হাশরের মাঠ কেমন হবে? কিয়ামতের দিন কি ঘটবে?
সফর-১, ১৪৪৫ হিজরী, ১৮ আগষ্ট ২০২৩ ইং
হাশরের কঠিন ময়দানে কার অবস্থা কেমন হবে?
الْقَارِعَةُ
মহাপ্রলয়, [সুরা
ক্বারিয়া - ১০১:১]
مَا الْقَارِعَةُ
মহাপ্রলয় কি? [সুরা ক্বারিয়া - ১০১:২]
وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْقَارِعَةُ
মহাপ্রলয় সম্পর্কে আপনি কি জানেন ? [সুরা
ক্বারিয়া - ১০১:৩]
يَوْمَ يَكُونُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ
الْمَبْثُوثِ
যেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতংগের মত [সুরা
ক্বারিয়া - ১০১:৪]
وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ
الْمَنفُوشِ
এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙ্গীন পশমের মত।
[সুরা ক্বারিয়া - ১০১:৫]
শিঙ্গায় ফুৎকার: ইসরাফিল ফেরেশতা মুখে সিঙ্গা নিয়ে অপেক্ষা করছেন কখন আল্লাহ তায়ালা হকুম দিবেন। যখনই আল্লাহ তায়ালা হকুম দিবেন তখনই তিনি শিঙ্গায় ফুকঁ দিবেন
শিঙ্গায় কয়টি ফুক দিবেন?
ইসরাফিল
(আ)
সিঙ্গায় ২টি ফুকঁ দিবেন, প্রথম ফুকঁ দেয়ার সাথে সাথে যারা জীবিত সকলে বেহুশ হয়ে যাবে। আবার ২য় ফুকঁ দিলে বেহুশ হওয়া ও মৃত প্রাণী সকলেই পুনরায় জীবিত হয়ে যাবেন। সকলে অস্থির হয়ে যাবেন।
সুরা
যুমারে ২ বার ফুৎকারের ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي
السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاء اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ
أُخْرَى فَإِذَا هُم قِيَامٌ يَنظُرُونَ
শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, ফলে আসমান ও
যমীনে যারা আছে সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন। অতঃপর আবার
শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা
দন্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে। [সুরা যুমার - ৩৯:৬৮]
২টি ফুৎকারের মাঝে কতদিন
ব্যবধান হবে?
আবু হুরায়রা বলেন
রাসুলুল্লাহ (দ) দুই ফুৎকারের মাঝে ব্যবধানের ব্যপারে ৪০
সংখ্যার ইঙ্গিত দেন। তবে আবু হুরায়রা বলেন
বলেন এটা কি ৪০ দিন, ৪০ মাস নাকি ৪০ বছর বুঝেয়েছেন
তা আমি জানি না।
সিঙ্গায় ফুৎকারের পর আল্লাহর
ঘোষনা:
সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার পর যখন
সমস্ত সৃষ্টিজীব ধ্বংস হয়ে যাবে তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন (লিমানিল মুলকুলি এয়াউমু লিল্লাহিল ওয়াহিদিল
কাহহার) আজ রাজত্ব কার যখন কেউ উত্তর দেয়ার থাকবে না, তখন আল্লাহ পাক নিজেই উত্তরে বলবেন আজ রাজত্ব
একমাত্র পরাক্রমশালী আল্লাহর।
সকল সৃষ্টিকুলে কি অবস্থা হবে?
শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সাথে
সাথে শুধু জীব জগত বেহুশ হবে মারা যাবে তাই নয়, বরং
সমস্ত নিয়ম কানুন ওলট পালন হয়ে যাবে। আকাশ বিদিন হবে। নক্ষত্রসমুহ খসে পড়বে, চন্দ্র সুয আলোহীন হয়ে যাবে। পুরা পৃথিবী সমতল
ভুমি হয়ে যাবে। পাহাড় সমুহ তুলার মত উড়তে থাকবে।
আল্লাহ সুরা কারিয়ার মধ্যে তা
কিছুটা তুলে ধরেছেন যেমন
الْقَارِعَةُ
মহাপ্রলয়, [সুরা
ক্বারিয়া - ১০১:১]
مَا الْقَارِعَةُ
মহাপ্রলয় কি? [সুরা ক্বারিয়া - ১০১:২]
وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْقَارِعَةُ
মহাপ্রলয় সম্পর্কে আপনি কি জানেন ? [সুরা
ক্বারিয়া - ১০১:৩]
يَوْمَ يَكُونُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ
الْمَبْثُوثِ
যেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতংগের মত [সুরা
ক্বারিয়া - ১০১:৪]
وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ
الْمَنفُوشِ
এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙ্গীন পশমের মত।
[সুরা ক্বারিয়া - ১০১:৫]
চন্দ্র সুয নক্ষত্র ও আকাশের অবস্থা
সুরা তাকবীর ১-২ নং আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেন
إِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ
যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে, [সুরা
তাকভীর - ৮১:১]
وَإِذَا النُّجُومُ انكَدَرَتْ
যখন নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে, [সুরা
তাকভীর - ৮১:
সুরা ইনফীতারে এরশাদ করেন
إِذَا السَّمَاء انفَطَرَتْ
যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে, [সুরা
ইনফিতার - ৮২:১]
وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انتَثَرَتْ
যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে, [সুরা
ইনফিতার - ৮২:২]
চাঁদ সূর্যকে জাহান্নামে ফেলা হবে?
বায়হাকি (রহ) তার
কিতাবুল বায়াছ ওয়ান নুশুর গ্রন্থে হযরত হাসান বসরী থেকে বণনা করেন যে আবু হুরায়রা
রাসুলুল্লাহ (দ) থেকে বণনা করেন, চাঁদ
ও সুযকে আলোহীন করে দ্বিখন্ডিত করে কিয়ামতের দিন জাহান্নামে ফেলে দেয়া হবে।
কিয়ামতের দিন কবর থেকে কে
প্রথমে উঠবেন?
হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা) থেকে
বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (দ) বলেন
সর্বপ্রথম আমার কবর উম্মোচন করা হবে আমি আবু বকর ওমরকে নিয়ে জান্নাতুল বাকিতে যাব তারাও কবর থেকে বের
হয়ে আমার সাথে যোগ দিবে এবং আমরা সকলে হাশরের মাঠে একত্রিত হব (তিরমিজি)
মাটিতে মিশে যাওয়া শরীর কিভাবে পুনরায় গঠন হবে?
২য় ফুৎকারের পর শিশিরের ন্যায় বৃষ্টি হবে আর সে
বৃষ্টির পানিতে কবরের মধ্যে যত লোক আছে সকলের দেহ পুনরায় গঠিত হবে। আর সকল মানুষ
এমনভাবে উঠবে যেভাবে শাক সবজি জমিন থেকে উদহত হয়। রাসুলুল্লাহ (দ) এ
কথাও বলেছেন যে, মানুষের সমস্ত দেহ মাটির
সাথে মিশে যায় তবে তার ১টি হাড়ঁ মিশে না আর কিয়ামতের দিন সে হাঁড় থেকে পুনরায় দেহ
সৃষ্টি হবে। সে হাঁড়টি হল মেরুদন্ড এর হাঁড়।
কবর থেকে সকলে কি উলঙ্গ উঠবেন?
হযরত আয়াশা (রা) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (দ) কে
বলতে শুনেছি কিয়ামতের দিন মানুষ খালি পায়ে, উলঙ্গ
দেহে খৎনাবিহিন অবস্থায় কবর থেকে উঠবে এবং তাদেরকে একত্রিত করা হবে। আমি জিজ্ঞেস
করলাম হে আল্লাহর রাসুল পুরুষ ওমহিলা সকলেই কি উলঙ্গ থাকবে এবং একে অপরকে দেখবে? যদি এভাবেই হয় তাহলে তা খুবই লজ্জার ব্যপার।
তখন উত্তরে রাসুলুল্লাহ (দ) বললেন, হে
আয়শা কিয়ামতের দিন এমন কঠিন অবস্থা হবে যে মানুষ পেরেশান ও অস্থির অবস্থায় থাকবে।
কেউ কারো প্রতি দৃষ্টি করার চিন্তাই আসবেনা। (বুখারি
ও মুসলিম)
প্রথম কাকে কাপড় পড়ানো হবে কেন?
কিয়ামতের দিন সবপ্রথম হযরত
ইবরাহিম (আ) কে কাপড় পরিধান করানো হবে, কারন উনাকে সবপ্রথম নমরুদ ও তার লোকেরা উলঙ্গ
করে আগুনে নিক্ষেপ করেছিল। তাছাড়া তিনিই সবপ্রথম দরিদ্র লোকদেরকে কাপড় পরিয়েছিলেন।
এর পর আমাদের প্রিয় নবীকে
কাপড় পরিধান করানো হবে।
হাশরের মাঠে মানুষ ৩ অবস্থায়
সমবেত হবেন
আবু হরায়রা (রা) হতে
বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (দ) বলেন
কিয়ামতের দিন মানুষ ৩ শ্রেণীতে হাশর ময়দানে সমবেত হবে
১) পায়ে হেটে
২) যানবাহনে আরোহন করে
৩) চেহারার উপর ভর করে
প্রশ্ন করা হল চেহেরার উপর
ভর করে কিভাবে চলবে? রাসুলুল্লাহ (দ) বলেন
যে মহান সত্তা পায়ের দ্বারা চালাতে সক্ষম তিনি চেহেরার দ্বারাও চালাতে সক্ষম। (তিরমিজি)
অবরাধীরা সেদিন দুনিয়া ও কবরে
অবস্থানের হিসাব করবে
অপরাধীরা সেদিন কানে কানে এক
অপরকে জিজ্ঞাসা করবে পৃতিবীতে কতদিন ছিলে? কেউ
বলবে ১০ দিন, আর একজন বলবে মাত্র ১দিন আর
যে ১ দিন বলবে আল্লাহ তাকে অপেক্ষাকৃত বুদ্ধিমান বলেছেন, মুলত কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখে তারা দুনিয়াতে যে
৭০ বছর ১০০ বছর বেঁচেছিল কবরে যে হাজার বছর ছিল তা তাদের কাছে খুবই নগন্য মনে হবে।
তাই আল্লাহ বলেন
كَأَنَّهُمْ يَوْمَ
يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوا إِلَّا عَشِيَّةً أَوْ ضُحَاهَا
যেদিন তারা একে দেখবে, সেদিন মনে হবে যেন তারা দুনিয়াতে মাত্র এক
সন্ধ্যা অথবা এক সকাল অবস্থান করেছে। [সুরা নাজিয়াত - ৭৯:৪৬]
সেদিন তারা আফসুস করে বলবে
হায় যদি দুনিয়াতে আরো কছিুদিন থাকতে পারতাম তাহলে আখেরাতে মুক্তির জন্য কিছু
প্রস্তুতি নিতে পারতাম।
কিয়ামতের দিনের ভয়ানক চিত্র
#সেদিন সকলে উঠবে কবর থেকে ভীত সন্ত্রস্থ
অবস্থায়
#ভয়ে কেহ চোখের পলকও ফেলতে পারবেনা
#সকলে ভয়ে আতংকে অস্থির হয়ে পরবে
#মা তার দুগ্ধপোষ্য শিশু থাকলে তাকে ভুলে যাবে
# গর্ভবতী মহিলা থাকলে তাদের গর্ভপাত হয়ে যাবে
#মানুষের অবস্থা দেখে মনে হবে সে মাতাল যেমন
সুরা হজ্বে আল্লাহ এরশাদ করেন-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ
زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ
হে লোক সকল! তোমাদের
পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার। [সুরা
হাজ্জ্ব - ২২:১]
يَوْمَ تَرَوْنَهَا
تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ
حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُم بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ
اللَّهِ شَدِيدٌ
যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ
করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্যধাত্রী তার দুধের শিশুকে বিস্মৃত হবে এবং প্রত্যেক
গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল; অথচ
তারা মাতাল নয় বস্তুতঃ আল্লাহর আযাব সুকঠিন। [সুরা হাজ্জ্ব - ২২:২]
হাশরের ময়দানের ঘামের বিপদ কেমন হবে?
হযরত মিকদাদ (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (দ) বলেন কিয়ামতের দিন সুয মানুষের এক মাইল
ব্যবধানে থাকবে। আর মানুষ তার পাপের পরিমান অনুযায়ী ঘামের মধ্যে ডুবে যাবে কারো পা
পযন্ত কারো কোমর পর্যন্ত, কারো ঘাম তার নাক মুখ পযন্ত
হবে।
অন্য হাদিসে আছে হাশরের
ময়দানে মানুষ ঘামের যন্ত্রনায় অসহ্য হয়ে বলবে, হে
প্রতিপালক আমাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর তা এ ঘামের শাস্তি থেকে ভালো। অথচ
জাহান্নামের কঠিন শাস্তির কথা জেনেও অসহ্য হয়ে এ কথা বলবে। নাউজুবিল্লাহ
হাশর ময়দানে বিভিন্ন আযাব
১) ভিখারির আযাব: যারা
দুনিয়াতে ভিক্ষা করে হাশরের মাঠে তাদের মুখে একটুও মাংস থাকবেনা (বুখারী মুসলিম
২) স্ত্রীর প্রতি অবিচারকারির পাঁজর ভাঙ্গা হবে (মিশকাত)
৩)কুরান পড়ে ভুলে যাওয়া ব্যক্তির কুষ্ট রোগ ও
দাঁত থাকবেনা
৪) যারা রীতিমত নামাজ পড়েনা তাদের হাশর হবে কারুন, ফেরাউন, হামান
ও উবাই ইবনে খালফের সাথে (আহমদ দারেমি)
৫) যে দুনিয়াতে কোন মুসলমানকে হত্যা করার ব্যপারে
সামান্যতমও সাহায্য করবে কিয়ামতের তার কপালে লিখা থাকবে (আইছুন মিন রাহমাতিল্লাহ)
আল্লাহর
রহমত থেকে বঞ্চিত (ইবনে মাজা)
৬) ওয়াদা ভঙ্গকারী তারা চেহেরা দিয়ে হাটবে আর তার মলদারে
পতাকা থাকবে, যে যত বড় ওয়াদা ভঙ্গকারী হবে
তার পতাকা তত বড় হবে।
৭) যে নেতা মাত্র ১০ জনের নেতা সে যদি তার
অধিনস্থদের মধ্যে ইনসাফ না করে তাহলে কিয়ামতের দিন তার হাত বাঁধা অবস্থায় তাকে
তোলা হবে। (দারেমী)
৮) যাকাত না দিলে তাদের ধন সম্পদ সাপ হবে আর সে
সাপ তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে সে তার দু চোয়ালে কামড়াতে থাকবে (সুরা আল ইমরান)
৯) সব সময় খায়- ঢেকুর
তুলো- নবী করিম (দ) বলেন
এক ব্যক্তি ঢেকুর দিল। নবীজি বললেন তোমার ঢেকুর কমাও কেননা কিয়ামতের দিন সবচেয়ে ঐ
ব্যক্তি বেশী সময় ক্ষুদাত থাকবে যে ব্যক্তি দুনিয়াতে বেশী সময় পেট ভরে রাখে।
১০) চোগলখোর- এর
জিহ্বা কিয়ামতের দিন আগুনের তৈরী হবে (মিশকাত)
১১) মিথ্যা স্বপ্ন বনাকারী- তাকে ২টি যবের মধ্যে গিড়া দিতে বলা হবে, যখন
পারবেনা তখন তাকে শাস্তি দেয়া হবে।
১২) যারা র্মুতি/ছবি তৈরী করে প্রাণীর ছবি আঁকে
কিয়ামতের দিন তাতে রুহ দিতে বলা হবে যখন পারবেনা তখনতাকে শাস্তি দেয়া হবে (মিশকাত)
১৩) জমি দখলকারীর ৭ তবক জমি তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া
হবে (মিশকাত)
১৪) ধর্মীয় কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সে সম্পকে তার
জানা থাকা সত্বেও সে যদি তা গোপন রাখে তাকে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেয়া হবে কিয়ামতের
দিন (তিরমিজি)
হাশরের ৪ প্রকার হিশাব গ্রহণ
১) বিনা হিসাবে জান্নাত
২) বিনা হিসাবে জাহান্নাম
৩) সহজ হিসাবে জান্নাত
৪) কঠিন হিসাবে জাহান্নাম
১) বিনা হিসাবে জান্নাত- মিশকাত শরীফের হাদিস হযরত আবু উমামা (রা) থেকে
বণিত, রাসুলুল্লাহ (দ) বলেন
আমার প্রতিপালক আমার কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তোমার
উম্মতের মধ্যে সত্তর হাজার উম্মত বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে- প্রতি হাজারের সাথে আরো ৭০ হাজার থাকবে। তাহলে মোট হবে ৪৯৭০০০ (চার লক্ষ সাতানব্বই হাজার) এছাড়া আল্লাহর কুদরতি ৩ মুষ্টি লোক বিনা হিসাবে
জান্নাতে দিবেন।
আল্লাহ আমাদেরকে বিনা হিসাবে
জান্নাত দান করুন আমিন।
তাহাজ্জুদ ও রাতে এবাদতকারী: শোয়াবুল ঈমানের হাদিস হাশরের মাঠে একজন
ঘোষনাকারী বলবে সেসব লোকেরা কোথায় যাদের পিঠ বিছানা থেকে পৃথক থাকত? এ ঘোষনা শুনে খুব অল্প সংখ্যক লোক দাঁড়াবে, তাদেরকে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করানো
হবে।
২) যাদেরকে বিনা হিসাবে জাহান্নামে দিবে তারা হল
যারা কাফের, মুরতাদ, মুশরিক, যাদের
আমলনামায় কোন নেকি থাকবেনা।
৩) যাদের হিসাব সহজ হবে, আমাদের নবীজি সহজ হিসাব এর জন্য দোয়া করতেন (আল্লাহুম্মা হাসিবনি হিসাবান এয়াসিরা) হে আল্লাহ আমার হিসাব অতি সহজ করুন।
আয়শা (রা) প্রশ্ন
করেন এয়া রাসুলাল্লাহ সহজ হিসাব কি? তিনি
বলেন আমালনামা শুধু একবার দেখে যাচাই বাছাই না করে ক্ষমা করে দেয়া।
#বুখারী ও মুসলিমের হাদিস- অতি গোপনে বান্দাকে আল্লাহ প্রশ্ন করবেন তুমিকি
এই এই গুনাহ করেছ? তখন বান্দা তা স্বীকার করবে
আর মনে মনে ভাববে হায় আমি ধ্বংস হয়ে গেছি, কিন্তু
আল্লাহ সে মুমিনকে বলবে আমি দুনিয়াতেও তোমার গুনাহসমুহ গোপন রেখেছি আজও গোপন রাখব
এবং তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। অতপর নেকির আমলনামা তাকে দেয়া হবে।
#৩টি দফতর: নেক/গুনাহ/ নেয়ামত
তিরমিজি শরীফের হাদিস আনাস (রা) হতে
বর্ণিত, কিয়ামতে প্রতিটি মানুষের ৩টি
দফতর থাকবে, ১টি নেকীর, ১টি গুনাহের, ১টি
নেয়ামতের। ছোট নিয়ামতটিকে আল্লাহ বলবেন তোমার মূল্য এই বান্দার নেক আমল থেকে নিয়ে
নাও। তখন ছোট নেয়ামতটি তার মূল্য হিসেবে বান্দার সব নেক আমল নিয়ে নিবে এর পরে বলবে
হে আল্লাহ আপনার ইজ্জতের কসম এখনো আমি আমার পুরোপুরি মূল্য নিতে পারিনি। এরপর থেকে
যাবে গুনাহের দপ্তর। আর সেসব নেয়ামতের মূল্য এখনো আদায় হয়নি। নেক আমল তো সব ছোট
নেয়ামতের মূল্যের বিনিময়েই শেষ হয়েছে। এখন আল্লাহ যদি কোন বান্দাকে দয়া করে
জান্নাত দিতে চান তখন সে বান্দাকে বলবেন, হে
আমার বান্দা আমি তোমার নেকি বৃদ্ধি করে দিলাম এবং তোমার গুনাহসমুহ মাফ করে দিলাম।
(আল্লাহুম্মা হাসিবনি হিসাবান এয়াসিরা) আল্লাহ আমাদের হিসাব সহজ করুন
আল্লাহ আমাদেরকে ৩য় প্রকারের
দলের অন্তর্ভূক্ত করুন আমিন
৪) যাদের হিসাব কঠিন হবে- যাদেরকে প্রশ্ন করা হলে তারা বলবে আমি এসব
গুনাহ করি নাই, তখন তার বিরুদ্ধে সে যে
স্থানে অপরাধ করেছিল সে স্থান,
তার
সাথে থাকা ফেরেশতা কেরামান কাতিবিন, তার
হাত, তার পা, তার বিরুদ্ধে সাক্ষি দিবে। এরপর সে বাটপারি করে
বলবে হে আল্লাহ আপনি যে প্রমাণ করেছেন তাও ঠিক আর আমি যে বলেছি তাও ঠিক? কারন এসব গুনাহ আমি নিজে করিনি বরং আমার গুরু, আমার পন্ডিত, আমার
পুরোহীত, আমার নেতা আমাকে বলেছে তাই
করেছি। সুতরাং তাদেরকেও আমার আগে জাহান্নামে নিক্ষেপ করুন
তখন জালেমরা কাফের মুশরিকরা
একে অপরকে দোষারোপ করবে সে চিত্র আল্লাহ সুরা সাবা ৩১-৩৩ নং আয়াতে ফুটে উঠেছে
সবশেষে আল্লাহ ফেরেশতা দেরকে
নির্দেশ দিবেন
خُذُوهُ
فَغُلُّوهُ
ফেরেশতাদেরকে বলা হবেঃ ধর একে গলায় বেড়ি
পড়িয়ে দাও, [সুরা হাক্বকাহ - ৬৯:৩০]
ثُمَّ
الْجَحِيمَ صَلُّوهُ
অতঃপর নিক্ষেপ কর
জাহান্নামে। [সুরা হাক্বকাহ - ৬৯:৩১]
ثُمَّ
فِي سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُونَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوهُ
অতঃপর তাকে শৃঙ্খলিত কর সত্তর গজ দীর্ঘ এক
শিকলে। [সুরা হাক্বকাহ - ৬৯:৩২]
অতএব আল্লাহ তায়ালার কাছে
আমাদের দোয়া করা উচিত আল্লাহ যেন আমাদেরকে বিনা হিসাবে জান্নাত দান করেন অথবা
আমাদের হিসাব যেন সহজ করেন।
কোন মন্তব্য নেই