নবীজীর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বন্ধু বনাম শত্রু। নাস্তিক থেকে বাঁচার উপায়
মুহররম মাসের ৪র্থ জুমা ১৪৪৫ হিজরী
বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
নবীজীর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বন্ধুদের প্রতি আল্লাহর রহমত বনাম আবু জেহেলের
বন্ধুদের প্রতি আল্লাহর গজবের ১০টি অসাধারণ ঘটনা এবং নাস্তিক থেকে বাঁচার উপায়
عُتُلٍّ بَعْدَ ذَلِكَ
زَنِيمٍ
কঠোর
স্বভাব, তদুপরি
জারজ (সূরা আল ক্বলম ১৩)
ভুমিকা: ইদানিং ইসলাম বিদ্বেষী, কোরআন অবমাননা, প্রিয় নবীজির আকাশচুম্বিন শান ও মানের অবমাননার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে নাউজুবিল্লাহ। এ দুনিয়ায় মুলত দুই ধরনের লোক বাস করে এক প্রকার লোক হল নবীর বন্ধু অপর প্রকার লোক হল নবীর শত্রু। নবীর বন্ধু শুধু মুসলমানরাই হতে পারে, আর নবীর শত্রু অমুসলমানদের মধ্যেও আছে মুসলমানদের মধ্যে আছে।যুগে যুগে যারাই নবীর বন্ধু ছিল তারাই স্মরণীয় হয়েছেন বরনীয় হয়েছেন মানুষের সম্মানের পাত্র হয়েছেন। পক্ষান্তরে যারা নবীর শত্রু হয়েছে, নবীর সাথে দুশমনী করেছেন তারা পদে পদে বেইজ্জত হয়েছে। মুলত তাদের উপর আল্লাহর লানত দুনিয়াতেও আখেরাতে রয়েছে দরদনাক শাস্তি।
আবু লাহাবের পুত্র উতাইবার উপর আযাব: আমাদের নবীর ৭জন সন্তান ছিলেন, ৩ জন পুত্র সন্তান ৪ জন কন্যা সন্তান তারা হলেন (১) হযরত সৈয়্যদ কাসেম (রা) তিনি ১৭ মাস বয়সে ইন্তেকাল করেন (২) হযরত সৈয়্যদ আবদুল্লাহ (রা) তিনি জন্মের পরপরই ইন্তেকাল করেন উনার ইন্তেকালের পর আস ইবনে ওয়ায়েল নবীজিকে আবতার বলেন (৩) হযরত সৈয়্যদ ইবরাহিম (রা) ইনি ৮ম হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন, ইনিও ১৬ মাস বয়সে ইন্তেকাল করেন (৪) হযরত সৈয়্যদা যয়নাব ইনি ৮ম হিজরীতে ইন্তেকাল করেন (৫) হযরত সৈয়্যদা রোকাইয়্যা বিনতে রাসুলিল্লাহ তিনি নবীজির ২য় কন্যা নবুয়তের আগে আবু লাহাবের পুত্র উতবার সাথে তার বিবাহ হয়, সুরা লাহাব নাজিল হলে আবু লাহাবের নির্দেশে উতবা হযরত রোকা্য়্যাকে তালাক দেন এবং পরে তাঁকে হযরত ওসমান (রা) বিয়ে করেন (৬) হযরত সৈয়দা উম্মে কুলসুম বিনতে রাসুলিল্লাহ ৩য় কন্যা, আবু লাহাবের পুত্র উতাইবার সাথে বিয়ে হয়, সুরা লাহাব নাজিল হলে, সে উম্মে কুলসুমকে তালাক দেয় এবং প্রিয় নবীর সাথে চরম বেয়াদবী করে, নবীজির দিকে মুখের থুথু নিক্ষেপ করেছিল, জামা মোবারক ছিড়ে ফেলেছিল। তখন রাসুলুল্লাহ (দ) বদদোয়া করেছিলেন হে আল্লাহ তোমার জাহান্নামের কুকুরসমুহ থেকে একটি কুকুর তার দিকে লেলিয়ে দাও। এর কিছুদিন পর সে যখন সিরিয়ায় ব্যবসার কাজে গেল পতিমধ্যে এক স্থানে রাত্রি যাপন কালে আবু লাহাব কাফেলার সকলকে বলল তাদের সকল মালামাল স্তুপ করতে আর ওপরে তাকে রাখা হল, কিন্তু রাতে একটি হিংস্র প্রাণী এসে লাফ দিয়ে সে স্তুপের উপর উঠে তার বুক ছিড়ে খেয়ে চলে গেল। সুবহানাল্লাহ (৭) হযরত সৈয়্যদা ফাতেমা (রা)। হযরত ফাতেমা রাসুল (দ) এর সদৃশ্য ছিলেন। ফাতেমা আসলে নবীজি স্নেহবশে দাঁড়িয়ে যেতেন, হাতে হাত রেখে কপালে চুমু দিতেন, আর নবীজিকে দেখে ফাতেমা দাঁড়িয়ে যেতেন সামনে অগ্রসর হয়ে হুজুরের হাত ধরতেন এবং স্বীয় আসনে বসাতেন। ২য় হিজরীতে হযরত আলীর সাথে ফাতেমা (রা) এর বিবাহ দেন, তখন ফাতেমার বয়স সাড়ে পনের বছর আর আলী (রা) এর বয়স ২১ বছর ছিল।
ইবনে জওযীর মতে
– ফাতেমা নামের অর্থ হল মুক্ত, পবিত্র, যারা ফাতেমাকে মহব্বত করবে আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত রাখবেন। নবী করিম (দ) কোথাও গেলে সবশেষে ফাতেমার সাথে দেখা করে যেতেন আর ফিরে আসলে সবার আগে ফাতেমার সাথে দেখা করতেন। এবং ইন্তেকালের সময়ও কাছে ডেকে কিছু বললেন তখন ফাতেমা (রা) কাঁদতে লাগলেন আবার যখন কিছু বললেন তখন তিনি হাসতে লাগলেন। তখন প্রশ্ন করা হল এর কারন কি তখন তিনি জবাব দিলেন নবী করিম (দ) বলেন তিনি আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাবেন তা শুনে কাঁদলাম পরক্ষণে তিনি বললেন আমার পর তুমিই আমার সাথে সকলের আগে মিলিত হবে, তা শুনে আমি হাসলাম। (বুখারী ৪৪৩৩)
ঘটনা- নবীকে আবতার নিবংশ বলা ও সুরা কাউসার
যখন নাবী (সাঃ)-এর পুত্রগণ পরপর মারা যেতে লাগল এবং সর্বশেষ পুত্র ইবরাহীম মারা গেল তখন আস বিন ওয়ায়িল বলল : বাদ দাও মুহাম্মাদের কথা, সে এমন লোক যার কোন বংশধর বাকী নেই, সে লেজকাটা নির্বংশ। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।
إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ
যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ। [সুরা কাউসার]
যে আমার নবীকে নিবংশ বলেছে সেই নির্বংশ হয়ে গেছে, আমার নবীর বংশধর এখনও আছে কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।আমার নবীর বংশধর মুলত হযরত ফাতেমা (রা) এর মাধ্যমেই এখনও পর্যন্ত জিন্দা আছে কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
ঠিক তেমনি যারা আমার নবীকে গালমন্দ করছে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে, নবীর শান মান আল্লাহ তায়ালা দিন দিন বাড়াতেই থাকবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন (ওয়ারাফানা লানা লাকা জিকরাক) হে নবী আমি আপনার জিকিরকে বুলন্দ করব। সুবহানাল্লাহ
ঘটনা-ওলীদ ইবনে মুগীরা নবীকে পাগল বলল সুরা ক্বলমে আল্লাহ তার 9টি দোষ বননা করলেন এবং বললেন সে জারজ সন্তান
ওলীদ ইবনে মুগীরা একবার রাসুল (সাঃ) এর সাথে বেয়াদবি করেছিল এবং রাসূল (সাঃ) কে পাগল বলেছিল। --- (নাউযুবিল্লাহ) তার এই বেয়াদবির
কারনে নবীজি খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন। এতে দয়াময় আল্লাহর গজবের সাগর উথলিয়ে উঠলো এবং আল্লাহ 'সূরা আল-ক্বলম' নাযিল করলেন। সূরার প্রথমে তাঁর রাসূল (সাঃ) এর ফযীলত ও গুণাবলী বর্ণনা করে রাসূল (সাঃ) কে শান্তনা দিলেনঃ ''হে আঁমার রাসূল (সাঃ)! আপনার প্রতিপালকের অনুগ্রহে
আপনি পাগল নন। আপনার জন্য রয়েছে সীমাহীন মর্যাদা এবং নিশ্চয় আঁপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।''
অর্থাৎ
হে রাসূল (সাঃ)! সে যা বলতে চায় বলুক।
আমিতো আপনার প্রশংসা করছি। আপনি তার কথায় কান দিবেন না। আপনি (রাসূল) আঁমার (আল্লাহর) কথাই শুনুনঃ-
وَلَا تُطِعْ كُلَّ
حَلَّافٍ مَّهِينٍ
(১) যে অধিক শপথ করে,
(২) যে লাঞ্ছিত,
আপনি
তার আনুগত্য করবেন না।
هَمَّازٍ مَّشَّاء
بِنَمِيمٍ
(৩) যে পশ্চাতে নিন্দা করে (৪) একের কথা অপরের নিকট
লাগিয়ে ফিরে।
مَنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ
مُعْتَدٍ أَثِيمٍ
(৫) যে ভাল কাজে বাধা দেয়, (৬) সে সীমালংঘন করে, (৭) সে পাপিষ্ঠ,
عُتُلٍّ بَعْدَ ذَلِكَ
زَنِيمٍ
(৮) কঠোর স্বভাব,
(৯) তদুপরি জারজ সূরা আল ক্বলম-১০-১৩
১।
সে মিথ্যা শপথ কারী,
২।
মর্যাদাহীন
৩।
নিন্দুক
(গীবতকারী),
৪।
চোগলখোর,
৫।
সৎকাজে বাধা দানকারী,
৬।
জালেম
(সীমালংঘনকারী),
৭।
চরম পাপিষ্ঠ(
ঝগড়াটে),
৮।
পাষান হৃদয়,
৯।
সর্বোপরি জারজ সন্তান।''
সুরা মুদ্দাচ্ছিরে আল্লাহ এই অলিদ বিন মুগিরার ধ্বংসের ব্যপারে বলেন
إِنَّهُ فَكَّرَ وَقَدَّرَ- فَقُتِلَ كَيْفَ قَدَّرَ- ثُمَّ
قُتِلَ كَيْفَ قَدَّرَ
‘সে চিন্তা করল ও মনস্থির করল’। ‘ধ্বংস হৌক
সে কিরূপ মনস্থির করল’? ‘ধ্বংস হৌক সে কিরূপ মনস্থির করল’? (১৮-২০)
অলিদবিন মুগিরা মক্কার সবচেয়ে ধনী ছিল, সে অহংকার করে বলত আমি হলাম (অহিদ ইবনুল অহিদ) অর্থ্যাৎ সারা আরবে আমার পিতার তুলনা কেহ নাই, কিন্তু সে যখনি আবু জেহেলের সাথে পরামশ করার জন্য গেল আবু জেহেলের প্ররোচনায় সে সত্য ধম ও সত্য নবীকে মেনে নিতে পারলনা, বরং সে মনস্থির করল নবীকে যাদুকর বলবে। আর তার সে মনস্থির এর কথাই আল্লাহ সুরা মুদ্দাচ্ছিরে বলেছেন
إِنَّهُ فَكَّرَ وَقَدَّرَ-
فَقُتِلَ كَيْفَ قَدَّرَ- ثُمَّ قُتِلَ كَيْفَ قَدَّرَ- ثُمَّ نَظَرَ- ثُمَّ
عَبَسَ وَبَسَرَ- ثُمَّ أَدْبَرَ وَاسْتَكْبَرَ- فَقَالَ إِنْ هَذَا إِلاَّ سِحْرٌ
يُّؤْثَرُ- إِنْ هَذَا إِلاَّ قَوْلُ الْبَشَرِ-
‘সে চিন্তা করল ও
মনস্থির করল’। ‘ধ্বংস হৌক সে কিরূপ
মনস্থির করল’? ‘ধ্বংস হৌক সে
কিরূপ মনস্থির করল’? ‘অতঃপর সে তাকাল’। ‘অতঃপর ভ্রুকুঞ্চিত করল
ও মুখ বিকৃত করল’। ‘অতঃপর পৃষ্ঠ প্রদর্শন
করল ও অহংকার করল’। ‘তারপর বলল, অর্জিত জাদু বৈ কিছু নয়’। ‘এটা মানুষের উক্তি বৈ
কিছু নয়’ (মুদ্দাছছির
৭৪/১৮-২৫)।
সে নিজেকে নিজে
অহিদ বিন অহিদ বলত কিন্তু দেখা গেল সে একজন না
জায়েজ সন্তান জারজ সন্তান। আর তার ব্যাপারে আল্লাহ ঘোষনা দেন সে যাবে সাকার নামক
জাহান্নামে
سَأُصْلِيْهِ سَقَرَ ‘সত্বর আমি তাকে ‘সাক্বার’ নামক জাহান্নামে প্রবেশ
করাবো’ (মুদ্দাছছির ৭৪/২৬)।
অতএব যারাই নবীর শানে বিয়াদবী করেন, নবীর শানের উপর আঘাত করে কথা বলেন তাদের জন্মেও ত্রুটি থাকতে পারে আর তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ার শাস্তি এবং আখেরাতে জাহান্নাম।
#আবু জেহেল ও তার ৬ সঙ্গী নবীর উপর উটের নাড়িভুড়ি দিল নাউজুবিল্লাহ
বুখারী শরীফের কিতাবুল ওযুর ৩৭ পৃষ্ঠার হাদিস এর সারসংক্ষেপ হল আবু জেহেল ও
তার সংগী ওতবা ইবনে রবিয়া, শায়বা ইবনে রবিয়া, ওলিদ
ইবনে ওতবা, উমাইয়া ইবনে খালফ এবং ওকবা ইবনে আবু মোয়ায়ত নবীজির সিজদারত অবস্থায় উটের নাড়িভুড়ি
চাপিয়ে দিয়েছিল, সেখানে মোট
৭ জন ছিল যারা আল্লাহর নবীর উপর এমন জুলুম করেছিলেন, হাদীসের
রাবি আবদুল্লাহ বিন মাসউদ বলেন এই ৭ জন জালেম বদরের যুদ্দে নিহত হয় এবং এদের লাশ
বদরের কুয়ায় পড়েছিল।
এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যদি আপনি কারো উপর জুলুম করেন অন্যায় ভাবে কাউকে বিরক্ত
করেন তাহলে সাবধান অদুর ভবিষ্যতে আপনার সর্বনাশ হবে।
সে জন্য নবী করিম (দ)
এরশাদ করেন (ওয়াত্তাকি দাওয়াতাল মজলুম, ফাইন্নাহু লাইছা বাইনাহা
ওয়া বাইনাল্লাহি হিজাবুন) তোমরা মজলুমের বদদোয়াকে ভয় কর।’ কারন মজলুম ও আল্লাহর মাঝে কোন পদা থাকেনা
বুখারি১৩৯৫, ১৪৫৮,
১৪৯৬, ২৪৪৮, ৪৩৪৭,
৭৩৭১, ৭৩৭২, মুসলিম ১৯,
তিরমিযি ৩১১০, ৬২৫, ২০১৪,
নাসায়ি ২৪৩৫, আবু দাউদ ১৫৮৪, ইবন মাজাহ ১৭৮৩, আহমদ ২০৭২, দারেমি
১৬১৪
যারা নবীর সাথে দুষমনি করেছেন তারা দুনিয়াতেও লাঞ্চিত হয়েছেন আখেরাতেও তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি
যারা নবীর বন্ধু তাদের একজন আবু হুরায়রার প্রতি নবীর দয়া ও দোয়া এবং কেয়ামত পর্যন্ত মানুষের ভালোবাসা আবু হুরায়রার প্রতি
আবু জেহেল আবু লাহাব উতবা শায়বা এরা নবীর সাথে দুষমনি করে সারা বিশ্বের মানুষের ঘৃণার পাত্র হয়েছেন, সে জন্য এখন আপনি আবু লাহাব নামের উতবা শায়বা নামের কোন লোককে খুজে পাবেন না। কিন্তু যারা নবীকে ভালোবেসেছেন তাদের নামের অনেক মানুষ আপনি খুজে পাবেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন হযরত আবু হুরায়রা, কিয়ামত পযন্ত সকল মানুষ তাকে ভালোবাসবে কারন তাকে সকল মুসলমান যেন ভালোবাসে সেজন্য নবীজি তার জন্য দোয়া করেছেন
আবু হুরায়রা নামকরণ:
আবু হুরায়রার নাম হল আবদুর রহমান, কিন্তু তিনি আবু হরায়রা নামে বেশী পরিচিত, আবু
হুরায়রা নামটিতে একটি মজার কাহিনী রয়েছে। একদিন হযরত আবু হুরায়রা (রা.) জামার
আস্তিনের নিচে একটি বিড়াল ছানা নিয়ে রাসুল (সাঃ) এর দরবারে উপস্থিত হন। বিড়ালটি
হঠাৎ সকলের সামনে বেরিয়ে পড়ল। এ অবস্থা দেখে রাসুল (সাঃ) তাঁকে রসিকতা করে- ‘হে বিড়ালের
পিতা’! বলে
সম্বোধন করলেন। এরপর থেকে তিনি আবু হুরায়রা নামে খ্যাতি লাভ করেন।
আবু হুরায়ারার দেশের জন্য নবীরিজ দোয়া
সহি বুখারী শরীরে ৭০৯৪ নং হাদিসের বর্ণনা, ইবনু ’উমার (রাঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনা
করছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি (দোয়া করে) বললেনঃ اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي شَأْمِنَا اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي يَمَنِنَا হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য
আমাদের সিরিয়ায় বারকাত দাও। হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য আমাদের ইয়ামানে বরকত দাও।
লোকেরা বলল, আমাদের নজদের জন্যও দোয়া করুন। নবী করিম (দ)
বললেন, اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي شَأْمِنَا اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي يَمَنِنَا হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য
আমাদের সিরিয়ায় বরকত দাও। হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য বরকত দাও আমাদের ইয়ামানে বরকত
দাও। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের নজদের জন্যও দোয়া
করুন। (বর্ণনাকারী বলেন) তৃতীয়বারে নবীজি ফরমালেন সেখানে তো প্রচুর পরিমাণে
ভূমিকম্প হবে আর সেখানে ফিতনা হবে। আর সেখান হতে শয়তানের শিং উদিত হবে।
আবু হুরায়রা (রা) ইয়েমেন
দেশের লোক ছিলেন, আমাদের নবীজি ইয়েমেনের জন্য দোয়া করেছেন ফলে
আবু হুরায়রায় (রা) ইয়েমেনবাসী হিসেবে সে দোয়ার অর্ন্তভুক্ত হয়েছেন।
এবার আসুন আবু হুরায়রার
খাদ্যের জন্য প্রিয় নবীর দোয়া-
তিরমিজি শরীফের ৩৮৩৯ নং হাদিস আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি কয়েকটি খেজুরসহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এ খেজুরগুলোতে বারাকাত হওয়ার জন্য আল্লাহ তা’আলার নিকট দুআ করুন। তিনি খেজুরগুলো জড়ো করলেন, তারপর আমার জন্য খেজুরগুলোয় বারাকাত হওয়ার দু’আ করলেন, তারপর আমাকে বললেনঃ " خُذْهُنَّ وَاجْعَلْهُنَّ فِي مِزْوَدِكَ هَذَا أَوْ فِي هَذَا الْمِزْوَدِ كُلَّمَا أَرَدْتَ أَنْ تَأْخُذَ مِنْهُ شَيْئًا فَأَدْخِلْ فِيهِ يَدَكَ فَخُذْهُ وَلاَ تَنْثُرْهُ نَثْرًا " . এগুলো নাও এবং তোমার এই থলেতে রাখ। আর যখনই তা হতে তুমি কিছু খেজুর নিতে চাও, সে সময় থলের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে বের করে নিবে এবং কখনও থলেটি ঝেড়ে ফেল না। এরপর আমি উক্ত থলে হতে এত এত ওয়াসাক (এক ওয়াসাক সমান ৫ মনের সমান) খেজুর আল্লাহ তা’আলার রাস্তায় দান করেছি। আর এ হতে আমরা নিজেরাও খেতাম এবং অন্যকেও খাওয়াতাম। থলেটি আমার কোমর হতে কখনো আলাদা হয়নি। অবশেষে উসমান (রাযিঃ) যে দিন শাহাদাত বরণ করেন সেদিন আমার (কোমর) হতে থলেটি পড়ে যায়।
ছোট্ট একটা খেজুরের থলে। সেখান থেকে আবু হুরায়রা রা. নেন আর খান; এক মুঠ, দুই মুঠ, দশ মুঠ। এক কেজি, দুই কেজি, দশ কেজি; ৫ মন, ১০ মন, ২০মন ছোট্ট সেই থলে থেকে আবু হুরায়রা রা. নিতেই থাকেন; নিজে খান, অন্যদের খাওয়ান- তবু ফুরোয় না থলের খেজুর। এই বরকতময় থলেটি সেদিন হারিয়ে গেল যেদিন হযরত উসমান (রা) শহিদ হলেন, এখানে একটা বড় ধরনের বার্তা আমাদের জন্য রয়েছে তা হল যখন মুসলমান মুসলমানকে হত্যা করে মুসলমান মুসলমান রক্তপাত করে তখন আল্লাহ তায়ালার রহমত ও বরকত উঠে যায়।
তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’আর কারণে আমি খুশী মনে বেরিয়ে এলাম। যখন আমি ঘরে পৌছলাম তখন তার দরজা বন্ধ দেখতে পেলাম। আমার মা আমার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তারপর তিনি বললেন, আবূ হুরাইরাহ্! একটু দাঁড়াও (থামো)। তখন আমি পানির কলকল শব্দ শুনছিলাম। তিনি বলেন, এরপর তিনি (আমার মা) গোসল করলেন এবং শরীরে চাদর দিলেন। আর তাড়াতাড়ি করে ওড়না জড়িয়ে নিলেন, তারপর বাড়ীর দরজা খুলে দিলেন। অতঃপর বললেন, “হে আবূ হুরাইরাহ্! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রসূল।”
তিনি বলেন, তখন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমাতে উপস্থিত হলাম। তারপর তার নিকট গেলাম এবং আমি তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে কাঁদছিলাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! সুখবর শুনুন। আল্লাহ আপনার দু’আ কবুল করেছেন এবং আবূ হুরাইরার মাকে হিদায়াতপ্রাপ্ত করেছেন। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন ও তার প্রশংসা করলেন। আর বললেন, উত্তম’। আবু হুরায়রা বলেন, তারপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আল্লাহর নিকট দুআ করুন, তিনি যেন আমাকে এবং আমার মাকে মু’মিন বান্দাদের নিকট প্রিয়পাত্র করেন এবং তাদের ভালবাসা আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দেন। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ "হে আল্লাহ! তোমার এ বান্দা আবূ হুরাইরাকে এবং তার মাকে মু’মিন বান্দাদের নিকট প্রিয়পাত্র করে দাও এবং তাদের নিকটও মুমিন বান্দাদের প্রিয়পাত্র করে দাও।" তারপর এমন কোন মু’মিন বান্দা পয়দা হয়নি, যে আমার কথা শুনেছে কিংবা আমাকে দেখেছে অথচ আমাকে ভালবাসেনি।
আবু হুরায়রার এলেমের জন্য নবীজির দোয়া:
আবু হুরায়রা (রা) এর বর্ননাকৃত হাদিসের সংখ্যা ৫৩৭৪টি, তিনি মাত্র ৩ বছর নবী করিম (দ) এর সাথে ছিলেন, তার এত অধিক পরিমাণ হাদিস বণনা দেখে খোদ সাহাবীরাও অবাক, কারন তাঁর মেধাশক্তির জন্যও নবী করিম (দ) দোয়া করেছেন যেমন
মুসলিম শরিফের ২৪৯২ নং হাদিস আ’রাজ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা বলছ যে, আবূ হুরাইরাহ্ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অধিক হাদীস রিওয়ায়াত করছে। আর আল্লাহই হিসাব গ্রহণকারী। আমি ছিলাম একজন নিরীহ লোক। আমি সর্বদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেবায় থাকতাম (খেয়ে না খেয়ে তার সাহচর্যে থাকতাম)। তখন মুহাজিরগণ বাজারে ব্যবসায়-বাণিজ্যে মনোনিবেশ করতেন এবং আনসারগণ তাদের ধনসম্পদের সংরক্ষণ ও হিফাযাতে ব্যতিব্যস্ত থাকতেন। একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে লোক তার বস্ত্রের আঁচল বিছিয়ে দিবে সে আমার নিকট হতে যা কিছু শুনবে তা ভুলবে না। আমি আমার কাপড়ের আঁচল বিছিয়ে দিলাম এবং তিনি হাদীস রিওয়ায়াত করলেন। তারপর আমি সে বস্ত্রটা আমার বুকের সাথে মিলিয়ে নিলাম। তখন হতে আমি তার কাছ থেকে যা কিছু শুনেছি তার কিছুই ভুলে যাইনি।
বুখারী শরীফের ১১৯ নং হাদিসে আছে আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললামঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার নিকট হতে অনেক হাদীস শুনি কিন্তু ভুলে যাই।’ তিনি বললেনঃ তোমার চাদর মেলে ধর। আমি তা মেলে ধরলাম। তিনি দু’হাত খাবল করে তাতে কিছু ঢেলে দেয়ার মত করে বললেনঃ এটা তোমার বুকের সাথে লাগাও। আমি তা বুকের সাথে লাগালাম। অতঃপর আমি আর কিছুই ভুলে যাইনি
সুতরাং আবু হুরায়রার শহরের জন্যও নবীজীর (দ) বরকতের দোয়া আছে, আবু হুরায়রার পরিবারের জন্যও নবীজির (দ) বরকতের দোয়া আছে, আবু হুরায়রার খাদ্যের মধ্যেও নবীজি (দ) এর বরকতের দোয়া আছে, আবু হুরায়রার জ্ঞানের মধ্যেও নবীজি (দ) এর বরকতের দোয়া আছে। আবু হুরায়রা ও তার মাকে মহব্বত করার জন্যও নবীজি (দ) এর দোয়া আছে,
অতএব তিনি তার জীবন তার হায়াত তার রিজিক তার জ্ঞান সবই বরকতময় মুলত প্রিয় নবীজি (দ) এর দোয়ার কারনে। আমাদেরও কিন্তু নবীজির দোয়া নবীজির ভালোবাসা প্রাপ্তির সুযোগ আছে তা হল আবু হুরায়রাকে ভালবাসার মাধ্যমে, সাহাবীদের ভালবাসার মাধ্যমে, নবীজির হাদীস মুখস্থ করার মাধ্যমে, নবীজির শরীয়তকে ভালোবাসার মাধ্যমে, নবীজির যে সব ওয়ারিশ তথা হক্কানি আলেম উলামা আছেন তাদেরকে অন্তর থেকে ভালোবাসার মাধ্যমে, তাদের ওয়াজ নিসহত শুনে সে মোতাবেক আমল করার মাধ্যমে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও সে রকম বরকত দিয়ে দিবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন
কোন মন্তব্য নেই