Header Ads

Header ADS

যে ১২টি আমল করলে ঈমান নিয়ে আপনার মৃত্যু হবে। ঈমান বাঁচানোর আমল

 সফর-১৪৪৫ হিজরী

 যে ১২টি আমল করলে ঈমান নিয়ে আপনার মৃত্যু হবে

 


(وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلاَ تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ)‏

 (অনুবাদ) এবং এ পথই আমার সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথেরই অনুসরণ করো এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, অন্যথায় তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। (সূরাহ আনআম ৬ : ১৫৩)

 

ভূমিকা: চতুর্দিকে ফেতনার এত বেশী ঘটঘটা, ফিতনার এই যুগে ঈমানের উপর অটল অবিচল থাকা, ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে যেতে পারা এ যুগের একজন মুমিনের জন্য অনেক বড় কঠিন চ্যালেঞ্জ। রাসুলুল্লাহ () এরশাদ করেছেন (ইন্নামাল আমালু বিল খাওয়াতিম) নিশ্চয়ই বান্দার আমলসমুহ নির্ভর করে শেষ অবস্থায় সে কি নিতে পেরেছে সেটার উপরে। সুতরাং জীবনের শেষ অবস্থায় আমাদের শেষ পরিণতির উপর ফয়সালা হবে আমাদের আখেরাতের নাজাত ও মুক্তি। সে জন্য মুমিন হিসেবে আমাদের টেনশন থাকতে হবে  জীবনের শেষ অবস্থা কি হয় সেটা নিয়ে। ঈমান নিয়ে যেতে পারব কিনা সেটা নিয়ে আমাদের চিন্তিত হওয়া উচিত। চিন্তা ভাবনা করা উচিত। কারন বর্তমানে চতুর্দিকে আমাদের ঈমান হনন করার জন্য নানান রাস্তা খোলা আছে তাই এখন আমাদের জন্য ঈমানকে সহি সালামতে নিয়ে কবরে যেতে পারা কঠিন একটা কাজ।

ঈমানী জীবন ও ঈমানী মরনের ব্যপারে ১২টি কথা বলব ইনশ আল্লাহ

 ১) কোরআন সুন্নাহকে আকঁড়ে ধরা- ইবনে মাজার ১১ নং হাদিসের বর্ণনা

 

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ـ فَخَطَّ خَطًّا وَخَطَّ خَطَّيْنِ عَنْ يَمِينِهِ وَخَطَّ خَطَّيْنِ عَنْ يَسَارِهِ ثُمَّ وَضَعَ يَدَهُ فِي الْخَطِّ الأَوْسَطِ فَقَالَ ‏"‏ هَذَا سَبِيلُ اللَّهِ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ (وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلاَ تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ)‏ ‏

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত থাকা অবস্থায় তিনি একটি সরল রেখা টানলেন এবং তাঁর ডান দিকে দুটি সরল রেখা টানলেন এবং বাম দিকেও দুটি সরল রেখা টানলেন। অতঃপর তিনি মধ্যবর্তী রেখার উপর তাঁর হাত রেখে বলেনঃ এটা আল্লাহ্‌র রাস্তা। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন

(وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلاَ تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ)‏

 (অনুবাদ) এবং এ পথই আমার সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথেরই অনুসরণ করো এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, অন্যথায় তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। (সূরাহ আনআম ৬ : ১৫৩)

আর কোরআন সুন্নাহর পথই হল সিরাতুল মুসতাকিম

 ইবনে মাজা শরীফের ১২ নং হাদিসের বর্ণনা:

عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيكَرِبَ الْكِنْدِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ "‏ يُوشِكُ الرَّجُلُ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يُحَدَّثُ بِحَدِيثٍ مِنْ حَدِيثِي فَيَقُولُ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ كِتَابُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فَمَا وَجَدْنَا فِيهِ مِنْ حَلاَلٍ اسْتَحْلَلْنَاهُ وَمَا وَجَدْنَا فِيهِ مِنْ حَرَامٍ حَرَّمْنَاهُ ‏.‏ أَلاَ وَإِنَّ مَا حَرَّمَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ مِثْلُ مَا حَرَّمَ اللَّهُ ‏"‏

আল-মিক্বদাম ইবনু মাদীকারিব আল-কিনদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অচিরেই কোন ব্যাক্তি তার আসনে হেলান দেয়া অবস্থায় বসে থাকবে এবং তার সামনে আমার হাদীস থেকে বর্ণনা করা হবে, তখন সে বলবে, আমাদের ও তোমাদের মাঝে মহামহিম আল্লাহ্‌র কিতাবই যথেষ্ট। আমরা তাতে যা হালাল পাবো তাকেই হালাল মানবো এবং তাতে যা হারাম পাবো তাকেই হারাম মানবো। (মহানবী (সাঃ) বলেন)

‏.‏ أَلاَ وَإِنَّ مَا حَرَّمَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ مِثْلُ مَا حَرَّمَ اللَّهُ‏

 সাবধান! নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তার অনুরূপ।

তাহলে শুধু কোরআন মানলে হবেনা কোরআন এবং সুন্নাহ উভয়টিই মান্য করতে হবে। অতএব যারা কোরআনও মানেন এবং হাদিসও মানেন তারা আশা করা যায় সঠিক রাস্তায় আছেন। তারাই প্রকৃত ঈমানদার।

 আত তারগিব ওয়াত তারহিব এর ৪০ নং হাদিসের বর্ণনা

عن ابن عباس أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطَبَ الناَّسَ فِيْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ فقالَ إنَّ الشيطانَ قَدْ يَئِسَ أنْ يُعْبَدَ بِأرْضِكُمْ ولكِنْ رَضِيَ أنْ يُطاَعَ فِيْماَ سِوَى ذلِكَ مِمَّا تَحَاقَرُوْنَ مِنْ أعْماَلِكُمْ فَاحْذَرُوْا إنِّيْ قَدْ تَرَكْتُ فِيْكُمْ ماَ إنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ فَلَنْ تُضِلُّوْا أبداً كِتاَبَ اللهِ وسُنَّةَ نَبِيِّهِ

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জে মানুষের সামনে এ খুতবা প্রদান করেন, তিনি বলেনঃ

নিশ্চয় শয়তান এ মর্মে নিরাশ হয়ে গেছে যে, তোমাদের এ যমীনে কেউ তার দাসত্ব করবে না। কিন্তু তারপরও সে একথার উপরই সন্তুষ্ট যে, তোমাদের ছোটখাট তুচ্ছ বিষয়ে তার আনুগত্য করা হবে। সুতরাং তোমরা সাবধান থেকো।

إنِّيْ قَدْ تَرَكْتُ فِيْكُمْ ماَ إنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ فَلَنْ تُضِلُّوْا أبداً كِتاَبَ اللهِ وسُنَّةَ نَبِيِّهِ

 নিশ্চয় আমি তোমাদের মাঝে এমন বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি- তোমরা যদি উহা আঁকড়ে ধরে থাক তবে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হল আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত।’’

শয়তান যে তুচ্ছ বিষয়েও সন্তুষ্ট হয় তার উদাহারন:

ধরুন আপনি হাতের মুষ্ঠি ভরে কোন পশুকে ডাকলেন বা একজন শিশুকে চকলেট দিবেন বলে ডাকলেন কিন্তু তাকে কিছুই দিলেন না এ ধরনের ছোট খাট মিথ্যার কারনেও শয়তান সন্তুষ্ট হয়ে যায়।

বুখারীর ৬৪৮২ নং হাদিসের বর্ণনা

عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم مَثَلِي وَمَثَلُ مَا بَعَثَنِي اللهُ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَتَى قَوْمًا فَقَالَ رَأَيْتُ الْجَيْشَ بِعَيْنَيَّ وَإِنِّي أَنَا النَّذِيرُ الْعُرْيَانُ فَالنَّجَا النَّجَاءَ فَأَطَاعَتْهُ طَائِفَةٌ فَأَدْلَجُوا عَلَى مَهْلِهِمْ فَنَجَوْا وَكَذَّبَتْهُ طَائِفَةٌ فَصَبَّحَهُمْ الْجَيْشُ فَاجْتَاحَهُمْ.

আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ও আমাকে যা দিয়ে আল্লাহ্ পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ এমন এক লোকের মত, যে তার সম্প্রদায়ের কাছে এসে বললো, আমি আমার চোখ দিয়ে শত্রুদলকে দেখেছি আর আমি স্পষ্ট সতর্ককারীসুতরাং তোমরা সত্বর আত্মরক্ষার ব্যবস্থা কর। অতঃপর একদল তার কথা মান্য করে রাতের অন্ধকারে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিল।

وَكَذَّبَتْهُ طَائِفَةٌ فَصَبَّحَهُمْ الْجَيْشُ فَاجْتَاحَهُمْ.

এদিকে আরেক দল তাকে মিথ্যেবাদী সাব্যস্ত করল, যদ্দরুন ভোর বেলায় শত্রুসেনা এসে তাদেরকে বিধ্বস্ত করে দিল।

বুখারীর ৭২৮০ নং হাদিসের বর্ণনা

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ

مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى

যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে।

তাহলে ঈমানী জীবন ও ঈমানী মরন যদি আমরা চাই তাহলে কুরআন সুন্নাহ আকঁড়ে ধরতে হবে, শুধু কুরআন মান্য করে হাদিস বা সুন্নাহ কে ছেড়ে দিলে সে বরবাদ হবে ধ্বংস হয়ে যাবেউভয়টাকে আকঁড়ে ধরতে হবে। তবেই ঈমানী মৃত্যু নসিব হবে।

২) ঈমানী জীবন ঈমানী মরনের ২য় উপায় হল নিয়মিত নেক আমলগুলি চালিয়ে যাওয়া, চাই তা কম হউক যেমন

আপনি নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবর পড়েন এই আমলটি আপনি নিয়মিত চালিয়ে যাবেন কখনো ছাড়বেন না। আপনি সকাল সন্ধ্যায় ১০ বার করে দরুদ পড়েন এই আমলটি আপনি যদি করেন তাহলে নিয়মিত করবেন, কখনো ছাড়বেননা, নিয়মিত ছোট আমলের ফায়দার

উদাহারণ-: মেরাজে বেলালের জুতার আওয়াজ

নবীজি (দ) মেরাজ থেকে এসে বলেন বেলাল তুমি কি আমল কর আমাকে একটু বল

فَإِنِّي سَمِعْتُ دَفَّ نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَىَّ فِي الْجَنَّةِ ‏"‏‏.‏
কেননা, জান্নাতে আমি আমার সামনে তোমর পাদুকার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি।

বিলাল (রাঃ) বললেন, দিন রাতের যে কোন প্রহরে আমি যখন অজু করি তখনই আমি আমার তৌফিক অনুযায়ী নামাজ আদায় করি।

বেলাল যেমন অজুর পর নামাজ পড়তেন এ ধরনের ছোট ছোট আমলগুলি নিয়মিত করবেন কখনো ছাড়বেন না সারাজীবন চালিযে যাবেন, এ ব্যপারে সহি বুখারীর ৫৮৬১ নং হাদিসের বর্ণনা

وَإِنَّ أَحَبَّ الأَعْمَالِ إِلَى اللَّهِ مَا دَامَ وَإِنْ قَلَّ ‏"

আল্লাহর নিকট ঐ আমল সবচেয়ে প্রিয়, যা সর্বদা করা হয়, তা কম হলেও।

তাহলে ঈমানী জীবন ঈমানী মরনের ২য় শর্ত হল আমল কম হউক তা নিয়মিত করা।

৩) ঈমানী জীবন ঈমানী মরনের ৩য় উপায় হল নেককার মানুষ ভালো মানুষের সঙ্গে থাকা

আল্লাহ পাক এ ব্যাপারে আদেশ করেছেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِين [التوبة:.

হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো।” (সূরা তওবা, আয়াত ১১৯) 

 

বুখারী শরীফের ২১০১ নং হাদিসের বর্ণনা

قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالْجَلِيسِ السَّوْءِ كَمَثَلِ صَاحِبِ الْمِسْكِ وَكِيرِ الْحَدَّادِ لاَ يَعْدَمُكَ مِنْ صَاحِبِ الْمِسْكِ إِمَّا تَشْتَرِيهِ أَوْ تَجِدُ رِيحَهُ وَكِيرُ الْحَدَّادِ يُحْرِقُ بَدَنَكَ أَوْ ثَوْبَكَ أَوْ تَجِدُ مِنْهُ رِيحًا خَبِيثَةً

আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ আতর বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের ন্যায়।

আতর বিক্রেতাদের থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসবে না। হয় তুমি আতর খরিদ করবে, না হয় (ফ্রিফ্রি) তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের হাপর হয় তোমার ঘর অথবা তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি (ফ্রিফ্রি) তার দুর্গন্ধ পাবে

সুতরাং সারাজীবন যাদের সাথেই বন্ধুত্ব করবেন, উঠাবসা করবেন, তারা যেন ভালো মানুষ হয়, আপনার ছেলের বন্ধু কেমন সেটাও আপনি অবশ্যই অবশ্যই দেখে নিবেন কেননা ছেলে মেয়ে বন্ধুর কারনেই বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়

শেখসাদি লিখেন আপেল এর ঘটনা: এক পিতা তার সন্তানকে বলেন বেটা খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশবেনা, ছেলে পিতাকে জবাব দিল বাবা আমার বন্ধুরা খারাপ হলে কি হবে আমিতো ভালো, তারা আমার কিভাবে ক্ষতি করবে? তখন পিতা সন্তানকে বাজারে পাঠালানে আর বললেন ২ কেজি ভালো আর ১ কেজি খারাপ নষ্ট আপেল কিনে আনবে, সে কিনে আনল এবার সবগুলি একটি টুকরিতে এক সাথে মিক্স করে রেখে দিতে বল, যখন সকাল হল ছেলেকে বলল সে টুকরিটি নিয়ে আসার জন্য নিয়ে আসল এবার পিতা বলল দেখ ২ কেজি ভালো আপেল আর ১ কেজি খারাপ আপেল আলাদা কর, কিন্তু দেখা গেল খারাপ আপেল এর সংস্পশে ভালো আপেলগুলিও সব নষ্ট হয়ে গেল।

টেনারীতে গন্ধ: আপনি টেনারীতে হঠাৎ গেলে প্রচুর দুর্গন্ধ অনুভুত হবে কিন্তু কিছুক্ষণ থাকার পর আপনার নাকে আর সে গন্ধ লাগবেনা, তেমনি খারাপ সোহবতে, গুনাহের পরিবেশে থাকতে থাকতে একসময় আপনার কাছে আর সে গুনাহকে গুনাহ মনে হবেনা, তাই ছোহবত নিতে হবে নেক লোকের ছোহবত নিতে হবে আল্লাহ ওয়ালাদের।

হাদিস: নবী করিম (দ) বলেন আবু দাউদ ৪৮৩৩ নং হাদিসের বর্ণনা

الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، 
মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতির (দ্বীন ধর্মের) অনুসারী হয়।

বন্ধুর কথায় হজ্ব করলনা: এক পীর সাহেব বয়ান করেন আমার এক মুরিদ ছিল, একজন চিপ ইঞ্জিনিয়ার, অনেক টাকা পয়সার মালিক, পীর সাহেব ইঞ্জিনিয়ার মুরিদকে পরামর্শ দিল হজ্ব করে নিতে, পীর সাহেব এর পরামর্শে সে হজ্বের জন্য এপলাই করল, হজ্বে যাওয়ার আগের দিন তার এক বন্ধু তাকে একটি বিষাক্ত কথা বলল সে বলল দেখ তোমার হার্টের সমস্যা এই গরমের মধ্যে যদি সেখানে তোমার হার্ট এটাক হয় তাহলে কি করবে? এই কথা শুনে সে হজ্ব করা বাদ দিয়ে দিল, কিছুদিন পর যখন পীরের দরবারে গেল পির সাহেব তাকে হজ্বে কেন যায়নি জিজ্ঞেস করল সে জবাব দিল আমার হার্টের সমস্যা তাই যাইনি পরে যাব, দেখা গেল, সে যেদিন হজ্ব করে ফিরে আসার কথা তার দুদিন পরেই সে হাট এটাক করে মারা গেল, আফসুস খারাপ বন্ধুর কথায় সে ধোকায় পড়ে গেল, কারন মানুষের মৃত্যু যেদিন হওয়ার সেদিন হবেই যদি সে হজ্বে যেত তাহলে বেগুনাহ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করতে পারত এবং সোজা জান্নাতে চলে যেত। তাই বন্ধু নির্বাচন করার সময় খুবই সতর্ক। এমন সাথী নির্বাচন করতে হবে যে আপনার দ্বীনের জন্য আপনার ঈমানের জন্য উপকারি হবে।

ইমাম রাজির ও নজমুদ্দিন কুবরার ঘটনা: ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি (র) যার তফসির খুবই গ্রহণযোগ্য, যিনি জ্ঞানের সাগর ছিলেন, তৌহিদের পক্ষে দলিল দেয়ার মত পাহাড়সম যোগ্যতা ছিল, কিন্তু আপনারা জানেন ইমাম রাজি (র) এর যখন জীবনের শেষ সময় আসল, সেখানে শয়তান চলে আসল, শয়তান এসে ইমাম রাজি কে বলল আল্লাহ যে এক তার পক্ষে দলিল দাও, ইমাম রাজি দলিল দিলেন শয়তান তা খন্ডন করে দিলেন, এভাবে অসংখ্য দলিল দিলেন কিন্তু শয়তান সবগুলি দলিল খন্ডন করে দিলেন, তিনি হযরত নজমুদ্দিন কুবরা (রহ) এর মুরিদ ছিলেন ইমাম নজমুদ্দিন তার মুরিদের ঈমানহারা হয়ে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে তিনি আওয়াজ দিলেন রাজি তুমি শয়তানের সাথে যুক্তি তর্ক না করে বলে দাও আমার আল্লাহর অস্তিত্ব আছে তিনি বিনা দলিলে এক, এই কথা বলার পরই তাঁর ইন্তেকাল হল সুবহানাল্লাহ। সুতরাং আল্লাহওয়ালাদের সোহবত, আল্লাহ ওয়ালাদের সাথে মহব্বত, আল্লাহ ওয়ালাদের সাথে উঠাবসা মৃত্যুর সময় ঈমানের দৌলত নসিব করে।

আসহাবে কাহাফ এর কুকুর: ৭ জন আল্লাহ ওয়ালা ছিল যাদেরকে গুহাবাসী বলা হয় তাদের ব্যপারে পবিত্র কুরআনে ১টি সুরা আছে সুরা কাহাফ, এই ৭ আল্লাহওয়ালার সাথে ১টি কুকুর ছিল, যে কুকুরটি সে সব আল্লাহ ওয়ালাদেরকে পাহারা দিয়েছিল, তাদের ছোহবতে ছিল তাদের ভালোবাসত, ওলামায়ে কেরাম বলেন এই কুকুরকেও আল্লাহ তায়ালা দয়া করে মানুষের সুরত দিয়ে জান্নাতে দিয়ে দিবেন।

১০টি প্রাণী যাদেরকে মানুষের ছুরতে আল্লাহ দয়া করে জান্নাতে দিবেন: হযরত ইমাম মাকাতিল (রহ) ফরমান ১০টি প্রাণীকে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, (১) সালেহ (আ) এর উটনি যা পাথরের ভিতর থেকে মুজেজা স্বরুপ বের হয়েছিল (২) হযরত ইবরাহিম (আ) এর বাচুর যা তিনি মেহমানের সন্মানে জবেহ করেছেন (৩) দুম্বা যেটি ইসমাইল (আ) এর স্থানে জবেহ হয়েছিল। (৪) মুসা (আ) এর গাভি, যে গাভির বয়ান সুরা বাকারার মধ্যে আছে (৫) হযরত ইউনুস (আ) কে গিলে ফেলা সে মাছ (৬) হযরত উযায়র (আ) এর গাধা যেটিকে ১০০ বছর পর আল্লাহ তায়ালা পুনরায় জিন্দা করেছেন (৭) সুলাইমান (আ) এর সাথে যে পিপড়া সরদার কথা বলেছিলেন সে পিপড়াটি (৮) সুলাইমান (আ) এর জন্য রানি বিলকিসের খবর আনয়নকারী হুদহুদ পাখি (এই পাখির বৈশিষ্ট হল এই পাখি উপর থেকে জমিনের নিচে ভুগর্ভের নিচে প্রবাহিত পানি দেখতে পায় এবং সোলাইমান (আ) হুদহুদের ইনফরমেশন মোতাবেক সেখানে খনন করে সৈন্যদের জন্য দ্রুত পানির ব্যবস্থা করেন। (৯) আসহাবে কাহাফ এর কুকুর (১০) হুজুর পাক (দ) এর উটনি যার উপর নবী করিম (দ) সওয়ার হতেন।

অতএব ৩য় আমল হল সৎ, ভালো বন্ধু নির্বাচন করা নেককার লোকদের সঙ্গ গ্রহণ করা, খারাপ লোকের সঙ্গ ত্যাগ করা। সৎ ও ভালো বন্ধুর সঙ্গ সারাজীবন ত্যাগ করা যাবেনা আপনার সন্তানটা খারাপ মানুষের সাথে যেন না চলে সে দিকেও আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনার আমার বন্ধু যেন কোন ইহুদী না হয়, কোন বেদ্বীন না হয়, কোন ইসলাম বিদ্বেষী না হয়, কোন মুনাফিক না হয়, আপনার আমার বন্ধু যেন হয় আল্লাহওয়ালা, নামাজি, নেককার আর এই আমল এর কারনে আপনি ঈমানি জীবন ও ঈমানি মরনের নেয়ামত লাভ করতে পারবেন।

) ঈমানী জীবন ও ঈমানী মরনের ৪ নং উপায় হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর জিকির করা

হাকেম ও মসনদে আহমদের হাদিস নবী করিম (দ) এরশাদ করেন তোমরা তোমাদের ঈমানকে পুনরায় সতেজ করে নাও। বলা হলোঃ কিভাবে আমাদের ঈমানকে পুনরায় সতেজ করে নিব হে রাসূলুল্লাহ? তিনি বললেনঃ তোমরা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বেশী বেশী পাঠ করো।

যারা সব সময় এই কলমা পড়বে ইনশা আল্লাহ মৃত্যুর সময়ও মুখে কলমা জারি হবে তিরমিজির ৯৭৭ নং হাদিসের বর্ণনা

 ‏"‏ مَنْ كَانَ آخِرُ قَوْلِهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ ‏"‏ ‏.‏

যে লোকের শেষ কথা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হবে সে লোক জান্নাতে যাবে

অতএব চতুর্থ আমল হল প্রতিদিন কলমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ার মাধ্যমে ঈমানকে নবায়ন করা।

৫) ঈমানী জীবন ঈমানী মরনের ৫ম উপায় হল নিয়মিত মিসওয়াক করা

# বুখারী শরীফের ৮৪৩ নং হাদিসের বর্ণনা

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي ـ أَوْ عَلَى النَّاسِ ـ لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاَةٍ ‏"‏‏.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তা হলে প্রত্যেক নামাজ- এর সাথে তাদের মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।

# মসনদে আহমদের ৩১২২ নং হাদিসের বর্ণনা-

لَقَدْ أُمِرْتُ بِالسِّوَاكِ، حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيَنْزِلُ بِهِ عَلَيَّ قُرْآنٌ، أَوْ وَحْيٌ.

আমাকে এত বেশী মিসওয়াকের নির্দেশ করা হয়েছে আমি ধারণা করতে লাগলাম মিসওয়াক এর ব্যপারে আল্লাহ কুরআনের আয়াত নাজিল করবেন।

# সহি মুসলিমের ২৫৩ নং হাদিসের বর্ণনা- আয়েশা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন-

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَانَ إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ بَدَأَ بِالسِّوَاكِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘরে প্রবেশ করতেন প্রথমে মিসওয়াক করতেন।

# মুসনদে আহমদের ৫৯৬৯ নং হাদিসের বর্ণনা

عَنْ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لَا يَنَامُ إِلاَّ وَالسِّوَاكُ عِنْدَهُ، فَإِذَا اسْتَيْقَظَ بَدَأَ بِالسِّوَاكِ.

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর সময় মিসওয়াক পাশে রাখতেন। ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে প্রথমেই তিনি মিসওয়াক করতেন

# বুখারী শরীফের ৪৪৫১ নং হাদিসের বর্ণনা- নবী করিম (দ) ইন্তেকালের পূর্বের এবং জীবনের সর্বশেষ সুন্নত আমল ছিল মিসওয়াক।

# মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, ১৮০৫ নং হাদিসের বর্ণনা  সাহাবীরা কানের সাথে মিসওয়াক গুজে রাখতেন যাতে অজুর সময় মিসওয়াক ছুটে না যায়।

 

# ব্রাশ দিয়ে মিসওয়াকের সুন্নত আদায় হবেনা, ব্রাশ করা না জায়েজ না, তবে মিসওয়াক আর ব্রাশ এক জিনিষ না। প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্তের অজুর পূর্বে মিসওয়াকের সুন্নত আমলটি করার আপ্রাণ চেষ্টা করবেন,

# ওলামায়ে কেরাম বলেন যারা নিয়মিত মিসওয়াক করবেন মৃত্যুর সময় কালিমা নাসিব হবে।

# বাইহাকির ১৯৩৭ নং হাদিস

আলী রা. মিসওয়াকের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বলেন-

عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: أُمِرْنَا بِالسِّوَاكِ.

আমাদেরকে মিসওয়াকের আদেশ দেয়া হয়েছে। 

এরপর তিনি কী চমৎকার বলেছেন-

إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا قَامَ يُصَلِّي أَتَاهُ الْمَلَكُ فَقَامَ خَلْفَهُ يَسْتَمِعُ  الْقُرْآنَ وَيَدْنُو، فَلَا يَزَالُ يَسْتَمِعُ وَيَدْنُو حَتَّى يَضَعَ فَاهُ  عَلَى فِيهِ، فَلَا يَقْرَأُ آيَةً إِلاَّ كَانَتْ فِي جَوْفِ الْمَلَكِ.

বান্দা যখন নামাযে দাঁড়ায় তার নিকট ফেরেশতা আগমন করে। অতঃপর কুরআন মনোযোগসহ শোনার জন্য তার পেছনে দাঁড়ায় এবং নিকতবর্তী হতে থাকে। এভাবে শুনতে থাকে আর কাছে আসতে থাকে। এমনকি ফেরেশতা তার মুখ তিলাওয়াত কারীর মুখ বরাবর রাখে। এ অবস্থায় সে যখন কোনো আয়াত তিলাওয়াত করে তা ফিরিশতার ভেতরে চলে যায়।

 

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নিয়মিত মিসওয়াক করার তৌফিক দান করুন আমিন।

 

) ঈমানি জীবন ঈমানি মরনের ৬ নং উপায় হল দৃষ্টিকে হেফাজত করা

তবে এ যুগে এই কাজটি করা বড়ই কঠিন,  কারন মুসলমান নর নারীর দৃষ্টিকে অপবিত্র করার জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করা হচ্ছে, আর তাদের এই প্রজেক্ট সফল হয়ে গেছে।

এক বুযুর্গ ও দুধের পেয়ালা: এক নওজোয়ান এক বুযুর্গের কাছে এসে বলেন হুজুর আমি বাজারে থাকি নিজের দৃষ্টিকে পরনারী থেকে রক্ষা করা মুশকিল, আমাকে এমন কোন পন্থা বাতলে দেন যাতে আমি আমার দৃষ্টিকে হেফাজত করতে পারি, বুযুর্গ তাকে বললেন ঠিক আছে তোমাকে দৃষ্টিকে রক্ষা করার পদ্ধতি বলে দিব তার আগে তুমি আমাকে একটি কাজ করে দাও, তুমি আমার এই দুধের পাত্রটি নিয়ে বাজারের ও পাশে আমার এক আত্মিয় আছে সেখানে পৌঁছে দিবে, যাতে এক ফোটা দুধও নিচে না পরে, যদি ১ ফোটা দুধও নিচে পরে তাহলে আমার একজন পলোয়ান লোক তোমার সাথে যাবে সে যেখানে দুধ পরবে সেখানে দাড়িয়েই সকলের সামনে তোমাকে জুতা পিটা করবে, সে ভয় পেয়ে গেলো এবং অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সে দুধের পাত্র বহন করে নিয়ে যেতে লাগল, তার ধ্যান শুধু দুধের পাত্রের দিকে যাতে দুধ পরে না যায়, এভাবে সে সফল ভাবে দুধের পেয়ালা পৌছে দিয়ে হুজুরের কাছে এসে বড় গলায় বলল হুজুর আমি আপনার কাজ করে দিয়েছি, তখন হুজুর তাকে প্রশ্ন করেন আজ বাজার দিয়ে যাওয়ার সময় তোমার কি পর নারীর প্রতি দৃষ্টি গিয়েছে? সে বলল হুজুর আপনি যে শাস্তির ঘোষনা দিয়েছেন সে জন্য ডানে বামে তাকাতে সাহস করিনি, অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বাজার অতিক্রম করেছি। তখন হুজুর তাকে বলল যারা ঈমানদার তারাও সারা জীবন এভাবেই সতর্কতা অবলম্বন করবে পরনারী থেকে বেগানা নারী থেকে তোমার যেমন দুধ পরে যাওয়ার ভয় ছিল ঈমানদারও পরনারীর প্রতি দৃষ্টি গেলে ঈমান হারা হওয়ার ভয় থাকে তাই তারা নিজেদের দৃষ্টিকে সহজে হেফাজত করতে পারে।

সুরা নুরের ৩০-৩১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। [সুরা নুর - ২৪:৩০]

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে।

 

) ঈমানি জীবন ঈমানি মরনের ৭ নং উপায় হল গোপনে আল্লাহর কাছে দোয়া করা

গোপনে নির্জনে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। নামাজ পড়ে যখন সকলে চলে যাবে তখন মসজিদের এক কোনায় বসে একাগ্রচিত্তে চোখ বন্ধ করে দু হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, আপনার যত চাওয়া পাওয়ার কথা খুব নরম সুরে করুন ভাষায় কাকুতি মিনতি করে আল্লাহকে বলুন, সে সময় আপনার নিশ্চিত চোখের পানি আসবেই। যখন চোখের পানি চলে আসবে তখন বলুন হে আল্লাহ আমি অনেক বড় গুনাহগার জানিনা ঈমানের সাথে মরতে পারব কিনা হে আল্লাহ তুমি দয়া করে আমাকে কলমা নসিব করে দিও। রাতের বেলা যখন সবাই ঘুমিয়ে যায় তখন উঠে একাকি দোয়া করুন। এ ব্যপারে সুরা আরাফের ৫৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন

ادْعُواْ رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ

তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রম কারী দেরকে পছন্দ করেন না। [সুরা আরাফ - ৭:৫৫]

 

তাহলে ঈমানী জীবন ঈমানী মৃত্যুর জন্য ১২ টি উপায় আমল ও দোয়া

) কোরআন ও সুন্নাহর পরিপূর্ণ অনুসরণ করা,

) নিয়মিত নেক আমলগুলি চালিয়ে যাওয়া, যদিও তা কম হয়।

) নেক লোকের সোহবতে থাকা, বদ ও খারাপ লোকের সঙ্গ ত্যাগ করা। আর নেক লোক হল যাকে দেখে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।

) সব সময় কলমার জিকির করা, ঈমান নবায়ন করা।

) নিয়মিত নামাজের অজুর আগে মিসওয়াক করা

)  নিজের দৃষ্টিকে হেফাজত করা

)  ঈমানী মৃত্যুর জন্য গোপনে আল্লাহর কাছে দোয়া করা

) ঈমানের উপর মৃত্যুর জন্য সুরা আল ইমরানের ৮ নং আয়াতের দোয়াটি বেশী বেশী পড়বেন

رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ

হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা। [সুরা ইমরান - ৩:৮]

) ঈমানী মৃত্যুর জন্য নববী দোয়া পড়বেন

তিরমিজি শরীফের ২১৪০ নং হাদিস

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ حُسْنَ الْخَاتِمَةِ

উচ্চারন: আল্লহুম্মা ইন্নি আসআলুকা হুসনাল খ-তিমাহ। 

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উত্তম মৃত্যু চাই। [১/তিরমিযী ২১৪০]

 ১০) বেশী বেশী সদকা করা, সদকার দ্বারা খাতেমা বিল খাইর হয়

১১) আল্লাহ যে ঈমানের দৌলত দিয়েছেন সে জন্য শোকর আদায় করা। আর ঈমানের শোকর আদায় করার দোয়া হল সকাল সন্ধ্যায়  ৩ বার করে পাঠ করবেন (রাদিতু বিল্লাহি রাব্বা, ওয়াবিল ইসলামি দিনা, ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা)

১২) খাতেমা বিল খায়ের এর জন্য ১২ তম আমল হল আযানের জবাব দেয়া, আযানের জবাব ২ ভাবে হয় একটা হল আযান শুনে সে শব্দগুলি রিপিট করা আর ২য় পদ্ধতি হল আযান শুনেই নামাজ আদায় এর মাধ্যমে আযানের জবাব দেয়া।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ঈমানী জিবন ঈমানী মৃত্যু নসিব করুন আমিন।


মাওলানা এস এম নিজাম উদ্দীন

খতিব- হাজি অলি মিয়া সওদাগর জামে মসজিদ

পূর্ব ষোলশহর, চট্টগ্রাম 

কোন মন্তব্য নেই

ULTRA_GENERIC থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.