মিলাদুন্নবী নিয়ে সকল প্রশ্নের জবাব সকল ঝগড়ার সমাধান
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
মিলাদুন্নবী নিয়ে সকল প্রশ্নের জবাব সকল ঝগড়ার
সমাধান
কুরআন সুন্নাহর আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী
ছাল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়াছাল্লামের বিরুদ্ধে সকল ভয়ংকর অভিযোগ খন্ডন
প্রশ্নঃ
ইসলামে ২টি মাত্র ঈদ এখন ঈদে মিলাদ বলে ৩য় ঈদ কোথা থেকে আসল?
প্রশ্নঃ
দুই ঈদে নামাজ আছে ঈদে মিলাদুন্নবীতে নামাজ কেন নাই?
প্রশ্নঃ নবী
কি মিলাদ পালন করেছেন?
প্রশ্নঃ মিলাদুন্নবী
করলে কি কোন উপকার আছে
প্রশ্নঃ মিলাদুন্নবী
এটা হল খ্রিষ্টানদের অনুকরন
প্রশ্নঃ সাহাবাগন
কি মিলাদ পালন করেছেন
প্রশ্নঃ ১২
রবিউল আউয়াল ঈদ হবে নাকি শোক হবে
প্রশ্নঃ মিলাদ
এর পতাকার খরচ গরীবকে দিলে ভালো হবে
প্রশ্নঃ মিলাদুন্নবী
শিরিক?
পবিত্র রবিউল আইয়্যাল মাস আসলেই সারা বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে আখেরী নবী যে দুনিয়াতে এই মাসে আগমন করেছেন সে জন্য উম্মতে মুহাম্মদীরা খুশী উদযাপন করেন। আবার একদল আছেন মিলাদুন্নবীকে অস্বীকার করেন, তাদের দাবী হল মিলাদুন্নবী উদযাপন করা শরীয়ত সম্মত কাজ নয়। আজ আমি আপনাদের সামনে কিছু কুরআন হাদীসের দলিল উপস্থাপনের চেষ্টা করব, উক্ত দালিলিক আলোচনা শুনে আপনারাই বিবেচনা করবেন আসলে কি ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা শরীয়ত সম্মত নাকি শরীয়ত বিরোধী কাজ।
সুরা
ইবরাহিমের ৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَى بِآيَاتِنَا أَنْ أَخْرِجْ قَوْمَكَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللّهِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ
আমি মূসাকে নিদর্শনাবলী সহ প্রেরণ করেছিলাম যে, স্বজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আনয়ন এবং তাদেরকে
আল্লাহর দিনসমূহ স্মরণ করান। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞের জন্যে
নিদর্শনাবলী রয়েছে। [ সুরা ইবরাহীম ১৪:৫ ]
সকল দিনই আল্লাহর কিন্তু এ আয়াতে আয়্যামিল্লাহ বলে ঐ সব দিনকে বুঝানো হয়েছে যে সব দিনে আল্লাহর খাছ রহমত নাজিল হয়, যেমন সব মাসই আল্লাহর সৃষ্টি তবে তার মধ্যে খাছ রহমত ওয়ালা মাস হল রমজান, সকল রাতসমুহ আল্লাহর তার মধ্যে খাছ রহমতওয়ালা রাত হল শবে কদর, তেমনি সকল দিনসমুহই আল্লাহর তার মধ্যে খাছ রহমত ওয়ালা দিন হল জুমার দিন, সোমবার দিন। আর এসব দিনের আল্লাহ তায়ালা বলেন وَذَكِّرْهُمْ
بِأَيَّامِ
اللّهِ ।
জুমার ফজিলত ও ঈদে মিলাদুন্নবী
হযরত অউস
বিন অউস (রাঃ) বর্ণনা করেন এ হাদীস খানা সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজা এবং
সুনানে আবু দাউদ এর কিতাবুস সালাতে পাবেন, বাবু ফাদলে এয়াউমিল জুমআ, হুযুর (দঃ)
এরশাদ করেন হে লোকসকল তোমাদের দিনসমুহের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হল জুমার দিন।
প্রশ্ন হল
এই জুমা কি কারনে এত আফযল এত বরকতময় হল? হুযুর (দঃ) এর প্রশ্নের জবাবে বলেন (ফিহি
খুলিকা আদম) এই দিনে হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। যেহেতু আদম (আঃ) পিতা
মাতা ছাড়া সৃষ্টি সে হিসেবে তাঁর সৃষ্টির দিনই মুলত জন্মের দিন। আর আদম (আঃ) এর
জন্ম বা সৃষ্টির দিন হিসেবে জুমার দিন আফজল দিন। আর এ হাদীসের দ্বারা একটি সুত্র
পাওয়া গেল যে পয়গাম্বরের জন্ম ও সৃষ্টির কারনে জুমা সকল দিনের মধ্যে আফযল সম্মানিত
ও বরকতময় দিন হিসেবে গন্য হল।
এখন উম্মতে মুহাম্মদী হিসেবে আপনারাই বিবেচনা করুন- আদম (আঃ) এর জন্ম বা সৃষ্টির দিন হয়ে যদি জুমার দিন আফযল উপাধী পায়, তাহলে ইমামুল আম্বিয়া মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর জন্মের দিনটিকেও বরকতময় মনে করাতে শরীয়ত বিরুধী বলাটা কতটা যুক্তি সংগত?
ইসলামে শুধু ২টি ঈদঃ
ইসলামে
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ছাড়া আর কোন ঈদ নাই- এমন একটা কথা খুব বেশী শুনা যায় অথচ
আমরা যদি হাদীস গবেষনা করি তাতে দেখতে পায়- হাদীস খানা ইবনে মাজাহ ও তাবরানীতে, রয়েছে-
হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন (ইন্না হাজা এয়াউমু ঈদিন জাআলাহুল ল্লাহু লিল মুসলিমিন, ফামান জাআ ইলাল জুমআতে ফাল এয়াকতাছির) অথ্যাৎ জুমার দিন সকল দিনসমুহ থেকে আফযল আর এর ফজিলতের কারন হল এতে আদম (আঃ) এর সৃষ্টি হয়েছে, আর এই জুমার দিনকে ঈদের দিন বানিয়ে দেয়া হয়েছে।
সুতরাং জোড় গলায় ইসলামে শুধু ২টি ঈদ বলাটা হাদীসের বিরোধী কথা, কারন দেখা যাচ্ছে প্রতিটি জুমাও ঈদ আর সে হিসেবে প্রতি সপ্তাহে ১টি ঈদ আর প্রতি বছরে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ছাড়াও বছরে আরো ৫২টি ঈদ পাওয়া গেল। তবে জুমার দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার মত নয় তবে আর এই জুমার দিনটি হল মুসলমানদের জন্য শোকরানার ঈদ, আর ঈদে মিলাদুন্নবীও তেমনই একটি দিন, যেদিন আমাদের নবী দুনিয়ায় তশরীফ এনেছেন। যেমন জুমা হল ঈদে খালকে আদম।
হাদীস- মসনদে আহমদে, সহিহ ইবনে খুজাইমাতে রয়েছে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (দঃ) এরশাদ করেন- (ইন্না এয়াউমাল জুমআতে এয়াউমু ঈদীন) নিশ্চয়ই জুমার দিন হল ঈদের দিন।
সুতরাং প্রথম নবী আদম (আঃ) এর সৃষ্টির দিনকে কেয়ামত পর্যন্ত সকল বনি আদমের জন্য ঈদের দিন ঘোষনা করা হয়েছে, এই সুত্রের ভিত্তিতে প্রত্যেক উম্মতের জন্য এটা সুন্নত হয়ে গেল যে প্রত্যেক উম্মত তাদের নিজ নিজ নবীর জন্মের দিনকে খুশীর দিন শোকরানার দিন হিসেবে উদযাপন করবে।
দুই ঈদে নামাজ আছে ঈদে মিলাদুন্নবীতে নামাজ কেন নাইঃ
এর জবাবে ওলামায়ে
কেরাম বলেন আমার নবী যদি বলে দিত মিলাদুন্নবী উপলক্ষে নামাজ পড়তে হবে আর কেহ যদি সেটা
পালন না করত তাহলে তার জন্য সেটা গযবের কারন হয়ে যেত, আমার নবী হলেন রহমত, সে নবীর আগমনটাও আমাদের জন্য রহমত
এখন এই রহমতের দিনটি যেন উম্মতের অবহেলার কারনে গযবে পরিণত না হয় সেজন্য এ দিনে নামাজ
এর বিধান না থাকাটাও হুযুরের মেহেরবানী।
মিরাজের দিন বায়তুল লাহামে ঈসা (আঃ) এর জন্মের স্থানে হুযুরের নামাজ
নাসাঈ, তাবরানী এবং ইমাম ইবনে কাসির (রহঃ) ও নিজের তফসির গ্রন্থে হাদীস খানা উল্লেখ করেন- হযরত
আনাস বিন মালেক (রাঃ) বর্ণনা করেন হুযুর
(দঃ) যখন নিজের মেরাজের ঘটনা বয়ান করেন তখন তিনি
এরশাদ করেন আমি যখন বায়তুল লাহামে পৌঁছলাম জিবরাইল (আঃ)
আমাকে বললেন (আনযিল ফাছাল্লি ফানাজালতু ফাছাল্লাইত)
আমাকে বলল এয়া রাসুলাল্লাহ (দঃ) আপনি বুরাক থেকে নিচে তশরীফ রাখুন এবং এখানে নামাজ আদায় করুন। আমি
যখন নামাজ পড়লাম তখন আমাকে প্রশ্ন করা হল (ওয়াকালা আতাদরী আয়না
ছাল্লাইত?) এয়া রাসুলাল্লাহ আপনি জানেন আপনি কোথায় নামাজ পড়েছেন?
জিবরাইল আমিন আরজ করলেন (ছাল্লায়তা বিবায়তে লাহামিন
হাইছু উলিদা ইসা) আপনি ইসা এর জন্মের স্থানে নামাজ পড়েছেন।
এ থেকে বুঝা
যায় নবীর জন্মের স্থানে যাওয়া, জেয়ারত করা, সেখানে নামাজ পড়া এই আমলগুলি মুলত সুন্নতে রাসুল (দঃ)
হয়ে গেল। ইমামুল
আম্বিয়া হয়ে মকাম ও মর্তবায় উঁচু হওয়া সত্বেও হুযুর (দঃ) ঈসা (আঃ) এর মিলাদের জায়গায় জেয়ারত
করার দ্বারা কেয়ামত পর্যন্ত আমাদের জন্য সুন্নত হয়ে গেল নবীর বেলাদতগাহতে জেয়ারত করা।
খ্রিষ্টানদের ঈদ ও মায়েদা
আসমান থেকে খাদ্য নাযিল হওয়ায় খ্রিষ্টানরা ঈদ পালন করে কারন সেটা আল্লাহর নেয়ামত, এখন মুমিন মুসলমানের জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত হল আমাদের নবী তাই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য নবী আগমনে খুশী পালন করা অতীব জরুরী, আল্লাহ তাদের ঈদের কথা সুরা মায়েদার ১১৪ নং আয়াতে বয়ান করে বলেন-
قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاء تَكُونُ لَنَا عِيداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
ঈসা ইবনে মরিয়ম বললেনঃ হে আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা আমাদের
প্রতি আকাশ থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করুন। তা আমাদের জন্যে অর্থাৎ, আমাদের প্রথম ও পরবর্তী সবার জন্যে আনন্দোৎসব হবে এবং আপনার
পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হবে। আপনি আমাদের রুযী দিন। আপনিই শ্রেষ্ট রুযীদাতা। [ সুরা মায়েদা ৫:১১৪ ]
মিলাদ কি হুযুর (দঃ) এর সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত? হুযুর কি নিজে মিলাদুন্নবী পালন করেছেন?
অনেকের মনে
এ প্রশ্ন আসে আমরা যে অতি উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করি এই আমলটি
কি আমাদের প্রিয় নবী নিজে করেছেন? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চলুন
হুযুর (দঃ) এর নবুয়তের পর আকিকাঃ
বায়হাকী শরীফের
সুনানে কুবরা যার ৯ম খন্ড ৪৩ তম অধ্যায় হযরত আনাস (রাঃ)
হতে বর্ণিত (আন্নান নাবিয়্যা ছাল্লাল্লাহু আলাইহে
ওয়াছাল্লাম আক্কা আন নাফসিহি বাদিন নুবুয়্যাহ) নিশ্চয়ই নবুয়তের
ঘোষনা দেয়ার পর আঁকা আঃ নিজের পক্ষ থেকে আকিকা করেন।
আমরা জানি জন্মের
পর যে পশু জবেহ করা হয় তাকে আকিকা বলে, এই হাদীস আরো অন্যান্য
হাদীস গ্রন্থেও এসেছে, এ হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম জালালুদ্দীন
ছুয়ুতী (রহঃ) বলেন হুযুর (দঃ) এর আকিকা দাদা আবদুল মুত্তালিব ৭ম দিবসে করেছিলেন,
কিন্তু হাদীসে দেখা যায় হুযুর (দঃ) নবুয়তের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর পুনরায় নিজের জন্মের শুকরিয়া আদায় করার জন্য
আকিকা করেন লোকজনকে দাওয়াতত করেন খানা খাওয়ান।
আমরা জানি আকিকা একবার হয়ে থাকে, অলরেডি হুযুরের বেলাদতের ৭ম দিন হুযুরের দাদা আবদুল মুত্তালিব আকিকা করেছেন তাহলে হুযুর (দঃ) পশু জবেহ করে লোকজনকে দাওয়াত দিয়ে কি পালন করলেন?
আবদুল মুত্তালিব আকিকা করার দলিলঃ
ইমাম ইবনে আসাকির
তারিখে দামেস্কের মধ্যে উল্লেখ করেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন (ফালাম্মা
উলিদান নাবিয়্যু ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামা আক্কা আনহু আবদুল মুত্তালিব বিকাবাশিন
ওয়া ছাম্মাহু মুহাম্মাদা) যখন হুযুরের বেলাদত হল আবদুল্লাহ বিন
আব্বাস বলেন আবদুল মুত্তালিব হুযুরের দাদা হুযুরের আকিকা দিলেন এবং হুযুরের নাম মুহাম্মদ
রাখেন। আর এ বিষয়ে কারো কোন দ্বীমত নেই যে হুযুরের
জন্মের ৭ম দিন হুযুরের দাদাজান আকিকা করে ফেলেছেন।
আর আকিকা হয়ে থাকে ৭ম দিনে যদি ৭ম দিন না হয় ১৪ তম দিনে আর ১৪ তম দিনে করতে না পারলে ২১ তম দিনে, এখন প্রশ্ন হল আকিকা একবার হয়, ৭,১৪,বা ২১ তম দিনে করা হয় কিন্তু হুযুর (দঃ) ৪০ বছর পর নিজের আকিকা নিজে করলেন কেন?
এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে তিরমিযি শরীফে- হুযুর (দঃ) বলেন সন্তান কর্জদার থাকে নিজের আকিকার, যদি ৭ম দিন তার আকিকা করা না হয়। )(এখন এটা কিভাবে হতে পারে হুযুর (দঃ) ৪০ বছর যাবৎ নিজেকে নিজে আকিকার কর্জের মধ্যে রেখেছেন?) সে জন্য ৭ম দিন সন্তানের আকিকা করে দেয়া উচিত যাতে তার কর্জ আদায় হয়ে যায়, ৭ম দিন সম্ভব না হলে ১৪তম দিনে, ১৪ তম দিনে সম্ভব না হলে ২১ তম দিনে আকিকা করে দিতে হবে।
সব হাদীসের সারমর্ম হল হুযুর (দঃ) আকিকা তাঁর দাদা ৭ম দিনে করে দিয়েছেন, আর আকিকা না করলে সন্তান কর্জের মধ্যে থাকে আর হুযুর (দঃ) ৪০ বছর কর্জে থাকা অসম্ভব, আর হুযুর যে ৪০ বছর পর পশু জবেহ করেছেন সেখানে যে আক্কা বা আকিকা শব্দ ব্যবহার করেছেন সে ব্যপারে ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী বলেন এখানে আক্কা দ্বারা আকিকা উদ্দেশ্য নয়, বরং হুযুর (দঃ) ৪০ বছর পর যে অনুষ্ঠান করেছেন তা ছিল মুলত হুযুরের মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান। (আন্না ল্লাজি ফাআলাহুন নাবিয়্যু ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামা এজহারান লিশ শুকর আলা ইজাদিল্লাহে ইয়্যাহু রাহমাতালিল আলামিন ওয়া তাশরিয়ান লি উম্মাতিহি কামা কানা ইউছাল্লি আলা নাফছিহি ফা এয়াছতাহিব্বুলানা আইজান এজহারা শুকরি লি মউলিদিহি বিল ইজতিমায়ে) অথ্যাৎ ৪০ বছর পর হুযুর যে এজতেমা করেছেন খাবারের আয়োজন করেছেন তা আকিকা পালন নয় বরং নিজের বেলাদতের খুশী উদযাপন ছিল, এবং নিজের মিলাদ পালন করে উম্মতের জন্য সুন্নত বানিয়ে দিলেন।সুবহানাল্লাহ।
আজকের আলোচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিলঃ
সহিহ বুখারীর
হাদীসঃ সুয়েবা নামক আবু লাহাবের এক বাঁদি ছিল, আবু লাহাব তার বাদীকে
আমেনার ঘরে আমেনার খেদমতে প্রেরন করল সুয়েবা গিয়ে দেখে আমেনার ঘরে চাঁদের চেয়ে সুন্দর এক পুত্র সন্তান
জন্ম গ্রহণ করেছেন, (কানা আবু লাহাবিন আ’তাকাহা ) যখন সুয়েবা আবু লাহাবকে তার ভাই আবদুল্লাহর
ঘরে পুত্র সন্তান হয়েছে সে খবর শুনালো সে তার ২ আঙ্গুলের ইশারায় খুশীতে সুয়েবাকে আযাদ
করে দিল, হাদীসে আছে (ফালাম্মা মাতা আবু
লাহাবিন ) আবু লাহাব যখন মৃত্যু বরণ করল তার প্রায় ১ বছর পর হযরত
আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালেব আবু লাহাবকে স্বপ্নে দেখল, আব্বাস
প্রশ্ন করলেন (মাজা লাকিত) আবু লাহাব তোমার
কি অবস্থা? আবু লাহাব জবাব দিল আমার মৃত্যুর পর আমি কোন কিছুই
ভাল পাইনি, উপর নিচে ডানে বামে আমি দোযখের আগুনে জ্বলছি। তবে
সোমবার দিন আমার ভাতিজার জন্ম হলে সে সংবাদ দেয়ায় আমার বাদী সুয়েবাকে ২ আঙ্গুলের ইশারায়
আযাদ করেছিলাম সে জন্য সোমবার দিন মিলাদে মুস্তাফার খুশীর কারনে আমাকে আযাব কম করে
দেয়া হয়।
এ হাদীসের উপর ইমাম ইবনে কাছির (রহঃ) খুব ব্যাখ্যা করেন- বলেন সোমবার আবু লাহাবের আযাব হালকা করার কারন হল সে যে দিন হযরত মুহাম্মদ জন্ম গ্রহণ করেন সে দিন সোমবার ছিল আর সে দিন সে নিজের ভাতিজার জন্মের সংবাদ শুনে সংবাদ দানকারী বাদীকে আযাদ করে দিয়েছিল, যদি আবু লাহাবের মত একজন কাফের নবী বলে নয় বরং নিজের ভাতিজা মনে করে হুযুরের জন্মের খুশীতে এ আমল করার ফলে যদি তার আযাব হালকা হয়ে যায় তাহলে একজন মুমিন নিজের নবীর জন্ম দিন উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করলে তার রেজালট কেয়ামতের দিন কি হবে একবার চিন্তা করে দেখুন।
আমরা জানি কাফের যতই নেক আমল করুকনা কেন তার জন্য কবরে হাশরে কেয়ামতে নেক আমলের কোন প্রতিদান নাই, কিন্তু আবু লাহাবকে আল্লাহ কাফের হওয়া সত্বেও প্রতিদান দিচ্ছেন কারন সে যদিও কাফের কিন্তু তার কাজটা ছিল আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। তাইতো আল্লাহ তাকে কাফের হওয়া সত্বেও প্রতিদান দিচ্ছেন, অথচ এ আবু লাহাবকে ধিক্কার দিয়ে পবিত্র কুরআনে সুরাও নাজিল হয়েছে, সে আবু লাহাব নবীর মিলাদের খুশী পালনের কারনে কাট্টা কাফের হওয়া সত্বেও কবরে প্রতি সোমবার আরাম পায়। সুবহানাল্লাহ।
মিলাদুন্নবী ওয়েস্টার্ন কালচাল? খ্রিষ্টানদের অনুকরণ?
অনেকে বলে
মিলাদুন্নবী ওয়েষ্টান কারলচার বা খ্রিষ্টানদের অনুকরন অথচ মিলাদে কুরআন তেলাওয়াত করা
হয়, হাদীসের বয়ান করা হয়, দরুদ শরীফ পাঠ করা
হয়, মানুষ অজু করে খুশবু লাগিয়ে মসজিদে আসে যে লোক কোনদিন এশারের
জামাত পড়ে না সেও আজ মসজদে জমা হয়েছে এশার নামাজ পড়েছে, তকরীরের
মাঝে মাঝে সে আল্লাহর প্রসংশা করছে, নবীর দরুদ পাঠ করছে,
নবীর জীবনী শুনে নবীর সুন্নত শুনে ইসলাম সম্পর্কে জানছে, অনেক গোমরাহ লোক মিলাদ মাহফিলে গিয়ে হেদায়েত প্রাপ্ত হচ্ছে, এটা কে ওয়েস্টান কালচার খ্রিষ্টানদের অনুকরণ বলা মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সাহাবাগন কি মিলাদ পালন করত?
মুসলিম, সুনানে নাসাঈ সহ অনেক হাদীস গ্রন্থে এ হাদীস খানা রয়েছে- একদিন হুযুর (দঃ) মসজিদে নববীতে
তশরীফ আনলেন দেখলেন কিছু সাহাবী বসে আলোচনা করছে, হুযুর
(দঃ) তাঁদের প্রশ্ন করল ( মা আজলাছাকুম?) তোমরা কি জন্য এখানে জমায়েত হয়েছ?
তোমাদের এই জলসার মকসদ কি? তখন সাহাবাগন খুব সুন্দর
জবাব দিলেন তারা বললেন (জালাছনা নাজকুরুল্লাহ ওয়া নাহমাদুহু আলা
মা হাদানা লিল ইসলাম ওয়া মান্না আলাইনা বিকা) হুযুর আমাদের এই
জলসার উদ্দেশ্য হল আমরা আল্লাহর হামদ বয়ান করছি, প্রসংশা করছি,
শোকরিয়া আদায় করছি, এই জন্য শোকর করছি তিনি আমাদেরকে
হেদায়েত দান করেছেন এবং আপনাকে দিয়ে আমাদের উপর করুনা করেছেন দয়া করেছেন। (মান্না আলাইনা বিকা) হুযুর আপনার মাধ্যমে আমাদের উপর
রহম ও করম করেছেন।
সাহাবীগন যখন এ কথা বলল হুযুর সাহাবাদের বলল তোমরা কি কসম করে বলতে পারবে যে তোমরা সত্যি সত্যি এই কাজের জন্যই এই মজলিশ কায়েম করেছ? সাহাবাগন সকলে কসম করে বলল হে আল্লাহর রাসুল আমরা আল্লাহর কসম করে বলছি আমরা এই কাজের জন্য এখানে বসেছি।
হুযুর সাহাবাদের
থেকে কসম আদায় করে বললেন হে আমার সাহাবারা আামি তোমাদের কথার উপর সন্দেহ পোষন করে কসম
নিই নাই, বরং আমি তোমাদের কাছে এই জন্য কসম নিয়েছি যে আমি এখানে আসার আগে
হুজরায় ছিলাম আর আমার কাছে (আতানি জিবরিল) জিবরিল আগমন করল, (ফা আখবারানি আন্নাল্লাহা ইউবাঈ বিকুমুল
মালাইকা ) জিবরিল এসে বলল তোমাদের এই মজলিশের কারনে আল্লাহ ফেরেশতাদের
কাছে তোমাদের নিয়ে গৌরব প্রকাশ করছে।
সুবহানাল্লাহ
সাহাবাগন আল্লাহর প্রসংশা করেছে, শোকর করছে এই জন্য শোকর করেছে যে
তাঁদের কাছে মুহাম্মদ (দঃ) এর মত একজন রাসুলকে
পাঠিয়েছেন। আর সেই জন্য আল্লাহ সে মজলিশের কারনে
ফেরেশতাদের কাছে গৌরব প্রকাশ করছেন।
এখনও আমরা গুনাহগারগন
যদি আল্লাহ যে আমাদের জন্য একজন নবী শ্রেষ্ঠ নবী পাঠিয়েছেন, সে নবীর উম্মত বানিয়েছেন, যে নবীর গুনগান স্বয়ং আল্লাহ
বুলন্দ করেন যেমন বলেন (ওয়ারাফানা লাকা জিকরাক) আজ এই পৃথিবীর যে কোনাতেই বসে বসে সে নবীর মত সর্বশ্রেষ্ট নেয়ামতের শোকরানা
মাহফিল আয়োজন করেন তাহলে আল্লাহ কি তাতে ফেরেশতাদের কাছে ফখর করবেন না? অবশ্যই করবেন।
আল্লাহর খোঁটাঃ
আল্লাহ আমাদেরকে
এত নেয়ামত দিয়েছেন, এত দয়া করেছেন কোন নেয়ামত এর কথা, দয়ার কথা দেখিয়ে দেন নি কিন্তু এমন এক নেয়ামত দিয়েছেন যার কথা আল্লাহ বলে দিয়েছেন
হুযুর যে আমাদের
জন্য আল্লাহর বড় দয়া বড় এহসান সে বিষয়ে কুরানেও সুরা আল ইমরানের ১৬৪ নং আয়াত আছে যেমন
(লাকাদ মান্নালল্লাহা আলাল মুমিনিনা ইজ বাআছা ফিহিম রাছুলা)
অর্থাৎ আমি নিশ্চয় মু’মীনদের উপর অনুগ্রহ
(বড় এহসান) করেছি যে আমি তাদের মাঝে আমার রাসুল কে পাঠিয়েছি।'
আল্লাহ আমাদেরকে বলেননি তোমাকে টাকা পয়সা, ধন সম্পদ, নারী, গাড়ী, বাড়ী দিয়ে, সন্তান, স্ত্রী, পরিবার, মা বাবা, জ্ঞান, গরিমা, রাজত্বি, জীবন, ইত্যাদি দিয়ে বড় এহসান করেছি বড় দয়া করেছি, কিন্তু একটা জিনিষ দিয়ে আল্লাহ বলে দিলেন হে মুমিনরা নিশ্চয়ই আমি তোমার উপর বড় দয়া করেছি আমার রাসুলকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে। আর সে দয়া সে একসান এর শোকর আদায় করার কারনে সাহাবাদের এমন কাজে যদি আল্লাহ ফখর করে, আমারা যদি সে নবীর আগমনে খুশী পালন করি মিলাদুন্নবী পালন করি শোকরীয়া আদায় করি তাহলে আল্লাহ অবশ্যই খুশী হবেন।
১২ রবিউল আউয়্যাল ঈদ হবে নাকি শোক দিবস?
আপনারা জানেন হুযুর (দঃ) ১২ রবিউল আউয়্যাল দুনিয়ায় তশরীফ এনেছেন এবং এতেরাজকারীরা বলেন এ দিন তিনি বেছাল করেছেন, এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে আমরা হুযুরের মিলাদের খুশী উদযাপন করি ওফাতের শোক কেন প্রকাশ করিনা?
এর ৪ ধরনের
জবাব রয়েছে-
১। ওলামায়ে
কেরাম এর একটি জবাব দিয়ে বলেন -১২ তারিখ যে হুযুরের ওফাত দিবস নয়
সে বিষয়ে থানভী সাহেব এর নশরুত তিব, এমদাদুল ফতোয়া নামক কিতাবে
প্রমান করেছেন ১২ রবিউল আউয়াল হুযুরের ওফাত হয়নি।
তফসিরে মাযহারীতে
আল্লামা সানাউল্লাহ পানিপত্তি (রহঃ) লিখেন
১২ তারিখ হুযুরের ওফাত হয়নি,
২।২য় জবাজ২য় জবাব যদি ধরেও নেয়া হয় ১২ তারিখ ওফাত হয়েছে তখন এ প্রশ্নের উত্তর আমরা একটি হাদীসে পায় তা হল সিহাহ সিত্তার হাদীস হুযুর (দঃ) জুমার দিনকে মুমিনীনের ঈদের দিন বলে ঘোষনা করেছেন আর এ দিন ঈদের দিন এই জন্য জুমার দিন আদম (আঃ) এর সৃষ্টিও হয়েছে আবার জুমার দিনই আদম (আঃ) এর ওফাতও হয়েছে। এখন কারো মনের প্রশ্ন যদি থাকে সে প্রশ্নের জবাব হুযুরের এ ঘোষনাতে পাওয়া যায় হযরত আদম (আঃ) জুমার দিন দুনিয়া থেকে ইন্তেকাল করেছেন সে দিন শোক প্রকাশ করতে বলেননি বলেছেন এ দিন মুমিনের ঈদের দিন কারন এ দিনে আদম (আঃ) সৃষ্টি হয়েছেন।
৩। ৩য় জবাব হল হক পন্থীদের মতে সকল নবীগন কবরে জিন্দা তাঁদের মৃত্যু হয়না, যেহেতু হুযুরের মৃত্যুই হয়নি তাহলে তার জন্য ওফাত দিবস পালন করার প্রশ্নই আসে না। নবী করিম (দঃ) সহ সকল আম্বিয়াগন যে জীবিত সে ব্যপারেও অসংখ্য দলিল রয়েছে।
হুযুর আমাদের
চোখ থেকে আড়াল হয়ে গেছেন তাঁর হায়াতে কোন পার্থ্যক্য আসেনি। যেমন
ইমাম আলা হযরত বলেন
(তু জিন্দা হে ওয়াল্লা তু জিন্দা হে ওয়াল্লা
মেরে চশমে আলম ছে চুপ জানে ওয়ালে)
৪। আর
একটি জবাব হল কারো জন্য শোক পালন করতে হলে ৩ দিন এর বেশী শোক পালন শরীয়তে অনুমতি নাই, তবে স্ত্রী স্বামীর মৃতুতে ৪ মাস ১০ দিন শোক পালন করবে।
আসল তারিখ ৯ তাহলে ১২ তারিখ কেন?
দেখুন কত দিক
থেকে প্রশ্ন এবার উনাদের অভিযোগ হুযুরের মিলাদ হবে ৯ তারিখ ১২ তারিখে কেন মিলাদ পালন
করা হয়? এর প্রশ্নটি এখন আর খাটে না কারন এখন মিলাদ গোটা মাসেই পালিত হয়,
তাই যারা বলে ৯ তারিখের কথা তাদের উচিত সেদিন হলেও পালন করা। কিন্তু
তারা তা করবে না শুধু শুধু এতেরাজ করাটাই তাদের অভ্যাস হয়েগেছে।
এখন মিলাদুন্নবী
শুধু বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তানে নয় সারা বিশ্বের মিলাদুন্নবী পালন করা হয় রাষ্ট্রিয়
ছুটি পালন করা হয় ১২ রবিউল আউয়াল দিনে।
ইরাক, আলজেরিয়া, মরক্কো, সিরিয়া, লিবিয়া, জর্ডান, তিউনিসিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশরে কুয়েতে সহ অসংখ্য
দেশে ১২ রবিউল আউয়্যাল সরকারী ছুটি
মিলাদুন্নবীতে যে পতাকা সেলাই করা হয় তা কোন গরীবকে দিলে ভাল হয়
জসনে মিলাদুন্নবীতে
দেখা যায় হাজারো পতাকা মানুষের হাতে হাতে সে ছবি তুলে ফেইসবুকে আপলোড করে এতেরাজ করা
হল এতগুলি পতাকা সেলাই না করে সে টাকা দিয়ে যদি গরীবদের সাহায্য করা হতো কতইনা ভালো
হত!
এ এতেরাজের
জবাবে বলা হয়- যিনি এ ছবি তুলেছেন নিশ্চয়ই তিনি একটি দামী
মোবাইল কিংবা দামী ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেছেন আর ফেইসবুকে আপলোড করেছেন, তাঁর কাছে উল্টা প্রশ্ন তিনি কেন এত দামী ফোন ব্যবহার করেন তিনি কি চাইলে এমন
দামী ফোন ব্যবহার না করে সে টাকা গরীবদের দিতে পারেন না?
আসল কথা হল
তাঁদের সব দুষমনি শুধু নবীর সাথে।
অথচ গোটা আরব
বিশ্ব তাঁদের স্বাধীনতার দিনকে ঈদুল ওয়াতনি বা মাতৃভুমির ঈদ হিসেবে উদযাপন করে বড় বড়
পতাকা উড়ায়, সারা দেশ সাজায় সেখানে তাদের ফতোয়া আসেনা শুধু
ফতোয়া নবীর মিলাদে।
অসংখ্য লাইটঃ অনেকে আবার এটাও বলেন মিলাদুন্নবীতে এত লাইট লাগানোর
প্রয়োজন কি? ১টি বাতি জ্বালিয়ে দিলেই যথেষ্ট, এ এতেরাজের জবাবে ওলামায়ে কেরাম বলেন- আল্লাহ তায়ালা
চাঁদ সুরজ সৃষ্টি করলেই যথেস্ট হত এত হাজার হাজার তারার প্রয়োজন কি? তারা সৃষ্টি করেছেন সৌন্দর্য্যের জন্য এরশাদ হচ্ছে (বিজিনাতিনিল
কাওয়াকেব) তারা হল সৌন্দর্য্যের জন্য। আল্লাহু
জামিলুন ইউহিব্বুল জামাল। আল্লাহ নিজেও
সুন্দর আর আল্লাহ সুন্দরকে পছন্দ করেন।
বিজয় দিবসে
সারা বাংলাদেশেও প্রতিটি ঘরে দোকানে অফিসে আদালতে পতাকা লাগানো হয় এটা যদি দেশের প্রতি
ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হয়, তেমনি নবীর মিলাদে কেহ যদি কলমা খচিত পতাকা,
ইসলামী পাতাকা কিংবা বাংলাদেশের পতাকা উড্ডয়ন করে, কিংবা লাগায়
সেটাও হবে নবীর প্রতি মহব্বতের বহিপ্রকাশ।
মিলাদুন্নবী শিরিক?
মিলাদ অথ হল
জন্ম, মিলাদুন্নবী হল নবীর জন্ম দিবস পালন করা, এখন অনেকে একে শিরিক বলে, অথচ শিরিক হবে যাতে আল্লাহর
সাথে শরিক করা হয়, আল্লাহ বলেন (লাম এয়ালিদ
ওয়া লাম ইউলাদ) তিনি কারো কাছ থেকে জন্ম গ্রহণ করেনি কাউকে জন্ম
দেননি। সুতরাং মিলাদ শব্দটি আল্লাহর সাথে বলাটাই
মুলত শিরিক, আর নবীর মিলাদ পালন করাটা হল নবীকে বান্দা বলে
স্বীকার করে নেয়া। কারন মিলাদ
আল্লাহর হয়না বান্দারই হয়। নবীকে
যারা বান্দা মানে তারাই মিলাদ পালন করেন।
সবশেষে ওলামায়ে
কেরাম সকল অভিযোগ এর জবাব এক কথায় দিয়ে দিয়েছেন যে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করার পক্ষে
কোরান ও হাদীসে অসংখ্য দলিল রযেছে এই বিষয়ে অসংখ্য কিতাব রচিত হয়েছে, কিন্তু যারা মিলাদুন্নবীর বিরোধীতা করে আসছেন তারা শুধু নানান এঙ্গেল থেকে
নানা ধরনের প্রশ্নই ছুড়ে মারছেন কিন্তু তারা ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করাযে শরীয়ত বিরোধী,
ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা কোরান ও হাদীসে নিষেধ আছে, কিংবা কোন সাহাবী, তাবেয়ী, তবে
তাবেয়ী নিষেধ করেছেন এমন ১টি দলিলও উপস্থাপন করতে পারবে না। শুধু
তারা মানুষকে এসব প্রশ্নগুলি করে বিভ্রান্তই
করে।
আমাদের শরীয়তের
বিধান হল (বি আসলিল আশিয়ায়ি এবাহাতুন) প্রত্যেক জিনিষ মুলত মুবাহ। বা
জায়েজ। শরীয়ত যা নিষেধ করেনি তা জায়েজ কাজ।
দলিল হারামের
জন্য দরকার, হালালের জন্য দলিলের প্রয়োজন নাই, যেমন
শুকরের গোস্ত হারাম , মদ হারাম, জুয়া হারাম কার সরাসরি কুরানে নিষেধাজ্ঞা আছে।
যেমনপক্ষ
পক্ষান্তরে
মাদরাসার জন্য বড় বড় দালান বানাও এমন কথা কি কুরানে আছে? হাদীসে আছে? কোন সাহাবী কি বড় বড় মাদরাসার দালান করেছেন?
কোন তাবেয়ী করেছেন? কোন তবে তাবেয়ী করেছেন?
আমরা জানি কেহই করেন নি, কিন্তু এখন সারা দেশে
অসংখ্য বড় বড় দালান বিশিষ্ট মাদরাসা প্রতিষ্টিত আছে প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, অথচ এ ব্যপারে কোন দলিল নাই, তবে যারা মাদরাসা বানাচ্ছে
তাদের দলিল হল যদিও কুরান হাদীসে স্পষ্ট মাদরাসার দালান বানানোর আদেশ নাই, তবে এ বিষয়ে কোন নিষেধাজ্ঞাও নাই, তাই এটা মুবাহ বা জায়েজ, আর জায়েজ কাজ করাতে কোন গুনাহ নাই, বরং সময়ের আবর্তে
যুগের চাহিদায় এসব জায়েজ কাজ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে যায়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক ও সত্য বুঝার ও হক পথে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই