নুরে মুহাম্মদী ﷺ এর সৃষ্টি থেকে জন্ম পর্যন্ত
নুরে মুহাম্মদী ﷺ এর সৃষ্টি থেকে জন্ম পর্যন্ত
وَإِذْ أَخَذَ اللّهُ
مِيثَاقَ النَّبِيِّيْنَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءكُمْ
رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ قَالَ
أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَى ذَلِكُمْ إِصْرِي قَالُواْ أَقْرَرْنَا قَالَ
فَاشْهَدُواْ وَأَنَاْ مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ
আর আল্লাহ যখন নবীগনের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহন করলেন যে, আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি কিতাব ও জ্ঞান এবং অতঃপর তোমাদের নিকট কোন রসূল আসেন তোমাদের কিতাবকে সত্য বলে দেয়ার জন্য, তখন সে রসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তার সাহায্য করবে। তিনি বললেন, `তোমার কি অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বললো, `আমরা অঙ্গীকার করেছি'। তিনি বললেন, তাহলে এবার সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।
[ সুরা ইমরান ৩:৮১ ]
সম্মানিত মুসল্লীবৃন্দ আল্লাহ পাকের লাখো কোটি
শোকর যিনি আমাদেরকে কায়েনাতের নেয়ামতসমুহ থেকে
সবচেয়ে বড় নেয়ামত, সবচেয়ে বড় রহমত থেকে
বড় রহমত, সবচেয়ে বড় ফজল আমাদেরকে দান করেছেন। আর সে
নেয়ামত হল হুযুরে মোস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম।
যেহেতু মহান রবিউল
আউয়্যাল মাস তাই
আজ আমার আলোচনার বিষয় হিসেবে একটি
নতুন বিষয়বস্তু নির্ধারত করেছি তা হল
আমাদের প্রিয় নবীর
নুর মোবারক সৃষ্টি থেকে নিয়ে জন্ম
পর্যন্ত যে সফর
সে সফরের বিষয়ে
আলোচনা।
হুজুরের ২টি জুহুর/ ২টি জন্ম
আল্লাহ তায়ালা হুযুর ﷺ কে ২টি জহুর
দান করেছেন।
প্রথম
জহুর হল হুজুরের সৃষ্টি আর ২য়
জহুর হল হুজুরের বেলাদত। হুযুর ﷺ এর নুরের সৃষ্টি থেকে এটা একটা
সফর যা বেলাদতের দ্বারা সে নুর
সুন্দর বশরী কভারে
দৃশ্যমান হয়েছে।
হুজুরের নুরের সফরের দলিলসমুহ
আল্লাহ সর্বপ্রথম নবীর নুর সৃষ্টি করেছেন
১। ইমাম আবদুর রাজ্জাক (রহ) অনেক বড় মুহাদ্দেস যিনি ইমাম বুখারীর
দাদা উস্তাদ। তার একটি কিতাব মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাকে রেওয়ায়েত করেন-
روى عبد الرزاق
عن معمر عن ابن المنكدر عن جابر بن عبد الله رضي الله عنه قال قلت يارسول الله
بأبي انت وامي أخبرني عن اول شيئ خلقه الله تعالى قبل الاشياء قال ياجابر ان الله
تعالى خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره فجعل ذلك النور يلدور بالقدرة حيث شاء
الله تعالى ولم يكن في ذلك الوقت لوح ولا قلم ولا جنة ولا نار ولا ملك ولا سمماء
ولا ارض ولا شمس ولا قمر ولا جني ولا انسي. فلما اراد الله تعالى ان يخلق الخلق
قسم ذلك النور اربعة اجزاء فخلق من الجزء الاول القلم ومن الثاني اللوح ومن الثالث
العرش ثم قسم الجزء الرابع أربعة اجزاء فخلق من الجزء الاول حملة العرش ومن الثاني
الكرسي ومن الثالث باقي الملائكة ثم قسم الجزء الرابع اربعة اجزاء فخلق من الاول
السموات ومن الثاني الارضين ومن الثالث الجنة والنار ثم قسم القسم الرابع اربعة
اجزاء فخلق من الاول نور ابصار المؤمنين ومن الثاني نور قلوبهم وهى المعربفة بالله
تعالى ومن الثالث نور انسفهم وهو التوحيد لا اله الا الله محمد رسول الله. (الجزء المفقود
من المنصنف).
”হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন- আমি আরয করলাম, হে আল্লাহ’র রাসূল [ﷺ]! আপনার উপর আমার পিতা-মাতা উৎসর্গীত হোক, আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম কোন বস্তু সৃষ্টি করেছেন? তদুত্তরে নবী করিম [ﷺ] বললেন- ”হে জাবের, আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম সমস্ত বস্তুর পূর্বে তাঁর ‘নিজ নূর হতে’ তোমার নবীর নূর পয়দা করেছেন। তারপর আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছানুযায়ী ঐ নূর (লা-মকানে) পরিভ্রমণ করতে থাকে। কেননা ঐ সময় না ছিল লাওহে-মাহফুয, না ছিল কলম, না ছিল বেহেস্ত, না ছিল দোযখ, না ছিল ফেরেশতা, না ছিল আকাশ, না ছিল পৃথিবী, না ছিল সূর্য, না ছিল চন্দ্র, না ছিল জ্বীনজাতি, না ছিল মানবজাতি।
অতঃপর যখন
আল্লাহ তা’আলা অন্যান্য
বস্তু সৃষ্টি করার
মনস্থ করলেন,
তখন আমার ঐ নূরকে চারভাগে বিভক্ত করে
প্রথমভাগ দিয়ে কলম, দ্বিতীয়ভাগ
দিয়ে লাওহে-মাহফুয এবং
তৃতীয়ভাগ দিয়ে আরশ সৃষ্টি করলেন।
অবশিষ্ট এক
ভাগকে আবার চার ভাগে বিভক্ত করে প্রথমভাগ দিয়ে আরশ বহনকারী ফেরেশতা, দ্বিতীয় অংশ
দিয়ে কুরসি এবং তৃতীয় অংশ দিয়ে অন্যান্য ফেরেশতা সৃষ্টি
করলেন।
দ্বিতীয় চার
ভাগের এক ভাগকে আবার চার ভাগে বিভক্ত করে প্রথমভাগ দিয়ে আকাশ, দ্বিতীয়ভাগ
দিয়ে জমিন
(পৃথিবী) এবং
তৃতীয়ভাগ দিয়ে বেহেস্ত ও দোযখ সৃষ্টি করলেন।
তৃতীয়বার অবশিষ্ট
একভাগকে পুনরায় চার
ভাগে বিভক্ত করে
প্রথমভাগ দিয়ে মু’মিনদের
নয়নের নূর
– (অন্তর্দৃষ্টি), দ্বিতীয়ভাগ
দিয়ে মু’মিনদের কলবের
নূর – তথা
আল্লাহর মা’রেফাত এবং
তৃতীয়ভাগ দিয়ে মু’মিনদের
মহব্বতের নূর
– তথা তাওহীদী কলেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর্
রাসুলুল্লাহ’ সৃষ্টি
করেছেন।” (২৫৬
ভাগের এক ভাগ থেকে অন্যান্য সৃষ্টিজগত পয়দা
করলেন)।
– মাওয়াহেবে লাদুনিয়া ও মুসান্নাফ আব্দুর
রাযযাক – (আল
জুয্উল মাফকুদ অংশ, হাদিস নং ১৮,
বৈরুত থেকে প্রকাশি ২০০১, সিরাতে হালাবিয়া ১ম খন্ড ৫০ পৃ)
মাওয়াহেবু লদুনিয়ার ১ম খন্ডের ৬৬
পৃষ্ঠায় আল্লামা কসতুলানি (রহ) আরো লিখেন- নুরে মোস্তফা
থেকে যখন বিভিন্ন কিছু সৃষ্টি সম্পন্ন হল একদিন নুরে মোস্তফার উপর হকুম হল হে নুরে
মোস্তফা আপনি সমস্ত আম্বিয়াদের রুহ সমুহের দিকে তাওয়াজ্জুদ দিন। তখন নুরে মোস্তফা
সকল আম্বিয়াদের রূহের দিকে তাওয়াজ্জুহ দান করলেন। তখন আম্বিয়াদের রুহ প্রশ্ন করলেন
হে বারি তায়ালা এটা কেমন নুর কার নুর যে নুর আমাদেরকে বেষ্টন করে ফেলেছে? তখন আল্লাহ
তায়ালা ফরমালেন হে আরওয়াহে আম্বিয়া এটা হল আমার হাবিবে মোস্তফার নুর। যদি তোমরা এর
উপর ঈমান আন তাহলে তোমাদেরকে নবুয়তের মর্যাদায় ভুষিত করা হবে। তখন সকল নবীদের রূহ
সমুহ হুযুর ﷺ এর উপর ঈমানের ঘোষনা দিয়ে দিলেন।
এ কথাটিই কুরআনে করিমের এই আয়াতে
এসেছে যা আমি তেলাওয়াত করেছি।
وَإِذْ أَخَذَ اللّهُ
مِيثَاقَ النَّبِيِّيْنَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءكُمْ
رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ قَالَ
أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَى ذَلِكُمْ إِصْرِي قَالُواْ أَقْرَرْنَا قَالَ
فَاشْهَدُواْ وَأَنَاْ مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ
আর আল্লাহ যখন নবীগনের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহন করলেন যে, আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি কিতাব ও জ্ঞান এবং অতঃপর তোমাদের নিকট কোন রসূল আসেন তোমাদের কিতাবকে সত্য বলে দেয়ার জন্য, তখন সে রসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তার সাহায্য করবে। তিনি বললেন, `তোমার কি অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বললো, `আমরা অঙ্গীকার করেছি'। তিনি বললেন, তাহলে এবার সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।
[ সুরা ইমরান ৩:৮১ ]
আদম
এর ১৪ হাজার বছর আগে
২।মাওয়াহেবে লুদুনিয়্যা ১ম খন্ড
৪৭ পৃ এবং
সিরতে হালাবিয়া ১ম
খন্ড ৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
হযরত ইমাম জয়নুল
আবেদীন ইমাম হুসাইন থেকে বণনা করেন
আর ইমাম হুসাইন হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন- হুযুর
ﷺ এরশাদ করেন আদম (আ) এর সৃষ্টির ১৪ হাজার
বছর আগে আমি
আল্লাহর বারেগাহে এক
নুর ছিলাম।
এখন ১৪ হাজার বছরে কতদিন?
বতমানে আমরা যে দিন
রাত হিসাব করি
তাতো সুর্যের উদিত
ও অস্ত হওয়ার
হিসাবে, কিন্তু আমাদের প্রিয়
নবীতো তখনও ছিলেন
যখন সূয চন্দ্র দিন রাত সময়ের
কোন হিসাব ছিলনা।
সুতরাং তখন ১ দিন
সময়টা কতদিনের সমান
হবে? সেটা তখন কেয়ামতের দিনের উপর কিয়াস
করতে হবে, আর
কেয়ামতের দিনের ১
দিন সময় বর্তমানের দিনের ৫০ হাজার
বছরের সমান হবে। আর সে হিসেবে ১৪
হাজার* ৫০ হাজার= ৭০ কোটি বছর।
মুলত
এটা একটা দুনিয়াবি হিসাব কিন্তু আসল
কথা হল হুযুর
ﷺ যখন থেকে সৃষ্টি তখনকার সময় সম্পর্কে দুনিয়ার মানুষ কোন
ধারনাই করতে পারে
না।
হযরত জিবরাইলের বয়স
৩।তাফসীরে রুহুল বয়ানে সূরা তাওবার ১২৮ নং আয়াত لقد جاءكم
رسول من انفسكم অর্থঃ ”তোমাদের নিকট এক মহান রাসূলের আগমন হয়েছে।”)
উক্ত আয়াতের
তাফসীর প্রসঙ্গে নবী
করিম [ﷺ] কোথা হতে আসলেন-
সে সম্পর্কে হযরত
আবু হোরায়রা
(رضي الله عنه) থেকে নিন্মোক্ত
হাদীস বর্ণনা করা
হয়েছে।
عن أبي هريرة أنه عليه
السلام سأل جبريل عليه السلام فقال ياجبريل كم عمرك من السنين-فقال يارسول الله لست أعلم غير أن في الحجاب الرابع نجما
يطلع في كل سبعين ألف سنة مرة-رأيته إثنين وسبعين ألف مرة فقال
يا جبريل وعزة ربي أنا ذلك الكوكب
অর্থঃ ”একদিন নবী করিম [ﷺ] কথা প্রসঙ্গে হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) কে
তাঁর বয়স সম্পর্কে এভাবে জিজ্ঞেস করলেন,
হে জিব্রাঈল!
তোমার বয়স কত? তদুত্তরে
হযরত জিব্রাঈল
(عليه السلام) বললেন- আমি শুধু
এতটুকু জানি যে, নূরের
চতুর্থ হিজাবে একটি
উজ্জ্বল তারকা ৭০ হাজার বছর পর পর একবার উদিত হত।
(অর্থাৎ- সত্তর
হাজার বৎসর উদিত অবস্থায় এবং
সত্তর হাজার বৎসর অস্তমিত অবস্থায়
ঐ তারকাটি বিরাজমান
ছিল) আমি
ঐ তারকাটিকে ৭২ হাজার বার উদিত অবস্থায় দেখেছি। তখন নবী করিম [ﷺ] বললেন-
”খোদার শপথ আমিই ছিলাম ঐ তারকা।”
(তাফসীরে রুহুল বয়ান ৩য় খন্ড ৫৪৩ পৃঃ সূরা তাওবা এবং সীরাতে হালবিয়া ১ম
খন্ড ৩০ পৃষ্ঠা)
নবী করিম [ﷺ]-এঁর এই
অবস্থানের সময় ছিল ঐ জগতের হিসাবে এ দুনিয়ার
হিসাবে কত হাজার কোটি বৎসর হবে
– আল্লাহই জানেন। হযরত
জিব্রাইল (عليه السلام) শুধু
দেখেছেন হুযূরের বাহ্যিক
রূপ। বাতেনী দিকটি
ছিল তাঁর অজানা।
দেওবন্দ
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা কাসেম নানুতুবী
রাসূলে করীম [ﷺ]-এঁর সৃষ্টি
রহস্য এত গভীর যে,
আল্লাহ ছাড়া আর কেহই এঁর প্রকৃত স্বরূপ
জানে না। দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা
কাশেম নানুতবী সাহেব
নবী করিম
[ﷺ]-এঁর
বাহ্যিক আবরণের ভিতরে
যে প্রকৃত নূরানী
রূপটি লুক্কায়িত ও রহস্যাবৃত রয়েছে, তা মুক্ত
কন্ঠে স্বীকার করেছেন
এভাবে-
رہا
جمال پہ تیرے حجاب بشریت،
(রাহা জামালে পে তেরে হেজাবে বশরিয়ত
اورنہ نہ جانا کسے نے تجہے
بجز ستار-
(অউর
না, না জানা কিছিনে তুঝে ব জুঝে সাত্তার)
অর্থঃ ”হে প্রিয় নবী [ﷺ]! আপনার প্রকৃত রূপটি তো বাশারিয়তের আবরণে
ঢাকা পড়ে আছে। আপনাকে আপনার
প্রভূ (ছাত্তার) ছাড়া অন্য
কেহই চিনতে পারে নি।”
এখানে স্মরণ
রাখা প্রয়োজন যে, রাসূলে করীম [ﷺ]-এঁর রূপ
বা অবস্থা তিনটি
যথাঃ- ছুরতে
বাশারী, ছুরতে
মালাকী ও ছুরতে হক্কী। (তাফসীরে
রুহুল বয়ান ও তাফসীরে কাদেরী)।
সাধারণ মানুষ
শুধু দেখতে পায় বাশারী ছুরতটি।
অন্য দুটি ছুরত বা অবস্থা খাস লোক ছাড়া দেখা ও অনুধাবন করা সম্ভব নয়।
হযরত
আদম (আ) এর আগেও নবী
৪। তিরমিযি হাদীস নাম্বার ৩৬০৯। হুযুর ﷺ এরশাদ করেন আমি তখন থেকে নবী যখন আদম (আ) এর রূহ এবং শরীর
একত্রিত হয়নি।
শাহ
অলিউল্লাহর মুরাকাবা
শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী (রহ) বলেন এই হাদীস
খানা পড়ে আমার খেয়াল আসল, আদম (আ) এর সৃষ্টির আগে হুযুর ﷺ কোন অবস্থায় থাকতেন তা জানা দরকার, আর জানার আগ্রহে
আমি মুরাকাবা করলাম। ফলে তখন আমি মোবাকাবায় হুযুর ﷺ এর সে অবস্থা অবলোকন করলাম,
যে অবস্থায় এই
দুনিয়া সৃষ্টির পূর্বে হুযুর ﷺ থাকতেন।
আরশে, জান্নাতে হুযুরের ﷺ
নাম-
৫।
ইবনে জওযী (রহ) তার কিতাব
আলওয়াফা বি আহওয়ালে মুস্তফা ১ম খন্ডের ২৬ পৃষ্ঠায় ৩নং হাদীসে উল্লেখ করেন- এবং বায়হাকী
দালায়েলুন নবুয়তের ১ম খন্ডের ৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন- হুযুর ﷺ এরশাদ করেন যখন
আদম (আ) এর সৃষ্টি হয়নি হাওয়া (আ) এর সৃষ্টি হয়নি, যখন আল্লাহ আরশ
সৃষ্টি করলেন তার আগেই আমার নুর সৃষ্টি করেছেন।
# যখন আরশ সৃষ্টি
হল সে আরশের নানান জায়গায় আমার নাম লিখা ছিল।
#এরপর জান্নাত
সৃষ্টি হল আর জান্নাতে প্রত্যেক দরজায় আমার নাম লিখা হল।
# জান্নাতের গাছের
প্রত্যেক পাতায় পাতায় আমার নাম লিখা হল।
এর অনেক বছর পর হযরত আদম (আ) কে সৃষ্টী করা
হল, যখন তাঁকে রূহ দেয়া হল তিনি মাথা তুলে আরশের দিকে তাকালেন
আর তিনি আরশের চৌখাটে আমার নাম দেখতে পেলেন।
তখন আদম (আ) প্রশ্ন করলেন হে
পরওয়ারদেগার সব জায়গায় মুহাম্মদ নাম দেখছি ইনি কে?
তখন আল্লাহ জবাব
দিলেন হে আদম সে তোমার আউলাদদের মধ্যে হতে হবে তবে তোমার সকল আউলাদদের সরদার হবে।
আদমের
তওবা নামে মুহাম্মদের উছিলায়
আদম (আ) শানে মুহাম্মদ জেনে ফেললেন, তারপর যখন হযরত
আদম (আ) এর পক্ষ থেকে খাতা ছরজদ হল, ফলে আদম ও হাওয়া
কে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হল সেখানে ৩০০ বছর পযন্ত আল্লাহর কাছে কেঁদে কেদেঁ দোয়া
করতে থাকলেন। এত বেশী কেঁদেছেন আজ পযন্ত এই দুনিয়ায় কেহ এত বেশী কাঁদেননি। তারপর
একদিন আসমানের দিকে তাকালেন আর তাতে হুযুর ﷺ এর নাম মোবারক
দেখে মনে পড়ল মুহাম্মদ ﷺ এর শানের কথা তারপর দোয়া করলেন মুহাম্মদ ﷺ এর অছিলায় আর তখন আল্লাহ সে দোয়া কবুল করে নিলেন।
আল্লাহ্
আদমকে প্রশ্ন করলেন মুহাম্মদকে কিভাবে চিন?
৬। মুহাদ্দেস ইবনে জওযী বণনা করেন- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বর্ননা করেন- হাদীসটি মুসতদরক
হাকেম-৪২২৮, তাবরানি সহ অনেকেই রেওয়ায়েত করেছেন- হযরত আদম যখন
মুহাম্মদ ﷺ এর অছিলা দিয়ে দোয়া করলেন তখন আল্লাহ বললেন
আদম তুমি এই নাম সম্পর্কে কিভাবে জানতে পারলে? তখন আদম (আ) জবাব দিলেন হে বারি তায়ালা আমি
সৃষ্টির পর থেকেই আরশ থেকে জান্নাতের দরজা গাছ পাতায় পাতায় জান্নাতের দরজায় দেখেছি
(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ)
তখন আমি বুঝে
ফেললাম যার নাম আপনি নিজের নামের সাথে এভাবে জুড়ে রেখেছেন সে নিশ্চয়ই তোমারই বড়ই
প্রিয় নাম। তার তার উছিলা দিয়ে দোয়া করলাম ফলে আমার দোয়া কবুল হয়ে গেল।
হুযুরের
রওজার মাটি ও হযরত জিবরাইল (আ)
৭। ইবনে জওযী তার কিতাব আলওয়াফা বি আহওয়ালিল মুস্তফা ১ম খন্ডের ২৭ পৃষ্ঠায় বর্ণনা
করেন- হযরত কাবুল আহবার (রা) বর্ণনা করেন- যখন হুযুর ﷺ কে দুনিয়ায়
প্রেরণের সময় হল তখন আল্লাহ তায়ালা জিবরাইল আমিনকে ফরমালেন আমার মাহবুবের বশরী
কায়ার জন্য পাক মাটি নিয়ে আস। আর হযরত জিবরাইল (আ) আসলেন যেখানে আজ হুযুর ﷺ কবরে শুয়ে আছেন সেখান থেকে মাটি নিয়ে গেলেন। সে মাটিকে
জান্নাতের পানি দ্বারা ধৌত করা হল, এত বেশী ধৌত করা হল যে তা নুরের মত
আলো ছড়াতে লাগল। অতপর সে মাটিকে আরশ লৌহ কলম ও সারা কায়েনাতে ঘুরানো হল। এবং সকল
সৃষ্টিকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হল যে এটাই হল সে মাটি যা দ্বারা আল্লাহর হাবিবের
ওজুদের খামির বানানো হবে।
হযরত কাবে আহবার (রা) বয়ান করেন অতপর
হুযুরের নুরকে প্রথমে হযরত আদম (আ) এর পৃষ্ঠে সে নুরকে স্থাপন করা হল।
আদমের কপালে হুযুর ﷺ এর নুর চমকাতে থাকে।
আদম
থেকে শিষ এর পৃষ্ঠে
যখন আদম ও হাওয়ার কোন সন্তান হত
একসাথে ২ জন করে হত, কিন্তু যখন হযরত আদম থেকে নুর পরবর্তী
জেনারেশনের স্থানান্তরের সময় হল তখন আদম (আ) এর সন্তান হযরত শিষ (আ)কে নির্ধারন করা
হল আর হযরত শিষ (আ) এমন একজন আদম সন্তান ছিল যিনি শুধু
একমাত্র একাকিই জন্ম গ্রহণ করেন। এটাই হল শানে মোস্তফা।
হযরত শীস (আ) এর কপালে যখন
নুরে মুহাম্মদীর নুর চমকাতে দেখেলেন একদিন আদম (আ) হযরত শীস (আ)কে বললেন- বেটা তোমার
কপালে এক নুর চমকাচ্ছে,
মনে রাখবে এই
নুর আল্লাহর তরফ থেকে এক আমানত।এই নুর হল আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর নুর, তোমাকে মোবারকবাদ কারন তোমার পবিত্র
কপালকে নুরে মোস্তফার জন্য নির্ধারন করা হয়েছে।
তোমাকে নসিহত করছি এই নুরকে
স্থানান্তরের জন্য তুমি পাক পবিত্র রেহেম নির্ধারন করবে। কেননা আমাকে হকুম করা
হয়েছে এই নুর পাক পবিত্র ঔরষ ও পাক পবিত্র গর্ভের দ্বারাই স্তানান্তর হতে থাকবে।
অতএব একের পর এক পাক পবিত্র ঔরষে ও পাক
পবিত্র গর্ভের মাধ্যমে এই নুর স্থানান্তর হতে থাকল।
৮। ইবনে জওযী তার কিতাব আলওয়াফা বি আহওয়ালিল মুস্তফা ১ম খন্ডের ২৮ পৃষ্ঠায় ৯নং হাদীস বর্ণনা করেন-
হযরত ইবনে
আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত হযরত শীষ থেকে হযরত নুহ (আ) এর পৃষ্ঠে নুরে
মুহাম্মদী স্থানান্তর হল হযরত নুহ (আ) যখন কিস্তিতে ছওয়ার ছিলেন তখন নুরে
মুহাম্মদী হযরত নুহ এর পৃষ্ঠে ছিলেন।
# হযরত হযরত
ইবরাহিম (আ) কে নমরুদ আগুনে নিক্ষেপ করল সে
আগ্নিকুন্ড ফুলের বাগানে পরিণত হল তখন নুরে মুহাম্মদী হযরত ইবরাহিমের পৃষ্ঠে
অবস্থান করছিল।
#(মাওয়াহেবে
লুদুনিয়া ১ম খন্ড ৯৭ পৃ) এভাবে নুরে মুহাম্মদী স্থানান্তর হতে হতে
হযরত আবদুল মোত্তালিব পযন্ত এসে পৌঁছল। তখন হযরত আবদুল মোত্তালিবের কপালে সে নুর
চমকাতে লাগল। তখন হযরত আবদুল মোত্তালিবের শরীর থেকে এক মনকাড়া খুশবু বের হত। তার চেহেরাতে এমন এক প্রভাব ছিল যে মক্কার বড় বড় লোকেরাও তার প্রভাবে ভীত ছিল।
# এমনকি হুযুর ﷺ এর জন্মের পূর্বে আবরাহা বাদশা কাবা ঘরকে হাতি বাহিনি দিয়ে
যে ধ্বংস করতে এসেছিল, সে আবরাহা বাদশার কাছে হযরত আবদুল মোত্তালিব
কিছু সাথি নিয়ে দেখা করতে গেলে আবরাহা বাদশা আবদুল মোত্তালিবের কপাল মোবারকে নুরে
মোস্তফার চমক ও চেহেরার প্রভাবে এতই প্রভাবান্বিত হলেন যে নিজের সিট থেকে দাঁড়িয়ে
আবদুল মোত্তালিবকে সম্মান দেখাতে বাধ্য হয়ে গেলেন।
#(মাওয়াহেবে
লুদুনিয়া ১ম খন্ড ৯৮ পৃ) যখন আবদুল মোত্তালিব ছোট ছিল আরবের লোকেরা
খরার সময় আবদুল মোত্তালিবের অছিলা দ্বারা দোয়া করলে বৃষ্টি শুরু হয়ে যেত।
# হযরত আবু সাঈদ
নিশাপুরী (রহ) বণনা করেন - হযরত কাবুল
আহবার থেকে বর্ণনা করেন হযরত আবদুল মোত্তালিব যখন যুবক তখন একদিন তিনি কাবা ঘরের
পাশে ঘুমিয়ে ছিলেন ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখেন তার চোখে সুরমা লাগানো, মাথা তেলা
লাগানো, চেহেরা সুরত অত্যন্ত সুন্দর ও চমৎকার রূপ
ধারন করেছে, এ অবস্থা দেখে আবদুল মোত্তালিবের পিতা তাকে
এক কাহেন বা গনকের কাছে নিয়ে গেলেন, কাহেন পরামর্শ দিলেন আবদুল
মোত্তালিবকে বিয়ে করিয়ে দেয়ার।
আবদুল মোত্তালিবের সাথে প্রথম বিয়ে হল
কিন্তু সে নুর তার কপালেই রয়ে গেল, তা তার স্ত্রীর কাছে স্থানান্তর হলনা।
বেশ কিছুদিন পর আবদুল মোত্তালিবের ২য়
বিয়ে হল যার নাম ছিল ফাতেমা, যখন ২য় বিয়ে হল তখন নুরে মোস্তফা
হযরতে ফাতেমার গর্ভে স্থানান্তর হয়ে গেল। আর সে গর্ভে হযরত আবদুল্লাহ যিনি হযরত
মুহাম্মদ ﷺ এর পিতা তার জন্ম হল।
# আবু নুয়াইম
ইসপাহানি দালায়েলুন নবুয়াতের ১ম খন্ডের ৯১ পৃষ্ঠায় হযরত ইবনে আব্বাস (রা) হতে বণনা করেন- নুরে মোস্তফা
আবদুল মোত্তালিব থেকে হযরত আবদুল্লাহ (রা)
এর কপাল মোবারকে
চমকাতে শুরু করল। আবদুল্লাহ যখন যুবক হল একদিন তিনি পিতা আবদুল মোত্তালিবের সাথে
কোথাও সফরে যাচ্ছিলেন, সেখানে পথিমধ্যে ওয়ারাকা বিন নওফেলের বোন যার
নাম রুকিয়াহ বিনতে নওফেল সে মহিলা তার ভাই ওয়ারাকা থেকে শেষ নবীর ব্যপারে জানতে পারেন। সে মহিলা হযরত আবদুল্লাহকে দেখলেন এবং
বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু হযরত আবদুল্লাহ বললেন আমি সফরে
যাচ্ছি সফর থেকে ফিরে এসে এর জবাব দিব। হযরত আবদুল্লাহ সে সফরে জুহরাহ এলাকায় ১৪
বছর বয়সী হযরত আমেনার সাথে বিয়ে হয়ে গেল এবং আবদুল্লাহর কপালের সে নুর আমেনার গভে
মুনতাকিল হয়ে গেল। কিছুদিন পর আবদুল্লাহর সাথে সে ফাতেমার পুনরায় দেখা হল
আবদুল্লাহ বিয়ের জন্য প্রস্তুত বলে মত দিল কিন্তু ফাতেমা বলল হে আবদুল্লাহ আমি যে
নুর দেখে তোমাকে বিয়ে করার কথা বলেছিলাম তা আর তোমার মাঝে মওজুদ নাই সেটা কোন একজন
সৌভাগ্যবতী নিয়ে গেছে।
# যে বছর হুযুর ﷺ জন্ম গ্রহণ করেছেন সে বছর মক্কায় এত বেশী ফল ফসল হয়েছে এত
বেশী বরকময় হয়েছে এমন বরকতময় আর কখনো আরবের লোকেরা দেখেনি।
আমেনার
গর্ভে থাকাকালীন মুযেজা
#আবু নুয়াইম
ইসপাহানি দালায়েলুন নবুয়াতের ১ম খন্ডের ৯৪- হযরত আমেনা বলেন যখন আমার গর্ভে
মুহাম্মদ আসল তখন আমি স্বপ্নের মাধ্যমে সুসংবাদ পেলাম। আমাকে সুসংবাদ দিল হে আমেনা
তোমার গর্ভে সারা মানব সভ্যতার সরদার এসেছে। এবং আরো বলা হল যখন সে জন্ম হবে তার
নাম রাখবে মুহাম্মদ। সেদিনটি ছিল সোমবার দিন।
#খতিব বাগদাদী (রহ) এর মতে মহান
আল্লাহ পাক নুরে মোহাম্মদী (দ) কে যখন স্বীয় মাতা আমেনার রেহেমে
স্থানান্তর করানোর ইচ্ছা পোষন করেন, তখন ছিল রজব মাস। এ মাসের এক রজনীতে
আল্লাহ জান্নাতের প্রধান রেদওয়ানকে নির্দেশ দিলেন ওহে রেদওয়ান জান্নাতুল ফেরদৌসের
সকল দরজা খুলে দাও এবং আসমান জমিনে জানিয়ে দাও যে আজ রাত্রে নুরে মুহাম্মদী স্বী
মাতার রেহেমে অবস্থান করবেন।
#সুয়ুতী খাসায়েসে কুবরা ১ম খন্ড ৮১ পৃ- যখন আমার গর্ভে
সন্তান আসল তখন এক গায়েবী আওয়াজ শুনলাম বলা হল হে আমেনা তোমার পেটে যে আছে সে হল খাইরুল আলামিন যখন তার জন্ম হবে তার নাম মুহাম্মদ রাখবে। আর
তার জন্মের পূর্বে যা যা তোমার সাথে ঘটে তা প্রকাশ করিওনা।
#মাওয়াহেবে
লুদুনিয়া ১ম খন্ড ১২২ পৃ- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন- হযরত আমেনা যে
রাতে গর্ভবতী হল সে রাতে কুরাইশীদের প্রত্যেকের ঘরে যত চতুষ্পদ জন্তু ছিল তাদের জবান খুলে গেল এবং তারা বলেছে (কাবার প্রভুর
কসম আজ মোস্তফার নুর তার মায়ের গর্ভে স্থানান্তর হয়ে গেছে)
# আমেনা (রা) বলেন হযরত
মুহাম্মদ ﷺ ৯ মাস পযন্ত আমার গর্ভে ছিল সে সময় আমার এতই
হালকা অনুভুত হত যে আমি অনুভবই করতে পারতাম না যে আমি গর্ভবতী।
#ইবনে হিশশাম
সিরাতুন নবুবিয়্যাতে ১ম খন্ডের ১৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন- হযরত আমেনা বলেন
আমার গভে যখন নুরে মুহাম্মদী ছিল তখন একদিন এমন নুর চমকালো যে মক্কা থেকে শাম
পযন্ত আলোকিত হয়ে গেল।
# হযরত আমেনার
গর্ভে নুরে মুহাম্মদ থাকা অবস্থায়ই আবদুল্লাহর ইন্তেকাল হয়ে যায় তখন ফেরেশতারা আরজ
করল এয়া রব আপনার মাহবুবকে জন্মের আগেই আপনি এতিম করে দিলেন, তখন আল্লাহ তায়ালা
জবাব দিলেন আমার মাহবুবের জন্য আমিই যথেষ্ট।
হুযুর
ﷺ
এর জন্মের সময়ের ঘটনা ও মুজেযা
আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৯৮ পৃ, সুয়ুতীর
খাসায়েসে কুবরা ১ম খন্ডের ৮১-৮৩ পৃষ্ঠায় হুযুর ﷺ এর জন্মের সময়কার অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
হযরত আমেনা (রা) ফরমান যখন হুযুর
ﷺ এর জন্মের সময় নিকটবর্তী হল, একদিন আমার মনে
হল সাদা পাখির পাখার মত কিছু জিনিষ আমার অন্তরকে স্পর্শ করেছে। আর সে স্পর্শের
সাথে সাথে সন্তান জন্মের সময় যে ব্যথা সে
ব্যথা দুরীভুত হয়ে গেল।
এরপর আমাকে জান্নাতী শরবত দেয়া হল, সে শরবত পান
করার পর এক আজিমুশশান নুর আমাকে ঘিরে ফেলল। আর সে নুরের মধ্যে আমি দেখতে পেলাম
উঁচু কাঁদ বিশিষ্ট সুন্দরী কিছু নারী আমার ঘরে তশরীফ আনল। আমি তাদের প্রশ্ন করলাম
আপনারা কারা তাদের মধ্যে একজন জবাব দিল আমি হযরত আছিয়া, একজন বলল আমি
হযরত মরিয়াম, আর আমাদের সাথে এসব হুর এসেছে আজ আখেরী
নবীর জন্ম হবে তাঁকে স্বাগতম জানানোর জন্য আমরা জান্নাত থেকে এখানে এসেছি। সে
সময়টি ছিল সুবেহ সাদেকের সময় এমন নুর চারদিকে ছেয়ে গেল।
#জন্মের সময়ের
একটি মুযেজা এমানভাবে প্রকাশ হল যে তার সাথেই এক নুর বের হলো যার দ্বারা শামের
বুছরা এলাকার প্রসাদ সমুহ আলোকিত হয়ে গেল।
# ফেরেশতারা
আমেনার ঘরকে ঘিরে নিল, তারা তকবীর ধ্বনী দিতে লাগল, নবী মুহাম্মদ
অত্যন্ত সুন্দর ও পুত পবিত্র রুপে তাশরীফ আনলেন,
খতনা করা, নাভি কাটা, সাদা রঙের খতমে
নবুয়তের মহর লাগানো ছিল, আঙ্গলসমুহ মুস্টিবদ্ধ ছিল শুধু শাহাদাত
আঙ্গুল খোলা ছিল, চোখে সুরমা লাগানো ছিল, জন্মের পরই
সিজদা অবনত হলেন। তার থেকে এমন নুর প্রকাশিত হল যার দ্বারা পূব পশ্চিম আলোকিত হয়ে
গেল ঐ আলোতেই তার সম্মানিত মাতা নিজ চোখে বসরার প্রসাদসমুহ দেখলেন।
সুত্র সহিহ ইবনে হিব্বান, মুসতাদরাক লিল
হাকিম, মুসনদে আহমদ।
নবী করীম (ﷺ) এঁর জন্মের সময় অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে। কিসরার প্রাসাদসমূহে ভুমিকম্প আসে। এটা নবী করীম (ﷺ) এঁর জন্মের সময়ে হওয়া গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন সমূহের মধ্যে একটি। তাছাড়া মূর্তিগুলো উপুড় হয়ে পড়ে যায়। (পারস্যের) অগ্নিপুজকদের জ্বালানো আগুন যা হাজার বছর ধরে নেভেনি তা-ও এক ঝটকা ঠান্ডা হাওয়াতে নিভে যায়। 'সাওয়াহ' হ্রদ শুকিয়ে যায়। সামাওয়াহ উপত্যকা পানিতে ভরে যায়।
পূর্ববর্তী আলেমগণ তাঁর (ﷺ) জন্মের সুসংবাদ শুনিয়েছেন এবং নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেছিল। শয়তানগুলোর আসমানে যাওয়া এবং খবর চুরি করা আটকে দেয়া হয়েছিল। তাদেরকে চাবুক মারা শুরু হয়েছিল। জিনেরাও হুযুর (ﷺ) এঁর আগমনকে স্বাগতম জানিয়েছিল।
❏ যে সময় হযরত সাইয়্যেদুনা আবদুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) কে জন্মের সংবাদ দেয়া হয় ঐ সময় তিনি হারামে কা'বায় ছিলেন। ঐ খবর শুনে তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন এবং তিনি কিছু মানুষের সাথে (আমিনা (رضي الله عنه) এঁর ঘরে) চলে যান। হযরত সাইয়্যিদুনা আমিনা (رضي الله عنه) ঐ সকল কথা তাঁকে বললেন যা তিনি হুযুর (ﷺ) এঁর জন্ম হওয়া পর্যন্ত দেখেছিলেন। যা কিছু ঐ বাচ্চার ব্যাপারে বলা হয়েছিল সেসব শুনে হযরত আবদুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) নারীদেরকে বললেন-
এই বাচ্চার খেয়াল রেখো। আমি আশা করি তাঁর উচ্চ মর্যাদা হবে। এরপর তিনি তাঁকে কোলে নিলেন। এবং খানায়ে কা'বা শরীফে প্রবেশ করলেন। এবং তাওয়াফ করে বলতে লাগলেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي
أَعْطَانِي ... هَذَا الْغُلَامَ الطَّيِّبَ الْأَرْدَانِ
قَدْ سَادَ فِي الْمَهْدِ عَلَى
الْغِلْمَانِ ... أُعِيذُهُ بِالْبَيْتِ ذِي الْأَرْكَانِ
অনুবাদঃ আমি আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করছি যিনি আমাকে এই পাক ও পবিত্র ছেলে দান করেছেন। ইনি তো কোলেই সকল বাচ্চার সরদার হয়ে গেছে। আমি একে খানায়ে কা'বার রবের আশ্রয়ে দিচ্ছি সকল নযর লাগানো হিংসুকের চোখ থেকে। ২৪
24➠
১) তাবাকাতে ইবনে সা'দ, ১/৮৩
২) রওযুল উনফ, ২/১৫৭
৩) বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়াত, ১/১১২
৪) সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৩৬০
৫) তারিখুল খামীস, ১/২০৪
৬) আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া, ৩/৩৮৬
প্রসঙ্গঃ আবু লাহাবের খুশী ও তার শাস্তির বিরতি
=============
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা ﷺ ভূমিষ্ট হওয়ার পর ছুয়াইবা নাম্মী এক দাসী তার মনিব আবু লাহাবকে এই সুসংবাদ জানায়। আবু লাহাব ভাতিজার জন্মসংবাদে খুশী হয়ে আপন দাসী ছোয়াইবাকে আযাদ করে দেয়। ৫৫ বৎসর পর বদরের যুদ্ধের ৭দিন পর প্লেগ রোগে আবু লাহাবের মৃত্যু হয়। আবু লাহাবের ভাই হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) স্বপ্নে আবুলাহাবকে দেখে নবী দুশমনির পরিনতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আবু লাহাব আফসোস করে বললো- “নরকে আমার স্থান হয়েছে। তবে নবী করীম ﷺ-এঁর জন্মসংবাদে খুশী হয়ে দাসীকে শাহাদৎ আঙ্গুলের ইশারায় আযাদ করার কারণে প্রতি সোমবার আমার কবরের আযাব কিছুটা হালকা হয় এবং শাহাদৎ আঙ্গুল চুষে কিছুটা তৃষ্ণা নিবারণ করি।” (বুখারী শরীফ : ৪৭৩০, ৫১০১ *তৌহিদ ফাউন্ডেশন ও মাওয়াহেব)।
ইবনে জজরী (رحمة الله عليه) এ প্রসঙ্গে বলেন- “আবু লাহাব নবী করীম ﷺ-এঁর একজন কট্টর দুশমন- যার বিরুদ্ধে সূরা লাহাব নাযেল হয়েছে। নবীজীর ﷺ জন্মদিনের খুশীতে যদি তার এই পুরষ্কার হয়, তাহলে যে মুসলমান মীলাদুন্নবী ﷺ উপলক্ষে খুশী উদযাপন করবে এবং নবীর মহব্বতে সাধ্যমত খরচ করবে, তার পুরষ্কার কী হতে পারে? আমার জীবনের শপথ করে বলছি - নিশ্চয়ই আল্লাহ জাল্লা শানুহু আপন অনুগ্রহে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন (আন্ওয়ারে মুহাম্মদীয়া)।”
উক্ত ছোয়াইবা নবী করীম ﷺ-কে কয়েক দিন দুধ পান করিয়েছিলেন। সেজন্য নবী করীম ﷺ তাঁকে মা বলে সম্মান করতেন। জন্মের পর নবী করীম ﷺ ১৬/১৭ দিন আপন মা ও ছোয়াইবার দুধ পান করেছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই