আশুরার ফজিলত ও আমল আশুরার দিন সর্বকালেরসর্বশ্রেষ্ঠ ১০টি ঘটনা
মুহররম-২, ১৪৪৫ হিজরী
আশুরার ফজিলত ও আমল আশুরার দিন সর্বকালেরসর্বশ্রেষ্ঠ ১০টি ঘটনা
১০ মুহররম কে আশুরা কেন বলা হয়?
১০ মুহররম দিনটিকে বলা হল আশুরা, আরবীতে আশারা বলা হয় ১০কে এই ১০ মুহররম আল্লাহ তায়ালা মানব ইতিহাসের ১০টি বড় বড় কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। সে জন্য এই ১০ মুহররম কে বলা হয় আশুরা। আশারা থেকে আশুরা।
মুহরমের ১০টি বড় বড় ঘটনা গুলি কি?
আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ উমদাতুল কারিতে সে ১০টি ঘটনার কথা বর্ননা করেছেন। তিনি বলেন আল্লাহ তায়ালা তার বড় বড় ১০ জন নবীকে আশুরার দিন ১০টি ফজিলত দান করেছেন। যেমন
১) হযরত মুসা (আ) কে আশুরার দিন সাহায্য করেছেন তিনি যেন তার সম্প্রদায়কে নিয়ে সমুদ্র পাড় হতে পারেন তার জন্য সমুদ্রের মধ্যে ১২টি রাস্তা তৈরী করে দিয়েছেন। আপনারা জানেন মুসা (আ) লক্ষ লক্ষ বনি ইসরাইলিকে নিয়ে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য মিশর ছেড়ে ফিলিস্তিনে গিয়েছেন।
ফেরাউন কোন সাগর পাড়ি দিয়েছিলেন?
আমাদের দেশে একটি ভুল তথ্য প্রচলিত আছে তা হল মুসা (আ) নীল নদ পাড়ি দিয়েছিলেন, সঠিক তথ্য হল আল্লাহ তায়ালা যে সমুদ্রের বুকে ১২টি রাস্তা তৈরী করে দিয়েছিলেন সেটির নাম হল (বাহর আল কুলজুম) বর্তমানে যাকে আমরা লোহিত সাগর বলে চিনি।
সমুদ্রে কিভাবে রাস্তা হল?
মুসা (আ) যখন তার লক্ষ লক্ষ অনুসারী বনি ইসরাইলকে নিয়ে বাহর আল কুলজুমের পারে আসলেন, পিছনে ছিল ফেরাউনের সৈন্য আর সামনে সমুদ্র।বনি ইসরাইল মুসা (আ) কে বললেন
إِنَّا لَمُدْرَكُونَ
আমরা
যে ধরা পড়ে গেলাম। [সুরা শু’য়ারা - ২৬:৬১]
قَالَ كَلَّا إِنَّ مَعِيَ رَبِّي
سَيَهْدِينِ
মূসা বলল, কখনই নয়, আমার সাথে আছেন আমার পালনকর্তা। তিনি
আমাকে পথ বলে দেবেন। [সুরা শু’য়ারা - ২৬:৬২]
আল্লাহর হকুমে মুসা (আ) সমুদ্রে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে আর ১২টি দলের জন্য ১২টি শুকনা রাস্তা আল্লাহ তায়ালা
তৈরী করে দিলেন। আল্লাহর
হকুমে দুই পাশের পানি বরফ হয়ে দুই দিতে দাঁড়িয়ে গেল।
সমুদ্রের রাস্তার দুরত্ব কতটুকু ছিল?
তফসিরে খাজেনে
এসেছে সমুদ্রের বুকের সে রাস্তার দৈর্ঘ্য ছিল ১০ মাইল বা প্রায় ১৪ কিলোমিটার।
বরফ স্বচ্ছ করে দেয়ার আবদার:
বনী ইসরাইলীরা
মুসা (আ) কে বললেন আমরা এত বড়
রাস্তা পাড় হব আপনি যদি আল্লাহকে বলেন তাহলে বরফ যেন স্বচ্ছ করে দেয় আমরা স্বচ্ছ বরফের
ভিতর সমুদ্রের মনোরম
দৃশ্যি উপভোগ করতে করতে যাব।তারা
সমুদ্রের বুকের উপর দিয়ে দুই পাশের মনোরম দৃশ্যি উপভোগ করতে করতে মিশর থেকে ফিলিস্তিন
চলে গেল।
এই কাজটি আল্লাহ
তায়ালা করেছিলেন মুহররমের ১০ তারিখ।
সে জন্য ইহুদীরা মুহরমের ১০ তারিখ রোজা রাখত
বুখারীর
২০০৪ নং হাদিস ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইয়াহুদীগণ ’আশুরার দিনে রোযাপালন করে। তিনি
জিজ্ঞাসা করলেনঃ কি ব্যাপার? (তোমরা এ দিনে সাওম পালন কর কেন?)
.
قَالُوا هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ، هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ
مِنْ عَدُوِّهِمْ، فَصَامَهُ مُوسَى.
তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন, এ দিনে আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর কবল হতে নাজাত দান করেন, ফলে এ দিনে মূসা (আলাইহিস সালাম) সাওম পালন করেন।
তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
" فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ
". فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ.
আমি
তোমাদের অপেক্ষা মূসার অধিক নিকটবর্তী, এরপর তিনি এ দিনে
সাওম পালন করেন এবং সাওম পালনের নির্দেশ দেন।
আশুরার রোজা সাহাবীরা খেলনা দিয়ে শিশুদেরও রোজা রাখাতেন
বুখারীর ১৮৩৬
নং হাদিস, সাহাবীরা নিজেরাও আশুরার রোজা রাখতেন এমনটি
তারা শিশুদেরকেও রোজা রাখাতেন তারা কান্না করলে পশমের কেলনা তৈরী করে দিতেন যেন তারা
খেলতে খেলতে ইফতারের সময় হয়ে যায়।
قَالَتْ
فَكُنَّا نَصُومُهُ بَعْدُ، وَنُصَوِّمُ صِبْيَانَنَا، وَنَجْعَلُ لَهُمُ
اللُّعْبَةَ مِنَ الْعِهْنِ، فَإِذَا بَكَى أَحَدُهُمْ عَلَى الطَّعَامِ
أَعْطَيْنَاهُ ذَاكَ، حَتَّى يَكُونَ عِنْدَ الإِفْطَارِ.
হযরত
রুবায়্যি (রাঃ) বলেন, পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন রোযা
রাখতাম এবং আমাদের শিশুদের রোযা রাখাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরী করে
দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ইফতার পর্যন্ত ভুলিয়ে
রাখতাম।
তবে
ইহুদীদের সাথে না মিলার জন্য নবীজি পরের বছর ৯ ও ১০ মহররম রোজা রাখার ইচ্ছা পোষন
করেন কিন্তু পরের বছের আসার আগেই তিনি ইন্তেকাল করেন। অতএব আমাদেরও উচিত আশুরার
দিন অন্তত ১টি রোজা রাখা তবে উত্তম হল ৯,১০ বা ১০,১১ মুহররম রোজা রাখা।
২) আশুরার দিন ২য় যে বড় কাজটি আল্লাহ তায়ালা করেছেন তা হল – নুহ (আ) এর সময় মহাপ্লাবন হয়েছিল সে প্লাবনে ৪০ দিন পর্যন্ত একাধারে জমিন থেকে টান্ডা পানি উঠেছিল ও আসমান থেকে গরম পানি বষন হয়েছিল, সাথে ছিল তুফান গোটা পৃথিবী ডুবে ছিল, সকল কাফেরেরা এই মহাপ্লাবনে মৃত্যু বরণ করে, নুহ (আ) এর পুত্র কেনান কাফের ছিল স্ত্রী ওয়ায়েলাও কাফের ছিল তারাও এই মহাপ্লাবনে মৃত্যু বরণ করে, শুধু নৌকাতে যে ৮০ জন ঈমানদার ছিল তারা এবং একজন ঈমানদার জমিনে ছিল যাকে আল্লাহ তায়ালা অলৌকিকভাবে বাঁচিয়েছেন সে বুঝতেও পারেনি ঝড় তুফান ও প্লাবনের কথা। এই প্লাবন ছিল ৬ মাস ৬ মাস পর নুহ (আ) কাককে পাঠালেন পানি কমেছে কিনা দেখতে কাক লেগে গেল মরা খাওয়ার তালে, সে খবর নিয়ে ফিরে আসলনা পরে পাঠালেন কবুতরকে সে পায়ে কাদা নিয়ে ফিরে আসল ফলে নুহ (আ) বুঝতে পারলেন পানি কমেছে েএবং তিনি নৌকা থেকে নামলেন মহররমের ১০ তারিখ জুদি পাহাড়ে। সে নৌকা দিয়ে তিনি জুদি পাহাড়ের চুড়ায় ১টি মসজিদ তৈরী করলেন। আর পাহাড়ের পাদদেশে একটি জনপদ গড়ে উঠে যার নাম হল সামানিন অর্থ্যাৎ ৮০ । নৌকার ৮০ জন ঈমানদারের সংখ্যার নামে এই জনপদ হয় সামানিন ।
মহাপ্লাবনের
পর তিনি আরো ৬০ বছর বেঁচে ছিলেন ১০৬০ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। নুহ (আ) সব
নবীদের মধ্যে বেশী হায়াত পেয়েছিলেন। কিয়ামতের দিন মুহাম্মদ (দ) এর পরে হযরত নুহ
(আ) কবর থেকে উঠবেন।
১০৬০ বছর
বয়েসেও তার শারিরিক শক্তি বিন্দুমাত্র কমেনি, তার ১টি চুলও সাদা হয়”নি, তার একটি
দাঁতও নড়েনি। সুবহানাল্লাহ।
তার কবর কোথায়? হযরত নুহ (আ) এর কবর নিয়ে কয়েঃকটি
মত আছে বায়তুল মুকাদ্দাসে, জমজম কুপ ও হাজরে আসওয়াদের মাঝখানে, কুফায়।
জুদি পাহাড় কোথায় অবস্থিত? জুদি পাহাড় তুরস্কে অবস্থিত।
৩) ইউনুস (আ)- আল্লাহ তায়ালা হযরত ইউনুস (আ) কে মহরমের ১০ তারিখ মাছের পেট থেকে উদ্ধার করেছেন।হযরত ইউনুস (আ) তার কউমের বেপরোয়ার কারনে আল্লাহর হকুমে তাদের ছেড়ে চলে গেলেন, তাদের উপর ৩ দিন পর আযাব আসার কথা বলে গেলেন, হযরত ইউনুসের কওম তওবা করলেন মায়ের কাছ থেকে সন্তানকে পশুদর কাছ থেকে তাদের বাচ্চাদেরকে পৃথক করে দিলেন সকলে জার কাতার কান্না করে করে যখন তওবা করলেন এবং সকলের নিজেদের সকল পাওনরা মিটিয়ে দিলেন, কেহ অন্যায় ভাবে ১টি ইটও নিলে তা ফেরত দিলেন তারপর যখন দোয়া করলে তাদের উপর আযাব আসা বন্ধ হয়ে গেল। এদিকে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইউনুসকে পরীক্ষায় ফেললেন, যখন আযাব আসলনা তখন ইউনুস (আ) চিন্তা করলেন আমার কওমের লোকেরা আমাকে মিথ্যাবাদি বলে আমাকে হত্যা করবে তাই তিনি হিজরত করার জন্য একটি জাহাজে উঠলেন, যা একটি বড় মাছে আটকে রাখল, লটারি দেয়া হলে তাতে ইউনুসের নাম আসল ৩ বার ইউনুসের নাম আসলে তিনি নিজেই সাগরে ঝাপ দিলেন আর একটি মাছ হযরত ইউনুসকে গিলে ফেলল, আর ইউনুস (আ) মাছের পেটে ৪০ দিন পর পাঠ করলেন (লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন) তখন আল্লাহর হকুমে মাছ তাকে নদী তিরে নিক্ষেপ করলেন তখন ইউনুস (আ) খুবই দুর্বল ছিলেন শরীর লোম হিন হয়ে গেল, তখন সেখানে আল্লাহর হকুমে কদু জাতিয় লতা উৎপন্ন হল যা তাকে ছাড়া দিত এবং একটি ছাগল এসে তাকে দুধ পান করিয়ে যেত। আর তিনি তা খেয়ে আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে গেলেন। এবং তার জাতির কাছে ফিরে গেলেন যারা তওবা করেছিল। এবং সত্য ধম কবুল করে নিল।
এসব ঘটনা সুরা সাফফাতের ১৪৩-১৪৮ নং আয়াতে আছে যেমন
فَلَوْلاَ أَنَّهُ كَانَ مِنَ
الْمُسَبِّحِيْنَ- لَلَبِثَ فِيْ بَطْنِهِ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ-
‘অতঃপর যদি সে আল্লাহর
গুণগানকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হ’ত’(ছাফফাত ১৪৩)। ‘তাহ’লে সে ক্বিয়ামত
দিবস পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকত’? (১৪৪)।
فَنَبَذْنَاهُ
بِالْعَرَاءِ وَهُوَ سَقِيْمٌ-
‘অতঃপর আমরা তাকে একটি
বিজন প্রান্তরে নিক্ষেপ করলাম, তখন সে রুগ্ন ছিল’(১৪৫)।
وَأَنبَتْنَا عَلَيْهِ
شَجَرَةً مِّن يَّقْطِيْنٍ-
‘আমরা তার উপরে একটি লতা
বিশিষ্ট বৃক্ষ উদ্গত করলাম’(১৪৬)।
وَأَرْسَلْنَاهُ إِلَى
مِئَةِ أَلْفٍ أَوْ يَزِيْدُوْنَ- فَآمَنُوْا فَمَتَّعْنَاهُمْ إِلَى حِيْنٍ- (الصافات)-
‘এবং তাকে লক্ষ বা
তদোধিক লোকের দিকে প্রেরণ করলাম’(১৪৭)। ‘তারা ঈমান আনল।
ফলে আমরা তাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত জীবন উপভোগ করার সুযোগ দিলাম’ (ছাফফাত -১৪৮)।
দোয়া ইউনুসের ফজিলত
হজরত সাদ বিন
আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হাদিসে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
'যুননুন
(মাছ ওয়ালা) ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে দোয়া করেছিলেন-
لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ
الظَّالِمِينَ
'লা
ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ
জ্বালিমিন।'
অর্থাৎ 'তুমি
ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি গোনাহগারদের দলভুক্ত। যখনই কোনো মুসলিমের (দোয়া ইউনুস) মাধ্যমে
দোয়া করে, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তার দোয়া কবুল করে থাকেন।'
(তিরমিজি, মিশকাত)
দোয়া ইউনুস দিয়ে দোয়া করার নিয়ম
প্রথমে অজু করে নিজের কৃত গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করবেন যদি পারে ২ রাকাত তওবা ও হাজতের নিয়তে নামাজ পড়বেন , কিংবা রাতের অন্ধকারে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বেন তারপর আল্লাহর প্রসংশা করবেন কয়েকবার দরুদ শরীফ পড়বেন তারপর খুব আন্তরিকতার সাথে অথের দিকে খেয়াল করে কয়েকবার দোয়া ইউনুস পড়বেন
অথ কি? 'তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য
নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি
গোনাহগারদের দলভুক্ত।
এরপর আপনার বিপদ মসিবত দুঃখ যাতনা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন।
তিরমিজি শরীফের ৩৫০৫ নং হাদিস
.
فَإِنَّهُ لَمْ يَدْعُ بِهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلاَّ اسْتَجَابَ
اللَّهُ لَهُ " .
যে কোন
মুসলিম লোক কোন বিষয়ে কখনো এ দু’আ করলে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা তার দু’আ কবুল
করেন।
৪) হযরত আদম (আ) এর তওবা কবুল করেছেন: এই আশুরার
দিন। আদম (আ) ৩০০ বছর পর্যন্ত দুনিয়ায় লজ্জিত হয়ে কান্না করেছেন,
তফসিরে
আযিযি, তফসিরে খাযায়েনুল ইরফান, তফসিরে রুহুল বয়ানে আছে- হযরত আলী (রা) বলেন
রাসুলুল্লাহ (দ) এরশাদ করেন, আদম (আ) এর দুশ্চিন্তা চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছল তখন
একদিন তার স্মরণ হল জন্মলগ্নে আরশ আযিমে লিখা ছিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ) প্রভুর নামের পাশে এই মহান হাস্তির নাম তখন তিনি দোয়া
করলেন
(রাব্বানা জালামনা আনফুসানা ওয়া ইন
লাম তাগফিরিলানা ওয়াতারা হামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন) ( আস আলুকা বিহাক্কি
মুহাম্মাদিন আন তাগফিরিলি)
অর্থ্যাৎ আমি আপনার নিকট মুহাম্মদ এর উসিলায় ক্ষমা প্রার্থনা করছি আমাকে
ক্ষমা করুন।
সেদিন ছিল
আশুরার দিন যখন আদম (আ) মুহাম্মদের উসিলায় দোয়া করলেন আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল
করলেন। সেদিন ছিল জুমার দিন।
আদমের আইয়্যামে বিজের রোজা: আদম (আ) জান্নাত থেকে আসার পর তার শরীর কালো হয়ে গিয়েছিল, তওবা কবুল হওয়ার পর তিনি ১৩,১৪,১৫ তারিখ ৩টি রোজা রাখলেন এই রোজা রাখার পর তার শরীর পূর্বের মত পুনরায় সুন্দর শুভ্র হয়ে গেল। এই আইয়ামে বিজের রোজা আমাদের নবীজিও রাখতেন, আমরাও যদি এই ৩টি রোজা রাখি তাহলে আমাদের শরীর চেহেরাও নুরানি উজ্জ্বল হয়ে যাবে। ইনশা আল্লাহ
৫) হযরত ইউসুফ (আ): হযরত ইউসুফ (আ) কে তার সৎ ভায়েরা হিংসার বশবর্তী হয়ে কুফে ফেলে দিলেন ৭ মহররম যখন কুফে ফেলে দিলে তখন কুপের পানিতে পড়ার আগেই আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাইল (আ) কে হকুম দিলেন ইউসুফকে রক্ষা করতে হযরত জিবরাইল (আ) এত দ্রুত গেলেন ইউসুফ কুপের পানিতে পড়ার আগেই তিনি এক খন্ড পাথর রেখে দিলেন আর তিনি পানিতে পড়া থেকে বেঁচে গেলেন। একটি কাফেলা সে পথে পথ হারা হয়ে যাচ্ছিলেন তারা কুপ দেখে তা থেকে পানি তুলতে বালতি নিক্ষেপ করলেন আর সে বালতি ধরে উঠে এলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সুন্দর বালক হযরত ইউসুফ (আ), সেদিন ছিল ১০ মুহররম, তিনি সে কুপে ৩ দিন ছিলেন। তার ভায়েরা ইউসুফকে কাফেলার লোকেরা নিয়ে যাচ্ছে দেখে বলতে লাগলেন এ আমাদের গোলাম আপনারা চাইলে তাকে কিনে নিতে পারেন অতএব মাত্র ২০ দেরহামে হযরত ইউসুফকে তারা কিনে নিল।
২০ দিরহামে বিক্রী কেন? ইউসুফ (আ) এর সৌন্দর্য্য এত বেশী
ছিল তিনি নিজেকের চেহেরা দেখে একদিন বললেন যদি আমাকে কেহ কিনতে চায় আমার যে সৌন্দর্য্য
আমার মূল্য কেহ দিতে পারবেনা, তিনি প্রসংশা করেননি, তাই সে ধারনাকে ভুল প্রমাণিত করতেই আল্লাহ তায়ালা হযরত ইউসুফকে মাত্র ২০ দেরহামে
বিক্রী করিয়েছেন।
আমাদের উচিত
নিজের চেহেরা আয়নায় দেখে আল্লাহর প্রসংশা করা
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা হাস্সানতা খালকি; ফা আহসিন খুলুকি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছো; কাজেই (এভাবে) আমার চরিত্র সুন্দর করে দাও’ (ইবনে হিব্বান, মিশকাত)
ইউসুফ (আ) অনুতপ্ত
হলেন : নিজের মূল্য মাত্র ২০ দিরহাম দেখে লজ্জিত হলেন
আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন তখন আল্লাহ তায়ালা তার মূল্য এবার বাড়িয়ে দিলেন মারেক ইবনে
যায তাকে কেনানের বাজারে বিক্রী করলেন ইউসুফকে কিনার জন্য মানুষ দাম হাকাতে লাগলেন,
শেষ পযন্ত দাম বাড়তে বাড়তে শেষ পযন্ত মূল্য নির্ধারন হল তার ওজন বরাবর
স্বর্ণ, সমপরিমান রৌপ্য, সমপরিমান মুক্তা,
সমপরিমান মৃগনাভি, সমপারিমান রেশমি বস্ত্র,
এই মূল্য দিয়ে মিশরের অথ মন্ত্রী আজিজ মিশরীই তাকে খরিদ করেন। সুবহানাল্লাহ
তখন হযরত ইউসুফের বয়স ১২ বছর আর ওজন ছিল ৫ মন।
শিক্ষনীয়: আমরাও কখনো নিজের সৌন্দর্য্য, নিজের কাজের যোগ্যতার উপর অহংকার করবনা, বরং বলব এ সবই
আমার আল্লাহর দয়া, আমার আল্লাহর অনুগ্রহ। তাহলে
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সন্মান বাড়িয়ে দিবেন
৬) হযরত ইসা (আ) এর জন্ম: এই আশুরার দিনে, তিনি ছিলেন রুহু”ল্লাহ, আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন, তাকে আল্লাহ তায়ালা পিতা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন, খ্রিষ্টানদের একদল বলে পিতা ছাড়া কিভাবে সন্তান হয়, নিশ্চয় ইসার পিতা হল আল্লাহ নাউজুবিল্লাহ। তারা ৩ খোদা মানে। অথচ তারা চিন্তা করে আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ) কে সৃষ্টি করেছেন পিতা মাতা ছাড়া, হযরত হাওয়া কে সৃষ্টি করেছেন পিতা মাতা ছাড়া। সুবহানাল্লাহ
হযরত ইসা (আ) যখন জন্ম গ্রহণ করেন তখন মরিয়ম (আ) কে আল্লাহ শিখিয়ে দেন মানুষ যখন প্রশ্ন করবে বিবাহ
ছাড়া কিভাবে সন্তান হল সে যেন বলে আমি মানতের রোজা রেখেছি আর তখন মানতের রোজা রাখলে
কথা বলা নিষেধ ছিল তিনি যেন সন্তানের প্রতি ইশারা করে আর তারা সন্তানের দিকে গেলে হযরত
ইসা (আ) বলেন
যা সুরা মরিয়ামের
৩০-৩১ নং আয়াতে আছে
قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ
آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا
সন্তান
বললঃ আমি তো আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন। [সুরা
মারঈয়াম - ১৯:৩০]
وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيْنَ مَا
كُنتُ وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا
আমি
যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে
নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন
নামায ও যাকাত আদায় করতে। [সুরা মারঈয়াম - ১৯:৩১]
# অতএব ঈসা (আ) জন্ম লাভ করেন মহররমের ১০ তারিখ আবার ইহুদীরা যখন তাকে হত্যা করতে গেল সেদিন
আল্লাহ তায়ালা হযরত ইসা (আ) কে আকাশে উঠিয়ে
নিলেন সেদিনও ছিল মুহররমের ১০ তারিখ।
ইসার মৃতকে জীবিত করার ঘটনা: ইসা (আ) এর মুজেজা ছিল তিনি মৃতকে জীবিত করতে পারতেন, তৎকালিন বাদশার নির্দেশে তাকে একটি পুরাতন কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হল যেটি ছিল হযরত নুহ (আ) এর সন্তান শামের কবর তিনি কবরের পাশে ২ রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহ কাছে দোয়া করলেন আর সাথে সাথে কবর ফেটে তার থেকে সাদা চুল দাড়ি বিশিষ্ট অতিশয় বৃদ্ধ একজন বের হলেন তিনি ইসা ৯আ) কে সালাম দিলেন, আর লোকদেরকে বললেন ইনি হলে হযরত ইসা আল্লাহর নবী। ইসা (আ) শামকে প্রশ্ন করলেন তোমার যুগে কারো চুর দাড়ি সাদা হতনা তোমার চুল দাড়ি সাদা কেন, হযরত শাম জবাব দিল আমি মনে করেছি কিয়ামত কায়েম হয়ে গেছে সে ভয়ে এখনই আমার চুল দাড়ি গুলি সাদা হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ
ইহুদীরা ইসাকে হত্যা করতে পালনা কেন?
ইহুদীরা বনি
ইসরাইলের অনেক নবীকে হত্যা করেছে কিন্তু হযরত ইসা নবীকে হত্যা করতে পারলনা কেন ? কারন ইসা নবী সব সময় দোয়া করতেন (আল্লাহুম্মা জাআলনি মিন উম্মতি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
হে আল্লাহ আমাকে মুহাম্মদ (দ) এর উম্মত বানিয়ে দাও।
# মুসা (আ) প্রথম প্রথম ৭ বার দোয়া করেছেন হে আল্লাহ মুহাম্মদ (দ) এর উম্মতেরা এত ভাগ্যবান তাদেরকে আমার উম্মত বানিয়ে দাও, মুসা (আ) এর এই ৮ বারের দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন নি, ৮ম বার তিনি দোয়া করেন (হাত্তা তামান্না মুসা আন এয়াকুনা মিন উম্মতি মুহাম্মদ ) হে আল্লাহ যদি তুমি উম্মতে মুহাম্মদিকে আমার উম্মত হিসেবে না দাও তাহলে আমাকে মুহাম্মদ (দ) এর উম্মত বানিয়ে দাও।
আমরা কত বড়
পোড়া কপাল মুসা নবী দরখাস্ত করেও উম্মত হতে পারে নাই, ইসা নবী দরখাস্ত করে উম্মত হয়েছে, আর আমরা বিনা দরখাস্তে
উম্মত হয়েও সে শোকরিয়া আদায় করিনা।
ঈসা (আ) কোথায় আছেন?
ঈসা (আঃ) দ্বিতীয় আসমানে জীবিত আছেন (আলে ইমরান ৩/৫৫,
নিসা ৪/১৫৭;
বুখারী,
মুসলিম,
মিশকাত হা/৫৮৬২)। তিনি কিয়ামতের আগে দামেশকের পূর্বপ্রান্তের শ্বেত মিনার হ’তে হলুদ বর্ণের দু’টি পোষাক পরিহিত অবস্থায় দু’জন ফেরেশতার পাখায় ভর করে অবতরণ করবেন।...
অতঃপর তিনি বায়তুল মুক্বাদ্দাসের ‘লুদ্দ’
দরজার নিকটে ‘দাজ্জাল’কে হত্যা করবেন।তিনি সাত বছর দুনিয়ায় অবস্থান করবেন’ (আবুদাঊদ হা/৪২৮৫; মিশকাত হা/৫৪৫৪)। ঈসা (আঃ)ও দুনিয়াতে সাত বছর অবস্থান করবেন’ (মুসলিম হা/২৯৪৩)। ঊর্ধ্বারোহনের পূর্বের ৩৩ বছর এবং দুনিয়ায়
অবতরণের পরের ৭ বছর মিলে তাঁর বয়স হবে মোট ৪০ বছর। তারপর তিনি মৃত্যুবরণ করবেন
ইমাম মাহদি ও সৈয়দ বংশের মর্যাদা
তখন মুসলমানদের মধ্য থেকে ইমাম মাহদী ইমাম হবেন এবং ঈসা হবেন মুক্তাদী। এটি হবে উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে প্রদত্ত
বিশেষ সম্মান’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫০৬-০৭)। মাহদী
রাসূল (ছাঃ)-এর বংশধর হবেন’ (তিরমিযী হা/২২৩০; আবুদাঊদ হা/৪২৮৪; মিশকাত হা/৫৪৫২-৫৩)।
কিয়ামতের আগেও হক বাতিলের পার্থ্যক্য (ওয়ালা আলি মুহাম্মদ)
মুহতারাম
হযরত হযরত ইমাম মাহদি (আ) হলেন আমার নবীর বংশধর, যেভাবে হযরত ইমাম হাসান ইমাম
হোসেন আমার নবীর বংশধর তাদের বংশধারায় কিয়ামতের আগে মুসলমানদের ইমাম এমনকি একজন
জলিলুল কদর নবীও যার পিছনে নামাজ পড়বেন, তিনি হবেন আমার নবীর বংশধর। নবীর বংশধরের
সাথে গাদ্দারি যারা করেছে তারা কখনো রহমতুল্লাহ আলাই হতে পারেনা, তারা হবে
লানাতুল্লাহ। হোসেন কারবালায় শহিদ হয়ে মুলত অমর হয়ে আছেন, যদি কারবালার ঘটনা না
ঘটত এভাবে মানুষ নবী বংশের লোকদের স্মরণ করতনা, নবী বংশের লোকদের চর্চা হতনা।
আজ আমরা
নামাজেও সে নবী বংশের লোকদেরকে সালাম দিই, (আল্লাহুম্মা
সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলি মুহাম্মদ) আলে মুহাম্মদ মানেই হল ইমাম
হোসেন, আলে মুহাম্মদ মানে হল আলি আসগর, আলে মুহাম্মদ মানে হল আলি আকবর, আলে
মুহাম্মদ হল ইমাম মাহদি এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত সকল মুসলমান নামাজে নবীর বংশের
লোকদেরকেই সালাম দেয়, খোতবাতেও তাদের স্মরণ করে, তাই বলা হয় হোসেন তখনও জিন্দা
হোসেন এখনো জিন্দা, হোসেন কিয়ামত পযন্ত জিন্দা।
অতএব ইসা (আ) জন্ম নিলেন ১০ মুহররম এবং ২য় আকাশে উঠিয়ে নিলেন ১০ মুহররম
৭) দাউদ (আ) এর তওবা কবুল হয় আশুরার দশ তারিখে- ঘটনাটি হল হযরত দাউদ (আ) এর শরীয়তে যদি কেহ অন্যের বউকে বিয়ে করতে চাইত তাকে বলত তুমি তোমার বউকে তালাক দাও আমি তাকে বিয়ে করব, সে হিসেবে হযরত দাউদ (আ) এর ৯৯ জন স্ত্রী ছিল তারপরও তিনি উরিয়ার স্ত্রীকে বিয়ে করার জন্য উরিয়াকে প্রস্তাব দিল তার স্ত্রীকে তালাক দিতে, উরিয়া নবীর কথায় তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিল, এবং তাকে হযরত দাউদ (আ) বিবাহ করলেন, যদিও কাজটি বৈধ ছিল কিন্তু তা আল্লাহ তায়ালা অপছন্দ করলেন এবং আল্লাহ তায়ালা দাউদ (আ) এর এই কাজটিকে ২ জন ফেরেশতার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন, যখন দাউদ (আ) নিজের ভুল বুঝতে পারলেন তিনি সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন এভাবে তিনি ৪০ দিন যাবৎ কান্না কাটি করেছিলেন, ৪০ দিন পর মহরমের ১০ তারিখ আল্লাহ তায়ালা দাউদ (আ) এর তওবা কবুল করেন।
২জন ফেরেশতা আগমন করে দাউদ (আ) কে উদাহারণ দিয়ে বুঝানোর এ ঘটনা সুরা সোয়াদ এর
২১-২৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা খুব সুন্দর ভাবে বয়ান করেছেন
وَهَلْ أَتَاكَ نَبَأُ الْخَصْمِ
إِذْ تَسَوَّرُوا الْمِحْرَابَ
আপনার
কাছে দাবীদারদের বৃত্তান্ত পৌছেছে, যখন তারা প্রাচীর
ডিঙ্গীয়ে এবাদত খানায় প্রবেশ করেছিল। [সুরা সা’দ - ৩৮:২১]
إِذْ دَخَلُوا عَلَى دَاوُودَ
فَفَزِعَ مِنْهُمْ قَالُوا لَا تَخَفْ خَصْمَانِ بَغَى بَعْضُنَا عَلَى بَعْضٍ
فَاحْكُم بَيْنَنَا بِالْحَقِّ وَلَا تُشْطِطْ وَاهْدِنَا إِلَى سَوَاء الصِّرَاطِ
যখন
তারা দাউদের কাছে অনুপ্রবেশ করল, তখন সে সন্ত্রস্ত
হয়ে পড়ল। তারা বললঃ ভয় করবেন না; আমরা বিবদমান দুটি পক্ষ,
একে অপরের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছি। অতএব, আমাদের
মধ্যে ন্যায়বিচার করুন, অবিচার করবেন না। আমাদেরকে সরল পথ
প্রদর্শন করুন। [সুরা সা’দ - ৩৮:২২]
إِنَّ هَذَا أَخِي لَهُ تِسْعٌ
وَتِسْعُونَ نَعْجَةً وَلِيَ نَعْجَةٌ وَاحِدَةٌ فَقَالَ أَكْفِلْنِيهَا
وَعَزَّنِي فِي الْخِطَابِ
সে
আমার ভাই, সে নিরানব্বই দুম্বার মালিক আর আমি মালিক
একটি মাদী দুম্বার। এরপরও সে বলেঃ এটিও আমাকে দিয়ে দাও। সে কথাবার্তায় আমার উপর
বল প্রয়োগ করে। [সুরা সা’দ - ৩৮:২৩]
قَالَ لَقَدْ ظَلَمَكَ بِسُؤَالِ
نَعْجَتِكَ إِلَى نِعَاجِهِ وَإِنَّ كَثِيراً مِّنْ الْخُلَطَاء لَيَبْغِي
بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
وَقَلِيلٌ مَّا هُمْ وَظَنَّ دَاوُودُ أَنَّمَا فَتَنَّاهُ فَاسْتَغْفَرَ رَبَّهُ
وَخَرَّ رَاكِعًا وَأَنَابَ
দাউদ
বললঃ সে তোমার দুম্বাটিকে নিজের দুম্বাগুলোর সাথে সংযুক্ত করার দাবী করে তোমার
প্রতি অবিচার করেছে। শরীকদের অনেকেই একে অপরের প্রতি জুলুম করে থাকে। তবে তারা করে
না, যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ও সৎকর্ম
সম্পাদনকারী। অবশ্য এমন লোকের সংখ্যা অল্প। দাউদের খেয়াল হল যে, আমি তাকে পরীক্ষা করছি।
অতঃপর সে তার পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল, সেজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করল। [সুরা সা’দ - ৩৮:২৪]
৮) ইবরাহিম
(আ) এর জন্ম: আশুরার দিন। ইবরাহিম (আ) নুহ আ এর প্লাবনের ১৭০৯ বছর পর এবং ইসা (আ) এর
২৩০০ বছর আগে কুফা শহরের কাছে কুকি শহরে জন্ম গ্রহণ করেন।
নমরুদ স্বপ্ন
দেখল একটি তারকা উদিত হয়েছে যার ফলে সুর্যের আলো নিভে গেছে, এটা দেখে সে ভয় পেয়ে গেল, স্বপ্নবেত্তাগন এর তাবির করল
আপনার রাজ্যে এমন এক সন্তান জন্ম হবে যে আপনার ধ্বংসের কারন হবে, তখন নমরুদ যত গর্ভবতী ছিল তাদের সন্তান জন্ম হলে ছেলে হলে হত্যা করার হকুম
দিল এবং এক বছর কোন পুরুষকে নারীর কাছে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করল, কিন্তু তারপরও আল্লাহ তায়ালা নমরুদের এত বাধা বিপত্তির পরও হযরত ইবরাহিম
(আ) কে মুহরমের ১০ তারিখ জন্ম দেন, আর তাকে এমন ভাবে গ্রোথ দেন তিনি মাত্র ১৫ মাসে ১৫ বছরের ছেলের মত হয়ে যান। সুবহানাল্লাহ।
তার পিতার নাম
হলেন তারেখ, কোরআনে যে আযর এর কথা আছে সেটা হল তার চাচা,
যিনি মুর্তি বানাতেন, আরবীতে চাচাকেও আবুন বলা
হয়, আমাদের নবীজি এই ইবরাহিম (আ)
এর বংশেই জন্ম গ্রহণ করেছেন যে বংশ পরম্পরায় কোন মুর্তি পুজারি নাই,
সকলেই ছিল নেককার ছালেহ হানিফ।
৯) এয়াকুব (আ) নিজের দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেয়েছিলেন, এয়াকুব (আ) হলেন ইউসুফ (আ) এর পিতা তিনি নিজের সন্তান ইউসুফ (আ) এর জন্য কান্না করতে করতে তার চোখের দৃষ্টি চলে গিয়েছিল, ৪০ বছর পর ১০ মুহররম যখন ইউসুফ মিশরের সম্রাট তিনি তার ভাইয়েরা ত্রাণ নিতে আসলে তাদের মার”ফত তার পিতার নিকট নিজের গায়ের জামা পাঠালোন, আর সে জামা নিয়ে ইউসুফের ভায়েরা এয়াকুবের কাছে নিয়ে গেলেন এয়াকুব সে জামা নিজের মুখের উপর রাখলেন তার খুশবু নিলেন আর সাথে সাথে নিজের দুটি চোখ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেল, সেদিন ছিল আশুরা যেদিন আল্লাহ তায়ালা তার চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন।
দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়া কারন: নামাজে অন্য
দিকে তাকানো: ইমাম কুরতুবি লিখেন একদিন তাহাজ্জুদে
এয়াকুব (আ) ঘুমন্ত শিশু ইউসুফের দিকে মনোনিবেশ
করেন, নামাজে অন্য দিকে মনযোগ যাওয়ার ফলে আল্লাহ তায়ালা এয়াকুব
(আ) কে পরীক্ষায় ফেলেন তার দৃষ্টি শক্তিও কেড়ে
নেন সে আদরের সন্তানকেও দুরে সড়িয়ে দেন।
শিয়াদের যুক্তি: শিয়ারা যে মাতম করে হায় হোসেন হাই হোসেন করে, তারা যুক্তি দেয় এয়াকুব (আ) ৪০ বছর শোক করেছেন, আমরা কেন করব না? অথচ এয়াকুব (আ) শোকে কেঁদেছেন ঠিকই কিন্তু তিনি মাতম করেন নি, নিজের জামা কাপড় ছিড়েন নি, তিনি নিজের শরীর জখমও করেন নি।
১০) এই আশুরার দিন আমাদের নবী যদিও নিস্পাপ গুনাহ মুক্ত, তবুও আল্লাহ তায়ালা মুহরমের দশ তারিখ আশুরার দিন আমার নবীর আগের পরের সকল গুনাহ থেকে পুত পবিত্র বলে ঘোষনা করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ
আর এই আশুরার দিনই ৬১ হিজরীতে কারব বালায় ইমামে হোসাইন (রা) এজিদি বাহিনির হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন।
এসব সৈয়দজাদাদের শাহাদাত মুলত নবী বংশের স্মরণকে কিয়ামত পর্যন্ত অবীস্মরনীয় করে রেখেছেন। কারবালার ঘটনা না ঘটলে আজ কেহ নবী বংশের মর্যাদার আলোচনা হয়ত করতনা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নবী বংশের হযরতদেরকে পবিত্র আহলে বায়তকে ভালোবাসার তৌফিক দান করুন।
আজকের দিনে যে সব ঘটনা ঘটেছে তা এক সাথে আবার বলে দিতে চাই
আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ) তার বুখারীর শরাহ উমদাতুল কারিতে লিখেন এই আশুরার দিনে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বড় ১০টি কাজ করেছেন তা হল
১) হযরত মুসা (আ) ও তার সম্প্রদায়কে ফেরাউন এর হাত থেকে রক্ষা করেছেন, ফেরাউন ও তার দলবলকে বাহরে কুলজুম তথা লোহিত সাগরে নিমজ্জিত করে ধ্বংস করেছেন
২) হযরত নুহ (আ) ও ৮০ জন মুমিনকে ৬ মাস ব্যপী থাকা প্লাবন থেকে মুক্তি দিয়েছেন
৩) ইউনুস (আ) কে ৪০ দিন পর মাছের পেট থেকে মুক্তি দিয়েছেন
৪) হযরত আদম (আ) এর তওবা কবুল করেছেন
৫) হযরত ইউসুফ (আ) কে অন্ধকার কুপ থেকে ৩ দিন পর আশুরার দিন মুক্তি দিয়েছেন
৬) হযরত ইসা (আ) কে পিতা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন, এবং এই দিনই তাকে ২য় আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন
৭) দাউদ (আ) ৪০ দিন যাবৎ কান্নাকাটি করার পর তার তওবা কবুল হয়েছে
৮) নমরুদের শত বাঁধা সত্বেও ইবরাহিম (আ) আশুরার দিন জন্ম গ্রহণ করেছেন
৯) এয়াকুব (আ) পুত্র শোকে ৪০ বছর অন্ধ থাকার পর নিজের পুত্রকে ফিরে পেলেন এবং পুত্রের গা”েয়র জামার খুশবু পেয়ে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন
১০) আশুরার দিন আমাদের প্রি”য় নবীকে আল্লাহ তায়ালা আগের পরের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়ার ঘোষনা দিয়েছেন
আর এই ১০টি ঘটনার কারনেই এই দিনকে আশুরা বলে আর সে দিনই পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে জঘন্য মর্মান্তিক ঘটনা ঘটালো এজিদ বাহিনি কর্তৃক নবীজির কলিজার টুকরাকে সিজদারত অবস্থায় জবাই করে দিলেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
এই দিন আমাদের প্রধান আমল হল আমরা ১০ মুহররম ১টি রোজা রাখব, অথবা ৯,১০ মুহররম ২টি রোজা রাখব, অথবা ১০,১১ মুহররাম ২টি রোজা রাখব, অথবা ৯,১০,১১ মুহররম ৩টি রোজা রাখব। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তৌফিক দান করুন আমি।
তাছাড়া এই দিন দান সদকা করা, গরীব মিসকিনকে খাদ্য দেয়া, ঘরের লোকদেরকে ভালো মানের খাবার খাওয়ানো, বেশী বেশী দরুদ শরীফ পাঠ করা, তওবা এসতেগফার পড়া, নফল নামাজ পড়ার মাধ্যমে কাটানোর তৌফিক দান করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই