Header Ads

Header ADS

নবীপ্রেমের ১০টি বাস্তব বিষ্ময়কর ঘটনা। সাহাবীদের নবীপ্রেম

 

নবীপ্রেমের ১০টি বাস্তব বিষ্ময়কর ঘটনা

কেয়ামত পর্যন্ত এমন ঘটনা হয়ত আর ঘটবে না



(কুল ইন কুনতুম তুহিব্বুনাল্লাহা ফাত্তাবিউনি ইউহবিবকুমুল্লাহ)

সাহাবাগণ নবীর আনুগত্য করেছেন যেমন আল্লাহ বলেছেন তেমন- আল্লাহ এরশাদ করেন-

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। [ সুরা ইমরান ৩:৩১ ]

قُلْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَالرَّسُولَ فإِن تَوَلَّوْاْ فَإِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ الْكَافِرِينَ

বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না। [ সুরা ইমরান ৩:৩২ ]

وَأَطِيعُواْ اللّهَ وَالرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রসূলের, যাতে তোমাদের উপর রহমত করা হয়। [ সুরা ইমরান ৩:১৩২ ]

يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَن يُطِعْ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا

তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। [ সুরা আহযাব ৩৩:৭১ ]

وَأَطِيعُواْ اللّهَ وَرَسُولَهُ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

আর আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য কর, যদি ঈমানদার হয়ে থাক। [ সুরা আনফাল ৮:১ ]

 

মহব্বত হল অন্তরের গোপন অবস্থা যার কিছু আলামত আছে আজকের আলোচনায় অন্তরে আল্লাহ রাসুলের প্রতি যদি মহব্বত থাকে তা কিভাবে বুঝবেন তার চিহ্ন বা আলামত কি তা বর্ণনা করার চেষ্টা করব

 

কামেল মহব্বত নাকেছ মুহব্বত

প্রথমে একটি সুত্র মনে রাখবেন মহব্বত নাকেছ বা অপুর্নাঙ্গও হয় আবার মহব্বত পূর্নাঙ্গও হয়, যেমন আপনি নামাজ রোজা হজ্ব জাহাত, নেক আমল, সব যদি করেন তা আপনার অন্তরে যে মহব্বত আছে তাকে পূর্নাঙ্গতা দেয়, কিন্তু আপনি যদি এসব আমল না করেন তাহলেও আপনার ভিতর যদি মহব্বত থাকে তা  পুর্নাঙ্গ নয় বরং অপুর্নাঙ্গ ঈমানও একই, মানুষ ঈমানদার হয় কিন্তু সে যখন আমলে ছালেহ করে তখন তার ইমান কামেল হয় অন্যথা ঈমান নাকেছ

 

মহব্বতের আলামতঃ

অন্তরে মহব্বত আছে সেটার কিছু আলামত আছে যা সাহাবাদের জীবনে প্রায় সময় প্রকাশিত হত যা একটি একটি করে ইনশা আল্লাহ বয়ান করব-

 

প্রথম আলামত সীমাহীন আদব সম্মান করাঃ

আদব অনেক রকম হয় যেমন আপনি এক জায়গায় বসে আছেন সেখানে একজন বৃদ্ধ লোক আসলেন তাকে জায়গা দিয়ে দিলেন সিট ছেড়ে দিলেন এটা হল বৃদ্ধের প্রতি আদব , আদব মহব্বত ছাড়া আদবও হতে পারে আবার যখন আদব বর্ডার লাইন অতিক্রম করে সেখান থেকেই মুলত মহব্বত শুরু হয় আপনার অন্তরে যত বেশী মহব্বত হবে তত বেশী আপনার পক্ষ থেকে আদব সম্মান প্রকাশিত হবে সুতরাং বুঝা গেল সম্মান বৃদ্ধিকারী বস্তু হল ভালবাসা মুহব্বত তাই মহব্বত কম থাকলে আপনার পক্ষ থেকে আদব সম্মানও কম প্রকাশিত হবে

মহব্বত যত বেশী হবে আদবও তত বেশী হবে

মহব্বত কম হলে আদবও তত কম হবে

মহব্বত না থাকলে বে আদবী প্রকাশ পাবে

মা বাবার জন্য মহব্বত সীমার ভিতর হবে, সম্মানও সীমার ভিতর হবে মুরুব্বীদের মহব্বত করুন, শিক্ষককে মহব্বত করুন, পীরকে মহব্বত করুন, সকলের জন্যই সীমার ভিতর হতে হবে কিন্তু আল্লাহ তাঁর রাসুলের বারেগাহে যদি আপনার সম্মান সীমার ভিতর হয় সেটা হল বেয়াদবী আল্লাহ রাসুলের প্রতি আদব সীমা অতিক্রম করতে হবে আর সে আদব স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা শিখিয়েছেন- সুরা হুজরাতের ২নং আয়াতে এরশাদ করেন

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ

মুমিনগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবে না। [ সুরা হুজুরাত ৪৯:২ ]

দেখুন আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নবীর আওয়াজ থেকে উঁচু আওয়াজে কথা বলার কারনে বান্দার সকল আমল বরবাদ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন এমনকি তার আমল যে বরবাদ হয়ে যাবে সে বুঝতেও পারবে না যে নবীর দরবারের আদব স্বয়ং আল্লাহ শিখাচ্ছেন সে দরবারের আদব কি সীমার ভিতর না সীমাহীন? অবশ্যই সীমাহীন আদব হবে

সুরা ফাতাহ এর - নং আয়াতে এরশাদ করেন

إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا

আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি অবস্থা ব্যক্তকারীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে। [ সুরা ফাতাহ ৪৮:৮ ]

لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا

যাতে তোমরা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তাঁকে  সাহায্য ও সীমাহীন সম্মান কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর। [ সুরা ফাতাহ ৪৮:৯ ]

 

সাহাবাগণের সীমাহীন সম্মানের উদাহারনঃ

হুদায়বিয়াতে উরওয়া বিন মাসউদ সাহাবীদের নবী প্রেম দেখে হতবাক

বুখারী শরীফের হাদীস নং ২৫৮১- ঘটনাটি ঘটেছে হুদায়বিয়ার ময়দানে, মক্কার কাফেরেরা উরওয়া বিন মসউদকে গোপন সংবাদ গ্রহণের জন্য মুসলমানদের কাফেলার কাছে পাঠান, উরওয়া বিন মসউদ হুদায়বিয়া ময়দানে মুসলমানদের অবস্থা অবলোকন করে মক্কায় গিয়ে কাফেরদের কাছে রিপোর্ট করেন, তিনি পরবর্তীতে মুসলমান হয়ে যান তিনি যখন কাফেরদের কাছে গিয়ে মুসলমানদের হালত বর্ণনা করেন তিনি বলেন আমি দেখেছি মুসলমানরা তাদের নবীকে এতই সম্মান করেন তিনি যখন অজু করেন তাঁর অজুর পানি নেয়ার জন্য তাড়া কাড়াকাড়ি করে, তিনি থুথু নিক্ষেপ করলে সে থুথু মোবারক সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে কেউ না কেউ তা হাতের মধ্যে নিয়ে নিতেন এবং থুথু মোবারক মুখে ও শরীরে মালিশ করে নিতেন।

 

প্রশ্ন হল- অজুর পানি থুথু নিয়ে শরীরে মালিশ করা এটা কি সীমার ভিতরে সম্মান নাকি সীমার অধিক সম্মান?

অবশ্যই সীমার অধিক সম্মান থাকলেই এমন আমল করতে পারে, নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই সাহাবাগন নবী করিম (দঃ) কে সীমার অধিক মহব্বত করত আর সে মহব্বতের বহিপ্রকাশ হতো তাঁদের এসব আমল দ্বারা আর নবীর প্রতি এমন মহব্বতের বহিপ্রকাশই মুলত ঈমান সুবহানাল্লাহ

 

উরওয়া বিন মসউদ তার গোত্রের লোকদের বলেন খোদার কসম আমি যুগের বড় বড় রাজাদের দেখেছি কিন্তু তাদের প্রতি তাদের প্রজাদের সম্মানও দেখেছি কিন্তু এমন সম্মান দেখিনি যা মুহাম্মদের সাহাবারা মুহাম্মদকে করে সে হুদায়বিয়াতে ১৫শত সাহাবা ছিল, আর ১৫ শত সাহাবার সুন্নত এ হাদীসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি আর তা হল নবীর প্রতি সীমাহীন মহব্বত ভালবাসা আদব ও সম্মান প্রকাশ করতে হবে

 

আজকাল আমাদের কিছু ভাই নবীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার ব্যপারে দলিল খুঁজে, নবীর প্রতি মহব্বত দেখানের ব্যপারে দলিল খুঁজে, যদি হাজারো দলিল দেন তবুও তাঁদের মন ভরে না, কারন তাঁদের অন্তরে রোগ আছে সাহাবারা নবীকে মহব্বত করেছেন আদব ও সম্মান করেছেন তার জন্য দলিল খুঁজেন নাই , মন যেভাবে চেয়েছে যেভাবে মন খুশী হয় সেভাবেই নবীকে সম্মান করেছেন যা পৃথিবীর বুকে ২য় নজির কেউ দেখাতে পারবে না। নবী

 

সহিহ মুসলিম শরীফের ২৩২৫ নং হাদীসঃ হাদীসের মফহুম হল একদিন হুযুর (দঃ) চুল কাটাচ্ছিলেন আর উনার আশে পাশে সাহাবারা দল বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে, এই জন্য দাঁড়িয়ে আছে যাতে হুযুরের একটি চুলও যেন জমিনে পড়তে না পারে,  হুযুরের চুল মোবারক তারা হাতে নিয়ে সম্মানের সাথে সংগ্রহ করছে

এ হাদীসের দ্বারাও বুঝা যায় হুযুরের চুল মোবারক সংগ্রহ করা এটাও মুলত সাহাবাগনের সীমাহীন আদবের বহিপ্রকাশ

তাই আবারো বলছি যদি আদব বা সম্মান সীমার ভিতর থাকে তা হবে সাধারণ লোকজনের প্রতি সম্মান আর যদি সম্মান সীমা অতিক্রম করে তখনই তা হলে রাসুলের প্রতি সম্মান

 

আবু দাউদ হাদীস নং ৫২২৩: বাবু ফি কুবলাতিল য়াদ- হাতে চুম্বন করার অধ্যায়- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন আমরা যখনই কোন সফর থেকে আসতাম হুযুরের সাথে সাক্ষাত করতাম আর হুযুরের সাথে সাক্ষাতা সালাম দিতাম আর হাতে চুম্বন করতাম

আজ হাতে চুম্বন করাকে অনেকে বলে বেদআত, যা সুন্নত তাঁর নাম রেখে দিল বেদআত

 

ইমাম বুখারী আল আদাবুল মুফরাদ এর হাদীস নং- ৯৭৫: হযরত জারেহ (রাঃ) বর্ণনা করেন- ওয়াফদে আবদুল কায়েছ এর ঘটনা (ফানুকাব্বিলু য়াদা রাসুলাল্লাহ ওয়া রিজলাইহ) আমরা আসলাম আর হুযুরের হাতে এবং পায়ে চুম্বন করলাম

ইমাম বুখারী হাত ও পা চুম্বনের বিষয়ে সম্পূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছেন তাঁর আল আদাবুল মুফরাদ নামক হাদীস গ্রন্থে  চিন্তা করুন যখন হুযুরের পা চুম্বন করত তখন তাঁদের কেমন লাগত সুবহানাল্লাহ

 

তিরমিযি (বাবু ফি মিলাদিন নাবি) এর হাদীস- কায়েস বিন মাখরামা বর্ণনা করেন আমি এবং হুযুর (দঃ) যে বছর আবরাহা কাবা ঘরে হামলা করেন আমাদের জন্ম সে বছরই হয়েছিল, তখন হযরত কায়েস বিন মাখরামাকে হযরত ওসমান (রাঃ) প্রশ্ন করলেন  আপনি বয়সে বড় নাকি হুযুর (দঃ) বয়সে বড়, তিনি জবাব দিলেন অবশ্যই অবশ্যই হুযুরই বড়, (হুয়া আকবারুন মিন্নি ওয়া আনা আকদামু মিনহু ফিল মিলাদ) আমি কেবল জন্মই আগে হয়েছি, কিন্তু বড় অবশ্যই হুযুর (দঃ) দেখুন সাহাবাগনের হুযুরের প্রতি কেমন সম্মান ও আদব ও মুহব্বত হলে এমন সুন্দর কথা বলতে পারেন সুবহানাল্লাহ আল্লাহ আমাদের অন্তরেও সাহাবাগনের মত নবীর প্রতি সীমাহীন মহব্বত দান করুন আমিন

 

মুসতাদরাকে হাকেম এর হাদীস নং ৫৩৯৮: হুযুরের চাচা আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিবকে কেহ প্রশ্ন করল আপনি বড় নাকি হুযুর বড় তখন হযরত আব্বাস (রাঃ) বলেন (হুয়া আকবারা মিন্নি) বড় অবশ্যই হুযুর (ওয়া আনা উলিদতু কাবলাহু) আমি কেবত তার আগে জন্মেছি দেখুন চাচা হয়ে নবীজির প্রতি কেমন সম্মান আল্লাহু আকবার

 

বুখারীর হাদীস নং ৬৫০: কিতাবুল আজান-


عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ قَالَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ أَبِي حَازِمِ بْنِ دِينَارٍ عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ذَهَبَ إِلَى بَنِي عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ لِيُصْلِحَ بَيْنَهُمْ فَحَانَتْ الصَّلاَةُ فَجَاءَ الْمُؤَذِّنُ إِلَى أَبِي بَكْرٍ فَقَالَ أَتُصَلِّي لِلنَّاسِ فَأُقِيمَ قَالَ نَعَمْ فَصَلَّى أَبُو بَكْرٍ فَجَاءَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَالنَّاسُ فِي الصَّلاَةِ فَتَخَلَّصَ حَتَّى وَقَفَ فِي الصَّفِّ فَصَفَّقَ النَّاسُ وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ لاَ يَلْتَفِتُ فِي صَلاَتِهِ فَلَمَّا أَكْثَرَ النَّاسُ التَّصْفِيقَ الْتَفَتَ فَرَأَى رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَشَارَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم أَنْ امْكُثْ مَكَانَكَ فَرَفَعَ أَبُو بَكْرٍيَدَيْهِ فَحَمِدَ اللهَ عَلَى مَا أَمَرَهُ بِهِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ ذَلِكَ ثُمَّ اسْتَأْخَرَ أَبُو بَكْرٍ حَتَّى اسْتَوَى فِي الصَّفِّ وَتَقَدَّمَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَصَلَّى فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ يَا أَبَا بَكْرٍ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَثْبُتَ إِذْ أَمَرْتُكَ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ مَا كَانَ لِابْنِ أَبِي قُحَافَةَ أَنْ يُصَلِّيَ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا لِي رَأَيْتُكُمْ أَكْثَرْتُمْ التَّصْفِيقَ مَنْ رَابَهُ شَيْءٌ فِي صَلاَتِهِ فَلْيُسَبِّحْ فَإِنَّهُ إِذَا سَبَّحَ الْتُفِتَ إِلَيْهِ وَإِنَّمَا التَّصْفِيقُ لِلنِّسَاءِ.

 সাহল ইবনু সাদ সাঈদী (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনু আওফ গোত্রের এক বিবাদ মীমাংশার জন্য সেখানে যান। ইতোমধ্যে (আসরের) সালাতের সময় হয়ে গেলে, মুয়ায্যিন আবূ বাকর (রাযি.)-এর নিকট এসে বললেন, আপনি কি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে নেবেন? তা হলে ইক্বামাত দেই? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আবূ বাকর (রাযি.) সালাত আরম্ভ করলেন। লোকেরা সালাতরত অবস্থাতেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন এবং তিনি সারিগুলো ভেদ করে প্রথম সারিতে গিয়ে দাঁড়ালেন। তখন সহাবীগণ হাতে তালি দিতে লাগলেন। আবূ বাকর (রাযি.) সালাতে আর কোন দিকে তাকাতেন না। কিন্তু সহাবীগণ যখন অধিক করে হাতে তালি দিতে লাগলেন, তখন তিনি তাকালেন এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে পেলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি ইঙ্গিত করলেন- নিজের জায়গায় থাক। তখন আবু বাকর (রাযি.) দুহাত উঠিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে পিছিয়ে গেলেন এবং কাতারের বরাবর দাঁড়ালেন। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে এগিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি বললেন, হে আবূ বাকর! আমি তোমাকে নির্দেশ দেয়ার পর কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছিল? আবূ বাকর (রাযি.) বললেন, আবূ কুহাফার পুত্রের জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা শোভনীয় নয়। অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের এক হাতে তালি দিতে দেখলাম। কারণ কী? শোন! সালাতে কারো কিছু ঘটলে সুবহানাল্লাহ্ বলবে। সুবহানাল্লাহ্ বললেই তার প্রতি দৃষ্টি দেয়া হবে। আর হাতে তালি দেয়া তো মহিলাদের জন্য। (১২০১,১২০৪,১২১৮,১২৩৪, ২৬৯০, ২৬৯৩, ৭১৯০ মুসলিম ৪/২২, হাঃ ৪২১ আহমাদ ২২৮৭১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৫০)

একবার চিন্তা করুন সাহাবাগন হুযুর (দঃ) এর  প্রতি সম্মান দেখানোর ব্যপারে কোন কৃপনতা করত না চাই তা যে কোন অবস্থাতেই হউক, নামাজের মধ্যে জামাতের মধ্যেও তাঁরা হুযুর (দঃ) কে সম্মান দেখাতে এক বিন্দু কৃপনতা করত না, হুযুরকে যেমন করে সম্মান করতে হয় তারা তেমন করে সম্মান দেখাতে জানত, সম্মান দেখাতে গিয়ে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে, নামাজে আমলে কছির হবে এসব চিন্তা তাঁদের মাথায় ছিল না তাঁদের চিন্তা ছিল নবীর প্রতি যেন অসম্মান না হয়। সুবহানাল্লাহ। আবু বকর ইমামতি ছেড়ে পিছনে চলে আসলেন, সাহাবাগন তালি দিয়ে সামনের কাতারের মুসল্লীদের সতক করতে লাগলেন কাতার ভেঙ্গে হুযুরকে জায়গা করে দিলেন তবুও তাঁদের নামাজ বিন্দু মাত্র নষ্ট হল না।

 

২য় আলামত হুযুরের দীদারঃ হুযুর (দঃ)কে সারাক্ষণ দেখতে থাকা দেখার জন্য ছটফট করা এটাও মহব্বতের আরো একটি আলামত আসুন সাহাবাগন হুযুরের দীদার লাভের জন্য কেমন করত তার কিছু ঝলক হাদীসের আলোকে জেনে নিই

তিরমিযির হাদীস ২৩২৯: হযরত সৈয়্যদুনা ওমর (রাঃ) একদিন দুপুরের সময় হুযুরের হুজরার সামনে এসে দাঁড়িয়ে রইল, কিছুক্ষন পর সেখানে হযরত আবু বকর (রাঃ) এসে উপস্থিত হলেন, তিনি হযরত ওমরকে প্রশ্ন করলেন কি ব্যপার ওমর আপনি অসময়ে হুযুরের হুজরার সামনে কেন দাঁড়িয়ে আছেন? তখন হযরত ওমর (রাঃ) আরজ করলেন আমি ক্ষুধার্থ তাই হুযুরের হুজরার সামনে চলে এসেছি, ওমর (রাঃ) আবু বকরকে প্রশ্ন করলেন আপনি কেন এসেছেন? আবু বকর (রাঃ) ও বললেন আমারও একই অবস্থা কিছুক্ষন পর হুযুর (দঃ) ও সেখানে হাজির হলেন আবু বকর ও ওমর (রাঃ) হুযুরকে তাঁদের ক্ষুধার কথা জানালেন আর বললেন হুযুর আমরা ক্ষুধার্থ তাই আপনার দীদার করতে এসেছি, হুযুর (দঃ) তাঁদেরকে বললেন আমিও ক্ষুধার্থ একবার চিন্তা করুন সাহাবাগন ক্ষুধার্থ হলে খাবারের জন্য দৌড়াতো না বরং হুযুরের চেহেরায়ে আনোয়ার দেখার জন্য অপেক্ষা করত, আর হুজুরের চেহেরায়ে আনোয়ার দেখলেই সাহাবাগনের ক্ষুধা নিবারন হয়ে যেত সুবহানাল্লাহ

 

হে আল্লাহ আমাকে অন্ধ করে দাওঃ

সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ ইবনে আবদি রাব্বিহি। তিনি তার বাগানে ফল-ফলাদি ও গাছ-গাছালি দেখাশোনা করছেন। এমন সময় নবীজির ইন্তিকালের সংবাদ জানতে পেলেন। হৃদয়ের কোমল বৃত্তে তিনি আচমকা প্রচণ্ড আঘাত পেলেন। দুঃখে শোকে আর মহব্বতের আতিশয্যে আল্লাহর কাছ প্রার্থনা করে বসলেন, হে আল্লাহ! আমার দৃষ্টিশক্তি রহিত করে দাও। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে আমি এই চোখ দিয়ে আর কিছুই দেখতে চাই না। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত এই প্রার্থনা বৃথা গেল না। সত্যিই দৃষ্টিশক্তি রহিত করে দেয়া হলো তারমানুষের প্রতি কি মানুষের এমন ভালোবাসাও হতে পারে, যে ভালোবাসার কাছে নিজের দৃষ্টিশক্তির মহব্বতও হার মানে!

 

হযরত বেলাল হুযুরের দীদার করতে করতে আযাব দিতে হুযুরের বেছালের পর তিনি আযান দেয়া বন্ধ করে দিলেন।

 

হুযুর আপনাদের প্রসংশা করেছেন

সাহাবাগন নবীকে দেখে পাগল হয়েছেন আজ আপনারা নবীকে না দেখে শুধু নবীর শান ও শওকত শুনে শুনে পাগল হয়েছেন আপনাদের আমাদের ব্যপারে হুযুর কি বলেছেন শুনুন

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ مِنْ أَشَدِّ أُمَّتِى لِى حُبًّا نَاسٌ يَكُوْنُونَ بَعْدِى يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ رَآنِى بِأَهْلِهِ وَمَالِهِ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে আমার প্রতি ভালোবাসা সবচেয়ে বেশি প্রগাঢ় হবে এমন কিছু লোক, যারা আমার পরবর্তীকালে আগমন করবে; তাদের প্রত্যেকে এই আশা পোষণ করবে যে, যদি সে তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের বিনিময়ে আমার দর্শন লাভ করতে পারত!  

আহমাদ ৯৩৯৯, মুসলিম ৭৩২৩, ইবনে হিব্বান ৭২৩১,

 

৩য় আলামত হল যা অপছন্দ করেন তা অপছন্দ করাঃ

মুত্তাফাক আলাই হাদীসঃ  হুযুর (দঃ) স্বর্ণ হারাম হওয়ার আগে নিজের জন্য স্বর্ণের আংটি বানাতে দিলেন,  আবদুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) এরশাদ করেন যখন হুযুর (দঃ) স্বর্ণের আংটি বানালেন সকল সাহাবাগনের মধ্যে তা প্রচার হয়ে গেল তখন সকল সাহাবাগন হুযুরের সুন্নত পালনার্থে স্বর্ণের আংটি বানিয়ে নিল হুযুর (দঃ) স্বর্ণের আংটিটি পরলেন না বরং ছুড়ে ফেলে দিলেন তখন সকল সাহাবা নিজ নিজ আংটি ছুড়ে ফেলে দিল, কেহ স্বর্ণের আংটি ঘরে নিয়ে গেল না

হুযুরের প্রতি সাহাবাগনের ভালবাসা এমনই ছিল

মুসলিম শরীফের হাদীস নং ২০৯০: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন- এক সাহাবী স্বর্ণের আংটি পরিধান করে আসল, হুযুর (দঃ) তাঁকে ডাকলেন তার হাত থেকে আংটিটি খুলে ছুড়ে মারলেন, হুযুর (দঃ) যখন হুজরায় তশরীফ নিয়ে গেলেন সে সাহাবীও চলে যেতে লাগল, তখন অন্য একজন বললেন হুযুর আংটি নারীদের জন্য হালাল রেখেছেন আপনি এটি উঠিয়ে নিন নিজের ঘরে কোন মহিলা থাকলে তাঁকে দিয়ে দিন, তখণ সে সাহাবী জবাব দিলেন (ওয়াল্লাহে লা আখুজুহু আবাদান) আল্লাহর কসম আমি কখনো সে আংটি উঠাবো না , যে আংটিটি হুযুর (দঃ) ফেলে দিয়েছেন আমি কিভাবে তা তুলে নিয়ে ঘরে নিয়ে যাব?

ফতোয়া হল তা পুরুষের জন্য হারাম নারীর জন্য হালাল, কিন্তু সাহাবাগন সেখানে ফতোয়া দেখেনি বরং হুযুর যেটা ফেলে দিয়েছে সেটা ঘরের নারীর জন্য যদিও হালাল হয় সেটা এখন আমার তুলে নিয়ে যাওয়াটা হুযুরের প্রতি ভালবাসার বিপরীত দেখা যাচ্ছে এমনই ছিল সাহাবাগনের ভালবাসা

মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদের নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাকো (হাশর ৫৯/৭)

 

মহব্বতের ৪র্থ আলামত হল

যেমন করেছেন বিনা প্রশ্নে তেমন করা

মসনদে আহমদ ৪৮৭০: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) এক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি সোজা রাস্তা দিয়ে হাটার সময় হঠাৎ কিছুটা ঘুরে মোড় কেটে চলতে লাগলেন, অন্যান্যরা প্রশ্ন করল আপনি এমন কেন করলেন? তখন ইবনে ওমর বললেন আমিও জানিনা এখানে একবার আমি হুযুরের সাথে যাচ্ছিলাম হুযুর এই জায়গায় এসে সোজা রাস্তায় সোজা না গিয়ে একটু মোড় ঘুরে গিয়েছিলেন আমি আজ শুধু হুযুরের সে সুন্নত পালন করলাম

এটাই হল মুহব্বত, কেননা মুহব্বতের প্রকাশ কেন প্রশ্ন দিয়ে হয়না

৫ম আলামত মাহবুবকে বাঁচাতে

নিজের জীবনের পরোয়া না করা

হাদিসটি ইমাম বোখারি (রহ.) আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম থেকে বর্ণনা করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের জীবনের চেয়েও রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বেশি ভালোবাসতেন। এর বহু প্রমাণ হাদিস ও ইতিহাসের গ্রন্থগুলোতে পাওয়া যায়।

এ পর্যায়ে হিজরতের সফরে গারে সওরের ঘটনা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। মক্কা থেকে পাঁচ মাইল পথ অতিক্রম করে রাতের আঁধারে মহানবী (সা.) ও তাঁর বিশ্বস্ত সঙ্গী আবু বকর সিদ্দিক (রা.) সওর পাহাড়ে পৌঁছলেন। পাহাড়ের জঞ্জালপূর্ণ গুহার মুখে আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে অপেক্ষা করার মিনতি জানিয়ে আবু বকর গুহাভ্যন্তরে প্রবেশ করলেনভেতরকার সব জঞ্জাল পরিষ্কার করলেন। গুহার মধ্যে কিছু ছিদ্র দেখে সাপ-বিচ্ছুর গর্ত মনে করে নিজের সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত কাপড় টুকরো করে সেগুলোর মুখ বন্ধ করলেন। কিন্তু দুটি ছিদ্র বাকি থাকতেই কাপড় শেষ হয়ে যাওয়ায় ছিদ্র দুটি নিজের গোড়ালিচাপা দিয়ে রাসুল (সা.)-কে ভেতরে আহ্বান করলেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) ক্লান্ত শরীরে হজরত আবু বকরের বিছিয়ে দেওয়া ঊরুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। ওদিকে গর্তের ভেতর থেকে বিষাক্ত বিচ্ছু আবু বকরের পায়ে বারবার দংশন করে চলেছে। বিষক্রিয়ায় তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেছে। জীবন যাওয়ার উপক্রমকিন্তু রাসুলের প্রতি গভীর ভালোবাসা, নড়াচড়া করলে প্রিয় রাসুলের ঘুম ভেঙে যাবে ভয়ে অসহ্য যন্ত্রণাসহ আবু বকর স্থির ছিলেন। কিন্তু বিষক্রিয়ার প্রাবল্যে তাঁর অজ্ঞাতে এক ফোঁটা অশ্রু রাসুলের মুখে ঝরে পড়ায় আল্লাহর হাবিবের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, 'আবু বকর, আপনি কাঁদছেন? আবু বকর জবাব দিলেন, 'ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনার প্রতি আমার মাতা-পিতা উৎসর্গিত হোক! আমাকে বিচ্ছু দংশন করেছে।' রাসুল (সা.) ক্ষতস্থানে থুতু লাগিয়ে দিতেই আবু বকর বিষযন্ত্রণা থেকে আরোগ্য লাভ করেন। আর আল্লাহর রাসুল তাঁর জন্য দোয়া করেন, 'আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন, মানুষ যখন আমাকে অবিশ্বাস করেছে, তখন আপনি আমাকে বিশ্বাস করেছেন; মানুষ যখন আমাকে অপদস্থ করেছে, তখন আপনি আমাকে সাহায্যে করেছেন; আপনি আমার ওপর ইমান এনেছেন, যখন মানুষ আমাকে অস্বীকার করেছে আর উদ্বিগ্ন অবস্থায় আপনি আমাকে সাহচর্য দান করেছেন' (বোখারি)।

রাসুলের প্রতি ভালোবাসার চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছিলেন সাহাবায়ে কেরাম উহুদের যুদ্ধের সময়।

(আবু দুজানা ও সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস)

মুসলমানরা যখন খালিদ ইবনে ওয়ালিদের আকস্মিক আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়লেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন নিরাপত্তাহীন অবস্থায়, তখন হজরত আবু দুজানা (রা.) নিজেকে ঢাল বানিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রক্ষা করতে লাগলেন। কাফিরদের অবিরাম নিক্ষিপ্ত তীরগুলো তাঁর পিঠে বিদ্ধ হচ্ছিল, আর তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আড়াল করে ঝুঁকে দাঁড়িয়েছিলেন। হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) আল্লাহর রাসুলের ওপর কাফিরদের আক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টা করছিলেন। হজরত সাদ বলেন, 'আবু দুজানা একটার পর একটা তীর আমাকে দিয়ে চলেছেন আর বলছেন, তুমি তীর নিক্ষেপ করতে থাকো' (সিরাতে ইবনে হিশাম)।

ঘটনার ধারাবিবরণী থেকে মনে হয়, আবু দুজানা নিজের শরীরে বিদ্ধ তীরগুলো খুলে সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসকে সরবরাহ করছিলেন। রাসুলের প্রতি নিজ জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসার প্রমাণ আর কী থাকতে পারে! উহুদের যুদ্ধ সমাপ্তির পর কাফিররা রণাঙ্গন ছেড়ে চলে যাওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) শহীদ ও আহতদের খবর নিতে লাগলেন। হজরত জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বলেন, "রাসুলে করিম (সা.) আমাকে সাদ ইবনে রবির খোঁজ নিতে পাঠালেন। রাসুল (সা.) আমাকে বলে দিলেন, 'যদি সাদকে পাওয়া যায়, তাহলে তাকে আমার সালাম দেবে এবং জিজ্ঞাসা করবে, সে এখন কেমন বোধ করছে।' আমি শহীদদের লাশের মধ্যে তাকে খুঁজে পেলাম। দেখলাম তিনি মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তাঁর শরীরে তীর, বর্শা ও তলোয়ারের সত্তরটি আঘাত লেগেছিল। আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, 'হে সাদ, আল্লাহর রাসুল আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং জানতে চেয়েছেন, আপনি এখন কেমন অনুভব করছেন।' হজরত সাদ ইবনে রবি (রা.) বললেন, 'আল্লাহর রাসুলকে আমার সালাম জানাবে, রাসুলকে জানাবে আমি জান্নাতের খুশবু পাচ্ছি। আমার আনসার ভাইদের বলবে, যদি তোমাদের একটি চোখের স্পন্দন বাকি থাকা অবস্থায় শত্রুরা আল্লাহর রাসুলের কাছে পৌঁছতে পারে, তাহলে আল্লাহপাকের দরবারে তোমাদের কোনো ওজর-আপত্তি কাজে আসবে না।' এ কথা বলার পরই তিনি ইন্তেকাল করেন'"

হযরত যায়েদ ইবনে দাসানা রা. কাফিরদের হাতে বন্দী হবার পর পাপিষ্ঠরা তাকে শূলে চড়ানোর আয়োজন করে। তামাশা দেখার জন্য সমবেত হয় অনেক লোক। আবু সুফিয়ান তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি নরম সুরে জিজ্ঞাসা করলেন, যায়েদ! সত্যি করে বলতো; আল্লাহর শপথ দিয়ে তোমাকে জিজ্ঞেস করছি, তুমি কি এটা পছন্দ কর যে, তোমার পরিবর্তে মুহাম্মদের গর্দান উড়িয়ে দেয়া হোক আর তোমাকে হাসিমুখে তোমার পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হোক। হযরত যায়েদ রা. দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিলেন, আল্লাহর শপথ! নবীজির যাত্রাপথে একটি কাঁটা লুকিয়ে রাখা হবে আর আমি ঘরে বসে আরাম করবো, এতটুকুও আমার সহ্য হবে না।
হযরত যায়েদের জবাব শুনে সেদিন মক্কার কাফেররা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলো। আরব নেতা আবু সুফিয়ান মন্তব্য করেছিলেন, মুহাম্মদের প্রতি তার সাথীদের যে ভালোবাসা আমি দেখেছি, অন্য কারো প্রতি এমন ভালোবাসা আমি আর কখনো দেখিনি।

এখনো সময় আছে রাসুলের আনুগত্য করার সেদিন আসার আগে যেদিন শুধু আফসুস করার ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না

يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُولُونَ يَا لَيْتَنَا أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولَا

যেদিন অগ্নিতে তাদের মুখমন্ডল ওলট পালট করা হবে; সেদিন তারা বলবে, হায়। আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রসূলের আনুগত্য করতাম। [ সুরা আহযাব ৩৩:৬৬ ]

وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَا لَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا

জালেম সেদিন আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি রসূলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম। [ সুরা ফুরকান ২৫:২৭ ]

يَا وَيْلَتَى لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا

হায় আমার দূর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। [ সুরা ফুরকান ২৫:২৮ ]

لَقَدْ أَضَلَّنِي عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءنِي وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنسَانِ خَذُولًا

আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিলশয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়। [ সুরা ফুরকান ২৫:২৯ ]

 

কোন মন্তব্য নেই

ULTRA_GENERIC থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.