মহানবীর (দ) চরিত্র। আখলাকুন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম
আখলাকুন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম
নিঃসন্দেহে আমাদের নবী হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী। আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ) উপলক্ষে সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর কিছু সর্বশ্রেষ্ঠ চরিত্র আলোচনা করব এবং তা থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ পূর্বক সে চরিত্রে চরিত্রবাণ হওয়ার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।
তাকওয়া হল নবীর চরিত্র
এক হাদিসে এসেছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অধিক জান্নাতে প্রবেশকারী বক্তি
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বললেন, দুই ধরণের ব্যক্তি- এক. খোদাভীতি অবলম্বনকারী। দুই. সৎচরিত্রবান ব্যক্তি। [জামে তিরমিযি : হা. ৬১৬]
নবী করিম (দঃ) এটার উদাহারন শুনিয়েছেন। বনি ইসরাইলের
ঘটনা এক লোক একটি জমিন বিক্রী করল আর ২য় জন ক্রয় করল, যখন ক্রয়কারী হাল চাষ করল সে জমিনের ভিতর থেকে গুপ্তধন বের
হয়ে আসল। জমিন ক্রয় কারী বলল এ গুপ্তধন আমারতো না বরং যে জমিন বিক্রী করেছে তার
হবে। সে গিয়ে জমিন বিক্রীকারীকে বলল ভাই এ নাও আপনার গুপ্তধন নিয়ে নিন। তখন সে
জবাব দিল আমি জমিন বিক্রী করে দিয়েছি এখন জমিনের ভিতর বাহিরে যা কিছু সবই আপনার। এ
গুপ্তধন আমার নয় বরং এটা যেহেতু আপনি জমিনের বতমান মালিক সুতরাং এ গুপ্তধনও আপনার।
দুজনই বলছে এ গুপ্তধন আমার নয় আপনার,
অবশেষে
তারা বিচারকের নিকট গমন করল। বতমান যুগে হলেতো এর বিপরীত বলত দুজনই বলত এটা আমার
গুপ্ত ধন। একজন বলবে আমি আমার ধন নিয়েই ছাড়ব,
আর ২য়
জন বলবে আমি আমার দৌলতের জন্য রক্তের বন্যা বইয়ে দিব।
তো সে দুজন নেককার বান্দা যখন কাজির কাছে গেল সে
মোকাদ্দমা পেশ করল তখন কাজী বুঝতে পারল এ দুজনই ব্যক্তি খুবই নেককার তাই কাজী
বিচক্ষনতার সাথে সে মোকাদ্দমা ফয়সালা করে দিলেন। কাজী জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের
সন্তান সন্ততি কয়জন? জানা গেল একজনের
ছেলে যুবক হয়েছে আর ২য় জনের মেয়ে যুবতী হয়েছে। সুতরাং কাজী ফয়সালা করলেন একজনের
ছেলের সাথে অন্যজনের মেয়ের বিয়ে করিয়ে দেয়া হউক এবং বিয়েতে উপহার হিসেবে এ গুপ্তধন
যাতে সোনা চান্দি ভরপুর ছিল তা দিয়ে দেয়া হউক। কেমন সাবধানতা ছিল এসব নেককার
লোকদের।
নবী করিম সা. বলেছেন, অতীত যুগে এক ব্যক্তি সীমাহীন পাপ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। অবশেষে তার মৃত্যুর সময়
ঘনিয়ে এলে সে তার সন্তানদেরকে ডেকে বললো,
আমি
যখন মারা যাবো, তখন তোমরা আমাকে
আগুনে জ্বালিয়ে আমার পুড়া দেহকে পিষে তা বাতাসে উড়িয়ে দিবে। আল্লাহর শপথ! যদি তিনি
আমাকে ধরতে পারেন তবে এমন শাস্তি আমাকে দিবেন, যা ইতিপূর্বে কাউকে দেননি। অতঃপর লোকটি মারা গেলে অসিয়ত মত সবই করা হলো। ওদিকে
আল্লাহ তাআলা জমিনকে নির্দেশ দিয়ে বললেন,
তার
(লোকটির) যে যে অংশ যেখানে যেখানে আছে আমার সামনে উপস্থিত করো। জমিন নির্দেশ মত
তাকে উপস্থিত করলো। আল্লাহ তাআলা তাকে জিজ্ঞেস করলেন। কিসে তোমাকে এমন কাজ করতে উদ্বুদ্ধ
করলো?
সে জবাব দিলো,
আপনার
ভয় হে প্রভু! এ জবাব শুনামাত্রই মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।” [ফতহুলবারি : ৭/৩৩২,
হা.
৩৪৮১]
নবীর প্রতি বেহিসাব ভালবাসা- দোকানদার এর নারী
প্রেরম ও মাওলানা রোম
আমরা যদি নবীকে প্র্রকৃত ভালবাসি তাহলে নবীর প্রতি বেহিসাব ভালবাসা প্রদশন করতে হবে
হিসাব করে করে ভালবাসা হয়না
মাওলানা রোম এক দোকানে গিয়ে থেমে গেল, এক নারী কিছু কিনে যখন মূল্য দিতে চাইল...
মাওলানা রোম যখন একদিন কিছু কিনার জন্য বাজারে গেলেন, একটি দোকানে গিয়ে থেমে গেলেন, দেখলেন দোকান থেকে এক নারী কিছু কিনছে
কিনার পর যখন সে নারী তার মূল্য আদায় করতে চাইল, তখন দোকানদার বলল ইশক মহব্বতে কিসের মূল্য? মূল্য দেয়া বাদ দাও আর যাও
আসলে এরা দুজন আশেক ও মাশুক ছিল। মাওলানা রোম একথা
শুনে বেহুশ হয়ে সেখানে পড়ে গেলেন।
দোকানদার এটা দেখে খুব ভয় পেয়ে গেল। এরি মধ্যে সে
নারী সেখান থেকে চলে গেল।
অনেকক্ষন পর যখন মাওলানা রোমের হুশ আসল, দোকানদার প্রশ্ন করল,
মাওলানা
আপনি কেন বেহুশ হয়ে গেলেন?
মাওলানা রোমি জবাব দিলেন-
আমি এ কথায় বেহুশ হয়েছি যে তোমার ও এই নারীর মধ্যে
মহব্বত এতই ঘাঢ় ও শক্ত যে তোমাদের মধ্যে কোন হিশাব কিতাব নাই।
আর আল্লাহ ও রাসুলের পাকের সাথে আমার ইশক এতই দুর্বল
যে আমি তসবিহ গুনে গুনে হিসাব করে করি। দরুদ হিসাব করে করি।
নবীর আখলাক ভিক্ষা না করা
বা কারো কাছে কিছু না চাওয়া
আবু বকরের উটের পিঠ থেকে নেমে লাঠি উঠানোর কারন
এক ব্যক্তি তাঁর কাছে ভিক্ষা চাইতে এলে তিনি তাকে
কাজ করে খেতে উপদেশ দেন। তিনি তার কম্বল বিক্রি করে সে অর্থের অর্ধেক দিয়ে সে
দিনের খাবার ও বাকি অর্ধেকে কুঠার কিনে দিয়ে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা
নির্বাহ করতে প্ররোচিত করেন। ভিক্ষাবৃত্তি ইসলাম সমর্থিত হলে তিনি তাকে কাজ করার
উপযোগী না করে ভিক্ষা বৃত্তিতেই নিয়োজিত করতেন। ভিক্ষাবৃত্তিতে অন্যের কাছে
অর্থনৈতিক সাহায্য বা খাবারের জন্য হাত পাতা হয়। রাসূল (সা.) তা কিভাবে পছন্দ করতে
পারেন, যিনি নাকি সামান্য ব্যাপারেও
পরনির্ভরশীলতাকে ঘৃণা করতেন?
উষ্ট্রপৃষ্ঠে উপবিষ্টকালীন তাঁর হাতের লাঠিটি পড়ে
গেলে হরজত আবু বকর (রা.) নিজে উট থেকে নেমে তা কুড়িয়ে দিতেন। তাঁকে এ ব্যাপারে
জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমার প্রিয় নবী
(সা.) অন্য কোন আদম সন্তান হতে কিছু প্রার্থনা করা পছন্দ করতেন না।
তিনি বলেন,
রাসূল
(সা.) আমার জন্য দোয়া করলেন এবং এর জন্য একটি শর্ত আরোপ করলেন, তুমি মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করতে পারবে না। আমি সম্মত
হলাম। তিনি বললেন, তোমার হাতের লাঠিটি
যদি পড়ে যায় তাও না, তুমি উচু থেকে নেমে
আসবে এবং তা উঠিয়ে নেবে।
নবীর আখলাক হারাম থেকে বেঁচে থাকা
>> আল্লাহ তাআলার নিকট ইবাদত
বন্দেগি কবুলের প্রথম শর্তই হলো হারাম থেকে বেঁচে থাকা। প্রিয়নবি বলেন, ‘ওই ব্যক্তির সব দোয়া (চাওয়া-পাওয়া) আল্লাহর দরবারে কবুল হয়, যে ব্যক্তি সব সময় হারাম থেকে বেঁচে থাকে।’
নবীর আখলাক- লোভ না করা
লোভ সংক্রান্ত ঘটনা
#হযরত ঈসা ও এক ইহুদীর ঘটনা
নবীর আখলাক- জুলুম করা যাবেনা
জুলুমের পরিণতি
জালেমের মতো হতভাগা আর কেউ নেই। রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা কি জানো- গরিব কে? সাহাবিরা বললেন, আমাদের মধ্যে যার
সম্পদ নেই সে হলো গরিব লোক। তখন তিনি বললেন,
আমার
উম্মতের মধ্যে সে হলো গরিব, যে কিয়ামতের দিন
নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে আসবে অথচ
সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত
ব্যক্তিকে সেদিন তার নেক আমলনামা দিয়ে দেওয়া হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা
হবে। [তিরমিযি :৪১৮]
বিশ্বনবীর আখলাক হল ক্ষমা কর
মহানবীর ক্ষমার বিষ্ময়কর ১১টি ঘটনা
দুর্ব্যবহারকারীর সাথে আচরণ- ক্ষমার দৃষ্টান্ত
প্রিয় নবী (দ) কখনো কোন দুর্ব্যবহারকারী সাথে
প্রতিশোধমুলক দুর্ব্যবহার করতেন না, যেমন
ক্ষমার ঘটনা-১
# খুতবার সময় হুমকিঃ হযরত মুআবিয়া ইবনে হায়দা (রা)
হতে বর্ণিত যে, তার গোত্রের এক
ব্যক্তি নবী (দ) এর কাছে হাজির হয়ে বললো,
আমার
পড়শীদেরকে কোন অপরাধে বন্দী করা হয়েছে,
নবীজি
তখন খুতবা দিচ্ছিলেন সে নবীজিকে হুমকি দিল,
কিন্তু
নবীজি (দ) তাঁর সাথে কোন দুর্ব্যবহার করলেন না বরং বন্দীদেরকে ছেড়ে দিতে বললেন।
ক্ষমার ঘটনা-২
#কাফের বলল আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে? হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (দ) মাহারিবে খাসফা নামক স্থানে বনু
গাতফানের সাথে যুদ্ধ করার জন্য অবস্থান করছিলেন তখনও যুদ্ধ শুরু হয়নি, এক কাফির রাসুলুল্লাহ (দ) এর মাথার পাশে দাঁড়িয়ে বলল এখন
তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে? নবীজি বললেন আল্লাহ!
এটা বলার সাথে সাথে তার হাত থেকে তরবারী পরে গেল। তখন নবীজি তরবারী হাতে নিলেন এবং
বললেন এবার বল তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে? সে খুবই ভীত হয়ে গেল , কিন্তু তাকে দয়াল
নবী ক্ষমা করে দিলেন ফলে সে কলমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল।
ক্ষমার ঘটনা-৩
# ইহুদী নারীর বিষ মিশ্রণ- ক্ষমা খায়বরের একজন ইয়াহূদী
নারী ভুনা-বকরীর সাথে বিষ মিশ্রিত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাদিয়া স্বরূপ প্রেরণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার রানের গোশত ভক্ষণ করেন এবং সাহাবীদের কেউ কেউ তা ভক্ষণ করে। এ সময়
তিনি তাঁর সাহাবীদের বলেনঃ তোমরা তোমাদের হাত উঠিয়ে নাও, (অর্থাৎ তোমরা আর
খেয়োনা)। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে ইয়াহূদী নারীকে
আনিয়ে জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি এ বকরীর গোশতে বিষ মিশিয়েছ? তখন সে জিজ্ঞাসা করেঃ কে আপনাকে এ খবর দিয়েছে? তিনি বলেনঃ বকরীর এই রানটি। তখন সে নারী বলেঃ হ্যাঁ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করেনঃ
তোমার এরূপ করার উদ্দেশ্য কি? সে নারী বলেঃ যদি
আপনি নবী হন, তবে এ বিষ আপনার কোন ক্ষতি
করতে পারবে না। আর যদি আপনি নবী না হন,
তবে
আপনার থেকে পরিত্রাণ পাব, (এ জন্য আমি এরূপ
করেছি)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মহিলাকে ক্ষমা করে দেন এবং
তাকে কোনরুপ শাস্তি প্রদান করেননি।
ক্ষমার ঘটনা-৪
#যাদুকারী ইহুদীকে ক্ষমার ঘটনাঃ (বুখারী ৫৩৫১)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যুরায়ক
গোত্রের লাবীদ ইবনু আ'সাম নামক এক
ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যাদু করে। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেয়াল হতো যেন তিনি একটি কাজ করছেন, অথচ তা তিনি করেননি। এক দিন বা এক রাত্রি তিনি আমার কাছে
ছিলেন। তিনি বার বার দু’আ করতে থাকেন। তারপর
তিনি বলেনঃ হে আয়িশা! তুমি কি উপলব্ধি করতে পেরেছ যে, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম, তিনি আমাকে তা জানিয়ে দিয়েছেন।
(স্বপ্নে দেখি) আমার নিকট দু'জন লোক আসেন। তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অপরজন দু'পায়ের কাছে বসেন। একজন তাঁর সঙ্গীকে বলেনঃ এ লোকটির কি
ব্যথা? তিনি বলেনঃ যাদু করা হয়েছে।
প্রথম জন বলেনঃ কে যাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বলেন
লাবীদ ইবনু আসাম। প্রথম জন জিজ্ঞাসা করেনঃ কিসের মধ্যে? দ্বিতীয় জন উত্তর দেন চিরুনী, মাথা আচড়ানোর সময় উঠা চুল এবং এক পুং খেজুর গাছের 'জুব' এর মধ্যে। প্রথম জন
বলেনঃ তা কোথায়? দ্বিতীয় জন বলেনঃ 'যারওয়ান' নামক কুপের মধ্যে।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কয়েকজন সাহাবী সঙ্গে নিয়ে তথায় যান। পরে ফিরে এসে বলেনঃ হে আয়িশা! সে কুপের পানি
মেহদীর পানির মত (লাল) এবং তার পাড়ের খেজুর গাছের মাথাগুলো শয়তানের মাথার মত। আমি
বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কি এ কথা প্রকাশ করে দিবেন না? তিনি বললেনঃ আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দান করেছেন, আমি মানুষকে এমন ব্যাপারে প্ররোচিত করতে পছন্দ করি না, যাতে অকল্যাণ রয়েছে। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলে সেগুলো মাটিতে পুতে ফেলা হয়।
ক্ষমার ঘটনা-৫
#হাতিব ইবনু আবি বালতায়া মক্কায় বুড়ির মাধ্যমে
চিঠি প্রেরণ- রওদা খাকে বুড়ি গ্রেফাতর
‘আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
আয-যুবাইরকে এবং আল-মিকদাদ (রাঃ)-কে পাঠিয়ে দিয়ে বললেনঃ তোমরা ‘রওদা খাখ’ নামক বাগানের নিকট
গিয়ে পৌঁছবে। সেখানে গিয়ে এক বৃদ্ধ মহিলাকে পাবে। তার নিকটে একটা চিঠি রয়েছে, তোমরা তা উদ্ধার করে আনবে। আমাদের ঘোড়াগুলো নিয়ে ‘আমরা দ্রুত ছুটে চললাম এবং রওদায় খাকে পৌঁছে এক বৃদ্ধা
মহিলাকে পেয়ে তাকে বললাম, চিঠিটা বের করো। সে
বললো, আমার কাছে কোনো চিঠি নেই।
আমি বললাম,
হয়
চিঠিটি বের করে দাও, নতুবা তোমার পরনের
কাপড় খুলে খোঁজ করবো। ‘আলী (রাঃ) বলেন, সে তার চুলের খোপার মধ্য থেকে চিঠিটি বের করে দিলো। ‘আমরা তা নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট
উপস্থিত হলাম। দেখা গেলো যে, তা হাতিব ইবনু আবূ
বালতাআহ কর্তৃক লিখিত মক্কার কতিপয় মুশরিকের নামে পাঠানো চিঠি।
তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সামরিক তৎপরতার কিছু তথ্য উল্লিখিত ছিলো। তিনি
হাতিবকে বললেনঃ এটা কি করলে? সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ব্যাপারে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিবেন
না। কুরাইশদের সাথে আমার সম্পর্কযুক্ত থাকলেও প্রকৃতপক্ষে আমি কুরাইশ বংশীয় নই।
এখানকার বহু মুহাজিরদের মক্কার কুরাইশদের সাথে আত্মীয়তা রয়েছে। তারা তাদের মাধ্যমে
মক্কায় অবস্থিত স্বীয় পরিবারের নিরাপত্তা বিধান করে থাকেন। কিন্তু আমার তাদের
বংশগত আত্মীয়তা নেই। তাই আমি তাদের কিছু উপকার করে আমার পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণের
ব্যবস্থা করার মনস্থ করেছিলাম। হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ! আমি কুফরী বশতঃ
কিছু করিনি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
সে তোমাদেরকে সত্যই বলেছে। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমাকে এই মুনাফিকের গর্দান কেটে ফেলার অনুমতি দিন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে তো বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ
করেছিলো। তুমি কি অবহিত নও যে, আল্লাহ নিজেই বদর
যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ ‘‘তোমরা যা ইচ্ছে হয় করো, আমি তোমাদের অবশ্যই ক্ষমা করে দিয়েছি (আবু দাউদ ২৬৫০)
ক্ষমার ঘটনা-৬
#গনিমতের মাল বন্টনের ব্যপারে কটুক্তিঃ
'আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হুনায়নের যুদ্ধ সংঘটিত হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল দেয়ার ব্যাপারে কিছু লোককে প্রাধান্য দিলেন অর্থাৎ কতক লোককে বেশী দিলেন। সুতরাং তিনি আকরা ইবনু হাবিসকে একশ' উট দিলেন, উয়াইনাকেও অনুরূপ
সংখ্যক উট দান করলেন এবং আরবের নেতৃস্থানীয় কিছু লোককেও অগ্রাধিকার দিলেন। এক
ব্যক্তি বলল, আল্লাহর শপথ! এ বণ্টন ইনসাফ
ভিত্তিক হয়নি এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সম্ভষ্টির দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়নি।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি তখন মনে মনে
বললাম, আল্লাহর শপথ আমি এ কথা
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌছাব।
রাবী বলেন,
আমি
তার কাছে গিয়ে লোকটির উক্তি তাকে শুনালাম। ফলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর মুখমণ্ডল রক্তিম বর্ণ ধারণ করল। তিনি বললেনঃ আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই
যদি সুবিচার না করেন তাহলে কে আর ইনসাফ করবে?
তিনি
পুনরায় বললেনঃ আল্লাহ তা'আলা মূসা (আঃ) কে
রহমত করুন, তাকে এর চেয়েও বেশী কষ্ট
দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আজ থেকে আর কখনো এ ধরনের কোন
ব্যাপার তাকে জানাব না। (কেননা এতে তার কষ্ট হয়)। (মুসিলম-২৩৩৭)
ক্ষমার ঘটনা-৭
তায়েফের ঘটনাঃ তায়েফের রক্তে ভেজা মরুপথ। নবুয়্যতের
দশম বছর। শাওয়াল মাসে নবী (সা.) খাদেম যায়েদ বিন হারেস (রা.) কে সঙ্গে নিয়ে তায়েফ
যান।
রাসূল (সা.) তায়েফবাসীর পাশে দশ দিন যাপন করেন। এ
সময় তিনি তাদের নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে দ্বীনের দাওয়াত পেশ করেন। কিন্তু তারা বলল, তুমি আমাদের শহর থেকে বেরিয়ে যাও।
এরপর ইতর ছেলেপেলেকে তাঁর পেছনে লেলিয়ে দিল। অশ্লীল
গালমন্দ আর চ্যাঁচামেচি করল। এক সময় তারা রাসূল (সা.)-এর ওপর পাথর মারতে শুরু করল।
নবীজির জুতা দুটি রক্তে লাল হয়ে উঠল।
যায়েদ বিন হারেস (রা.) তাঁকে পাথর বৃষ্টি থেকে রক্ষা
করার চেষ্টা করে তাঁর মাথায়ও যখমের সৃষ্টি হল। এভাবে পাথর মারার ভেতরে দৌড়াতে
দৌড়াতে তারা রবীআর দুই ছেলে উতবা ও শাইবার আঙুর বাগানে আশ্রয় নিলেন।
এরপর রাসূল (সা.) মক্কার পথ ধরলেন। তাঁর হৃদয়ে তখন
হতাশার কালো মেঘ। তিনি যখন করনুল মানাযিল নামক মহল্লায় পৌঁছলেন তখন জিবরাঈল (আ.)
পাহাড়ের ফেরেশতাকে নিয়ে তাঁর কাছে এলেন।
বললেন,
ইয়া
রাসূলাল্লাহ! অনুমতি দিন! তাদেরকে আবু কুবাইস ও কুআইকিয়ান পাহাড়ের মাঝে ফেলে এক
চাপ দিয়ে শেষ করে দিই। রাসূলে কারিম (সা.) শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলেন, না! তাদেরকে মারবেন না। আমার একান্ত আশা; হয়তো আল্লাহ পাক তাদের বংশধরদের মধ্যে এমন অগণিত অসংখ্য
মানুষ পাঠাবেন যারা একমাত্র আল্লাহতায়ালারই ইবাদত করবে। যারা তাঁর সঙ্গে কোনো
কিছুর শরিক করবে না। বুখারি শরিফ।)
ক্ষমার ঘটনা-৮
# বুড়ি মক্কা ছেড়ে যাচ্ছে, (বুড়ির বোঝা ও দয়াল নবীর কিসসা)
সম্মানিত শ্রোতামন্ডলী ঐ বুড়ি মহিলার কথা ভুলার মত
নয় যিনি ঘরের সমস্ত মালপত্র বেঁধে ঘরের দরজায় বসেছিল, সে বুড়ি শুনেছে মক্কায় এক যাদুকর এসেছে, যে যাদুকর যার সাথেই সাক্ষাৎ করে তার ধর্ম ছিনিয়ে নেয়, বুড়ি সে যাদুগর থেকে পলায়ন করছিল এই ভয়ে যে সে যাদুগর তার বাব দাদার ধর্ম তার
কাছ থেকে ছিনিয়ে নিবে। ঘরের সামনে সকল মাল নিয়ে বসা, সে রাস্তা দিয়ে হুযুর যাচ্ছিলেন বুড়ি হুযুরকে দেখে বলল ভাতিজা এই মালগুলি আমার
মাথার উপর উঠিয়ে দাও, হুযুর যখন সে
মালগুলি তুললেন দেখলেন খুবই ওজনী, এত ওজনী মাল বুড়ি
উঠাতে পারবে না, তখন হুযুর বুড়িকে
বলল এতো খুবই ওজন, আপনি যদি এজাজত দেন
আমি আপনার এই মালগুলি আপনি যেখানে বলেন সেখানে দিয়ে আসব, বুড়ি খুবই খুশী মনে এজাজত দিল, হুযুর সকল সামান নিজের মাথার উপর তুললেন আর বুড়ির সাথে চলতে
লাগলেন, হুযুর বুড়ীকে প্রশ্ন করল
মক্কা ছেড়ে কেন যাচ্ছেন? বুড়ি বলল আমি শুনেছি
মক্কায় এক যাদুকর এসেছে যে মানুষের ধর্ম লুটে নিচ্ছে। আমি সারা জীবন মুর্তি পুঁজা
করেছি, আমার বাব দাদা মুর্তি পুঁজা
করেছে। আমি চাইনা আমার এই বয়সে বাব দাদার ধর্ম আমার থেকে ছিনিয়ে যাক। তাই আমি
মক্কা শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি, হুযুর বুড়ির কথা
শুনে তার মাল ফেলে দেননি বরং যন্তের সাথে মাথায় করে বুড়ির সব মালামাল বহন করে নিয়ে
গেলেন, বুড়ির গন্তব্যে তাঁর মালামাল
পৌঁছে দিয়ে হুযুর চলে আসার সময় বুড়ি জিজ্ঞেস করল বেটা তুমি আমার জন্য এত কষ্ট করেছ
তোমার নামটা বলো, যাতে আমি লোকদেরকে
তোমার নাম বলে বলে প্রসংশা করতে পারি,
আমি
মক্কা থেকে এক যাদুকরের ভয়ে পালিয়ে এসেছি,
সাথে
সাথে আমি মানুষের কাছে এও যেন বলেতে পারি যে মক্কায় যাদুকর আছে সে মক্কায় তোমার মত
উঁচু মনের নওজোয়ানও আছে, উদার পরোপকারী যুবকও
আছে, আমি তাদের কাছে তোমার নাম
বলে বলে তোমার কাসিদা বলব। বুড়ির কথা শুনে হুযুর (দঃ) হেসে দিলেন আর বললেন হে বুড়ি
যে যাদুকরের ভয়ে তুমি মক্কা ছেড়ে এসেছ সে যাদুকর তোমারই সামনে দাঁড়ানো। বুড়ি বলল
সত্যি সত্যি আপনিই মুহাম্মদ? হুযুর বললেন হ্যাঁ
আমিই সে মুহাম্মদ। তখন বুড়ি বলল তাহলে আপনার যাদু আমার উপর ক্রিয়া করে ফেলেছে ।
সুবহানাল্লাহ। আপনি আর দেরি করবেন না আমাকে কলমা পড়িয়ে দিন। (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ)
ইসলাম ঘৃণা,
বিদ্বেষ
ছড়ানোর শিক্ষা দেয় না ইসলাম শিক্ষা দেয় ভালবাসা, মহব্বত। আজ মুসলমানদের মধ্যে হাজারো ফেরকা, ছোট ছোট বিষয়গুলি নিয়ে আজ মুসলমানরা দ্বিধা বিভক্ত, ইসলামের আসল শিক্ষা থেকে আজ আমরা অনেক দুরে সরে গেছি আজ তাই
সারাবিশ্বে মুসলমানরা মার খাচ্ছে, আল্লাহ সারা বিশ্বের
সকল মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্য হওয়ার তৌফিক দান করুন আমিন।
ক্ষমার ঘটনা-৯
সৈয়দা জয়নাব- স্বামী আবুল আস-ইবনে আসওয়াদ,
নবী নিজের সন্তানের উপর অন্যায়কারীকেও ক্ষমা করেছেন, সৈয়দা জয়নাব (রাঃ) যিনি নবী করিম (দঃ) এর বড় সাহেবজাদি এর
সাথে হযরত খাদিজা (রাঃ) এর ভাতিজা আবুল আস এর সাথে বিবাহ সংগঠিত হয়, নবী করিম (দঃ) এর নবুয়তের আগে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়, সৈয়দা জয়নাব ও আবুল আস এর পারিবারিক জীবন খুবই সুখে শান্তি
পেয়ার মহব্বতের সাথে অতিবাহিত হচ্ছিল,
কিন্তু
হুযুর (দঃ) যখন নবুয়তের ঘোষনা দিলেন সৈয়দা জয়নাব কলমা পড়ে ইসলাম কবুল করলেন, কিন্তু আবুল আস কলমা পড়তে দেরী করল, এমনকি বদরের ময়দানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আবুল আসও যুদ্ধে
অংশ গ্রহণ করে, আর আবুল আস বদরের
ময়দানে মুসলমানদের হাতে বন্ধি হয়ে গেল,
বদরে
যে সব কাফের কয়েদ হয়েছিল তাঁদের ব্যপারে সিদ্ধান্ত হল তাঁদের কাছ থেকে ফিদিয়া
গ্রহণ পূর্বক তাঁদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে,
প্রত্যেক
কয়েদীর আত্মিয় স্বজনেরা ফিদিয়া দিয়ে দিয়ে কয়েদীদের ছাড়িয়ে নিয়ে গেল, এদিকে হযরত সৈযদা জয়নাব (রাঃ) মক্কা থেকে তাঁর স্বামীকে
ছাড়ানোর জন্য তাঁর নিজের একটি স্বর্ণের হার ফিদিয়া স্বরুপ পাঠাল, সে হারটি যখন নবী (আঃ) এর মোবারক হাতে আসল নবী (দঃ) এর চোখে
পানি চলে আসল। হারটি দেখে হুযুর (দঃ) চিনতে পারলেন, কারন এটি সেই হার যেটি হুযুর (দঃ) খাদিজা (রাঃ) কে গিফট দিয়েছিলেন, আর সৈয়দা খাদিজা নিজের বড় মেয়ের বিয়েতে তাঁকে গিফট দিয়ে
দিলেন, আর আজ সে হার নবী করিম (দঃ)
এর কাছে সৈয়দা জয়নাব (রাঃ) নিজের স্বামীর ফিদিয়া স্বরুপ পাঠালেন। নবী যখন কাঁদছে
সাহাবাগণ প্রশ্নকরল এয়া রাসুলাল্লাহ (দঃ)আপনি কাঁদছেন কেন? হুযুর (দঃ) জবাব দিলেন আমার এ হারটি দেখে খদিজার কথা মনে
পড়ে গেল। তখন সাহাবাগণ পরামর্শ দিলেন যেন হারটিও ফেরত দিয়ে দেয় এবং আবুল আসকেও যেন
ছেড়ে দেয়া হয়, তবে হযুর (দঃ) আবুল আসকে
বললেন আমি তোমাকে ছেড়ে দিচিছ তবে শর্ত হল তুমি মক্কায় গিয়ে আমার মেয়ে জয়নাবকে
হিজরত করার অনুমতি দিবে। হযরত জয়নাব যখন হিজরত করে আসছিলেন তখন তিনি গর্ভবতী ছিলেন
উটে চরে তিনি হিজরত করছিলেন কিন্তু একজন কাফের হযরত জয়নাবের উটের পায়ে এমন আঘাত
করল উট থেকে হযরত জয়নাব নিচে পড়ে গিয়ে তাঁর একটি পাজরের হাড্ডিও ভেঙ্গে গেল এবং
গর্ভের সন্তানও নষ্ট হয়ে গেল, এমন অবস্থাতেই তিনি
মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, কতই কষ্টের ছিল সে
হিজরত, আর হযরত জয়নাব সারা জীবন সে
ভাঙ্গা পাঁজরের ব্যথায় কাতরাতেন এবং সে ব্যথাতেই তিনি শহিদ হয়ে যান । যেখুন যার
কারন হুযুরের সামনে এত কষ্ট পেয়ে সৈয়দা জয়নাব (রাঃ) শহিদ হয়ে গেলেন, সে ইবনে আসওয়াদ মক্কা বিজয়ের দিন হুযুরের সামনে এসে উঁচু
আওয়াজে কলমা পড়ে দিল, আর হুযুর (দঃ)
তাঁকেক্ষমা করে দিলেন।
ক্ষমার ঘটনা-১০
অস্ত্র ব্যবসায়ী সাফওয়ান ও ওমের
মক্কা বিজয়ের দিনে মহানবী (দ) যে ক্ষমা দেখিয়েছেন তা
বিশ্বের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
মক্কার এক লোকের নাম সাফওয়ান বিন ওমাইয়া সে ছিল
অস্ত্রের ব্যবসায়ী সে অস্ত্র ভাড়া দিত,
তার
কাছে ওমের বিন ওহাব নামক এক গরিব লোক সাহায্যের জন্য আসল, তখন সে সাফওয়ান বিন ওমাইয়া ওমের বিন ওহাব কে একটি প্রস্তাব
দিল বলল - আমার কাছে ১টি বিষ মাখা তরবারী আছে, সে তরবারী নিয়ে মদীনায় চলে যাও আর সেখানে সুযোগ মত মুসলমানদের নবীকে এই তরবারী
দিয়ে হত্যা কর (নাউজুবিল্লাহ) যদি তুমি এ কাজ করতে পার তাহলে আমি তোমাকে এত বেশী
দান করব তুমি সারা জীবন তোমার পরিবার পরিজন নিয়ে খেতে পারবে। লোভে পড়ে ওমের বিন
ওহাব মদীনায় বিষাক্ত তরবারী নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেল, কিন্তু সে সাহাবাগনের হাতে বন্ধি হয়ে গেল, হুযুর (দঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে সব কথা শিকার করল, সে বলল হুযুর আমি অভাবের তাড়নায় সাফওয়ান বিন ওমাইয়ার দ্বারা
এখানে এসেছি, আপনি দয়া করে আমাকে মাফ করে
দিন, হুযুর (দঃ) সেদিন সে জানের
দুষমনকে মাফ করে দিলেন এবং তাকে মক্কায় পাঠিয়ে দিলেন, মক্কা বিজয়ের দিন সাফওয়ান ভয়ে জেদ্দা চলে গেল আর সেখান থেকে
ইরান চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল তখন ওমের বিন ওহাব হুযুরের কাছে এসে বলল এয়া
রাসুলাল্লাহ আপনি আমাকে ক্ষমা করেছেন আমাদের কবিলার সরদার সাফওয়ানকেও ক্ষমা করে
দেন, সে আপনার ভয়ে মক্কা ছেড়ে
ইরান চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে, হুযুর বললেন আমি
তাঁকে ক্ষমা করে দিলাম, হযরত ওমের বিন ওহাব
হুযুরের ক্ষমার সংবাদ নিয়ে যাওয়ার সময় প্রমাণ স্বরূপ হুযুর থেকে পাগড়ী মোবারকটিও
নিলেন যা হুযুর মক্কা বিজয়ের দিন খুতবা দেয়ার সময় পড়েছিলেন, সে পাগড়িটি নিয়ে হযরত ওমের বিন ওহাব সাফওয়ানের কাছে গেলেন
ক্ষমার বার্তা নিয়ে, সাফওয়ান ক্ষমার
নিদর্শন দেখতে চাইলে ওমের হুযুরের দেয়া পাগড়ি দেখালেন, এটা দেখে সাফওয়ান হুযুরের কাছে আসলেন, হুযুর ক্ষমা করলেন আর ইসলামের দাওয়াত দিলেন, কিন্তু সাফওয়ান চিন্তা করার জন্য ২ মাসের সময় চাইল হুযুর
তাঁকে বলল ২ মাস নয় বরং ৪ মাস সময় নাও আর ইসলাম সম্পর্কে ভাল করে জান তারপর ইসলাম
ভাল লাগলে কবুল করিও। সুবহানাল্লাহ। আর সাফওয়ান ৪ মাসের ভিতরেই ইসলাম কবুল করলেন।
এভাবে হুযুর (দঃ) জানের দুষমনকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন।
ঘটনা- এক বুযুর্গের ঘটনা
# এক বুযুর্গ হজ্বে মিনার ময়দানে এক দোকানের সামনে বসে আছেন এমন সময় উনার ব্যাগটি
এক ঝাপটাবাজ নিয়ে দৌঁড় দিল, কিন্তু সে
ছিনতাইকারী কিছুদুর যাওয়ার পর তার চোখ অন্ধ হয়ে গেল, সে লোকটি সামনে অগ্রসর না হয়ে সেখানেই বসে বসে কাঁদতে লাগল লোকজন তাঁকে প্রশ্ন
করল তুমি কাঁদছ কেন? সে বলল আমি এক
হাজ্বীর ব্যাগ ছিনতাই করে পালিয়ে আসছিলাম কিন্তু কিছুদুর আসার পর আমার চোখের
জ্যোতি চলে গেল তাই আমি কাঁদছি, তাঁরা ছিনতাইকারীকে
প্রশ্ন করল সে হাজ্বী কোথায় সে বলল পিছনে যে দোকান আছে তার সামনে আছে, তখন লোকেরা সে ছিনতাইকারীকে নিয়ে ঐ হাজ্বীর কাছে গেলেন আর
তার বেগ ফিরিয়ে দিলেন এবং এ ছিনতাইকারীকে ক্ষমা করে দিতে বললেন, তখন বুযুর্গ বললেন আমি সে যখন আমার বেগ ছিনতাই করেছে তখনই
ক্ষমা করে দিয়েছি, লোকেরা আশ্চর্য্য
হয়ে হাজ্বীকে প্রশ্ন করল কেন? তখন বুযুর্গ হাজ্বী
জবাব দিল আমি জানি কাল কেয়ামতের দিন হাশরের মাঠে আমার দয়াল নবী ততক্ষন পর্যন্ত
জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষন আমরা গুনাহগারদের বিচার ফয়সালা শেষ হবে না, এখন আমি চিন্তা করছি আমি যদি আমার এই ছিনতাইকারী ছিনতাই
করেছে সেটা তাকে মাফ না করি তার জন্য কাল হাশরের মাঠে বিচার ফয়সালা হবে আর সে
বিচার ফয়সালার কারনে আমার দয়াল নবীর জান্নাতে যেতে দেরী হবে, তাই আমি এ ছিনতাইকারীকে সাথে সাথে ক্ষমা করে দিয়েছি যেন কাল
কেয়ামতের ময়দানে আমার এ বিষয়টির কারনে আমার নবীর যেন জান্নাতে যাওয়া দেরী হয়ে না
যায়। সুবহানাল্লাহ, কাশ আমাদের
প্রত্যেকেরই চিন্তা ভাবনা যদি এমন হত তাহলে পৃথিবীতে এত মারা মারি হানাহানি থাকত
না।
ঘটনা-১১,ক্ষমা করতে কষ্ট
হলেও ক্ষমা করঃ
# ওয়াহশি যে হুযুরের চাচার কলিজা চিবিয়ে খেয়েছে, নবী তাঁকে মাফ করেছে তবে তাঁর চেহেরা দেখা পছন্দ করতেন না।
হযরত ওয়াহশি(রাঃ)যিনি হযরত হামযা(রাঃ)কে শহীদ
করেছিলেন তাঁর বুক চিরে কলিজা বের করেছিলেন,
পরবর্তী
সময়ে তিনিও একজন সম্মানিত সাহাবী হয়ে যান ।
রাসুল(সাঃ)মক্কা বিজয়ের দিনে মাত্র পাঁচ জন ছাড়া
বাকি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, এই পাঁচ জনের যাকে
যেখানে পাওয়া যাবে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, এর মধ্যে ওয়াহশি একজন, হযরত হামযা(রাঃ)বুক
চিঁরে কলিজা বের করেছিলেন এই ওয়াহশি ।ওয়াহশি চিন্তা করলেন এবার আর রক্ষা নেই, তাই মনে মনে ঠিক করে রাখলেন যেভাবেই হোক আল্লাহ্র
রাসুল(সাঃ)এর সামনে যেয়ে ক্ষমা চেয়ে নেবো তিনি রহমতের নবী অবশ্যই খালি হাতে ফিরব
না, এই আশা রেখে সাহাবীদের চোখ
কে ফাঁকি দিয়ে একদিন হাজির হয়ে গেলেন রাহমা তুল্লিল আলামিনের দরবারে, তাঁকে দেখে নবিজী(সাঃ)জিজ্ঞেস করলেন কেন এসেছ? ওয়াহশি বললেন,
ইসলাম
গ্রহণ করার জন্য এসেছি, রহমতের
নবী(সাঃ)তাঁকে মুসলিম বানিয়ে বললেন, সব সময় আমার সামনে
আসবেনা কারন তুমাকে দেখলে পরে আমার চাচা হামযার কথা মনে পড়ে যায় । নবিজী আবার
জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে মেরেছিলে
আমার চাচাকে বল একটু শুনি? ওয়াহশি বললেন, আমি বল্লম দিয়ে আঘাত করি এর পর বুক কেটে কলিজা বের করে
হিন্দা কে দেয় সে কলিজা চিবিয়েছে । নবীজির তখন চোখ থেকে পানি পড়ে দাড়ি মোবারক ভিজে
যাচ্ছিল, এর পর ওয়াহশি দুহাত তুলে
দোয়া করতে লাগলেন, বললেন, হে আল্লাহ! আমি যেই বল্লম দিয়ে ইসলামের একজন বীর সেনাকে
শহীদ করেছিলাম সেই বল্লম দিয়ে যেন ইসলামের কোন দুশমনকে হত্যা করতে পারি, আল্লাহ্ তাআলা কবুল করে নিলেন তাঁর দোয়া। পরবর্তী হযরত আবু
বকর(রাঃ)এর খেলাফতে ভণ্ডনবী দাবীদার মুসালাবা কাজ্জাবকে তিনি হত্যা করেন ।
খাটি নিয়তে প্রতিজ্ঞা করলেই সেই প্রতিজ্ঞায় আল্লাহই
মদদ করেন ।
হাদীস যে মাফ করবে না তার শাস্তিঃ
#নবী করিম (দঃ) বলেন- কেহ কোন বান্দার কাছে যদি
মাফ চাই আর সে বলে দেয় আমি তোমাকে মাফ করব না, নবী করিম (দঃ) বলেন সে যেন কেয়ামতের দিন আমার হাউজে কাউসারের সামনে না আসে।
(অথ্যাৎ নবীজি এটা বুঝাতে চাচ্ছেন যে আমি তাঁর
মুখ দেখতে চাই না)
# যে অন্যের প্রতি ১টি আঙ্গুল উঠায় সে খেয়াল করে
না বাকী ৪টি আঙ্গুল তার দিকেই উঠে।
মানুষকে কষ্ট দেয়া দুরের কথা মানুষের ব্যপারে কোন ধরনের কু ধারনা করা মানুষের ব্যপারে মনে বিদ্বেষ পোষন করাকেও ইসলাম সমর্থন করে না যেমন
ঘটনা-৩ : রাতে শোবার আগে ১টি আমল দুনিয়াতে থাকতেই জান্নাতের সুসংবাদ (সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস----আবদুল্লাহ ইবনে আমর বিন আস)
কিনে থেকে বেঁচে থাকতে পারা কতযে নেয়ামত তা ১টি হাদীস শুনলে বুঝতে পারবেন।
একদিন হুযুর (দঃ) মসজিদে বসে ছিলেন এমন সময় এক সাহাবী প্রবেশ করলেন হুযুর (দঃ) অন্যান্য সাহাবীদের উদ্দেশ্য করে বললেন দেখ জান্নাতি আসছে জান্নাতি আসছে। সে সাহাবীর নাম হল সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) । সাহাবায়ে কেরাম সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের ব্যপারে হুযুরের এমন সু সংবাদ দেয়ায় খুবই আশ্চর্য্য হল। সাহাবাদের অভ্যাস ছিল কারো ব্যপারে হুযুর যদি কোন সুসংবাদ দিত তাহলে সে সাহাবী কোন আমল করার কারনে এ সুসংবাদের অধিকারী হয়েছেন তা জানতে চেষ্টা করেন যাতে তারাও সে আমলটি করে সৌভাগ্যবান হতে পারেন।
২য় দিনও একই ঘটনা ঘটল হুযুর (দঃ) বসা ছিলেন সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস যখন প্রবেশ করলেন হুযুর বলতে লাগলেন দেখ জান্নাতি আসছে।
এক সাহাবী ছিল আবদুল্লাহ ইবনে আমর বিন আস (রাঃ) তিনি সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসের কাছে গেলেন আর উনাকে বললেন আমার ঘরে কিছু সমস্যা আছে আমি চাচ্ছি কয়েকটা দিন আপনার ঘরে আপনার সাথে থাকতে, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাজি হলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসের সাথে তার ঘরে চলে গেলেন, তার সাথে তার ঘরে ৩ দিন থাকলেন আর এই ৩দিন তার সকল আমল খুবই মনযোগের সাথে অবলোকন করতে লাগলেন, যে কোন সে আমল যার কারনে হুযুর (দঃ) দুনিয়াতেই সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসের ব্যপারে জান্নাতের সুসংবাদ দিলেন। কিন্তু সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসারে তেমন কোন স্পেশাল আমল দেখতে পেলেন না, তখন তিনি সাদ কে প্রশ্ন করলেন ভাই আমি মুলত আপনার আমল সমুহ দেখার জন্য আপনার সাথে ৩ দিন অতিবাহিত করেছি, কারন আপনার ব্যপারে আল্লাহর হাবিব জান্নাতে সুসংবাদ দিয়েছেন, আমি চেষ্টা করেছি আপনার স্পেশাল কোন আমল আছে কিনা তা খুঁজে বের করার, কিন্তু আমি আপনার কাছে তেমন কোন স্পেশাল আমল দেখতে পেলাম না, আপনি দয়া করে বলেন আপনি এমন কি আমল করেন যার কারনে আল্লাহর রাসুল আপনার ব্যপারে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে দিয়েছেন? তখন হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস বলেন আমি স্বাভাবিক আমল সমুহই করি তবে একটা আমল আমার আছে যেমন আমার সাথে যদি দিনে কারো সাথে কোন সমস্যা হয়, কেহ যদি আমাকে কোন কষ্ট দেয়, কারো কোন কাজে যদি আমি দুঃখ পাই, যখন আমি রাতে শুতে যাই তখন আমি সকলকে অন্তর থেকে ক্ষমা করে দেই, আর আমি একেবারে সাদা অন্তরে শুয়ে পড়ি। সুবহানাল্লাহ
বিনয়
অর্থ্যাৎ- হযরত জারির (রা) হতে বর্ণিত নবী করিম (দ) তার এক গৃহে প্রবেশ করলেন। গৃহটি লোকে পরিপূর্ণ ছিল। তাই জারির বসার স্থান না পেয়ে বাহিরে মাটিতে বসে গেল।নবী (দ) যখন তাকে বাহিরে বসতে দেখলে, তখন নিজের চাদরটি ভাজ করে জারিরের দিকে ছুড়ে মারলেন। এবং বললেন এই চাদরটি বিছিয়ে তার উপর বস। হযরত জারির সে চাদরটি তুলে তাতে চুমু খেলেন এবং চোখে লাগালেন।
ফায়দা- নবীর (দ) মত এমন সেরা চরিত্রের অধিকারীর পক্ষে এটা সম্ভব ছিলনা তিনি নিজে ভিতরে বিছানায় বসেবন এবং জারির বাহিরে মাটিতে বসবে, তাই তিনি নিজের গায়ের চাদর জারিরের দিকে ছুড়ে মারলেন। আর সাহাবী জারিরের পক্ষেও সম্ভব ছিলনা নবীর পবিত্র কাপড় বিছিয়ে তার উপর বসা।তাই তিনি সে কাপড়টি বিছালেননা বরং তাকে চুমু খেলেন, চোখে লাগালেন। এটাই হল যেমন নবী তেমন তার সাহাবার চরিত্র।
মহানবী ঘরের সব কাজ করতেন
অর্থ্যাৎ- হযরত ওরওয়া (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি আয়শা (রা) থেকে জিজ্ঞেস করলাম নবী (দ) একান্তে কি কি কাজ করতেন? হযরত আয়শা জবাব দিলেন তিনি কাপড় সেলাই করতেন, জুতা মেরামত করতেন, এবং একজন লোক ঘরে যে সব কাজ করে তিনি তা সবই করতেন।
ঘরের কাজের লোকদের সাথে আচরন
অর্থ্যাৎ- হযরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমার মা আমাকে নিয়ে নবী (দ) এর কাছে গেলেন এবং বলেন এয়া রাসুলাল্লাহ এই আপনার ছোট সেবক। তারপর আমি ৯ বছর নবীর খেদমত করেছি। এই ৯ বছরে তিনি আমাকে কখনো বলেননি তুমি এই কাজটি ভালো করনি, কিংবা তুমি এই কাজটি খারাপ করেছ।
মনযোগ সহকারে কথা
অভিযোগ অনুযোগ শুনতেন
# যে কোন সাহাবী কথা বললে যতক্ষন কথা শেষ হতনা দাঁড়িয়ে থাকতেন
#হাত বাড়িয়ে দিলে যতক্ষন সে হাত টেনে নিত না ততক্ষন নিজ থেকে ছেড়ে দিতেন না
# কেহ কানে কথা বলতে চাইলে তার দিকে কান বাড়িয়ে দিতেন যতক্ষন কথা শেষ হতনা ততক্ষন কান সরাতেন না।
একামতের পরও মানুষের কথা শুনেছেন
হযরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত কখনো কখনো এমনও হয়েছে রাসুলুল্লাহ (দ) মিম্বর থেকে নামলেন একামত হল এমন সময় কোন লোক এসে আলাপ জুড়ে দিল, যতক্ষন তার আলাপ শেষ হয়নি ততক্ষন তিনি নামাজে অগ্রসর হননি। আলাপ শেষে নামাজে অগ্রসর হয়েছেন।
ছোট মেয়ে হাত ধরে টেনে টেনে নিয়ে যেত
হযরত আনাস হতে বর্ণিত মদীনার এক ছোট মেয়ে রাসুলুল্লাহর হাত ধরতো, নবী তার থেকে হাত গুটিয়ে নিতেন না, সে হুযুরকে যেখানে ইচ্ছা হাত ধরে নিয়ে যেত।
বাচ্চাদের সাথে হাস্যরস করতেন
ছোট বাচ্চা উমায়ের-নুগায়ের (পাখি)
হযরত আনাস (রা) বলেন আমার এক ছোট ভাই ছিল তার নাম উমায়ের, তার দুধ ছাড়ানো হয়েছিল সে পাখি দিয়ে খেলা করত আর পাখিকে নুগায়ের বলা হয়, নবী (দ) যখনই উমায়েরকে দেখতে তাঁকে বলত (আবা উমায়ের মা ফায়ালান নুগায়ের) হে উমায়ের কোথায় গেল তোমার নুগায়ের।
হুযুরের প্রতি শিশুদের মহব্বত
শিশু ওমায়ের ও চাচা জুল্লাছ বিন ছুবেদ।
মদীনার এক ছোট শিশু যে তার চাচার সাথে হুযুরের
মজলিশে উপস্থিত হতেন মসজিদে নববীতে যেতেন,
সে
হুযুরের ওয়াজ নসিহত শুনত, খুবই বুদ্ধিদ্বীপ্ত
ছিল ছেলেটি, সে কখনো কখনো একা একাই
মসজিদে নববীতে চলে যেত, একদিন চাচা জুল্লাছ
গেল না শিশুটি মসজিদে নববীতে চলে গেল আর হুযুরের ওয়াজ শুনল, সেদিন হুযুর (দঃ) কেয়ামতের বয়াবহতার ব্যপারে জবরদস্ত ওয়াজ
করলেন, সে যখন মসজিদ থেকে ঘরে আসল
চাচাকে দেখে বলল হে চাচা আজ হুযুর (দঃ) কেয়ামতের ভয়াবহতার সম্পর্কে ওয়াজ করেছেন, হুযুর কেয়ামতের এমন ওয়াজ করেছেন যে কেয়ামতের নকশা আমার
চোখের সামনে ভাসছে।
কিন্তু ছেলেটির চাচা জুল্লাছ ছিল মুনাফেক, সে যখন শিশুর মুখে হুযুরে ওয়াজের কথা শুনল সে বলল
(ওয়াল্লাহে লাউ কানা মুহাম্মাদুন ছাদেকান লানা নাহনু শাররুন মিনাল হেমার) আল্লাহর
কসম যদি মুহাম্মদ সত্যবাদী হয় তাহলে আমরা গাধা থেকেও অধম। চাচার মুখে যখন এ কথা
শুনল তখন সে শিশুটি যেন আকাশ থেকে পড়ল,
তার
পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যেতে লাগল,
আমার
চাচা এসব কি বলছেন, ইনিই তো আমার আঙ্গুল
ধরে মসজিদে নববীতে নিয়ে যেতেন, সে আজ এটা কি বলে
দিল? এতো মুনাফেক। শিশুটি তার
চাচাকে বলল (এয়া আম্মি ওয়াল্লাহে ইন্নাকা কুনতা মিন আহাব্বিন্নাছে লা কালবি)
আল্লাহর কসম এতদিন আমার কাছে আপনি সম্মানি ছিলেন কারন আপনি আমাকে হাত ধরে হুযুরের
কাছে নিয়ে যেতে। (ওয়াল্লাহে লাকাদ আসবাহতা আলআন আবগাদাহুম ইলা কালবি জামিআ) কিন্তু তুমি হুযুরের শানে বেয়াদবী করার সাথে সাথে
এখন আমার মনে তোমার মত নিকৃষ্ট লোক আর কেউ নাই। (এয়া আম্মি আনা বাইনাল ইছনাতাই) হে
আমার চাচা আমার সামনে এখন ২টি রাস্তা খোলা আছে, একটা রাস্তা হল আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে খেয়ানত করব, আর আপনি যে নবীর শানে বেয়াদবীমুলক কথা বলেছেন তা নবীজি বলব
না,
আর ২য় রাস্তা আমার জন্য এটা যে যা তুমি বলেছ তা
হুযুরকে বলে দিব তার পরিনাম যাই হউক না কেন।
তখন ছেলেটির চাচা জুল্লাছ বলল তুমি খুব ছোট তোমার
কথা কে বিশ্বাস করবে? যাও যা ইচ্ছা কর।
ছেলেটি উঠল আর হুযুরের মজলিশে পৌঁছে গেল, আর হুযুরের সামনে আরজ করল (এয়া রাসুলাল্লাহ আল জুল্লাছুবনু
ছুবেদ খানাল্লাহা ওয়া রাসুলাহু) হুযুর জুল্লাছ বিন ছুবেদ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের
সাথে খেয়ানত করেছেন। তিনি আমার চাচা ,
হুযুর
আমি আল্লাহর সামনে এবং আপনার সামনে তার প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি। হুযুর আজ থেকে আমার চাচার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। আমি
আল্লাহকে বলছি হে আমার মওলা আমার চাচার সাথে আমার আজ থেকে কোন সম্পর্ক নাই।কেননা
সে তোমার মাহবুবের দুষমন।
হুযুর ছেলেটিকে বললেন হে বাচ্চা তোমার চাচা কি বলেছে? বাচ্চাটি সব কাহানি শুনিয়ে দিল, হুযুর (দঃ) সাহাবাগনের সাথে বাচ্চাটির কথাগুলি নিয়ে পরামর্শ
করলেন, কিন্তু সাহাবাগন বললেন এ
এখনো অবুঝ বাচ্চা তার কথার উপর নির্ভর করাটা ঠিক হবে না, জুল্লাছ বিন ছুবেদ আমাদের সাথে নামাজ পড়েন, একজন বুযুগ লোক, এবং একজন জ্ঞানী লোক। আপনি এ বাচ্চাটির কথাকে গুরুত্ব দিবেন
না। জুল্লাছ বিন ছুবেদ যখন ভাতিজার অভিযোগের কথা শুনল তিনিও কসম করতে লাগল যে আমি
এ ধরনের কোন কথাই বলিনি। তখন হুযুর (দঃ) শিশুটির কথাকে আর গুরুত্ব দিলেন না।
যখন বাচ্চাটি দেখল তার কথা হুযুর (দঃ) কবুল করেনি, সে চোখের পানি ছেড়ে দিল আর আসমানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল
(আল্লাহুম্মা ইন কুনতু ছাদিকান ফাছাদ্দিকনি ওয়াইন কুনতু কাজিবান ফাকাজ্জিবনি) হে
আল্লাহ আমি যদি মিথ্যাবাদী হই তাহলে আমাকে মিথ্যাবাদী বানিয়ে দাও, আর হে আল্লাহ আমি যদি সত্যবাদী হিই তাহলে আমাকে সত্যবাদীতা
প্রকাশ করে দাও।
বাচ্চাটি যখন এ দোয়াটি করল এখনো মুখে হাত ফিরায়নি
এরই মধ্যে জিবরিল এসে গেল আর তখন সুরা তওবার
৭৪ নং আয়াত নাযিল হয়
يَحْلِفُونَ بِاللّهِ
مَا قَالُواْ
وَلَقَدْ قَالُواْ
كَلِمَةَ الْكُفْرِ
وَكَفَرُواْ بَعْدَ
إِسْلاَمِهِمْ
তারা কসম খায় যে, আমরা বলিনি, অথচ নিঃসন্দেহে তারা
বলেছে কুফরী বাক্য এবং মুসলমান হবার পর অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী হয়েছে। [ সুরা তাওবা ৯:৭৪ ]
যখন জিবরিল এসে গেল আয়াত নাযিল হল হুযুর বাচ্চাটিকে
নিজের কাছে ডাকলেন আর বলনে (মারহাবান বিকুম ছাদ্দাকাহু রাব্বুহু মিন ফাউকে ছাবয়ে
ছামাওয়াত) খোশ আমদেদ হে বাচ্চা যার সত্যতার স্বাক্ষী ৭ আসমানের উপরের রবও দিয়ে
দিয়েছেন। এরপর হুযুর সে বাচ্চার কানে ধরলেন (ওয়াফাদ উজুনুকা এয়া গোলাম ওয়া
সাদ্দাকাকা রাব্বুকা ) হে বাচ্চা তোমার এই কান ঠিকই শুনেছে।
হযরত ওমর (রাঃ) এর জামানায় তিনি এই ওমায়ের বিন সাদ
আনসারী (রাঃ) কে হামাছ এর গভর্নর
বানিয়ে দিলেন, তিনি যখন ইন্তেকাল করেন হযরত
ওমর কান্না করে করে বলেন হায় হায় আমার কাছে ওমায়ের এর মত যদি আরো লোক হত, আর আমি মুসলমানদের হেফাজতের জন্য তাকে নিযুক্ত করতাম।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সুন্নত মোতাবেক জীবনকে
সাজানোর তৌফিক দান করুন আমিন।
মহানবীর দান
سَمِعَ جَابِرَ
بْنَ عَبْدِ
اللَّهِ، قَالَ
مَا سُئِلَ
رَسُولُ اللَّهِ
صلى الله
عليه وسلم
شَيْئًا قَطُّ
فَقَالَ لاَ .
মুসলিম ৫৮১১- জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কেউ কিছু চাইলে কোন দিন তিনি 'না' বলেন নি।
সহিহ মুসলিম ৫৮১৩। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করার পর কেউ কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তা
দিয়ে দিতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো। তিনি তাকে এত বেশি ছাগল দিলেন যাতে
দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ হয়ে যাবে। তারপর সে ব্যক্তি তার সম্প্রদায়ের
কাছে গিয়ে তাদের বললো, হে আমার জাতি
ভাইয়েরা! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। কেননা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(এত বেশি) দান করেন যে, তিনি 'ক্ষুধার্ত' থাকার (অভাবগ্রস্ত
হওয়ার) ভয় করেন না।
#একজন সাহাবী নবীর
নামে ধার করার কথা বললে নবীজি রাজি হয়ে গেলেন কিন্তু হযরত ওমর (রা) প্রতিবাদ করলেন
অপর এক সাহাবি বললেন এয়া রাসুলাল্লাহ এয়ানফিক খরচ করুন আল্লাহর কাছ থেকে অভাবের ভয়
করবেন না। তখন নবীজি মুচকি হেসে বললেন আমাকে আল্লাহ এ কথাই বলেছেন।
কোন মন্তব্য নেই