল জান? যখন রাত হয় তখন রাতে কুকুর জেগে থাকে আর চিৎকার করে, আর ছাগল রাতে শুয়ে যায়।আর ভোর যখন হয় তখন রহমত নাজিল হয় তখন কুকুর শুয়ে যায় আর ছাগল জেগে যায়। তাই ছাগলে বরকত কুকুরে বরকত নাই।হযরত ওসমান (রা) হতে বর্ণিত হুযুর (দ) এরশাদ করেন যে সকালে দেরী পযন্ত ঘুমায় তার রিযিকে বরকত ছিনিয়ে নেয়া হয়।যারা রাতে জাগে আর সকালে ঘুমাতে থাকেেআল্লাহ তাদের রিযিকের বরকত উঠিয়ে নেন।

১০) ছায়াদার ও ফলদার গাছের নিচে পেশাব করাএই কথাটা ১০০% ঠিক। কারন মুসলিম শরীফে ও আবু দাউদ শরীফে হাদীস আছে আল্লাহর রসূল () বলেন, ‘‘তোমরা দুই অভিশাপ আনয়নকারী কর্ম থেকে বাঁচ।’’ লোকেরা বলল, ‘দুই অভিশাপ আনয়নকারী কর্ম কী, হে আল্লাহর রসূল?’ তিনি বললেন, ‘‘লোকেদের রাস্তায় ও ছায়াতে পেশাব-পায়খানা করা।

১১) বাথরুমে কথা বলা- এ ব্যপারে সহি আত তারগিবে আছে যদি দুজন লোক পেশাব পায়খানা করা অবস্থায় কথা বলে তাহলে আল্লাহ তায়ালা রাগান্বিত হন।  অতএব বাথরুমে কথা বলাটাও ঘর থেকে বরকত যাওয়ার একটি কারন।

১২) উপুর হয়ে ঘুমানো- রাসুল (সা.) এভাবে শুতে নিষেধ করেছেন। এর কারণ হিসেবে হাদিস শরিফে দুটি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। এক. মহান আল্লাহ এভাবে শোয়া পছন্দ করেন না। দুই. এটি জাহান্নামিদের শোয়া। জাহান্নামিদের উপুড় করেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ইবনে তিখফা আল-গিফারি (রহ.) থেকে বর্ণিত, তার পিতা তাঁকে অবহিত করেন যে তিনি ছিলেন আসহাবে সুফফার সদস্য। তিনি বলেন, একদা শেষ রাতে আমি মসজিদে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলাম। আমি উপুড় হয়ে ঘুমে বিভোর অবস্থায় একজন আগন্তুক আমার নিকট এলেন। তিনি আমাকে তাঁর পায়ের সাহায্যে নাড়া দিয়ে বলেন, ওঠো! এই উপুড় হয়ে শুলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। আমি মাথা তুলে দেখি যে রাসুল (সা.) আমার শিয়রে দাঁড়িয়ে। (আদবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১৯৯)

অতএব যদিও উপুর হয়ে ঘুমালে বরকত চলে যাবে সরাসরি এমন কোন কথা হাদিসে নাই তবে এ ভাবে শোয়াটা যেহেতু আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল অপছন্দের সেহেতু আমাদের এ ধরনের শোয়া থেকে বিরত থাকাটা জরুরী।

১৩) বিসমিল্লাহ পড়া ব্যতীত খাবার খাওয়া-খাবার গ্রহণের সময় বিসমিল্লাহ না পড়া হলে, সেই খাবারে শয়তান অংশগ্রহণ করে, ফলে সেই খাবার থেকে বরকত উঠে যায়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ছয়জন সাহাবিসহ আহার করছিলেন। এমন সময় এক বেদুইন এসে সব খাবার দুই গ্রাসে শেষ করে ফেলল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে যদি বিসমিল্লাহবলে আহার করত, তাহলে এই খাদ্য তোমাদের সবার জন্য যথেষ্ট হতো। অতএব, তোমাদের কেউ আহার গ্রহণকালে যেন বিসমিল্লাহবলে। সে যদি আহার গ্রহণের প্রারম্ভে বিসমিল্লাহবলতে ভুলে যায় তবে যেন বলে, ‘বিসমিল্লাহি ফি আওয়ালিহি ওয়া আখিরিহি।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩২৬৪)

১৪) আল্লাহ প্রদত্ত রিজিকে অপচয় করার কারনে বরকত কমে যায়- অপচয়কারীদের স্বয়ং আল্লাহও পছন্দ করেন না। ফলে অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে মানুষের জীবন থেকে বরকতও হ্রাস পায়। এর ফলে মানুষের ধন-সম্পদ ক্রমে হ্রাস পায়।

يَا بَنِي آدَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وكُلُواْ وَاشْرَبُواْ وَلاَ تُسْرِفُواْ إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ

হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না। [সুরা আরাফ - ৭:৩১]

১৫) শোকর না করার কারনে বরকত চলে যায়- যেমন সুরা সাবার ১৫-১৭ নং আয়াতে শোকর না করার শাস্তি কি তা নিজেই একটি শহরের উদাহারণ দিয়ে বুঝিয়ে দেন

لَقَدْ كَانَ لِسَبَإٍ فِي مَسْكَنِهِمْ آيَةٌ جَنَّتَانِ عَن يَمِينٍ وَشِمَالٍ كُلُوا مِن رِّزْقِ رَبِّكُمْ وَاشْكُرُوا لَهُ بَلْدَةٌ طَيِّبَةٌ وَرَبٌّ غَفُورٌ

সাবার অধিবাসীদের জন্যে তাদের বাসভূমিতে ছিল এক নিদর্শন-দুট ি উদ্যান, একটি ডানদিকে, একটি বামদিকে। তোমরা তোমাদের পালনকর্তার রিযিক খাও এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করস্বাস্থ্যকর শহর এবং ক্ষমাশীল পালনকর্তা। [সুরা সাবা - ৩৪:১৫]

فَأَعْرَضُوا فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ سَيْلَ الْعَرِمِ وَبَدَّلْنَاهُم بِجَنَّتَيْهِمْ جَنَّتَيْنِ ذَوَاتَى أُكُلٍ خَمْطٍ وَأَثْلٍ وَشَيْءٍ مِّن سِدْرٍ قَلِيلٍ

অতঃপর তারা অবাধ্যতা করল ফলে আমি তাদের উপর প্রেরণ করলাম প্রবল বন্যা! আর তাদের উদ্যানদ্বয়কে পরিবর্তন করে দিলাম এমন দুই উদ্যানে, যাতে উদগত হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউ গাছ এবং সামান্য কুলবৃক্ষ। [সুরা সাবা - ৩৪:১৬]

ذَلِكَ جَزَيْنَاهُم بِمَا كَفَرُوا وَهَلْ نُجَازِي إِلَّا الْكَفُورَ

এটা ছিল কুফরের কারণে তাদের প্রতি আমার শাস্তি। আমি অকৃতজ্ঞ ব্যতীত কাউকে শাস্তি দেই না। [সুরা সাবা - ৩৪:১৭]

 

১৬) কোরআন না পড়লে, নামাজে অবহেলা করলে এবং

১৭) গোপনে প্রকাশ্যে দান না করলে যাকাত না দিলে বরকত চলে যায়, যেমন সুরা ফাতিরের ২৯-৩০ নং আয়াতে আছে

إِنَّ الَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً يَرْجُونَ تِجَارَةً لَّن تَبُورَ

যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামায কায়েম করে, এবং আমি যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা কর, যাতে কখনও লোকসান হবে না।

১৮) বিশেষ করে ফজর ও আসরের নামাজে অবহেলা করলে বরকত চলে যায় সহীহ  বুখারীর ৫৫৫নং ও মুসলিম এর ৬৩২ নং হাদিসে বর্ণিত আছে

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাছে রাতে একদল ও দিনে একদল ফেরেশতাগণ আসতে থাকেন। তারা ফজর ও আসরের ওয়াক্তে মিলিত হন। যারা তোমাদের কাছে থাকেন তারা আকাশে উঠে গেলে আল্লাহ তাআলা তাদের কাছে (বান্দার) অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, যদিও তিনি তাদের সম্পর্কে অধিক অবগত। বলেন, তোমরা আমার বান্দাদেরকে কী অবস্থায় রেখে এসেছো? উত্তরে ফেরেশতারা বলেন, হে আল্লাহ! আমরা আপনার বান্দাদেরকে নামাজ আদায়ে রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। আর যে সময় আমরা তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছেছি তখনও তারা নামাজ আদায় করছিল। (বুখারী ও মুসলিম)

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় হাদিসবেত্তা গন লিখেন

নামাজই যে সর্বোচ্চ ইবাদাত তা এ হাদীস দ্বারা জানা যায়। কারণ এ ইবাদাতটির ব্যাপারে আল্লাহ এবং ফেরেশতাদের মধ্যে প্রশ্নোত্তর হয়। আরো জানা যায় যে, (ফজর) এবং আসরের নামাজ অন্যান্য নামাজ থেকে বেশি মর্যাদাপূর্ণ। কারণ এ দু ওয়াক্ত নামাজে ফেরেশতাদের  দুটি দল একত্রিত হন। অন্য নামাজ গুলোতে একদল ফেরেশতা থাকে। আরো বর্ণিত আছে, (ফজরের) নামাজের পর রিযক্ব বা (জীবিকা) বণ্টিত হয় আর দিনের শেষে আমলসমূহ আল্লাহর নিকট উঠিয়ে নেয়া হয়। তাই যে ব্যক্তি ঐ সময় দুটোতে আল্লাহর আনুগত্যমূলক কাজে লিপ্ত থাকবে তার রিযক্ব  এবং আমলে বারাকাত দেয়া হবে।

অতএব সমস্ত ফেরেশতাগন যেন আপনার পক্ষে সাক্ষি দেন আপনার রিযিকে যেন বরকত হয় আপনার আমলে যেন বরকত হয় সে জন্য ফজর ও আসরের নামাজ জামায়াত সহকারে আদায় করবেন এবং এই দুই নামাজের পর কিছুক্ষণ জিকির আযকার, মাসনুন দোয়া ও দরুদ শরীফ পাঠ করবেন।

১৯) ঘরে দোকানে অফিসে অধিনস্থদেরকে নামাজের সুযোগ না দেয়া নামাজের জন্য না ডাকা- আল্লাহ তায়ালা সুরা ত্বহার ১৩২ নং আয়াতে এরশাদ করেন

وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَّحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى

আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাযের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোন রিযিক চাই না। আমি আপনাকে রিযিক দেই এবং আল্লাহ ভীরুতার পরিণাম শুভ। [সুরা ত্বা-হা - ২০:১৩২]

এখানে নামাজের পরই রিজিকের কথা বলেছেন, নামাজের সাথে রিজিকের কি সম্পর্ক?

আমরা নিজে নামাজ না পড়ে নিজের অধিনস্থ লোকদের নামাজের সুযোগ না দিয়ে প্রোডাকশন বেশী হবে, সেইল বেশী হবে মনে করি আমাদের এই ধারনা ভুল যদি রিজিক বাড়াতে হয় ইনকাম বাড়াতে হয়, প্রডাকশন বাড়াতে হয়, সেইল বাড়াতে হয়, সেটা বাড়াবেন আল্লাহ, আর তার জন্য আল্লাহর হকুম হল ওহে বান্দা নামাজের সময় পরিবারের লোকদেরকে অধিনস্থ লোকদের নামাজের হকুম দাও, নামাজের সুযোগ দাও এবং নিজেও নামাজে অবিচল থাক তাহলে এত রিজিক আসবে তুমি কল্পনাও করতে পারবেন না রিজিকের ধান্দায় মানুষ নামাজে অলসতা করে, তাই নামাজের হকুমের সাথে সাথে আল্লাহ বলেন রিজিকের ধান্দায় নামাজে অলসতা করা যাবেনা রিজিক আমি আল্লাহ দান করি

এই আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর নবী করিম () নামাজের আগে আলী ও ফাতেমার ঘরে যেতেন তাদেরকে নামাজের জন্য ডাকতেন।

২০) ঘরের মধ্যে গুনাহের কাজ হলে ঘর থেকে বরকত চলে যায়- যদি মানুষ আল্লাহকে ভয় করেন তাহলে আল্লাহ ধারনাতিত জায়গা থেকে রিজিক দিবেন বরকত দান করবেন যেমন সুরা তালাকের ২-৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন

وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ

আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে (সকল টেনশন, দুঃখ, বিপদ আপদ থেকে) নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। [সুরা তালাক - ৬৫:২] এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। [সুরা তালাক - ৬৫:৩]

২১) মা বাবাকে কষ্ট দিলে সে সন্তানের হায়াত থেকে ঘর থেকে আল্লাহ তায়ালা বরকত তুলে নিবেন।

মা বাবা যখন বৃদ্ধ হয়ে যায় দুর্বল হয়ে যায় তাদেরকে দেখা শুনা করা প্রত্যেক সন্তানের জন্য ফরয দুর্বলদের কারনেই আল্লাহ আমাদেরকে রিজিক দান করেন যেমন আবু দাউদ এর ২৭৭ নং হাদিস নবী করিম () এরশাদ করেন

«ابْغُونِي الضُّعَفَاءَ، فَإنَّمَا تُنْصَرُونَ وتُرْزَقُونَ، بِضُعَفَائِكُمْ»

তোমাদের দুর্বলদের কারণেই তোমাদেরকে সাহায্য করা হয় এবং রুযী দেওয়া হয়।’’

মা-বাবার অসন্তুষ্টি সন্তানের জন্য কতটা ক্ষতি বয়ে আনে হাদিসের একটি ঘটনার মাধ্যমে তা সহজেই অনুমান করা যাবে। মুসলিম এর ২৫৫০ নং হাদিস

আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিনজন ব্যতীত কেউ দোলনায় কথা বলেনি। তাদের মধ্যে একজন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ), আরেকজন জুরায়জ সম্পর্কিত শিশুটি। জুরায়জ ছিলেন একজন ইবাদাতগুজার ব্যক্তি। তিনি একটি ইবাদাতখানা তৈরি করে সেখানে অবস্থান করতেন। এক সময় তার কাছে তার মা আসলেন। তিনি সে সময় সালাতে নিমগ্ন ছিলেন। মা ডাকলেন, হে জুরায়জ! তখন তিনি (মনে মনে) বলতে লাগলেন, হে আমার প্রতিপালক! (একদিকে) আমার মা ও (অপর দিকে) আমার সালাত। এরপর তিনি সালাতে মগ্ন থাকলেন। মা ফিরে গেলেন।

পরের দিন তিনি আবার তার কাছে এলেন। তখনও তিনি সালাত আদায় করছিলেন। তিনি বললেন, হে জুরায়জ! তখন তিনি (মনে মনে) বললেন, হে আমার প্রতিপালক একদিকে আমার মা (আমাকে ডাকছেন) আর (অন্য দিকে) আমার সালাত। এরপর তিনি সালাতে মশগুল রইলেন। মা ফিরে গেলেন। এরপরের দিন আবার এলেন। তখনও তিনি সালাতেই রত ছিলেন। এবারও (মা) বললেন, হে জুরায়জ! তখন তিনি (মনে মনে) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! একদিকে আমার মা (আমাকে ডাকছেন)। (অন্যদিকে) আমার সালাত। এরপর তিনি সালাতেই লিপ্ত রইলেন। এবার তার মা বললেন, হে আল্লাহ! বদকার স্ত্রীলোকের সম্মুখীন করার আগ পর্যন্ত তুমি তার মৃত্যু দিয়ো না।

এরপর বানু ইসরাঈলদের মধ্যে জুরায়জ ও তার ইবাদাত সম্পর্কে আলোচনা হতে লাগল। (বনী ইসরাঈলের মধ্যে) সৌন্দর্য উপমেয় এক দুশ্চরিত্রা স্ত্রীলোক ছিল। সে বলল, যদি তোমরা চাও তাহলে আমি তোমাদের সামনে তাকে (জুরায়জকে) ফিতনায় ফেলতে পারি। তিনি বলেন, এরপর সে জুরায়জের সামনে নিজেকে পেশ করে। কিন্তু জুরায়জ তার প্রতি ভ্রুক্ষেপও করেননি। অবশেষে সে এক মেষ রাখালের নিকট আসে। সে জুরায়জের ইবাদাতখানায় মাঝে মধ্যে যাওয়া-আসা করত। সে তাকে নিজের দিকে প্রলুব্ধ করল। সে (রাখাল) তার উপর অনুরক্ত হলো। এতে সে গর্ভবতী হয়ে গেল। যখন সে সন্তান প্রসব করল তখন বলে দিল যে, এ সন্তান জুরায়জের। লোকেরা (এ কথা শুনে) তার কাছে এসে জড়ো হলো এবং তাকে নীচে নামতে বাধ্য করল এবং তারা তার ইবাদাতখানা ভেঙ্গে ফেলল আর তাকে প্রহার করতে লাগল। তখন তিনি (জুরায়জ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের ব্যাপার কী? তারা বলল, তুমি তো এ দুশ্চরিত্রা স্ত্রীলোকের সাথে ব্যভিচার করেছে এবং তোমার পক্ষ থেকে সে সন্তান প্রসব করেছে।

তখন তিনি বললেন, শিশুটি কোথায়? তারা শিশুটি নিয়ে এলো। এরপর তিনি বললেন, আমাকে একটু অবকাশ দাও, আমি সালাত আদায় করে নেই। তারপর তিনি সালাত আদায় করলেন এবং সালাত শেষে শিশুটির কাছে এলেন। এরপর তিনি শিশুটির পেটে টোকা দিয়ে বললেন, হে বৎস! তোমার পিতা কে? সে উত্তর করল। অমুক রাখাল। বর্ণনাকারী বলেন, তখন লোকেরা জুরায়জের দিকে এগিয়ে আসলো এবং তাকে চুম্বন করতে এবং তার গায়ে হাত বুলাতে লাগল। এরপর বলল, আমরা আপনার ইবাদাতখানা স্বর্ণ দ্বারা নির্মাণ করে দিব। তিনি বললেন, না বরং পুনরায় মাটি দিয়ে তৈরি করে দাও, যেমন ছিল। লোকেরা তাই করল।

(তৃতীয় জন) একদা এক শিশু তার মায়ের দুধ পান করছিল। তখন উত্তম পোষাকে সজ্জিত এক লোক একটি হৃষ্টপুষ্ট সওয়ারীর উপর আরোহণ করে সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। তখন তার মা বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে এর মতো বানিয়ে দাও। তখন শিশুটি মাতৃস্তন ছেড়ে তার প্রতি লক্ষ্য করে বলল, "হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এর মতো বানিও না।" এরপর সে আবার স্তনের দিকে ফিরে দুধ পান করতে লাগল। রাবী বলেন, মনে হয় যেন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এখনো দেখছি যে, তিনি তার শাহাদাত অঙ্গুলি নিজ মুখে দিয়ে তা চুষে সে শিশুটির দুধ পানের দৃশ্য দেখাচ্ছেন। এরপর তিনি বর্ণনা করলেন যে, কিছু লোক একজন যুবতীকে নিয়ে যাচ্ছিল এবং তাকে তারা প্রহার করছিল এবং বলাবলি করছিল যে, তুই ব্যভিচার করেছিস, তুই চুরি করেছিস। আর সে বলছিল, আল্লাহর উপরই আমার ভরসা; আর তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক। তখন তার মা বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমার পুত্রকে এর (দাসীর) মতো বানিও না। তখন শিশুটি দুধপান ছেড়ে তার (দাসীর) প্রতি লক্ষ্য করে বলল, "হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এর (এ দাসীর) মতো বানিয়ে দাও।"

সে সময় মা ও পুত্রের মধ্যে কথোপকথন হলো। তখন মা বলল, ঠাটা পড়ুক (এ কেমন কথা)। সুদৰ্শন এক ব্যক্তি যাচ্ছিল। তখন আমি বললাম, "হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে এর মতো বানিও"। আর তুমি বললে, “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এর মতো বানিও না"। এরপর লোকেরা এ দাসীকে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন তারা তাকে প্রহার করছিল এবং বলছিল, তুই ব্যভিচার করেছিস এবং তুই চুরি করেছিস। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার পুত্রকে তার মতো বানিও না। আর তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তার মতো বানাও। সে বলল, সে আরোহী ব্যক্তি ছিল অত্যাচারী। তাই আমি বলেছি, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তার মতো বানিও না। আর যে দাসীকে ওরা বলছিল, তুই যিনা করেছিস। আসলে সে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়নি এবং বলেছিল, চুরি করেছিস, অথচ সে চুরি করেনি। তাই আমি বললাম, "হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তার মতো বানিয়ে দাও"।

সুতরাং আজকের আলোচনার সার সংক্ষেপ

আমাদের ঘরসমুহ থেকে বরকত চলে যাওয়ার কারন হল

) লোভে পরে লোভ করে উপাজন করলে তাতে বরকত থাকেনা (বুখারী ১৪৭২)

) বিনা পরিশ্রমে প্রাপ্ত মালে বরকত থাকেনা (বুখারি ১৯২১)

) মিথ্যা ধোকার আশ্রয় নিয়ে প্রাপ্ত মালে বরকত থাকেনা (বুখারি ১৯৪৯)

) ঘরে ময়লা আবজনা জমা করে অপরিস্কার করে রাখলে বরকত কমে যায় (তিরমিজি)

) আত্মিয়স্বজনের সাথে দুর্ব্যবহার করলে, হায়াতে রিজিকে বরকত কমে যায় (তিরমিজি ১৯৭৯)

) মেহমান আসলে বিরক্ত হলে বরকত কমে যায় (মুসনদে আহমদ)

) সকালে দেরী করে ঘুম থেকে উঠলে বরকত চলে যায় (আবু দাউদ ২৬০৬)

) ছায়াদার ফলদার গাছের নিয়ে পেশাব পায়খানা করলে বরকত কমে যায়

) বাথরুমে কথা বার্তা বললে বরকত কমে যায়

১০)  উপুর করে ঘুমালে বরকত কমে যায় (আদাবুল মুফরাদ ১১৯৯)

১১) বিসমিল্লাহ ছাড়া খাবার গ্রহণ করলে বরকত কমে যায় (ইবনে মাজা ৩২৬৪)

১২) অপচয় করলে বরকত কমে যায় (সুরা আরাফ ৩১)

১৩)  নেয়ামতের শোকর আদায় না করলে বরকত কমে যায় (সুরা সাবা ১৫-১৭)

১৪)  নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত না করলে বরকত কমে যায় (সুরা ফাতির ২৯)

১৫) গোপনে প্রকাশ্যে দান না করলে যাকাত না দিলে বরকত কমে যায় (সুরা ফাতির ২৯/৩০)

১৬) নামাজে অবহেলা করলে বরকত কমে যায়, বিশেষ করে ফযর আসরের নামাজে (বুখারী ৫৫৫)

১৭) ঘরে অফিসে দোকানে নিজের অধিনস্থ সকলকে নামাজের তাগিদ না দিলে বরকত কমে যায় (সুরা ত্বহা ১৩২)

১৯) আল্লাহকে ভয় না করলে ঘরে গুনাহের কাজ হলে ঘর থেকে বরকত চলে যায় ( সুরা তালাক /)

২০) মা বাবাকে কষ্ট দিলে  বরকত চলে যায় (মুসলিম ২৫৫০)

 

বরকত চলে যাওয়ার ব্যপারে কিছু কুসংস্কার প্রচলিত আছে যেমন

১) বাম পাশ থেকে বাম পা দিয়ে পেন্ট বা পায়জামা পরিধান করলে গরিবে হয়ে যাবেন এটাও বানোয়াট কথাযে কোন কাপড় পরিধান করার সুন্নত হল ডান পাশ থেকে, অতএব কেহ যদি বাম পাশ থেকে পরিধান করে তার জন্য বরকত চলে যাবে এমন কোন বিধান নাই।

২) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পায়জানা পরিধান করলে গরীব হয়ে যাবে এটাও মিথ্যা কথা- পেন্ট পায়জামা বসে বসে পরিধান করা আদব, বাহারে শরীয়তের এর ১৬ তম খন্ডে ৩০৩ পৃষ্ঠায় আছে যদি কেহ দাঁড়িয়ে পায়জামা পরিধান করে এবং বসে বসে পাগড়ি পরিধান করে সে এমন রোগে আক্রান্ত হবে যার কোন চিকিৎসা নাই।

৩)  মাগরিব ও এশারের মাঝামাঝি সময় ঘুমালে গরীব হয়ে যাবেন এটি বানোয়াট কথাহ্যাঁ মাগরিবের পর ঘুমালে এশারের নামাজ এশারের জামায়াত মিস হতে পারে তাই এই সময় ঘুমানো ইসলামী শরীয়তে মকরুহ। তবে এর সাথে বরকত চলে যাওয়ার সম্পর্ক নাই।

৪) আয় থেকে বেশী ব্যয় করাআয় থেকে ব্যয় বেশী করলে এমনিতেই অভাব দেখা দিবে, এর সাথে বরকত চলে যাওয়ার কোন সম্পর্ক নাই।

৫) ৪০ দিনের বেশী সময় নাভির নিচের চুল ও অবাঞ্চিত চুল না কাটলে দারিদ্রতা নেমে আসবে এই কথাটা মিথ্যাতবে এ কাজটা মকরুহে তাহরিমি। তাই অবাঞ্চিত লোম যেন ৪০ দিনের বেশী না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখবেন।

৬) দাঁত দিয়ে নখ কাটলে গরিব হয়ে যাবে এই কথাটিও বানোয়াট, তবে আমিরে আহলে সুন্নত বলেন দাঁত দিয়ে নখ কাটলে শরীরে সাদা রোগ হতে পারে। তাই এই কাজটি করা বিপদজ্জনক।

৭) খাবার জিনিষ রাতে ঢেকে না রাখলে গরিব হয়ে যাবে এটাও বনোয়াট কথা- হযরত যাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, প্রিয় নবী (দঃ) এরশাদ করেন- যখন তোমরা ঘুমাতে যাও, বাতি বন্ধ করবে, দরজা আটকিয়ে দিবে, খাবার ও পান পাত্র ঢেকে রাখবে।" (বুখারী শরীফ-৫৮২৮)  এর সাথে বরকত চলে যাওয়ার কোন সম্পর্ক নাই।

৮) অজু ছাড়া কোরআন পাঠ করলে ঘরে অভাব আসবে এটাও সম্পূণ মিথ্যা কথাকারন অজু ছাড়া কোরআন ধরা জায়েজ নাই তবে অজু ছাড়া কোরআন পাঠ করা জায়েজ আছে,  আর কোরআন পাঠের দ্বারা অবশ্যই বরকত হবে।

৯) হাটতে বসতে অজু ছাড়া দরুদ শরীফ পড়লে গরিব হয়ে যাবে- এটাও সম্পূর্ণ ভুয়া কথা, দরুদ শরীফ যে কোন সময় পড়া যা’য়, বরং সব সময় পড়া উচিত এতে বরং বরকত হবে।

১০) চপ্পল উল্টে গেলে তা সোজা না করলে ঘরে দারিদ্রতা আসে এটাও বানোয়াট কথা, আমিরে আহলে সুন্নত বলেন ব্যবহারের চপ্পল উল্টে থাকলে তাকে শয়তান নিজের বৈঠকখানা বানিয়ে নেয়, তাই চপ্পল উল্টে গেলে তা সোজা করে নেয়া উচিত।

এরকম আরো অনেক ভিত্তিহীন কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে সেগুলি হল

১১) কাপড়ের আস্তিন ও আঁচল দ্বারা মুখ পরিষ্কার করা।

১২) পরিধানে কাপড় রেখে সেলাই করা।

১৩) লুঙ্গি-গামছা চেপার সময় পায়ে পানি ফেলা

১৪) ফুঁক দিয়ে প্রদীপ নেভানো।

১৫) রাত্রিকালে ঘর ঝাড়ু দেওয়া।

১৬) কাপড় দ্বারা ঘর ঝাড়ু দেওয়া।

১৭) ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখা বা রাত্রে আয়নায় মুখ দেখা।

১৮) হাঁটতে হাঁটতে দাত খেলাল করা।

১৯) কাপড় দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করা।

২০) ঘরের ঝুলকালি বা মাকড়াসার বাসা পরিষ্কার না করা

২১) অন্ধকারে খাবার খাওয়া

২২) বোতলে মুখ লাগিয়ে পান করা

২৩) পিয়াস রসুনের ছিলকা জ্বালানো

২৪) ভাঙ্গা চিরনি দিয়ে মাথা আচরানো।

২৫) রাতে বাসন কোসন ধোয়া ময়লা পানি বাহিরে ফেলা।

 

 

কোন মন্তব্য নেই

ULTRA_GENERIC থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.