মানব সেবা পরোপকার করার ফজিলত
সফর-২য় জুমা
মানব সেবা পরোপকার করার ফজিলত
وَأَمَّا مَا يَنفَعُ
النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الأَرْضِ
যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে অবশিষ্ট থাকে। [সুরা রা’দ - ১৩:১৭]
ভুমিকা: নবী করিম (দ) দুনিয়ার জমীনে তশরিফ এনে এমন পৃথিবী আমাদেরকে উপহার দিয়ে গেছেন, যাতে ছিল নিরাপত্তা, যাতে ছিল কল্যাণ, যাতে ছিল একের প্রতি অপরের ভালোবাসা, সম্মান, এমন দুনিয়া আল্লাহ নবী আমাদেরকে দিয়ে গেছেন একজন যুবতী নারী একাকী মক্কা থেকে মদিনায় সফর করতে পারত, এমন নিরাপদ ছিল তার ছিলনা ইজ্জতের খতরা, না ছিল জান মালের খতরা।
দ্বীন হল কল্যাণ কামনা
নবী করিম (দ) এরশাদ করেন (আদ দিনু নাসিহা)
দীন হল পরের কল্যাণ কামনা করা। যারা দ্বীনদার তাদের মনে ঘৃণা, হিংসা, পরের ক্ষতি করার চিন্তা থাকেনা। যদি আপনি কারো মধ্যে দ্বীনদারি দেখেন তাহলে আপনি নিশ্চিত হয়ে যান সে কারো ক্ষতি করবে না। আর যদি আপনি কারো মধ্যে ক্ষতি করার প্রবনাতা দেখেন, কারো প্রতি হিংসা বিদ্বেষ দেখেন, কারো প্রতি প্রতিশোধ
প্রবনতা
দেখেন তাহলে আপনি নিশ্চিত হয়ে যেতে পারেন সে দ্বীনদার নয়।
# ক্ষতিকারক লোক কখনো দ্বীনদার হতে পারেনা। কারন দ্বীন আর ক্ষতি এক হতে পারেনা আবার দ্বীনদার ব্যক্তি কখনো মানুষের ক্ষতি করেনা।
# দ্বীনদার বন্ধুর খায়ের খা হয়
# শত্রুরও খায়ের খা হয়
# পরিচিত লোকেরও খায়ের খা
# অপরিচিত লোকেরও খায়ের খা
# মানুষ নয় শুধু প্রাণীরও খায়ের খা হয় সদা সবর্’দা অপরের কল্যাণ কামনা করে।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا
وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ
وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ، ‘
আর উপাসনা
কর আল্লাহর,
শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও
সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন , প্রতিবেশী, অসহায়
মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। (নিসা ৪/৩৬)।
পৃথিবীর সকলে এক পরিবার
নবী করিম (দ) এরশাদ করেন
الخلق كلهم عيال الله، فأحب خلقه إليه، أنفعهم
لعياله
সৃষ্টির সবাই
আল্লাহর পরিবার। তার নিকট সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় সৃষ্টি হচ্ছে তাদের মধ্যে যে তার
পরিবারের জন্য বেশী উপকারী।
পৃথিবীটাইতো
পরিবার তাই পৃথিবীতে যারা আছে সকলেরই উপকারের মন মানসিকতা থাকতে হবে।
সর্বোত্তম মানুষ কে?
হাদিস- নবী (দ) বলেন (খাইরুন নাস মান এয়ানফাউন নাস)
সর্বোত্তম মানুষ
সে যে মানব সমাজের জন্য বেশী উপকারী।
#যে ক্ষুধার্থকে
খাদ্য দিবে
# কাপড় হীনকে কাপড়
দিবে
# এতিমের লালন
করবে
# মানুষের কষ্ট
লাগবে সচেস্ট হবে
# অসুস্থকে চিকিৎসা
সেবা নিশ্চিত করবে
# অসহায়ের পাশে
দাঁড়াবে
এ ধরনের যে
লোকটি উপকারী সেই নবীর উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মত। সুবহানাল্লাহ
নোবেল প্রাইজ বনাম নববী সাটিফিকেট
যারা মানব সেবাতে
পৃথিবীব্যপী শ্রেষ্ট নজির রাখতে পারে তাদেরকে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়, কিন্তু সেটার লোভে আমরা মানব সেবা করবনা, আমরা মেম্বার
হওয়ার নিয়তে, চেয়ারম্যান হওয়ার নিয়তে, মানুষের
বাহবা পাওয়ার নিয়তে, মানব সেবা করবনা, আমাদের
জন্য অনেক বড় বাহবা অনেক বড় পুরস্কার আল্লাহ ও তার রাসুলের পক্ষ থেকে আছে আর তা হল
শ্রেষ্ঠ উম্মতের সাটিফিকেট, তাই শ্রেষ্ট উম্মত হতে হবে মানব সেবা
করে। মানব সেবা যদি
নিঃর্স্বাথ ভাবে করতে পারেন, আপনি দুনিয়াতেই শ্রেষ্টত্বের
মর্যাদা পাবেন। তখন
আল্লাহ আপনাকে এমন এমন মর্যাদা এমন এমন পদবী এমন এমন কল্যাণ এমন এমন নিয়ামত দান করবেন
যা আপনি কল্পনাও করেন নাই।
(খাইরুন
নাসি মান এয়ানফাউন নাস)
কল্যাণকারী মানুষের ব্যপারে আল্লাহর কসম
হাদিস – আনাস বিন মালেক (রা)
বলেন
إِنَّ للهِ عِبادًا اخْتَصَّهُمْ لِقَضَاءِ حَوَائِجِ الناسِ ،
آِلى على نفسِهِ أنْ لا يُعَذِّبَهُمْ بِالنارِ ، فإِذَا كان يومُ
القيامةِ ، خَلَوْا مع اللهِ يُحَدِّثُهُمْ ويُحَدِّثُونَهُ والناسُ في الحِسابِ
কিছু বান্দাকে
আল্লাহ মানুষের প্রয়োজন মিটানোর জন্য বেছে নিয়েছেন, আর আল্লাহ শপথ করেছেন তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে দিয়ে শাস্তি দিবেন না। কিয়ামতের
দিন তারা আল্লাহ সাথে নুরের মিম্বরে দাঁড়িয়ে কথা বলবে।
আল্লাহ কাদেরকে মানুষের প্রয়োজনে সিলেক্ট করেছেন?
১) ডাক্তার
২) শিক্ষক
৩) মেম্বার/চেয়ারম্যান, মন্ত্রী
৪) পুলিশ
এভাবে যারাই
মানব সেবা করার নিমিত্তে সিলেক্ট হয়েছেন তারা যদি একান্তই নিঃসাথ ভাবে আল্লাহর জন্য
মানুষের প্রয়োজনগুলি মিটাতে পারে তাহলে আল্লাহর রাসুল সার্টিফাইট করেছেন
(উলাইকাল
আমিনুনা মিন আজাবিল্লাহ) তারা আল্লাহর আযাব থেকে
চিরকালের জন্য নিরাপত্তা লাভ করল।
উসমান (রা) এর গম আমদানির ঘটনা
উসমান (রা) একবার শাম থেকে শত শত উটের বোঝায় গম ইমপোট করলেন, আর সে সময় মদিনায় গমের মওজুদ কম ছিল, যার কারন কিছু কিছু ব্যবসায়ী উসমান (রা) থেকে ডাবল লাভ দিয়ে হোল সেলে ক্রয় করতে প্রস্তাব নিয়ে আসল। যাতে তারা চড়া দামে খুচরা বিক্রি করতে পারে। যেটা আপনার ১০০ কিনা সেটা আপনাকে আমরা ২০০ টাকা দিব। কিন্তু উসমান (রা) এত বেশী লাভ দেয়ার পরও বিক্রী করতে রাজি হলেন না। একজন ইহুদী ব্যবসায়ী ৭ গুন বেশী দাম দিতে প্রস্তাব দিলেন কিন্তু উসমান (রা) তাও রাজি হলেন না।তখন ইহুদী প্রশ্ন করলেন উসমান আপনার উদ্দেশ্য কি আপনি ১০০ টাকার জিনিষ ৭০০ টাকায় দিতেও রাজি হচ্ছেন না কারন কি? তখন উসমান (রা) বলেন আমার কাছে একজন কাস্টমার আছে যিনি আমাকে ৭ গুন নয় বরং ৭০ গুন লাভ দিবেন। তিনি হলেন আমার আল্লাহ, যিনি আমাকে ৭০ গুন লাভ দান করবেন, এই বলে তিনি কমচারীদেরকে নির্দেশ দিলেন সমস্ত গম মদীনার লোকদের মাঝে সম্পূর্ণ ফ্রি বিলি করে দিতে।
এভাবে নবী করিম (দ) সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিয়েছেন, সে জন্য প্রত্যেকে একে অপরের ভালো চিন্তা করতেন।
## যেমন এখন আমরা চিন্তা করি আমার যেন কোন ক্ষতি না হয় আর তখন তাদের চিন্তা ছিল অন্যের যেন ক্ষতি না হয়
এটাই ছিল তখনকার মুসলমানদের স্বভাব, আর এখনকার মুসলমান ইম্পুটারদের স্বভাব কেমন? মানুষ মরে যাক মানুষ ক্ষুধায় চিৎকার করুক, দুর্ভিক্ষ নেমে আসুক সে চাইবে যত বেশী লাভ করা যায়।
ঘোড়া ক্রয়ের ঘটনা
একটি ঘটনা শুনেন- এক সাহাবি একটি ঘোড়া কিনেছেন ১০০ রিয়াল দিয়ে, সে যখন ঘোড়া নিয়ে আসল তার ভায়েরা বলল এই ঘোড়াটি ১০০ রিয়াল দিয়ে কিনে তুমি জিতেছ, এটা ২০০ রিয়াল এর কম নয়, এখন সে সাহাবি চিন্তা করল আমি জিতেছি কিন্তু আমার সে মুসলমান ভাইতো ঠকেছে, তাই সে সাহাবী আরো ১০০ রিয়াল নিয়ে সে ঘোড়া বিক্রেতার কাছে চলে গেল আর তাকে আরো ১০০ রিয়াল দিয়ে বলল আপনার ঘোড়াটি সকলের দৃষ্টিতে ২০০ রিয়াল হবে তাই আপনি আমার কাছ থেকে আরো ১০০ রিয়াল রাখুন। কিছুদিন পর যখন ঘোড়ার প্রতিযোগিতা হল সেখানে সে ঘোড়াটি দিয়ে প্রতিযোগিতায় ফাস্ট হয়ে গেল, সকলে বলতে লাগল মাত্র ২০০ রিয়ালের ঘোড়া অনেক ভালো এটা ২০০ রিয়ালের নয় বরং ৫০০ রিয়াল হবে, তখন সে সাহাবি উক্ত ঘোড়া বিক্রেতার কাছে গিয়ে আরো ২০০ রিয়াল দিয়ে আসল।
এমনই ছিল তাদের চিন্তা ভাবনা, তারা কখনো অপরের কোন ক্ষতি হউক সেটা চাইতনা। সারাক্ষণ অপরের লাভ অপরের কল্যাণই কামনা করত।
জমিন ক্রয় বিক্রয়
এক লোক জমিন ক্রয় করল, জমি চাষ করার সময় মাটির নিচে একটি গোপন সম্পদের বক্স পেলেন, জমিন ক্রয় কারী সে বক্সটি নিয়ে জমিন বিক্রেতার কাছে চলে গেল আর তাকে বলেন এই জমি আমি কিনেছি সেখানে হাল চাষ করার সময় তার ভিতর থেকে একটি বক্স বের হয়ে আসল এটা আপনার হবে, আপনি এটা রাখুন, তখন জমিন বিক্রেতা বলল না আমি জমি বিক্রি করে দিয়েছি এখন এর মালিক আমি নই বরং আপনি।দুজনে যখন এই বক্স নিতে চাচ্ছিলনা তখন সে বিচার কাজির কাছে গেল, কাজি সাহেব দুজনের ছেলে মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করে দিলেন। আর মহর হিসেবে এই খাজানা দিতে বললেন যাতে উভয়েই উপকৃত হতে পারে।
ইমাম আজম আবু হানিফার রেশমের কাপড়
ইমাম আবু হানিফা (রহ) রেশমের কাপড় বিক্রী করতেন যা মহিলারা ব্যবহার করত, একদিন আবু হানিফা যোহরের পর পর দোকান বন্ধ করে দিলেন একজন প্রশ্ন করলেন এত তাড়াতাড়ি কেন দোকান বন্ধ করে দিল? তখন আবু হানিফা বললেন আজকে আকাশে প্রচুর মেঘ যার কারনে কাপড়ের আসল রং বোঝা কাস্টমারের জন্য কষ্টসাধ্য তাই কাপড় ক্রয় কারীগন ঠকতে পারে এই ভেবে আমি দোকান বন্ধ করে ঘরে চলে যাচ্ছি।
সুরা নামল এর নামকরণ
পবিত্র কুরআনে একটি সুরার নাম হল পিপড়া, অনেকে এ ব্যপারে আশ্চর্য্য হয়ে প্রশ্ন করেন কুরআনের মত এত বড় আল্লাহর কিতাবের মধ্যে সামান্য পিপড়ার নামে সুরার নামকরন আশ্চর্য্যের বিষয়, সেখানে পিপড়ার আলোচনা করা হয়েছে। আর এর কারন কি ছিল জানেন? এক পিপড়া অপর পিপড়ার কল্যাণ কামনা করেছে। সুলাইমান (আ) নিজের লস্কর নিয়ে যাচ্ছিলেন আর
# সুলাইমান (আ) এর বাহিনির মধ্যে ২৫ মাইল থাকত মানব সেনা
# ২৫ মাইল ব্যপী থাকত জিন সেনা
# পাখ পাখালির জন্য ২৫ মাইল
এত বিশাল বাহিনি নিয়ে তিনি বাতাসকে হকুম দিতেন তার সিংহাসন নিয়ে আকাশ পথে পাড়ি দিতে। সুলাইমান (আ) সকল প্রাণীর কথা বুঝতেন এবং শুনতে পেতেন
তিনি একবার এই বিশাল বাহিনি নিয়ে সফর করলেন সিরিয়ায় সদীর নামক
এক উপত্যকায় সফর থামাবেন আর সেটা ছিল পিপিলিকাদের এলাকা, সে পিপিলিকাদের সরদার এর নাম ছিল তাহিয়্যা সে তার বাহিনির সকলকে হকুম দিলেন তোমরা সকলে গৃহে প্রবেশ কর কারন সোলাইমান (আ) আসছেন তার সৈন্যরা নিজেদের অজান্তে তোমাদেরকে পায়ের নিচে পিষ্ঠ করতে পারে। পিপিলিকা সরদার তাহিয়্যার এমন চমৎকার কথা শুনে সুলাইমান (আ) ৩ মাইল দুর থেকে হেসে দিলেন পিপিলিকা সরদারের এমন সুধারনামুলক কথা শুনে। একটি ছোট পিপড়াও নিজের অধিনস্থদের জন্য কত বেশী কল্যাণকামী এবং অপরের প্রতি সুধারনাপোষনকারী।
আর এ যুগের সরদার ও নেতাদের এখান থেকে শিক্ষীনিয় আছে। নিজের কর্মীদের কল্যাণ কামনা করা, নিজের কর্মীদেরকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করা এবং অন্যের ব্যপারে সুধারনা পোষন করা।
পিপড়াটি হযরত সুলাইমান (আ) এর ব্যপারে সুধারনা পোষন করেছেন তাই বলেছেন সুলাইমান (আ) নিজ ইচ্ছায় তোমাদেরকে পিষ্ঠ করবেনা বরং নিজেদের অজান্তে হয়ত তাদের পায়ের নিচে পিষ্ঠ হয়ে তোমরা মারা পরবে।
#একটি পিপড়া অপর পিপড়ার ব্যপারে কল্যাণ কামনা করেছে সেটা আল্লাহর কাছে এত বেশী পছন্দ হয়েছে আল্লাহ সে পিপড়ার কথাগুলি কোরআনের মধ্যে কোড করেছেন আর সুরাটির নাম নামল বা পিপড়া রেখে দিয়েছেন। একটি পিপড়ার কল্যাণ কামনা যদি আল্লাহ এত পছন্দ করেন একজন মানুষ হয়ে আপনি আমি যদি অন্যের কল্যাণ কামনা করি তা আল্লাহর কাছে কতটা পছন্দনীয় হবে একবার চিন্তা করুন।
আল্লাহ তায়ালা সুরা নামল এর ১৭ -১৯ নং আয়াতে তা বয়ান করেছেন
وَحُشِرَ لِسُلَيْمَانَ جُنُودُهُ مِنَ الْجِنِّ
وَالْإِنسِ وَالطَّيْرِ فَهُمْ يُوزَعُونَ
সুলায়মানের
সামনে তার সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হল। জ্বিন-মানুষ ও পক্ষীকুলকে, অতঃপর
তাদেরকে বিভিন্ন ব্যূহে বিভক্ত করা হল। [সুরা নাম’ল - ২৭:১৭]
حَتَّى إِذَا أَتَوْا عَلَى وَادِي النَّمْلِ
قَالَتْ نَمْلَةٌ يَا أَيُّهَا النَّمْلُ ادْخُلُوا مَسَاكِنَكُمْ لَا يَحْطِمَنَّكُمْ سُلَيْمَانُ وَجُنُودُهُ
وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
যখন
তারা পিপীলিকা অধ্যূষিত উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক
পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা
তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে
পিষ্ট করে ফেলবে। [সুরা নাম’ল - ২৭:১৮]
আপনি নিজের ব্যপারে চিন্তা করুন আপনি কতটা কল্যাণকামি?
আমরা প্রত্যেকে নিজেকে ভালো মানুষ মনে করি, দ্বিনদার মনে করি, কিন্তু একটু চিন্তা করলে দেখা যায় আমরা অপরের ভালো, অপরের উন্নতি সহ্য করতে পারিনা। সে জন্য আমাদের অন্তরে ঘৃণা, হিংসা, শত্রুতামি লুকায়িত আছে। আর অফিস আদালতে প্রফেশনাল জেলাছি খুব বেশী দেখা যায়।
কাকড়া জেলাছি
জীবিত কাকড়া যদি একটি বক্সে রাখেন তাহলে দেখবেন একটি কাকড়া বক্সের বাহিরে আসার জন্য চেষ্টা করলে অপর কাকড়াসমুহ সেটার পায়ে ধরে টেনে নামিয়ে ফেলবে, একটাকেও বাহিরে আসতে দিবেনা। আমাদের অভ্যাস ঠিক কাকড়ার মত আমরা কেহ উন্নতি করতে দেখলে তা সহ্য করতে পারিনা, তার উন্নতির পথে বাঁধা দিই, বাঁধা দিতে না পারলেও হিংসায় জ্বলি। এটাই এখন আমাদের আদত হয়ে গেছে। নাউজুবিল্লাহ
আমাদের উচিত আমাদের ভিতর অপরের ভালো অপরের উন্নতি অপরের কল্যাণ কমনার অভ্যাস গড়ে তুলা যাতে আল্লাহর রহমত আমাদের উপর নাজিল হয়। যাতে আমরা মানুষ হিসেবে, জাতি হিসেবে সফল হতে পারি।
وَلۡتَکُنۡ مِّنۡکُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ -
‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি
দল থাকা উচিত, যারা (লোককে)
কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে।
আর এ সব লোকই হবে সফলকাম। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৪)
নেকির নির্দেশও কল্যাণ কামনা- আযাব আসবে দোয়া কবুল হবেনা
মানুষকে নেকির দাওয়াত দেয়া এটা মানুষের জন্য অনেক বড় কল্যাণ কামনা, মানুষকে জান্নাতের দিকে ডাকা, অন্যায় থেকে ফিরিয়ে রাখা এটা সকল আম্বিয়াদের সুন্নত।
তিরমিজির হাদিস: হযরত হুযায়ফা (রা) বয়ান করেন রাসুলুল্লাহ (দ) এরশাদ করেন সে জাতের কসম যার কুদরতি হাতে আমার প্রাণ, তোমরা নেকির হকুম দাও, আর অন্যায় কাজে বাঁধা দিতে থাক, নাহয় অচিরেই তোমার উপর আল্লাহ আযাব নাজিল করবেন, আর তখন তোমরা দোয়া করলেও তা কবুল হবেনা।
হযরত উসমান দামানির ঘটনা: তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন, তখন রুপার পয়সা ছিল, যদি পয়সার উপর প্রিন্ট মুছে যেত সেটাকে খোটা পয়সা বলা হত, সেটা ব্যবসায়ীরা গ্রহণ করতনা, কিন্তু উসমান দামানির কাছে কোন গ্রাহন খোটা পয়সা নিয়ে আসলে তিনি সেটা কবুল করে নিতেন, এভাবে তার দোকানের পাশে খোটা পয়সা অনেক জমা হয়ে গেল, একসময় তিনি অসুস্থ হয়ে গেলেন, তখন তিনি দোয়া করতেন হে আল্লাহ আমি তোমার বান্দাদের প্রয়োজন পুরণ করার নিয়তে খোটা পয়সা কবুল করেছি সারাজিবন। হে আল্লাহ আমার কাছে যে সব আমল আছে সবকিছু যদিও তোমার শান মোতাবেক নাই, সব আমলই খোটা হে আল্লাহ তুমি আমার এই খোটা আমলগুলি কবুল কর। এভাবেই তখন মানুষের সাথে মানুষ খায়েরখাহি করত মানুষের উপকার করত আর তার প্রতিদানে আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান কামনা করত।
নবী করিম (দ) এর বুড়ির কল্যাণ কামনার ঘটনা
এক বুড়ি নারী মালামাল নিয়ে অপেক্ষা করছিল কোন একজনের সাহায্য নিয়ে মক্কা থেকে বের হয়ে অন্য শহরে চলে যাবে, সেখানে নবী করিম (দ) পৌঁছলেন, বুড়িকে নবীজি প্রশ্ন করলেন কোথায় যাবে? বুড়ি বলল আমি মক্কা ছেড়ে চলে যাচ্ছি, কারন মক্কায় একজন লোক এসেছে যার জবানে এমন যাদু আছে যেই তার কথা শুনে সেই তার কথা মানতে বাধ্য হয়ে যায়, আমি বুড়া বয়সে আমার বাব দাদার ধর্ম হারিয়ে ফেলার ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছি। দুরে আমার এক আত্মিয় আছে সেখানে চলে যাচ্ছি। নবী করিম (দ) তার কথা শুনছিল আর তার মালামালগুলি মাথার উপর নিয়ে তার সাথে সাথে হাটছিল, বুড়ি নবী (আ)কে চিনতনা সে নবীকেও উপদেশ দিচ্ছিল, খবরদার তুমি সে মুহাম্মদ এর কাছে যাবেনা, কারন তার কাছে গেলে সে তোমাকে এমন কথা বলবে তুমি তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নিজের বাব দাদার ধর্ম হারাবে। নবীজি (দ) বুড়ির কথার কোন প্রতিবাদ করলেন না বরং বুড়ির মালামাল গুলি নিজের মাথায় করে বুড়ির গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিলেন, বুড়ি নবীজিকে বলেন বেটা তুমি অনেক ভালো ছেলে, আমার অনেক বড় উপকার করেছ, তুমি আমাকে তোমার নাম ঠিকানা বল আমি যদি মক্কায় কোন সময় ফিরে আসি তাহলে তোমার সাথে আমি দেখা সাক্ষাত করব। তখন আল্লাহ হাবিব বললেন – হে বুড়ি মা সারা রাস্তায় আপনি যে লোকটির বদনাম করে করে এসেছেন আমি সে ব্যক্তি মুহাম্মদ। এ কথা শুনে বুড়ির মনে আছর করে সে বুড়ি তখন বলে যদি সত্যিকারই তুমি সে মুহাম্মদ হয়ে থাক যার মাঝে আমি কল্যাণ ই কল্যাণ দেখেছি, যে শত্রুর সাথেও কল্যাণ করে, সে বন্ধুর সাথে কেমন করবে? আস আমি তোমার হাতে বায়আত হতে চাই বলে বুড়ি মুসলমান হয়ে গেল সুবহানাল্লাহ।
যদি আপনার মনে আমার মনে কোন শত্রুর ক্ষতিতেও খারাপ লাগে তাহলে বুঝে নিবেন আপনার মাঝে প্রিয় নবীর চরিত্রের কিছুটা আপনার মাঝে চলে এসেছে।
আমরা আপন পর সকলকেই ক্ষতি করার চিন্তা করি
আর আমরা প্রত্যেকে একে অপরের সাথে অকল্যাণের সম্পক তৈরী করে রেখেছি। স্বামী সারাক্ষণ চিন্তা করে কিভাবে স্ত্রীকে বিপদে বেকায়দায় ফেলা যাবে, স্ত্রী সারাক্ষণ চিন্তা করে কিভাবে স্বামীকে বেকায়দায় ফেলা যাবে। সন্তান মাকে কাঁদাচ্ছে, বাবাকে কাঁদাচ্ছে। ভাই ভাই এর জানের শত্রুতে পরিণত হয়েছে, ভাই বোনের জানের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। অথচ আমাদের উচিত অন্যের কল্যাণ চিন্তা করা একে অপরের সাথে বন্ধুর মত আচরন করা, নিজের উপকার চিন্তা করার আগে অপরের উপকার করার কথা চিন্তা করা। এই চিন্তা এই চেতনা যদি আমাদের মাঝে এসে যায় তাহলে আমাদের পরিবার সুন্দর হবে, আমাদের মানুষ গুলি সোনার মানুষে পরিণত হবে, আমাদের সমাজ আমাদের রাষ্ট্র সত্যিকারে সোনার রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
কিয়ামতের দিন কি গোবর থেকেও খারাপ পরিগনিত হব?
গোবর নাপাক, যা কাপড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হয়ে যায়, আর সে গোবর জমিনে ফাটিলেইজার হিসেবে কৃষকরা ব্যবহার করে, আপনি যদি কৃষককে ফতোয়া দেন কৃষক ভাই গোবর নাপাক জিনিষ আপনি জমিনে কেন মিলান? কৃষক জবাব দিবে এটা যদিও নাপাক কিন্তু এটার দ্বারা জমিন উবর হয়, আর তা থেকে ভালো সবজি হয়, দেখুন নাপাক গোবরও যার সাথে থাকে তাকে উপকৃত করে তার কল্যাণ করে, এখন আমরা সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও শত্রুর কল্যাণতো অনেক দুরে ঘরে মা বার সাথেও ভালো আচরন করতে পারিনা, ভাই বোনের সাথে কল্যাণমুলক আচরন করতে পারিনা, সদা সবদা অপরের দোষচর্চাতে লিপ্ত থাকি, সারাক্ষণ কুচিন্তা করতে থাকি, সারাক্ষণ অন্যের ক্ষতি চিন্তা করি, নিজের লাভের জন্য অন্যের সর্বনাশ করতে একটুও চিন্তিত হইনা,
এখন কাল হাশরের মাঠে যদি আল্লাহ আমাকে বলে তোমাকে আমি অনেক কিছুই দিয়েছি তুমি কয়জনের কল্যাণ করেছ? সৃষ্টিজীবের কি ফায়দা করেছ? নাপাক গোবরও নিজের অস্তিত্ব বিলিন করে মাটিকে উবর করতে পারে আর তুমি অন্যের কল্যাণের জন্য কি করেছ? তখন আমরা কি জবাব দিব? আমাদের জবাব দেয়ার মত কি থাকবে? একবার চিন্তা করা দরকার।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল প্রাণীর কল্যাণ করার তৌফিক দান করুন আমিন। অপরের ক্ষতি করা থেকে অপরকে হিংসা করা থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন আমিন। হে আল্লাহ আমার দ্বারা যেন আমার ঘরের কারো ক্ষতি না হয় সে তৌফিক দান কর। হে আল্লাহ আমার দ্বারা যেন বাহিরের কারো ক্ষতি না হয় সে তৌফিক দান কর। আমার দ্বারা যেন আত্মিয় প্রতিবেশীর কল্যাণ ছাড়া অকল্যাণ না হয় সে তৌফিক দান কর। আমার দ্বারা যেন অনাত্বিয় অপরিচিত কারো অকল্যাণ না হয় সে তৌফিক দান কর। আমিন ছুম্মা আমিন।
মাওলানা এস এম নিজাম উদ্দীন
খতিব, হাজি অলি মিয়া সওদাগর জামে মসজিদ, পূর্ব ষোলশহর ৬নং ওয়ার্ড, চট্টগ্রাম
সফর ২য় জুমা, ১৪৪৫ হিজরী (২৫/০৮/২০২৩ইং)
কোন মন্তব্য নেই