মহানবীর ক্ষমা, রাগ দমন করা ও শিশুদের নবীপ্রেমের ঘটনা
ভুল ক্ষমা করা, রাগ দমন করা ও শিশুদের নবীপ্রেমের ঘটনা
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ
আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাক। [ সুরা আরাফ ৭:১৯৯ ]
# হাদীস- মুসলমান মুসলমানের ভাই সে মুসলমান ভায়ের উপর যুলুম করে না এবং কাউকে তাঁর ভায়ের উপর যুলম করতে দেয়না। যে তাঁর কোন মুসলমান ভায়ের প্রয়োজন পুরণ করে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রয়োজন পুরণ করে দেন। যে কোন মুসলমানের কোন মসিবত দুর করে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার মসিবদ দুর করবেন, যে কোন মুসলমানের দোষ গোপন করে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষ গোপন করবেন
# নবী করিম (দঃ) বলেন- যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অপরের ভুল যত তাড়াতাড়ি ক্ষমা করবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার ভুলকে তত তাড়াতাড়ি মাফ করে দিবেন।
#রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)।
#এক ব্যক্তি নবীজি (সা.)-কে বললেন, ‘আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, “তুমি রাগ করো না”। ওই ব্যক্তি কয়েকবার তা বললেন। নবীজি (সা.) প্রতিবারই বললেন, “রাগ করো না”।’ (বুখারি, খণ্ড: ৮, অধ্যায়: ৭৩, হাদিস: ১৩৭)।
#নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)।
পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালার অনেক নামের উল্লেখ আছে। এগুলোকে বলা হয় ‘আসমাউল হুসনা’ বা সবচেয়ে সুন্দর নাম। নামগুলো প্রকাশ করছে আল্লাহতায়ালার বিভিন্ন ও বহুমুখি গুণ ও বৈশিষ্ট্য। তার, কয়েকটি নাম করুণা ও ক্ষমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যেমন-
১. আল গাফুর (সর্বাধিক ক্ষমাশীল)। কোরআনে কারিমে নামটি এসেছে ৭০ বারেরও বেশি। এই নামের একই উৎস থেকে আরো কিছু নাম এসেছে আল্লাহতায়ালার।
২. আল আফুয়্যু। এটা ক্ষমার আরেক অংশের সঙ্গে সম্পর্কিত। কোরআনে নামটির উল্লেখ রয়েছে পাঁচবার। অর্থ- উপশম, পুনঃস্থাপন, অব্যাহতিদান, মুক্ত করা। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে শব্দটির অর্থ হলো, আমাদের পাপ ও ভ্রান্তির কারণে যে শাস্তিপ্রাপ্য, এর বোঝা থেকে আমাদের মুক্তি দেয়া; অথবা পাপ ও ভুলের মাধ্যমে আমরা নিজেদের যে মর্যাদা হানি করেছি, এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
৩. আত্ তাওয়াব (তওবা বা অনুশোচনা গ্রহণকারী)। এই নাম কোরআনে উল্লিখিত হয়েছে ১১ বার। এই নামের তাৎপর্য হলো আল্লাহ বারবার তওবা কবুল করে থাকেন।
মানব জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল
# নিজের ভুল শিকার করে নেয়া একটি ভাল গুন, এতে মনে নম্রতা সৃষ্টি হয় এবং অহংকার দুর হয়ে যায়
# ১০০টি ভাল কাজ করুন কিন্তু ১টি ভুল করলে মানুষ সে ভুলটি ভুলে না
# হাজারো ভুল করা সত্বেও আপনি আপনাকে পছন্দ করেন তাহলে কারো মাত্র ১টি ভুলের কারনে তাঁকে অপছন্দ কেন করেন, হয়ত নিজে ভুল করা ছেড়ে দাও অথবা অন্যের ভুল ক্ষমা করে দাও।
# সবচেয়ে বড় ভুল হল নিজের ভুল সম্পর্কে ধারনা না থাকা
# ভুল মেনে নিতে এবং গুনাহ ছেড়ে দিতে দেরী করবেন না, কেননা সফর যতই লম্বা হউক ফিরে আসা ততই কঠিন হবে
#ভুলের কারনে সঙ্গ ছেড়ে দেওয়ার লোক অনেক বেশী পাওয়া যায় কিন্তু ভুল করলে বুঝিয়ে শুনিয়ে সংশোধন করে সঙ্গে থাকার লোক খুবই কমই পাওয়া যায়।
# যিনি কাজের লোক তারঁ থেকেই ভুল হয়, বেকার লোকেরা অপরে ভুল খুঁজাখুঁজিতেই সময় কাটায়
# শুধু সে ব্যক্তিই আজ পর্যন্ত ভুল করেনি, যে কখনো নতুন কিছু করার চেষ্টা করেনি।
#ভুল একটি পৃষ্ঠা আর আত্মিয়তা একটি সম্পূর্ণ বই, একটি পৃষ্ঠার জন্য সম্পূর্ণ বই ছিড়ে ফেলা কোন জ্ঞানী লোকের কাজ হতে পারে না।
# নিজের ভুল মেনে নেয়া সমস্যা সমাধানের সফল পদক্ষেপ
# কিছু লোক আছে যারা সবকিছুই দেখতে পায় শুধু নিজের ভুলটুকু দেখতে পায় না
# কোন মানুষ যদি ১ বার ভুল করে তাহলে কোন সমস্যা নাই, ২য় বার একই ভুল করলে তাও ক্ষমা করা যায়, কিন্তু ৩য় বার একই ভুল করলে তাহলে তার থেকে দুরে থাকা নিরাপদ কেননা এটা তার ভুল নয় বরং অভ্যাস।
# ভুল ধরার জন্য অনেক শক্তিশালী ব্রেইন দরকার, কিন্তু ভুলকে সংশোধনের জন্য একটি সুন্দর মন দরকার।
# ভুল করা খারাপ নয় তবে ভুল থেকে কিছু না শিখাই খারাপ
# এক বুযুর্গকে প্রশ্ন করা হল রাগ কি জিনিষ? তিনি খুবই সুন্দর জবাব দিলেন “কারো ভুলের সাজা নিজেকে দেয়া----”
রাগ আসলে কি করা উচিত?
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তবে তার উচিত বসে পড়া। যদি তার রাগ কমে যায়, তবে ভালো; নয়তো তার উচিত শুয়ে পড়া।’ (তিরমিজি)।
নবী করিম (সা.) আমাদের উপদেশ হিসেবে আরও বলেছেন রাগান্বিত অবস্থায় অজু করতে, যা রাগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার একটি উত্তম পদ্ধতি। নবীজি (সা.) বলেন, ‘রাগ আসে শয়তানের পক্ষ থেকে; শয়তানকে তৈরি করা হয়েছে আগুন থেকে, আর একমাত্র পানির মাধ্যমেই আগুন নেভানো সম্ভব। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তার উচিত অজু করা।’ (আবু দাউদ)। এ ছাড়া নবীজি (সা.) শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগের কথাও বলেছেন। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমি এমন একটি কালেমা জানি, যা পাঠ করলে ক্রোধ দূর হয়ে যায়। (আর তা হলো) “আউযু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বনির রাজিম” অর্থাৎ, আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।’ (মুসলিম, অধ্যায়: ৩২, হাদিস: ৬৩১৭)।
তওবার মুনাজাত ঃ রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের যেসব মোনাজাত শিখিয়েছেন, তার একটিতে তিনি বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি সবচেয়ে বেশি ক্ষমাশীল; আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করুন।’ -তিরমিজি ও ইবনে মাজা
মহানবী প্রাণের দুষমনকেও ক্ষমা করেছেনঃ
ঘটনা- মিনায় এক বুযুর্গ ব্যাগ ছিনতাই
ঘটনা- সৈয়দা জয়নাব- স্বামী আবুল আস-ইবনে আসওয়াদ জয়নাবের উটে আঘাত
ঘটনা- তায়েফের ঘটনা
ঘটনা- সাফওয়ান বিন ওমাইয়া অস্ত্র ব্যবসায়ী ও ওমের বিন ওহাব নামক এক গরিব লোক
ঘটনা- ওয়াহশি- হযরত হামজার কলিজা বের করা
ঘটনা- মা হুযুর সন্তানকে ক্ষমা করার অজিফা
যে মাফ করবে না তার শাস্তিঃ
#নবী করিম (দঃ) বলেন- কেহ কোন বান্দার কাছে যদি মাফ চাই আর সে বলে দেয় আমি তোমাকে মাফ করব না, নবী করিম (দঃ) বলেন সে যেন কেয়ামতের দিন আমার হাউজে কাউসারের সামনে না আসে। (অথ্যাৎ নবীজি এটা বুঝাতে চাচ্ছেন যে আমি তাঁর মুখ দেখতে চাই না)
# যে অন্যের প্রতি ১টি আঙ্গুল উঠায় সে খেয়াল করে না বাকী ৪টি আঙ্গুল তার দিকেই উঠে।
#সৈয়দা জয়নাব- স্বামী আবুল আস-ইবনে আসওয়াদ আঘাতকারী, নবী নিজের সন্তানের উপর অন্যায়কারীকেও ক্ষমা করেছেন, সৈয়দা জয়নাব (রাঃ) যিনি নবী করিম (দঃ) এর বড় সাহেবজাদি এর সাথে হযরত খাদিজা (রাঃ) এর ভাতিজা আবুল আস এর সাথে বিবাহ সংগঠিত হয়, নবী করিম (দঃ) এর নবুয়তের আগে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়, সৈয়দা জয়নাব ও আবুল আস এর পারিবারিক জীবন খুবই সুখে শান্তি পেয়ার মহব্বতের সাথে অতিবাহিত হচ্ছিল, কিন্তু হুযুর (দঃ) যখন নবুয়তের ঘোষনা দিলেন সৈয়দা জয়নাব কলমা পড়ে ইসলাম কবুল করলেন, কিন্তু আবুল আস কলমা পড়তে দেরী করল, এমনকি বদরের ময়দানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আবুল আসও যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে, আর আবুল আস বদরের ময়দানে মুসলমানদের হাতে বন্ধি হয়ে গেল, বদরে যে সব কাফের কয়েদ হয়েছিল তাঁদের ব্যপারে সিদ্ধান্ত হল তাঁদের কাছ থেকে ফিদিয়া গ্রহণ পূর্বক তাঁদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, প্রত্যেক কয়েদীর আত্মিয় স্বজনেরা ফিদিয়া দিয়ে দিয়ে কয়েদীদের ছাড়িয়ে নিয়ে গেল, এদিকে হযরত সৈযদা জয়নাব (রাঃ) মক্কা থেকে তাঁর স্বামীকে ছাড়ানোর জন্য তাঁর নিজের একটি স্বর্ণের হার ফিদিয়া স্বরুপ পাঠাল, সে হারটি যখন নবী (আঃ) এর মোবারক হাতে আসল আব (দঃ) এর চোখে পানি চলে আসল। হারটি দেখে হুযুর (দঃ) চিনতে পারলেন, কারন এটি সেই হার যেটি হুযুর (দঃ) খাদিজা (রাঃ) কে গিফট দিয়েছিলেন, আর সৈয়দা খাদিজা নিজের বড় মেয়ের বিয়েতে তাঁকে গিফট দিয়ে দিলেন, আর আজ সে হার নবী করিম (দঃ) এর কাছে সৈয়দা জয়নাব (রাঃ) নিজের স্বামীর ফিদিয়া স্বরুপ পাঠালেন। নবী যখন কাঁদছে সাহাবাগণ প্রশ্নকরল এয়া রাসুলাল্লাহ (দঃ)আপনি কাঁদছেন কেন? হুযুর (দঃ) জবাব দিলেন আমার এ হারটি দেখে খদিজার কথা মনে পড়ে গেল। তখন সাহাবাগণ পরামর্শ দিলেন যেন হারটিও ফেরত দিয়ে দেয় এবং আবুল আসকেও যেন ছেড়ে দেয়া হয়, তবে হযুর (দঃ) আবুল আসকে বললেন আমি তোমাকে ছেড়ে দিচিছ তবে শর্ত হল তুমি মক্কায় গিয়ে আমার মেয়ে জয়নাবকে হিজরত করার অনুমতি দিবে। হযরত জয়নাব যখন হিজরত করে আসছিলেন তখন তিনি গর্ভবতী ছিলেন উটে চরে তিনি হিজরত করছিলেন কিন্তু একজন কাফের হযরত জয়নাবের উটের পায়ে এমন আঘাত করল উট থেকে হযরত জয়নাব নিচে পড়ে গিয়ে তাঁর একটি পাজরের হাড্ডিও ভেঙ্গে গেল এবং গর্ভের সন্তানও নষ্ট হয়ে গেল, এমন অবস্থাতেই তিনি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, কতই কষ্টের ছিল সে হিজরত, আর হযরত জয়নাব সারা জীবন সে ভাঙ্গা পাঁজরের ব্যথায় কাতরাতেন এবং সে ব্যথাতেই তিনি শহিদ হয়ে যান । যেখুন যার কারন হুযুরের সামনে এত কষ্ট পেয়ে সৈয়দা জয়নাব (রাঃ) শহিদ হয়ে গেলেন, সে ইবনে আসওয়াদ মক্কা বিজয়ের দিন হুযুরের সামনে এসে উঁচু আওয়াজে কলমা পড়ে দিল, আর হুযুর (দঃ) তাঁকেক্ষমা করে দিলেন।
# মক্কার এক লোকের নাম সাফওয়ান বিন ওমাইয়া সে ছিল অস্ত্রের ব্যবসায়ী সে অস্ত্র ভাড়া দিত, তার কাছে ওমের বিন ওহাব নামক এক গরিব লোক সাহায্যের জন্য আসল, তখন সে সাফওয়ান বিন ওমাইয়া ওমের বিন ওহাব কে একটি প্রস্তাব দিল বলল - আমার কাছে ১টি বিষ মাখা তরবারী আছে, সে তরবারী নিয়ে মদীনায় চলে যাও আর সেখানে সুযোগ মত মুসলমানদের নবীকে এই তরবারী দিয়ে হত্যা কর (নাউজুবিল্লাহ) যদি তুমি এ কাজ করতে পার তাহলে আমি তোমাকে এত বেশী দান করব তুমি সারা জীবন তোমার পরিবার পরিজন নিয়ে খেতে পারবে। লোভে পড়ে ওমের বিন ওহাব মদীনায় বিষাক্ত তরবারী নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেল, কিন্তু সে সাহাবাগনের হাতে বন্ধি হয়ে গেল, হুযুর (দঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা বাদ করলে সে সব কথা শিকার করল, সে বলল হুযুর আমি অভাবের তাড়নায় সাফওয়ান বিন ওমাইয়ার দ্বারা এখানে এসেছি, আপনি দয়া করে আমাকে মাফ করে দিন, হুযুর (দঃ) সেদিন সে জানের দুষমনকে মাফ করে দিলেন এবং তাকে মক্কায় পাঠিয়ে দিলেন, মক্কা বিজয়ের দিন সাফওয়ান ভয়ে জেদ্দা চলে গেল আর সেখান থেকে ইরান চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল তখন ওমের বিন ওহাব হুযুরের কাছে এসে বলল এয়া রাসুলাল্লাহ আপনি আমাকে ক্ষমা করেছেন আমাদের কবিলার সরদার সাফওয়ানকেও ক্ষমা করে দেন, সে আপনার ভয়ে মক্কা ছেড়ে ইরান চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে, হুযুর বললেন আমি তাঁকে ক্ষমা করে দিলাম, হযরত ওমের বিন ওহাব হুযুরের ক্ষমার সংবাদ নিয়ে যাওয়ার সময় প্রমাণ স্বরূপ হুযুর থেকে পাগড়ী মোবারকটিও নিলেন যা হুযুর মক্কা বিজয়ের দিন খুতবা দেয়ার সময় পড়েছিলেন, সে পাগড়িটি নিয়ে হযরত ওমের বিন ওহাব সাফওয়ানের কাছে গেলেন ক্ষমার বার্তা নিয়ে, সাফওয়ান ক্ষমার নিদর্শন দেখতে চাইলে ওমের হুযুরের দেয়া পাগড়ি দেখালেন, এটা দেখে সাফওয়ান হুযুরের কাছে আসলেন, হুযুর ক্ষমা করলেন আর ইসলামের দাওয়াত দিলেন, কিন্তু সাফওয়ান চিন্তা করার জন্য ২ মাসের সময় চাইল হুযুর তাঁকে বলল ২ মাস নয় বরং ৪ মাস সময় নাও আর ইসলাম সম্পর্কে ভাল করে জান তারপর ইসলাম ভাল লাগলে কবুল করিও। সুবহানাল্লাহ। আর সাফওয়ান ৪ মাসের ভিতরেই ইসলাম কবুল করলেন। এভাবে হুযুর (দঃ) জানের দুষমনকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন।
# এক বুযুর্গ হজ্বে মিনার ময়দানে এক দোকানের সামনে বসে আছেন এমন সময় উনার ব্যাগটি এক ঝাপটাবাজ নিয়ে দৌঁড় দিল, কিন্তু সে ছিনতাইকারী কিছুদুর যাওয়ার পর তার চোখ অন্ধ হয়ে গেল, সে লোকটি সামনে অগ্রসর না হয়ে সেখানেই বসে বসে কাঁদতে লাগল লোকজন তাঁকে প্রশ্ন করল তুমি কাঁদছ কেন? সে বলল আমি এক হাজ্বীর ব্যাগ ছিনতাই করে পালিয়ে আসছিলাম কিন্তু কিছুদুর আসার পর আমার চোখের জ্যোতি চলে গেল তাই আমি কাঁদছি, তাঁরা ছিনতাইকারীকে প্রশ্ন করল সে হাজ্বী কোথায় সে বলল পিছনে যে দোকান আছে তার সামনে আছে, তখন লোকেরা সে ছিনতাইকারীকে নিয়ে ঐ হাজ্বীর কাছে গেলেন আর তার বেগ ফিরিয়ে দিলেন এবং এ ছিনতাইকারীকে ক্ষমা করে দিতে বললেন, তখন বুযুর্গ বললেন আমি সে যখন আমার বেগ ছিনতাই করেছে তখনই ক্ষমা করে দিয়েছি, লোকেরা আশ্চর্য্য হয়ে হাজ্বীকে প্রশ্ন করল কেন? তখন বুযুর্গ হাজ্বী জবাব দিল আমি জানি কাল কেয়ামতের দিন হাশরের মাঠে আমার দয়াল নবী ততক্ষন পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষন আমরা গুনাহগারদের বিচার ফয়সালা শেষ হবে না, এখন আমি চিন্তা করছি আমি যদি আমার এই ছিনতাইকারী ছিনতাই করেছে সেটা তাকে মাফ না করি তার জন্য কাল হাশরের মাঠে বিচার ফয়সালা হবে আর সে বিচার ফয়সালার কারনে আমার দয়াল নবীর জান্নাতে যেতে দেরী হবে, তাই আমি এ ছিনতাইকারীকে সাথে সাথে ক্ষমা করে দিয়েছি যেন কাল কেয়ামতের ময়দানে আমার এ বিষয়টির কারনে আমার নবীর যেন জান্নাতে যাওয়া দেরী হয়ে না যায়। সুবহানাল্লাহ, কাশ আমাদের প্রত্যেকেরই চিন্তা ভাবনা যদি এমন হত তাহলে পৃথিবীতে এত মারা মারি হানাহানি থাকত না। নবনবী
ক্ষমা করতে কষ্ট হলেও ক্ষমা করঃ
# ওয়াহশি যে হুযুরের চাচার কলিজা চিবিয়ে খেয়েছে, নবী তাঁকে মাফ করেছে তবে তাঁর চেহেরা দেখা পছন্দ করতেন না।
হযরত ওয়াহশি(রাঃ)যিনি হযরত হামযা(রাঃ)কে শহীদ করেছিলেন তাঁর বুক চিরে কলিজা বের করেছিলেন, পরবর্তী সময়ে তিনিও একজন সম্মানিত সাহাবী হয়ে যান ।
মাত্র পাঁচ জন ছাড়া বাকি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন রাসুল(সাঃ)মক্কা বিজয়ের দিনে, এই পাঁচ জনের যাকে যেখানে পাওয়া যাবে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, এর মধ্যে ওয়াহশি একজন, হযরত হামযা(রাঃ)বুক চিঁরে কলিজা বের করেছিলেন এই ওয়াহশি ।ওয়াহশি চিন্তা করলেন এবার আর রক্ষা নেই, তাই মনে মনে ঠিক করে রাখলেন যেভাবেই হোক আল্লাহ্র রাসুল(সাঃ)এর সামনে যেয়ে ক্ষমা চেয়ে নেবো তিনি রহমতের নবী অবশ্যই খালি হাতে ফিরব না, এই আশা রেখে সাহাবীদের চোখ কে ফাঁকি দিয়ে একদিন হাজির হয়ে গেলেন রাহমা তুল্লিল আলামিনের দরবারে, তাঁকে দেখে নবিজী(সাঃ)জিজ্ঞেস করলেন কেন এসেছ? ওয়াহশি বললেন, ইসলাম গ্রহণ করার জন্য এসেছি, রহমতের নবী(সাঃ)তাঁকে মুসলিম বানিয়ে বললেন, সব সময় আমার সামনে আসবেনা কারন তুমাকে দেখলে পরে আমার চাচা হামযার কথা মনে পড়ে যায় । নবিজী আবার জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে মেরেছিলে আমার চাচাকে বল একটু শুনি?ওয়াহশি বললেন, আমি বল্লম দিয়ে আঘাত করি এর পর বুক কেটে কলিজা বের করে হিন্দা কে দেয় সে কলিজা চিবিয়েছে । নবীজির তখন চোখ থেকে পানি পড়ে দাড়ি মোবারক ভিজে যাচ্ছিল, এর পর ওয়াহশি দুহাত তুলে দোয়া করতে লাগলেন, বললেন, হে আল্লাহ! আমি যেই বল্লম দিয়ে ইসলামের একজন বীর সেনাকে শহীদ করেছিলাম সেই বল্লম দিয়ে যেন ইসলামের কোন দুশমনকে হত্যা করতে পারি, আল্লাহ্ তাআলা কবুল করে নিলেন তাঁর দোয়া। পরবর্তী হযরত আবু বকর(রাঃ)এর খেলাফতে ভণ্ডনবী দাবীদার মুসালাবা কাজ্জাবকে তিনি হত্যা করেন ।
খাটি নিয়তে প্রতিজ্ঞা করলেই সেই প্রতিজ্ঞায় আল্লাহই মদদ করেন ।
# এক মায়ের আরজি হুযুর আমাকে সন্তানদেরকে ক্ষমা করতে পারার কোন অজিফা বলে দিন
#মক্কা বিজয়ে মহানবীর ক্ষমা, তায়েফের অত্যাচারীদের হুযুর (দঃ) মাফ করে দিলেন।
#এক বুদ্দু বলল মুহাম্মদ তোমাকে কে রক্ষা করবেন, হুযুর বললেন আল্লাহ
যে মাফ করবে না তার শাস্তিঃ
#নবী করিম (দঃ) বলেন- কেহ কোন বান্দার কাছে যদি মাফ চাই আর সে বলে দেয় আমি তোমাকে মাফ করব না, নবী করিম (দঃ) বলেন সে যেন কেয়ামতের দিন আমার হাউজে কাউসারের সামনে না আসে। (অথ্যাৎ নবীজি এটা বুঝাতে চাচ্ছেন যে আমি তাঁর মুখ দেখতে চাই না)
# যে অন্যের প্রতি ১টি আঙ্গুল উঠায় সে খেয়াল করে না বাকী ৪টি আঙ্গুল তার দিকেই উঠে।
হুযুরের প্রতি শিশুদের মহব্বত
শিশু ওমায়ের ও চাচা জুল্লাছ বিন ছুবেদ।
মদীনার এক ছোট শিশু যে তার চাচার সাথে হুযুরের মজলিশে উপস্থিত হতেন মসজিদে নববীতে যেতেন, সে হুযুরের ওয়াজ নসিহত শুনত, খুবই বুদ্ধিদ্বীপ্ত ছিল ছেলেটি, সে কখনো কখনো একা একাই মসজিদে নববীতে চলে যেত, একদিন চাচা জুল্লাছ গেল না শিশুটি মসজিদে নববীতে চলে গেল আর হুযুরের ওয়াজ শুনল, সেদিন হুযুর (দঃ) কেয়ামতের বয়াবহতার ব্যপারে জবরদস্ত ওয়াজ করলেন, সে যখন মসজিদ থেকে ঘরে আসল চাচাকে দেখে বলল হে চাচা আজ হুযুর (দঃ) কেয়ামতের ভয়াবহতার সম্পর্কে ওয়াজ করেছেন, হুযুর কেয়ামতের এমন ওয়াজ করেছেন যে কেয়ামতের নকশা আমার চোখের সামনে ভাসছে।
কিন্তু ছেলেটির চাচা জুল্লাছ ছিল মুনাফেক, সে যখন শিশুর মুখে হুযুরে ওয়াজের কথা শুনল সে বলল (ওয়াল্লাহে লাউ কানা মুহাম্মাদুন ছাদেকান লানা নাহনু শাররুন মিনাল হেমার) আল্লাহর কসম যদি মুহাম্মদ সত্যবাদী হয় তাহলে আমরা গাধা থেকেও অধম। চাচার মুখে যখন এ কথা শুনল তখন সে শিশুটি যেন আকাশ থেকে পড়ল, তার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যেতে লাগল, আমার চাচা এসব কি বলছেন, ইনিই তো আমার আঙ্গুল ধরে মসজিদে নববীতে নিয়ে যেতেন, সে আজ এটা কি বলে দিল? এতো মুনাফেক। শিশুটি তার চাচাকে বলল (এয়া আম্মি ওয়াল্লাহে ইন্নাকা কুনতা মিন আহাব্বিন্নাছে লা কালবি) আল্লাহর কসম এতদিন আমার কাছে আপনি সম্মানি ছিলেন কারন আপনি আমাকে হাত ধরে হুযুরের কাছে নিয়ে যেতে। (ওয়াল্লাহে লাকাদ আসবাহতা আলআন আবগাদাহুম ইলা কালবি জামিআ) কিন্তু তুমি হুযুরের শানে বেয়াদবী করার সাথে সাথে এখন আমার মনে তোমার মত নিকৃষ্ট লোক আর কেউ নাই। (এয়া আম্মি আনা বাইনাল ইছনাতাই) হে আমার চাচা আমার সামনে এখন ২টি রাস্তা খোলা আছে, একটা রাস্তা হল আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে খেয়ানত করব, আর আপনি যে নবীর শানে বেয়াদবীমুলক কথা বলেছেন তা নবীজি বলব না,
আর ২য় রাস্তা আমার জন্য এটা যে যা তুমি বলেছ তা হুযুরকে বলে দিব তার পরিনাম যাই হউক না কেন।
তখন ছেলেটির চাচা জুল্লাছ বলল তুমি খুব ছোট তোমার কথা কে বিশ্বাস করবে? যাও যা ইচ্ছা কর।
ছেলেটি উঠল আর হুযুরের মজলিশে পৌঁছে গেল, আর হুযুরের সামনে আরজ করল (এয়া রাসুলাল্লাহ আল জুল্লাছুবনু ছুবেদ খানাল্লাহা ওয়া রাসুলাহু) হুযুর জুল্লাছ বিন ছুবেদ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে খেয়ানত করেছেন। তিনি আমার চাচা , হুযুর আমি আল্লাহর সামনে এবং আপনার সামনে তার প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি। হুযুর আজ থেকে আমার চাচার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। আমি আল্লাহকে বলছি হে আমার মওলা আমার চাচার সাথে আমার আজ থেকে কোন সম্পর্ক নাই।কেননা সে তোমার মাহবুবের দুষমন।
হুযুর ছেলেটিকে বললেন হে বাচ্চা তোমার চাচা কি বলেছে? বাচ্চাটি সব কাহানি শুনিয়ে দিল, হুযুর (দঃ) সাহাবাগনের সাথে বাচ্চাটির কথাগুলি নিয়ে পরামর্শ করলেন, কিন্তু সাহাবাগন বললেন এ এখনো অবুঝ বাচ্চা তার কথার উপর নির্ভর করাটা ঠিক হবে না, জুল্লাছ বিন ছুবেদ আমাদের সাথে নামাজ পড়েন, একজন বুযুগ লোক, এবং একজন জ্ঞানী লোক। আপনি এ বাচ্চাটির কথাকে গুরুত্ব দিবেন না। জুল্লাছ বিন ছুবেদ যখন ভাতিজার অভিযোগের কথা শুনল তিনিও কসম করতে লাগল যে আমি এ ধরনের কোন কথাই বলিনি। তখন হুযুর (দঃ) শিশুটির কথাকে আর গুরুত্ব দিলেন না।
যখন বাচ্চাটি দেখল তার কথা হুযুর (দঃ) কবুল করেনি, সে চোখের পানি ছেড়ে দিল আর আসমানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল (আল্লাহুম্মা ইন কুনতু ছাদিকান ফাছাদ্দিকনি ওয়াইন কুনতু কাজিবান ফাকাজ্জিবনি) হে আল্লাহ আমি যদি মিথ্যাবাদী হই তাহলে আমাকে মিথ্যাবাদী বানিয়ে দাও, আর হে আল্লাহ আমি যদি সত্যবাদী হিই তাহলে আমাকে সত্যবাদীতা প্রকাশ করে দাও।
বাচ্চাটি যখন এ দোয়াটি করল এখনো মুখে হাত ফিরায়নি এরই মধ্যে জিবরিল এসে গেল আর তখন সুরা তওবার ৭৪ নং আয়াত নাযিল হয়
يَحْلِفُونَ بِاللّهِ مَا قَالُواْ وَلَقَدْ قَالُواْ كَلِمَةَ الْكُفْرِ وَكَفَرُواْ بَعْدَ إِسْلاَمِهِمْ
তারা কসম খায় যে, আমরা বলিনি, অথচ নিঃসন্দেহে তারা বলেছে কুফরী বাক্য এবং মুসলমান হবার পর অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী হয়েছে। [ সুরা তাওবা ৯:৭৪ ]
যখন জিবরিল এসে গেল আয়াত নাযিল হল হুযুর বাচ্চাটিকে নিজের কাছে ডাকলেন আর বলনে (মারহাবান বিকুম ছাদ্দাকাহু রাব্বুহু মিন ফাউকে ছাবয়ে ছামাওয়াত) খোশ আমদেদ হে বাচ্চা যার সত্যতার স্বাক্ষী ৭ আসমানের উপরের রবও দিয়ে দিয়েছেন। এরপর হুযুর সে বাচ্চার কানে ধরলেন (ওয়াফাদ উজুনুকা এয়া গোলাম ওয়া সাদ্দাকাকা রাব্বুকা ) হে বাচ্চা তোমার এই কান ঠিকই শুনেছে।
হযরত ওমর (রাঃ) এর জামানায় তিনি এই ওমায়ের বিন সাদ আনসারী (রাঃ) কে হামাছ এর গভর্নর বানিয়ে দিলেন, তিনি যখন ইন্তেকাল করেন হযরত ওমর কান্না করে করে বলেন হায় হায় আমার কাছে ওমায়ের এর মত যদি আরো লোক হত, আর আমি মুসলমানদের হেফাজতের জন্য তাকে নিযুক্ত করতাম।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সুন্নত মোতাবেক জীবনকে সাজানোর তৌফিক দান করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই